
ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে আমার অনুগল্প নিয়ে একটা বই বেরিয়েছে। ফেসবুকে আলোচনা, সমালোচনার ঝড় বইছে। ঐদিকে বই মেলা শেষ করে বাড়ি ফিরতে রাত হয়। ব্যাপারটা উপভোগ্য।
মা এটা নিয়ে চিন্তিত! বলে, মা সাবধান থাকবে। সময়ের স্রোতে গা ভাসাবে না। তবে, মানুষ চেনার প্রকৃত সময়।
: মা, তুমি টেনশন করোনা।
: না রে মা। টেনশন কি আর সহজে আসে?
: টেবিল ছেড়ে উঠবো। মা বললো, একটা লোক এসে তোকে খুঁজছিলো। এই নে, বলে কার্ড এগিয়ে দিলো। লেখা, ম্যাম! জি মেইলটা চেক দিয়েন।
এখন আর ফেসবুক, মেসেঞ্জার ঘাটতে ইচ্ছে করে না। দুনিয়ার রিকো ! মেসেজ ! তারপরও চোখ বুলানো। জি মেইল চেক দিয়ে দেখি, আন্দালিব নামের ছেলেটি ইন্টারভিউ নিতে চায়।
আনমনে ভাবি! এ আর এমন কি? কতো রং ঢং মেখে গল্প লিখি। সামান্য একটা ইন্টারভিউ ! ঐদিকে বই এর স্তুপ। অটোগ্রাফ দিতে হবে।
বিকেল ৪ টা। কলিং বেল।
সেজেগুজে স্মার্ট হয়েই ছিলাম। কিন্তু আন্দালিবকে দেখে, কেমন জানি পরিচিত আঙ্গিনায় হৃৎকম্পন বেড়ে গেলো।
অনুগল্প কেমনে লিখেন?
ব্ল্যাক ফ্রেমের চশমা আর খোঁচা দাড়ি ! আন্দালিব, এটা কী প্রশ্ন করলে? ( মনে মনে বলি)!
অনুগল্প হচ্ছে আধো আধো কথা ! তাইতো হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মতো বাঁশির বোলে লিখি।
: দারুণ বললেন তো !
আমিও কম যাই না। বললাম, এবার আপনিও এভাবে লিখে ফেলুন।
শুনে, ঠোঁটের কোণ দিয়ে হাসলো। এক গাদা প্রশ্ন করে গেলো। অথচ মেসেঞ্জারে প্রশ্নবোধক চিহ্নের অভাব নেই।
সাংবাদিক তো নয় ; শামুকের শেল!
এই বই এর নাম এটা রাখছেন কেনো? ঐটার প্রচ্ছদ লাল শাড়ি পরা মেয়ে কেনো?
উফ !
সৌন্দর্যের জন্য আকাশ কার কাছে ঋণী? আকাশ নীল না সাদা ভালো লাগে?
ভাবলাম বলি, তোমার কাছে?
অ্যাট্রপস কে জানেন?
ও মা! এই ছেলে তো আমাকে সব শিখাবে।
গুগলে সার্চ দিলাম। গ্রীক পূরানের নিয়তির দেবি। যখন যার সূতা কাটা যায় তার চরকায় ; তখনি সে মারা যায়।
মজার তো!
আজকের রাতের শেষ প্রশ্নটা ছিলো। আপনার গল্পের সব নামে “অ” থাকে কেনো?
লিখলাম stress আর কি!
পরদিন এসে শুনি, বাসায় এসেছিলো। মায়ের সাথে গল্প করে গেছে। নিয়ে এসেছিলো গাইবান্ধার রসমঞ্জরি।
আমি নিজেও বিমোহিত। এতো জানে আর বলার ভঙ্গি চমৎকার। চোখ তার নীল সমুদ্র। তুমুল জোয়ারে জোসনায় ভাসাবে।
আজকের প্রশ্ন : ” মানুষ আপন হয় কীভাবে? ”
বললাম, যখন একই সরলরেখায় থাকে।
মেসেঞ্জার ভরিয়ে দিতে চাই কাপলেট আর কোট লিখে। ভয়ে ভয়ে লিখি। আবার রিমুভ করি। এই যেমন আজ লিখেছি, ” থাকবে কী সাথে, যেমন থাকো অনুভবে? ”
কিন্তু আমি সত্যিই বলতে চাই। তারাটি খসে পড়ার আগে। আচ্ছা, মন পড়ে কীভাবে? ও চোখের আড়াল হলেই মনে হয় নিভে যায় শেষ প্রদীপ।
আমি এখন আর কোথাও যাই না। মেসেঞ্জার খুলে বসে থাকি। আর জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি, কখন চরণ ধ্বনি বাজবে!
আজ একটু উদার হয়ে বলুক না ; ” নতুন কিছু লিখছো কি? ঐ গল্পের নায়ক কি আমি?
কিংবা ” এতো ভালো লিখেছো! ইস ! সহ্য করতে পারছি না! “
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
চমৎকার পোস্ট আপু, খুব সুন্দর লিখলেন।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ ভাই
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু
সুপায়ন বড়ুয়া
“আজ একটু উদার হয়ে বলুক না ; ” নতুন কিছু লিখছো কি? ঐ গল্পের নায়ক কি আমি?
কিংবা ” এতো ভালো লিখেছো! ইস! সহ্য করতে পারছি না! “
এক ইন্টারভিয়ুতে কুপোকাত !
