প্রতিদিন কত কিছুর মুখোমুখি হতে হয় !
গুমোট অন্ধকারাচ্ছন্ন, বিচ্ছিন্ন সকাল আজ নিউইয়র্ক শহরে। এমন বৃষ্টি বাদলের দিনে মানুষের হাজারো ব্যস্ততা আর কোলাহলের মাঝেও চারিপাশ কেমন শুন্য শুন্য নীরব মনে হয়। এলমার্স্ট হাসপাতালের সামনে রেড সিগন্যালে বসে আছি। একজন গর্ভবতী নারী বেরিয়ে এলেন। স্নিগ্ধ, লাবণ্যময়ী। আরেকজন নীল চোখের শ্বেতাঙ্গ নারীকে হুইল চেয়ারে ঠেলে নিয়ে এলো ইউনিফর্ম পরিহিতা নার্স। কোলে তাঁর নতুন জন্মানো কন্যা শিশু। শিশুটি কন্যা কিনা আমার জানবার কথা নয়। গোলাপি পোশাকে মোড়ানো বলে নিশ্চিত হই। ব্রডওয়ের কিনার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে নেমে এলেন বেলুন আর ফুলের তোরা হাতে সুদর্শন এক যুবক। সম্ভবত শিশুটির পিতা। ইউনিফর্ম পরিহিত দু’জন বিশালদেহী মানুষ একটি লাশ নিয়ে যাচ্ছে অদূরে পার্ক করা এ্যাম্বুলেন্স এর দিকে। সাথে বিষণ্ণ, অশ্রুসজল দু’জন বৃদ্ধ।
একই হাসপাতালের ভেতর থেকে কেউ দু’চোখ ভরা স্বপ্ন আর নতুন জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসে। আর কেউ কেউ একটু অক্সিজেনের জন্যে যুদ্ধ করে করে হেরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরে। ” জীবন-মৃত্যু “। এখানে জীবন আর মৃত্যুর ব্যবধান ছোট্ট একটি হাইফেনের দাগ কেবল।
প্রতিদিন গড়ে কত মানুষ জন্মায় ? কত মানুষ মরে যায় ? তবে আমি এবং আমরা অনেকেই এখনো দিব্যি শ্বাস নিচ্ছি। মেঘের চৌকাঠ পেড়িয়ে নেমে আসা বৃষ্টি দেখছি। সবুজ পাতার লতিয়ে উঠা মায়ায় গড়া দেয়াল দেখছি। নিরন্তর ছুটে চলা মানুষ দেখছি। বেঁচে থাকাটা সুন্দর। সৃষ্টিকর্তাকে অনিঃশেষ ধন্যবাদ।
রিমি রুম্মান
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
৯টি মন্তব্য
ইঞ্জা
এই তো জীবনের বাস্তবতা।
নীলাঞ্জনা নীলা
রিমি আপু ফেসবুকে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম একই হাসপাতালে একদিকে জন্ম, অন্যদিকে মৃত্যু।
আপু ভালো থেকো। তোমাকে শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা। -{@
শুন্য শুন্যালয়
নীলাপু অনেকদিন আগে তোমার এমন একটা লেখা পড়েছিলাম তাইনা? একদিকে কফিন আরেকদিকে সম্ভবত বিয়ে হচ্ছিলো কারো। রিমি আপুর লেখাটা পড়ে মনে পড়লো। শুভ মহালয়া কবিতার নূপূর। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
তিলোত্তমা তুমি এত্তো ট্যালেন্ট কেন বলোতো? হুম লিখেছিলাম। হয়ে গেলো প্রায় এক-দেড় বছর। ক্লায়েন্টে যাচ্ছিলাম অটোয়া স্ট্রীটে পাশাপাশি একটা ফুনারেল হোম আর পাশেই চার্চ।
শারদ শুভেচ্ছা তিলোত্তমা। -{@
এই মেয়ে থাকো কোথায়? কত্তোদিন হয়ে গেলো বলো তো লেখা দিচ্ছো না? 🙁
অনিকেত নন্দিনী
নিউইয়র্কে রোজ কজন জন্মায় আর কজন মারা যায় তার সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আপু তবে স্কুলের বাচ্চাদের পড়াতে গিয়ে জেনেছি ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের বার্ষিক জন্ম মৃত্যু হার যথাক্রমে ২৫ লাখ ও ৬ লাখ।
জন্ম আর মৃত্যু বড্ড আজিব ব্যাপার। একই দিনে জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে দেখেছি। আমার বাচ্চাদের মেজো ফুপুর বিয়ের অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে কয়েক মিনিট আগে পরে দুইটা ফোন এলো। এক ফোনে খবর এলো বাচ্চাদের বড় চাচী ছেলে জন্ম দিয়েছে, আরেক ফোনে খবর এলো আমার মায়ের নানাভাই মারা গেছেন। বাচ্চাদের দাদী খুশিতে মশগুল হয়ে বেশি করে জর্দা দিয়ে পান চিবোতে চিবোতে মিটিমিটি হাসতে লাগলেন আর আমার মা খাবারের প্লেট ঠেলে চোখ মুছতে মুছতে উঠে গিয়ে তার নানাকে শেষদেখা দেখতে চলে গেলেন, আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে পেট চেপে ধরে বাসায় ফিরে এলাম। কেননা বাসায় আমার পনেরো দিনের পুত্র কান্না করছে। 🙁
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
জীবনের গল্প আছে বাকী অল্প সুতরাং \|/
আবু খায়ের আনিছ
জীবনে বহুরাত কাটিয়েছি হাসপাতালে, কাউকে অসুস্থ নিয়ে গিয়ে ফিরেছি সুস্থ নিয়ে আবার কাউকে নিয়ে এসেছি চিননিদ্রায় শায়িত করে। এই জীবন, হাসপাতালে গেলে জীবন আর মৃত্যুকে ভালো করেই উপলব্ধি করা যায়।
মৌনতা রিতু
এরই নাম জীবন। জীবনের বাস্তবতা।
শুন্য শুন্যালয়
জন্ম-মৃত্যুকে খুব কাছাকাছি থেকে দেখি বলেই সব যেন গা সয়া হয়ে গিয়েছিল। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই প্রতিদিন, একটি করে নতুন দিন দেখানোর জন্য।
বেশ লিখেছেন আপু।