
মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন কোষে,
উঠলে নক্ষত্রের জন্মের মতো বিধ্বংসী প্রলয়,
শীতল বিকালে শরতের শিশিরে ভেজা কফি,
স্মৃতিতে জড়ানো ঘুম হয়তো উড়াতে চায়,
তবুও কি তা কখনো শান্ত হয়!
বালুর সৈকতে নক্ষত্রেরা মরে যেতে যেতে,
বলেছিল আর জনমে জন্মাবে অবন্তীতে,
বহুবার চেয়েছি তো ভুলে যেতে,
তবু কি তা ভোলা যায়?
তুমি রাজহংসীর মতো এমন উজ্জ্বল একজন,
যাকে ভুলে যেতে গেলে কেঁদে উঠে নিউরন!
বাজে দ্রিম দ্রিম ঢাক,
আদিবাসী গাঁয়ে পক্ষিণী নারী নৃত্যে উত্তাল থাক,
এমন শস্যক্ষেতে মন চায় মিশে যেতে,
শুধু নাগপাশে বেঁধে রেখেছে আমাকে আজো
ব্যর্থ অনুরাগ!
মেয়ে নুপূরে নুপূরে এসে যদি যাবে জলে ভেসে,
কেন রাঙ্গালে কষ্টিপাথরে গড়া প্রাচীন হৃদয়!
বারান্দা জুড়ে অমরত্বের ফল ছিলতো অক্ষয়!
তবু মানকচু বন এখনো সবুজ,
তাদের ফিসফিসে শ্লোকের মতো আমিও অবুঝ!
তুমি উপগ্রহের মতো গ্রহের বলয়ে থাকা
স্মৃতিতে অধিকৃত মন,
যাকে ভুলে গেলে বিস্ফোরিত হবে সব নিউরন!
গলি জুড়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত দেয়াল,
ছোট্ট বারান্দায় গাইছে কেউ সাধের খেয়াল,
বিপ্লব মিশেছে এসে কোমল সঙ্গীতে,
আমিও হয়তো থাকি শুধু তোমার অপেক্ষাতে!
প্রতিটি নারীর প্রেম একেকটি বিদ্রোহ,
যেমন সূর্য্যকে গিলে খেতে ছুটে যায় রাহু,
তেমনি বসন্ত দিনে আমিও ছুটেছি আনমনে!
এখন নদীতে ঢেউ পুরাতন তরঙ্গের মতো কাঁপে,
একটি লুকানো মন চুপিচুপি তোমার দূরত্ব মাপে,
হয়তো অসীম দূরে, কিবা আসে যায় তাতে!
তুমি এমন এক অবশ্যম্ভাবী বিপ্লব,
যাকে এড়াতে গেলে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ
জমিয়ে ফেলবে পুঞ্জীভূত মহাজাগতিক ক্ষোভ!
উঠানে শ্যাওলা হাসে, দেয়ালে ফাঙ্গাস,
চাঁদকে ছুঁতে তড়তড়িয়ে বাড়ছে একটি বুনো বাঁশ,
ভিক্টোরিয়ার মুদ্রারা গড়াগড়ি খাচ্ছে ইতিউতি,
এমন মেলানকোলিয়ায় তোমাকে ভাবলে কি ক্ষতি!
পৃথিবীর সব রোদ পুড়ে আনে ভবিষ্যৎ,
আমি না হয় অতীতে যাওয়ার দায়টা নিলাম,
সন্ধ্যেবেলায় ভোরের পাখির খোঁজ রাখলাম,
ক্ষতি কি তাতে এই আকাশ ছোঁয়া সভ্যতার?
ছাপোষা এক মনের ভিতর,
তুমি না হয় আমার হলে! একটি পোষা পাখি হলে!
নামুক সান্ধ্য রুপকথা সুললিত ডাকে,
না এলে শ্রবণে সেই শব্দ তরঙ্গ কিছুক্ষণ,
পিপাসায় ছটফট করে মরে যেতে চায়
প্রতিটি নিউরন!
*নিউরনঃ মস্তিষ্কের ক্ষুদ্রতম কোষ, আমাদের চিন্তা জগতের একক।
১২টি মন্তব্য
সুরাইয়া পারভীন
যাকে ভুলবো ভাবতেই
বিস্ফোরিত হতে চায় মস্তিষ্কের সবকটি নিউরন
তাকে হৃদয় খাঁচায় ছোট্ট পাখির মতোন
প্রেম ভালোবাসা দিয়ে পুষে রাখায় উত্তম
দুর্দান্ত কবিতা তৃপ্ত পাঠক মন
ভালো থাকুন সবসময়
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ জানবেন। যদিও আমরা ভাবি পাখি পোষ মেনে ভালো থাকে, আসলে হয়তো তা সত্যি নয়। তবুও আমরা ভাবি, আমরা চাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
❝তুমি এমন এক অবশ্যম্ভাবী বিপ্লব,
যাকে এড়াতে গেলে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ
জমিয়ে ফেলবে পুঞ্জীভূত মহাজাগতিক ক্ষোভ! ❞
শারদীয়া স্নিগ্ধতা দিয়ে প্রলয় থামানো যাবে না।
বসন্তের আগুন লাগবেই।
ফিচার ছবিটি অসাধারণ সুন্দর।
আপনার তোলা?
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ জানবেন আপু। ছবিটা আমারই তোলা। আজকাল আর ঋতু বোঝা যায়না😀। শরত আর বসন্তে প্রভেদ বোঝা কঠিন, তবু বসন্ত বাচুক বিরহে।
আরজু মুক্তা
কোকিলের কুউ ডাক এখন মনের কু। বসন্ত বাতাস আসবে কেমনে? আমরা তো জানলা লাগায় বসে আছি। কোষগুলো আসলেই মরে। চাওয়া পাওয়ার মাঝে যখন না পাওয়াটাই বেশি হয়। তখন নিউরন চাপে মরে যায়।
সৌবর্ণ বাঁধন
এটা এই সভ্যতার ধ্রুপদী বাস্তবতা। জানালা গুলো আজকাল আর খোলা যায়না। অনেক ধন্যবাদ জানবেন।
হালিমা আক্তার
নিউরন সবসময় বিস্ফোরিত হোক। সচল থাকুক মস্তিষ্ক।না হলে এতো সুন্দর কবিতার সৃষ্টি হবে কি করে। শুভ কামনা অবিরাম।
সৌবর্ণ বাঁধন
পারমাণবিক বিস্ফোরণের মতো অদৃশ্য সব প্রলয়ে ক্লান্ত প্রতিটি মন। ধন্যবাদ। শুভকামনা জানবেন সতত।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সত্যিইতো চলেই যদি যাবে তবে কেন এতো মন রাঙানো! ভুলতে চাইলেই কেন জানি আরো বেশি মনে পড়ে তখন।
বন্ধ জানালায় বসন্ত আসুক আর শ্রাবণ আসুক তাতে কিইবা যায় আসে মৃত নিউরনের? চমৎকার কবিতা। অবিরাম শুভেচ্ছা 💐💐
সৌবর্ণ বাঁধন
ধন্যবাদ দিদি। স্মৃতির অপর নামই জীবন। ভুলে যাওয়া সহজ নয়।
দালান জাহান
ওয়াউ! ভালোবাসার বিপ্লব জেগে থাকুক।
সুন্দর শব্দ বিস্ফোরণ। নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করেছেন কবি।
অভিনন্দন………
সৌবর্ণ বাঁধন
অনেক ধন্যবাদ জানবেন প্রিয় ব্লগার।