
এই সাথী,দেখতো, কে এলো?
সাথী আবার আমার মেয়েকে বলছে,” আপু, তুমি একটু যাও।আমি ভাত খাচ্ছি।”
আমার মেয়ে দৌড়ে চলে এলো। আমি তো চমকালাম, কি ব্যাপার?
আম্মু, হিজড়া !
তো কি হয়েছে? এভাবে কেউ ভয় পায়। ওর বাবাকে বললাম যাও তো! আমি একটু শুইছি।
না!!! কোনভাবেই ম্যানেজ করতে পারলো না। ঐ আমাকেই উঠতেই হলো।
ওমা! কি খবর? কেমন আছো?
ওদের সাথে আগে থেকেই পরিচয়। যেখানে কাজ করি, ওরা প্রায়ই সেখানে যায়। আমাদের চেয়ারম্যান স্যার ওদেরকে প্রায়ই কিছু না কিছু দেয়, আর বলে যাওয়ার সময় দরজায় দুটা লাত্থি দিয়ে যাস।
অন্ধবিশ্বাস, ওরা লাত্থি দিলে ভাগ্য নাকি খুলে যায়। যাই হোক এদের একজনের নাম সাঈদা, প্রায়ই কথা বলতাম। ওর কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যেতাম। এ সমাজে ধর্ষকরা বুক ফুলিয়ে চলে। বাবা মায়ের সাথে থাকে। অথচ এরা নিজের বাড়িতেও ঠাঁই পায় না! ও বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান। ও যখন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এমনকি সুন্দর নাচও দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিতো সবাইকে। পাশের বাড়ির এক আন্টি, হঠাৎ বলে উঠলো ,আরে আপনার এই মেয়ে তো হিজড়া! আর যাই কই? একদিন ওর মা রেখে আসলো হিজড়া পল্লীতে, সমস্ত ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে।
আমি মনে করি, এটা বোঝাপড়ার সমস্যা! সমাজ তাদের জন্য কোন ব্যবস্থা করেনি। তারা অবহেলিত। তাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
আগে তারা বিয়েবাড়িতে নাচ, গান বা নতুন শিশু জন্ম নেয়ার আশীর্বাদ স্বরূপ কয়েক ঘণ্টা মাতিয়ে রাখার কাজ করতো। এখন এ পেশা হারিয়ে গেছে। তারা আধুনিক নাচ নাচতে পারেনা। এখন পেট তো চালাতে হবে। তারা ভিক্ষাবৃত্তি, চাঁদাবাজি, বাস বা বাসা বাড়িতে গিয়ে গিয়ে টাকা তোলে। আমরাও অমানুষ, বুঝিনা ওরা কিভাবে চলবে? দেই রাগ ওঠায়। ওরাও গালিগালাজ করে পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে দেয়।
হিজড়াদের প্রতি ছোটবেলা থেকেই বিরূপ ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠি। পৃথিবীতে পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ নামক দুই প্রকার লিঙ্গ যুক্ত মানুষ থাকলেও, মানুষের জটিল দেহগঠনে মাতৃগর্ভে বাচ্চার জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হবার সময় লক্ষজন মানুষের ভেতরে ভুল হয় মাঝে মাঝে।
এখন উভলিঙ্গ মানুষের কথা বলবো। গ্রিক দেবতা হার্মিস আর আফ্রোদিতির এক ছেলেমেয়ে উভলিঙ্গ নিয়ে জন্মেছিলো। ধারণা করা হয় এদের দুইজনের নাম অনুসারে নামকরন হয় ইংরেজিতে হার্মাফ্রোজাইট বা উভলিঙ্গ। ঐ যে ভুলচুক বললাম, সেটা হলো, ছেলে নির্ধারণে ক্রোমোজোম xy আর মেয়ে নির্ধারণে xx! কিন্তু ক্রোমোজমে গোলযোগ হলেই xx বা xy না হয়ে xxx বা xxy বা xo বা xyy এরকম হয়ে থাকে। ১০/১২ বছর পর অদ্ভুত ভাবে এদের দেহে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। এবং এদের জননাঙ্গ জন্মের সময় ছেলেদের মতো হলেও পরে মেয়েদের মতো অথবা অদ্ভুত এক প্রকার হয়ে যায়! যাই হোক, এরা প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়।
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বিকৃতী দেয়া হয়েছে ।পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ও পাচ্ছেন তারা। স্কুল গামী হিজড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করে তুলতে চার স্তরে অর্থাৎ প্রাথমিকে ৭০০ টাকা, মাধ্যমিকে ৮০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিকে ১০০০ টাকা এবং উচ্চতর ডিগ্রীতে ১২০০ টাকা করে সরকার উপবৃত্তি চালু করেছে। এছাড়াও ৫০উর্ধ্ব বয়সীদের ৬০০ টাকা করে ভাতা প্রদান চালু আছে।
“তুই ব্যাটা হিজড়া!” শিক্ষিত হলে এটা আর গালি হবেনা।
আমি আমার মেয়েকে বুঝালাম, ওরাও মানুষ আমাদের মতো। শুধু মনটাই আল্লাহ একটু ভিন্ন করে করে দিয়েছেন। বাকি আবেগ, অনুভূতি, হাসি, কান্না , আনন্দ , বেদনা সব আমাদের মতোই।
আসুন, ওদের পাশে দাঁড়াই। বাচ্চাদেরও শিখাই কীভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়? যে যার মতো গালিগালাজ না করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। ওরাও কারো না কারো ভাই বা বোন। মানবিক হই ।
