
দীপাবলি হিন্দু-সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক বিশেষ উৎসব। এই উৎসব বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন ভাবে পালিত হয় যেমন, দ্বীপাবলী, দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা ,যক্ষরাত্রী ও ভাইফোঁটা প্রভৃতি।
ভারতবর্ষে দীপাবলি- শুধু হিন্দুদের নয়, শিখ, জৈন ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। অর্থাৎ এই উৎসব সার্বজনীন।
পাঁচদিন ব্যাপী উৎসব এই দীপাবলীর আগের দিনকে দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিনে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। এই চতুর্দশীর পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলী উৎসবের দ্বিতীয় দিন এবং এই দিনই দীপাবলি হিসেবে উদযাপিত হয়। শিব অনুসারীগণ শক্তি দেবী কালীর পূজা করেন। এই দিনে অনেক অঞ্চলে লক্ষ্মীপূজাও করা হয়।
দীপাবলি দিনে সাধারণতঃ কালী পূজা হয়, তাই দীপাবলি আর কালী পূজা একসাথে গাঁথা। ভারত সহ মালোয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নেপাল, গুয়ানা, ত্রিনিদাদ-টোব্যাগো, মারিশাস, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিজি, জাপান এবং সুরিনামেও দীপাবলী উৎসব পালন হয়।
ভারত এবং বাংলাদেশ দীপাবলীতে কালী পূজা হয়। অন্যান্য দেশে এই দিনে গণেশ পূজা এবং লক্ষ্মী পূজাও করা হয় । জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর দীপাবলীর এই দিনে নির্বাণ লাভ করেন। এই দিনে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরোগোবিন্দ অমৃতসরে ফিরে আসেন। সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বহু হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে এই দিনে প্রদীপ প্রজ্জালন দিবস পালন করা হয়।
দীপাবলীর ঐতিহাসিক কারন হল এই দিনে ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে সীতাদেবীসহ অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। মর্যাদা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীরামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে ভগবানকে অভিনন্দন ও স্বাগতম জানানোর জন্য অযোদ্বার রাজপথে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশীতে গীত, নৃত্য ও আতশবাজি করে। আসলে দ্বীপাবলী উৎসব তখন থেকেই নিয়মিত হয়ে আসছে।
বিষ্ণুপুরানে উল্লেখ আছে এই দিনে বামন অবতার অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বলিত করতে লক্ষ লক্ষ প্রদীপ জ্বালানোর অনুরোধ করেন। তখন দীপাবলীর তৃতীয় দিনে বলি মহারাজ ভক্ত হয়ে নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করেন।
আবার এই দিনে প্রতি গৃহে ভাই ফোঁটা হিসেবে ভাইকে অমর করার জন্য ”যম দ্বিতীয়া” অনুষ্ঠান করা হয়। ভারতবর্ষের বোনেরা শশ্বুরবাড়ী থেকে ভাইকে একনজর দেখার জন্য ক্রন্দন করে। তাই বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে ঘরে বসিয়ে, কপালে ফোঁটা দেয়, হাতে রাখী বেঁধে দেয়, সুস্বাধু রান্না করা খাবার খেতে দেয় এবং যমকে অনুরোধ করে যেন তার ভাইকে মৃত্যু দুয়ারে যেতে না হয়।।
এছাড়া আমাদের কৃষি প্রধান তন্ত্রে মাতা শ্রীশ্রী কালিকা দেবী হলেন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণের কারণ। প্রকৃত পক্ষে তিনি হলেন সমগ্র সৃষ্টির আদিশক্তি, তাই তাঁর আরেক নাম হলো প্রকৃতি। আসলে কিন্তু তিনিই মহৎ জ্ঞান বা পরমা বিদ্যা স্বরূপিনী। এ তো গেল শুধুমাত্র বিভিন্ন পুরাণের কথা। লোকাচার বলেও তো কিছু আছে তাও কিন্তু মোটেও বাদ দেওয়া যায় না বরং মানতে হয়। দ্বীপান্বিতা অমাবস্যার শ্রীশ্রী শ্যামা ( কালী ) পূজার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ভূত চতুর্দশী দিন বঙ্গ ভারত উপমহাদেশের সকল বাঙ্গালী হিন্দু পরিবারে চৌদ্দ প্রকারের শাকান্ন খাওয়ার নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। অনেকে আবার দীপাবলি দিন এ চৌদ্দ শাক খেয়ে থাকেন।
সেই দিন শুধু মাত্র চৌদ্দ প্রকারের শাকান্ন খেলেই চলবে না। আবার সেই দিন সন্ধ্যায় জ্বালাতে হবে চৌদ্দটি প্রদীপ। তার প্রধান কারণ ঐ দিনের দিবাগত রাতে প্রত্যেক বংশের বিদেহী আত্মারা স্বর্গ ধাম থেকে নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। এবার আপনারা সকলে জেনে রাখুন আসলে ১৪ ( চৌদ্দ ) প্রকারের শাক ভক্ষণের বিধান কেন হয়েছে। এই শাক গুলি কিন্তু আসলে মানব দেহের নানাবিধ রোগ হরণকারী হিসাবে বহুল ভাবে পরিচিত। তাই এই শাক গুলি ঐ বিশেষ তিথিতে আহার করলে মানবের দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষতা অনেক বেড়ে যায়।