জমলো ভাল কাটুক ভাল দিনরাত।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
প্রেম ভাই প্রেম। বোঝা মুশকিল।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
পূর্ব পরিচিত এবং খুব ভালোলাগার একজন আন্দালিব তাইতো আপু? খুব রোমান্টিক গল্প। অসাধারণ লেগেছে বরাবরের মতই। নতুন করে দোলা দিলো পরিচিত আঙ্গিনায়। শুভ কামনা রইলো
আরজু মুক্তা
দিদি ধন্যবাদ। আন্দালিব সাংবাদিক। মনের গভীরে দিয়েছে দোলা।
হা হা।
শুভকামনা
তৌহিদ
তলে তলে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে নায়িকা সেটি আর মুখফুটে বলেনা। আশায় আছে কতক্ষণে কি বলবে নায়ক!
সর্বনাশা প্রেম!
আরজু মুক্তা
একদম সর্বনেশে প্রেম।
সামশুল মাওলা হৃদয়
চমৎকার লিখেছেন আপু
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ
ছাইরাছ হেলাল
“অনুগল্প হচ্ছে আধো আধো কথা ! তাইতো হ্যামিলনের বাঁশীওয়ালার মতো বাঁশির বোলে লিখি।”
অণুগল্পের সংজ্ঞা পাওয়া গেল!!
ছোট গল্প পেয়ে ভাকল লাগল। নিত্য-ই নুতন কিচ্ছু দিচ্ছেন/পাচ্ছি, এটাই অনেক আনন্দের।
তবে গল্পের শেষে একদম সাবান হয়ে গলে পড়া, মন্দ না।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ। সংজ্ঞাটা কি ভালো লেগেছে?
এটাতো পিয়ার্স সাবান না, একটু তেই গলে যাবে।এটা হচ্ছে বাংলা সাবান। ঘষলেও ফেনা উঠে না। আবার ক্ষয়ও হয় না।
ছোট গল্প, শেষ হয়েও হইলো না শেষ।
ছাইরাছ হেলাল
এটিও একটি সংজ্ঞা, সুন্দর তো।
গোলে না গেলে আর সাবান সাবান কেন !! গলতে তাকে হবেই, ধীরে সুগন্ধী ছড়িয়ে।
শেষ হবে না , শুধু শেষের ভাব নেবে!!
আরজু মুক্তা
দারুণ বললেন। সুগন্ধিতে মাতাল হোক
শুভকামনা।
খাদিজাতুল কুবরা
গল্পের নায়ক গল্পে থেকে যাক,
নতুন গল্পের সূচনা হোক।
সংলাপ গুলো দারুণ লিখেছেন আপু।
খুব ভালো লাগল
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ অশেষ। চেষ্টা করি অল্প স্বল্প
মোঃ মজিবর রহমান
সর্বনাসা সর্বনাসা
কি গো নায়কের আশা পথপানে
সখি ভালোবাসা কারে বলে!
সখি যাতনা এখানেই আছে!
অনুগল্প লেখার কৌশল জানা লাগবে বুঝতাছি। টেকনিক আপনার হাতেই আছে। আমার হইবনা।
আরজু মুক্তা
না, ভাই। আমি অতো ভালো লিখতে পারিনা। সবারটা পড়ে পড়ে চেষ্টা করি।
যাতনা না থাকলে ভালোবাসা হয় না।
শুভকামনা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
আসলেই আপু সব কিছুর যাতনা প্রয়জোন।
রেজওয়ানা কবির
ভাগ্যিস আন্দালিব এত প্রশ্ন করেছিল নাহলে এত সুন্দর অনুগল্প পড়তে পারতাম না। আর মানুষ আপন হয় কেন?এই প্রশ্ন আমাকে কুড়ে কুড়ে বিনাশ করে। উত্তর জানি না শুধু এই উত্তরটাই খুঁজে ফিরি সারাক্ষণ । শুভকামনা আপু।
আরজু মুক্তা
ধন্যবাদ। এতো সুন্দর করে কমেন্ট লিখলেন।
আপি, উত্তর কিনতু দিয়েছি। নীচের লাইনে।
আর বিনাশ হবেন না।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ইশ্ দেরি করে ফেললাম। না পড়লে তো চরম ধরা খেতাম। দারুন লাগলো। আমার এমন না পাওয়ার প্রেমই ভালো লাগে। না পাওয়ার অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতেই ভালো লাগে।
শেষ টুকু অসাধারণ। মাঝে মাঝে আপনি বোধহয় বেশি রোমান্টিক মুডে আসেন। এমন আরও কয়েকটা লিখুন মন ভালো করি।
শুভ কামনা। শুভ সকাল।
আরজু মুক্তা
রোমান্টিক মুড। কি জানি!
আসলেই না পাওয়ার প্রেমটা বড়। এমন অপেক্ষা আমারও ভালো লাগে।
ভালো থাকুন সবসময়।
শুভকামনা
সুরাইয়া পারভীন
এতো এতো মানুষের ভীড় ঠেলে
শেষে কি না সাংবাদিকের মেসেজের অপেক্ষা। যে এতো জানে আর বলার ভঙ্গি দারুণ তারই তো অপেক্ষায় থাকতে মন চায়। কিন্তু অপেক্ষা অনেক যন্ত্রণার। গল্পটি দুর্দান্ত লিখেছেন। শব্দ চয়ন দারুণ।
আরজু মুক্তা
কেউ বলে অপেক্ষা মধুর। কেউ বলে যন্ত্রণার।
তবে অপেক্ষার ফল মিষ্টি।
এতো এতো প্রশংসা শুনে বিমোহিত।
ভালো থাকবেন সবসময়।
শুভকামনা