২৩টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার লেখার সংগে সম্পুরন এক আপি। তয় আমাদের মাঝেও য্বমন খারাপ আছে অদেএ মাঝেও কিছু খারাপ আছে। তবে পুরন ওধিকার তাদের দিতে হবে আমরা যেমন পাই।
আরজু মুক্তা
অধিকার পেলে এবং সামাজিক মর্যাদা পেলে ওরা হয়তো ভালো হবে।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা আশা বেধে রাখি
মনির হোসেন মমি
আপু আপনি হয়তো ওদের ভাল রূপটাই বেশী দেখেছেন কারন ওদের সাথে আপনার দেখা হলে হয়তো কিছু না কিছু টিপস দেন।যদি কখনো এর বর্ত্যায় ঘটে তখন হয়তো তাদের ভিন্ন রূপ দেখতেন।তবে হ্যা ওদের সাথে ভাল ব্যাবহার করলে ওরাও ভাল ব্যাবহার করে তবে সংখ্যায় নগণ্য।আমার এলাকায়ও বেশ কিছু হিজড়া আছে।কয়েকজনকে আমি সেই শিশুকাল থেকেই দেখে আসছি কিন্তু ওদের বিহেভ অনেকটা বেপরোয়া যদি আপনি কোন কাজ করতে দেন তবে তা তাড়া করবে না। ওরা চাদাবাজীতেই বেশী স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।স্বার্থের প্রয়োজনে হাত তালি নেংটো হওয়া ওদের প্রিয়।কোথাও বাচ্চা জন্ম নিলে ওদের সিন্ডিক্যাটে খবর পেয়ে ওরা সেই বাড়ীতে গিয়ে যে অত্যাচার করে তা বলার মত না।যাক তবুও ওরা মানুষ ওদের সহযোগীতা আমাদেরকেই করতে হবে।
আরজু মুক্তা
আমরাও কম করিনা! প্রচণ্ড রকমের অমানবিক আচরণ করি।
শাহরিন
একমত হতে পারলাম না আপু। এদের খারাপ রুপ দেখেননি হয়তো।
আরজু মুক্তা
ভালো চাইতে বা সহযোগিতা করতে দোষ তো নেই!
শামীম চৌধুরী
সহমত।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা।
মাছুম হাবিবী
সুন্দর একটি পোষ্ট দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে অবহেলিত মানুষদের নিয়ে সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ।
,
আরজু মুক্তা
শুভেচ্ছা জানবেন।
তৌহিদ
হিজড়াদের নিয়ে সরকার অনেক পরিকল্পনা করছেন, যা প্রশংশনীয়। তবে ভাগ্যের বিষয়টি আমি মানতে পারলামনা। এটা উপরওয়ালার ইচ্ছে। কারও ভাগ্য অন্যকেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা বা ফিরিয়ে দিতে পারেনা। এদের মধ্যে ভালো খুব কমই আছে তবে এদের সিন্ডিকেট আছে যা আমি দেখেছি। খুন খারাবাও হয়।
উন্নত বিশ্বে তৃতীয় লিঙ্গদের জন্য অনেক সুবিধা প্রদান করা হয়। তবে সাউথ এশিয়ান রিজিয়নে হিজড়ারা সংঘবদ্ধ হয়ে অনেকে অপকর্মও করে যা অনুচিত।
যারা ভালো তাদের মঙ্গল কামনা করি। বাকীরা সুপথে আসুক।
আরজু মুক্তা
আমিও চাই ওরা সুপথে আসুক। সেই সাথে আমাদের আচরণও সংযত করি।
শুভকামনা।
ছাইরাছ হেলাল
আপনি যে দিকটি দেখেছেন তা ঠিক আছে।
ওরা পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে অনেক কিছুই করে।
আমরা আমাদের সন্তানটি এমন হলে তাকে আশ্রয়ে দেই না , রাখি ও না।
তাই দায় তো নিতেই হবে।
তবে তাদের অত্যাচারে মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত, তাও স্বীকার করতেই হয়।
আরজু মুক্তা
এটা সমাজের দোষ। ঠাঁই দেইনি। অবহেলিত।
চাইনিজে ২০০০টাকা খেয়ো আসি। আর ওরা টাকা চাইলে ভাগ শা—! আমি তো দেখি, আমরাই বেশি জ্বলাই।
ধন্যবাদ
জাহিদ হাসান শিশির
উন্নত দেশগুলোতে এরা তো দিব্যি সমাজের সাথে মিশে আছে।
এমনকি আমাদের নিকটবর্তী দেশ থাইল্যান্ড তো বলতে গেলে এইসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য পুরো স্বর্গ বা প্যারাডাইস।
আরজু মুক্তা
চলেন এককাপ চা খেয়ে আসি। শুধু আপনি বুঝলেন এদের কথা।সবাই বলে খারাপ।কিন্তু আমার যতদুর মনে পরে, এদের সাথে খারাপ ব্যবহার করলেই এরা খারাপ হয়ে যায় আরও।
শুভকামনা!
জাহিদ হাসান শিশির
হুম। ঠিক কথা।
সাবিনা ইয়াসমিন
লেখা ভালো হয়েছে।
হিজড়া নিয়ে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে।
শুভ কামনা। 🌹🌹
আরজু মুক্তা
লিখা ভালো লেগেছে জন্য ধন্য।
ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
আপনার সাথে একমত আপু, আসলেই ওদেরকে যদি মানুষ হিসাবেই দেখি তাহলে ওরা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারবে, এখন সময় হয়েছে আমাদের মানষিকতা বদলের, শুধু ওদের জন্য, ওরাও মানুষ।
আরজু মুক্তা
একদম। ওরা তো থার্ড জেন্ডার হয়ে এমনি বিপদে।আমাদের অবশ্যই মানসিকতা বদল করতে হবে। না হলে, ভালো কিছু হবেনা।
শুভকামনা।
ইঞ্জা
একমত আপু। 👍