এই শাক গুলির নাম কিন্তু আসলে অনেকের কাছেই অজানা রয়েছে বলে আমি মনে করি। যে ১৪ ( চৌদ্দ ) প্রকারের শাক ভূত চতুর্দ্দশী তিথিতে আহার করার বিধান বহুকাল পূর্ব্ব থেকেই বঙ্গ ভারত উপমহাদেশের সকল বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে প্রচলিত রয়েছে। এমন কি ভূতচতুর্দ্দশী তিথিতে এ গুলো আহার করা সকল বাঙ্গালী হিন্দু ধর্মাবলম্ভী নরনারীগণের বংশ পরমপরা ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে। যদি শাক গুলো সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলে ঐ তিথিতে আপনারাও খাবেন। সেই শাক গুলির নাম নিন্মে প্রদত্ত হলো–
( ১ ) ওল কচু পাতার শাক,
( ২ ) কেঁউ পাতার শাক,
( ৩ ) বেতো পাতার শাক,
( ৪ ) সর্ষে পাতার শাক,
( ৫ ) কালকাসুন্দে পাতার শাক,
( ৬ ) নিম পাতার শাক,
( ৭ ) জয়ন্তী পাতার শাক,
( ৮ ) শাঞ্চে পাতার শাক,
( ৯ ) হেলঞ্চা এর শাক,
(১০) পলতা পাতার শাক,
(১১) শৌলফ পাতার শাক,
(১২) গুলঞ্চ পাতার শাক,
(১৩) ভাঁট পাতার শাক এবং
(১৪) শুষনী পাতার শাক।
সবাইকে শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। প্রদীপের আলোয় প্রজ্বলিত হোক সবার জীবন। সকল রোগব্যাধি দূর হোক। সকলে শান্তি লাভ করুক। কেউ যাতে দুঃখবোধ না করে।
সংক্ষিপ্ত।
ছবিঃ সংগৃহীত
২১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
দ্বীপাবলী, দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা ,যক্ষরাত্রী ও ভাইফোঁটা প্রভৃতি। আমিতো ভাওবতাম আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান বা উৎসব আজ বুঝলাম কিন্তু আবার বিভিন্ন ধর্মাবলী অন্যভাবেও পালন করে।
অনেক ধন্যবাদ প্রদীপদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
সুপায়ন বড়ুয়া
দ্বীপাবলির বিশদ হলো জানা।
আনন্দে উৎসবে রইলো দাদা
অফুরন্ত শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
শুভেচ্ছা দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
আলমগীর সরকার লিটন
অনেক কিছু জানলাম প্রদীপ দা
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
শুভেচ্ছা রইলো
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব সুন্দর হয়েছে।অফুরন্ত ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক কিছু জানা হলো তবে অনেক শাকের নাম জানতাম না, চিনিও না। কয়েকটা চিনি। দীপাবলি বানানটা একটু দেখে নেবেন। শুভ দীপাবলির শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো।
হালিম নজরুল
দীপাবলী সম্পর্কে অনেককিছু জানা হল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অনেক শুভেচ্ছা দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ দিদি।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
অনেক ধন্যবাদ দিদি।
শুভেচ্ছা রইলো অনেক।
আরজু মুক্তা
এতো কিছু জানা ছিলো না।
শুভকামনা। দীপাবলির শুভেচ্ছা। আলোকময় হোক চারিদিক
প্রদীপ চক্রবর্তী
অনেক অনেক আলোকিত দীপাবলির শুভেচ্ছা দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
রোকসানা খন্দকার রুকু
দীপাবলি সম্পর্কে জানা হল। বাইরে কিছু আগে পটকার শব্দও শুনলাম। শুভ কামনা রইলো আপনাদের জন্য।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরা ও গতকাল কয়েক জাতের পটকা এনেছি।
এবং সারা বাড়ি প্রদীপ প্রজ্বলন করেছি।
শুভেচ্ছা আপনাকে।
মোঃ খুরশীদ আলম
দীপাবলি মুসলমানদের অনুষ্ঠান! এটা তো জানা ছিল না। ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে না তো ?
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভুল তথ্য না।
তবে মুসলমানদের ঐদিন দীপাবলি অনুষ্ঠান করতে হবে তাও না। এটা কোন ধর্ম গ্রন্থে আছে বলে মনে হয় না।
আলো সর্বদা সুন্দর ও পবিত্র।
তবে অনেকে ঐদিন মোমবাতি প্রজ্বলন করে থাকেন।
এতে পবিত্রা নষ্ট হয় না। আলোর ধর্ম অন্ধকারকে দূরীভূত করা।
আপনাকে আলোকিত সন্ধ্যার শুভেচ্ছা।
তৌহিদ
এত্ত এত্ত শাকের নামই জানতামনা। আজ আপনার লেখার মাধ্যমে দীপাবলিরর ইতিহাস জানলাম। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আপনাকে আলোকিত দীপাবলির শুভেচ্ছা দাদা।
শামীম চৌধুরী
হিন্দু-সনাতন ধর্মের দীপাবলি সম্পর্কে অনেক কিছু জানালেন দাদাভােই। এত শাকের নাম আপনি কোথায় পেলেন। লিখে রাখলাম নোটবুকে। এখন থেকে এক এক করে বাজারে খুঁজে বের করে খাবার প্রস্তুতি নেবো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমরাও কয়েকজাতের শাক পাইনি।
ইত্যাদি ইত্যাদি শাক দিয়ে চৌদ্দ শাক সংগ্রহ করেছি।
সাধুবাদ দাদা।