’চিকিৎসক’ শব্দটির সাথে সেবার ব্যাপারটা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মুলত এটি একটি সেবামুলক পেশা। কিন্তু মানুষ আর অমানুষভেদে এই পেশার লোকজন কেউ সেবক, কেউ কসাই নাম ধারন করে। আর অনুপাতিক হারে ভালোর সংখ্যাকে ছাপিয়ে যখন মন্দের সংখ্যা সীমাহীন বেড়ে যায় তখনই তা কমন রুপ লাভ করে। বর্তমানে এই কমন রুপই হচ্ছে ‘ডাক্তার মানেই কসাই’। আর এর মধ্য থেকেই কেউ কেউ প্রমাণ করেন ডাক্তার মানেই কসাই না, ‘ডাক্তার মানে সেবক’। তবে সে সংখ্যা এখন খুবই কম। গত পর্বে একজন ডাক্তারের বিবরণ দিয়েছি, আজ আরেকজনের দিচ্ছি, যা থেকে সেবক এবং কসাইয়ের রুপ খুঁজে পেতে সমস্যা হবে না। রোগী এবং রোগীর চিকিৎসা কিন্তু একই, শুধু চিকিৎসার ধরণ ভিন্ন।
মাড়ি থেকে দাঁত উঠাতে ৮০ হাজার টাকার ফিরিস্তি এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বয়স্ক রোগীকে জেনারেল এনেসথেসিয়া দিয়ে দাঁত উঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় পূর্বের ডাক্তার থেকে ফিরে আসার পরের দিন, একজন রিলেটিভ আরেক ডাক্তারের সন্ধান দিয়ে বললো, ”একজন ইয়াং ডাক্তার আছে সে কিন্তু বেশ ভালো, কিছুদিন হয় নিজেই একটা ল্যাব খুলেছে, তাঁকে একবার দেখাতে পারো। আমি তাঁর ট্রিটমেন্টে প্লিজড।” শুনে পরেরদিন নিয়ে গেলাম। রিলেটিভ নিজেই এপয়েন্টমেন্ট করে দিলেন।
ওখানে যাওয়ার পর আম্মার বয়স, শারিরীক কন্ডিশন এবং অসুস্থতা ইত্যাদি দেখে সেদিন সেই ডাক্তার বলেছিলেন, “উনাকে আমরা প্রথমেই চিকিৎসা না দিয়ে এক সপ্তাহ কিছু নিয়মের ভেতর চালিয়ে চেষ্টা করে দেখি ব্যথা আর হয় কি না। যদি এভাবে চলার পরও ব্যথা হয় তাহলে বিকল্প চিকিৎসা দেয়া যাবে কিন্তু এভাবে দাঁত উঠানোর চিন্তা আপাতত না করাই ভালো।”
ডাক্তার সেদিন শুধু কিছু নিয়ম বলে দিয়েছিলেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সেদিনের পর মৃত্যুর (২২/০৪/২০১৬) আগ পর্যন্ত প্রায় ১৮ মাস আম্মার কিন্তু দাঁতের আর কোন চিকিৎসাই করাতে হয়নি। অবিশ্বাস্যরকমভাবে আম্মার আর দাঁত ব্যথাই হয়নি! তাই চিকিৎসারও প্রয়োজন পড়েনি।
বেঁচে থাকা অবস্থায় ১৮টি মাস আম্মার দাঁত ব্যথা ছাড়াই কেটে যায়।
এদিকে আমি উসখুসজনিত কারণে দীর্ঘকাল দাঁতের চিকিৎসা না করালেও ওই ল্যাবের আধুনিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে ল্যাব পরিচালনার ধরণ দেখে কোনরকম অস্বস্তিবোধ ছাড়াই দন্তচিকিৎসা সমাপ্ত করি।
ল্যাবটির ইনস্ট্রুমেন্টগুলির হাইজেনিক রক্ষণাবেক্ষনের ধরণ দেখে রীতিমতো অভিভূত হয়েছিলাম সেদিন। ইয়াং সেই ডাক্তার নিজেই আমাকে সবকিছু খুটিযে খুটিয়ে দেখালেন। দেখলাম, প্রায় ২০/২৫ সেট ইনস্ট্রুমেন্ট স্তরেস্তরে সাজানো। একটি সেট একজন মাত্র প্যাশেন্টের জন্যই বরাদ্দ। কাজ শেষ হলেই সেটা বড় একটা ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। দিনশেষে একসাথে সেগুলোকে যথাযথ পরিচ্ছন্ন করে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করার পরই পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। দাঁতের চিকিৎসায় বরাবরই আমার একটা ভীতি ছিলো। মুখগহ্বরে ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যবহার নিয়ে সন্দেহ কাজ করতো। সন্দেহের কারণে গা ঘিনঘিন করতো। কিন্তু সেদিন সেখানে প্রতি সেট ইনস্ট্রুমেন্টের ব্যাকটেরিয়ামুক্ত হাইজেনিক উপায়ে সংরক্ষনের সিস্টেম দেখে আমি এতোই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, আম্মার চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের দাঁতের চিকিৎসা করানোর এপয়েন্টমেন্টও করে আসি। এবং যথারীতি নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যাবত বয়ে বেড়ানো সমস্যার সমাধানও করিয়ে আসি।
নিচে নতুন ডাক্তারটির ঠিকানা দিলাম। আজকাল আমরা ডাক্তারের প্রয়োজন দেখা দিলেই নামীদামী ডাক্তারের সন্ধান করি। ভরসা একটাই, ভালো ডাক্তার বলেই তো তিনি নামীদামী। কথা কিন্তু সত্য। আবার এটাও সত্য, লোভ মানুষকে অমানুষে পরিণত করে। লোভের বশবর্তী হয়ে অনেক নামীদামী মানুষও অমানবিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। আর তাদের ইমেজকে ব্যবহার করে এদেশে ডায়গণস্টিক সেন্টার আর প্রাইভেট হাসপাতালগুলো রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে।
কাজেই নামীদামী হলেই যে চিকিৎসা সঠিক হবে, এটা এই সময়ে মনে হয় ভুলই।
ঠিকানা :
Dr. Mabsur Samad Choudhury
Dental Surgeon
House # 39A, Road # 8,
Dhanmondi, Dhaka-1205
Ph. +88-02-9131774
Mob.+88-01556318055, +88-01711811061
e-mail : [email protected]
www.yourdentistbd.com
৯টি মন্তব্য
লীলাবতী
শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এই ডাক্তার সামাদকে। দাঁতের সমস্যা হলে অবশ্যই তার কাছে যাব। সেবক ডাক্তারের ঠিকান দিলেন, কসাই ডাক্তারের ঠিকানাও চাই, ভুলে আমার কোনো পরিচিত মানুষ আবার কসাইয়ের কাছে চলে না যায়।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সেটাই দেয়া উচিৎ ছিলো।
অবশ্যই অই ডাক্তারের কাছে যাবে। অসম্ভব যত্নসহকারে এবং পরিচ্ছন্ন উপায়ে কার্যাদি সম্পন্ন করা হয়। আর নিঃসন্দেহে ডাক্তার আন্তরিক।
মিষ্টি জিন
ডাক্তারদের কথা আর কি বলবো আপু। দেশে যতদিন থাকি সব সময় আল্লাহ আল্লাহ করি যাতে কোন অসুখ না হয়। বড ধরনের ভূল চিকিৎসার শিকার হয়েছিলাম আমি।
তবে আমার বাবার বাড়ীর কাছে এক ভালো ডাক্তার আছে।উনার উপর আমার অগাদ বিশ্বাস । একযুগেও উনার ভিজিট মাত্র ৩০০ টাকা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, হাজারের মাঝে হাতে গোনা দুই একজন মানুষ পাওয়া যায়, যারা পেশাটিকে সেবা হিসেবেই বিবেচনা করেন। তিনি তেমনি একজন।
নীলাঞ্জনা নীলা
রুবা’পু দেশে গেলে দাঁত ক্লিন করাতে নিশ্চিত ওখানেই যাবো।
কোথায় ৮০,০০০ আর কোথায় শুধু কিছু নিয়ম মেনে চলা! হায়রে ডাক্তার!!
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শুনে ভালই লাগছে। অবশ্যই যাবে। আমি পোস্টটি আরও আগেই দিতাম। ইচ্ছে ছিলো আরেকবার গিয়ে অই ল্যাবটির কিছু ছবি তুলে তারপর পোস্ট দেয়ার। কিন্তু যাই, যাচ্ছি করেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ছবি দিয়ে পোষ্ট করো এখানেই, এই পোষ্টেই।
মোঃ মজিবর রহমান
ভাল মানুষ এখন আছে। খারাপের সংখ্যা বেশি তাই এত ঝামেলা। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।