জীবনভর মোটা মোটা বই পুস্তক মুখস্ত করিতে জীবন যৌবন অপব্যায় করিয়া শেষে উপলব্ধি করিলাম, ডাক্তার একটি অতি মামুলি ও সহজলভ্য প্রানী। তাহার দুইটি হাত এবং দুটি পা তুটি চোখ আর দুটি কান আছে। তবে তাহার মুখ নাই, পেট নাই, তাহার শরীরে রক্ত মাংস নাই।
হাজার হাজার টাকা খরচা করিয়া এত টেস্ট ফেস্ট করানোর কি দরকার? পাশের বাসার ভাবীও কোন কোন তরকারিতে ক্যান্সারের দাওয়াই আছে তাহা বলিতে পারে। মাথাব্যাথা হইলে প্যারাসিটামল না দিয়া পরীক্ষা দেয় একমাত্র পাস করিয়া কসাই হওয়া ডাক্তারগুলো। তার চাইতে যে “ডাক্তার” হাসপাতাল এলাকায় বহুবছর ধরে চাপরাসীর কাজ ও দালালী করিয়া আসিতেছে তাহারাই সবচে অভিজ্ঞ হয় ও ভাল ব্যাভার করিয়া থাকে। তাহারা পাচশ হইতে সাতশ টাকা ফি ও নেয় না। তাহারা অতি সস্তায় ও সহজে সর্ব রোগের চিকিৎসা করিতে সক্ষম।
এক সুহৃদ বন্ধুর দাঁতে ভীষন ব্যাথা জানিতে পারিয়া তাহাকে কইহিলাম- উহা তুমি ফেলিয়া দাও। অযথা কেন কষ্ট করিতেছো। বন্ধু জানাইল তাহার এলাকার এক পরিচিত নাম না জানা ব্যাক্তি দাঁত তুলিয়া অক্কা পাইয়াছিল। দাঁত তুলিবার বছর তিনেক পর সে ক্যান্সারে মারা গিয়াছিল। আরো খোঁজ নিয়া জানা যায় সেই দন্ত উৎপাটক আসলে ছিল এক রাস্তার পাশে “দাঁত তুলিবার দোকান” সাজাইয়া বসা কোয়াক। এর পর থেকে বন্ধু প্রবরের সমস্ত ডাক্তারদের প্রতি অবিচল ক্ষোভ আর ভয়।
জনৈক গেয়ানী বালস্য বাল হরিদাস পাল বলিয়াছেন- “তোমরাও আমার ন্যায় নিজ নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া খেমটা নাচ নাচিতে পারো।” তাহার ছ্যাচড়ামির প্রতিবাদ করিতে গেলে তিনি নিরুপায় হইয়া বলেন- “আমাকে জ্ঞান দিতে আসিও না। খোদা না করুক জ্ঞান পাইয়া আমার চক্ষু- কর্ণ খুলিয়া গেলে আমি আবোল তাবোল বকিয়া হিট খাইবো কেমন করিয়া”?
হরিদাসপাল কে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন তাহার ৯৫ বছর বয়স্কা নানীজানকে ডাক্তারেরা তেইশ বছরের যুবতীর ন্যায় সুস্থ অবস্থায় ফিরাইয়া দিল না কেন? তাহার নানী বছর পাচেক হয় গত হাইয়াছেন। কিন্তু বর্তমানে ডাক্তার পিটানো এবং গাইল্যানোর মউসুম চলছে। গরমে খিস্তি খেউড় করিলে কিঞ্চিৎ আরাম ও বোধ হয়। তাই আজ হঠাত করিয়া তাহার মৃতা নানীর জন্য বুকের ভিতরখানি হাহাকার করিয়া উঠে।
হরিদাসপাল আরো বলেন “আমি কিন্তু কলা খাই না। আমি কখনো ডাক্তার হইতে চাহি নাই,” তাহলে কি হইতে চাওহিয়াছিলেন জিজ্ঞাসিলে তিনি আগেবঘন কন্ঠে বলেন- “দেখুন এ জগতে কোনও পেশাই কোনটার চাইতে কম গুরুত্বপূর্ণ নহে, একজন মুচি মেথার কিংবা রিক্সাওালার অবদান ও এই সমাজে ডাক্তারের চাইতে কম নয়। তবে আমার এই “বালস্য বাল” উপাধীটি সবার চাইতে উপরে। তাহলে আপনার পুত্রকে কি মুচি বানাইবেন নাকি রিকশাচালক? – এই প্রশ্ন করিলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন- “ভাগ এখান থেকে আমাকে একটু শান্তিতে স্বমেহন করিতে দে ব্যাটা কসাই, রাগের চোটে উলটা পালটা করিতে গিয়া পেনিস ফ্রাকচার হইলে আমাকে কে বাঁচাইবে? একহাতে দন্ডখানি চাপিয়া ধরিয়া আমাকে সেই ডাক্তারের কাছেই ত যাইতে হবে, নাকি?”
১৭টি মন্তব্য
লীলাবতী
:D) :D) শেষ লাইন আমি দেখিনি আপু । খুব মজা পেলাম লেখা পড়ে । দারুন বংশ দন্ড প্রদান করিয়াছেন অনেককে 😛
সিনথিয়া খোন্দকার
সকল প্যাচানো ত্যানা খুলিলে এই বক্তব্য গুলাই পাওয়া যাইবে। আমার কোনও কৃতিত্ব নাই ইহাতে। 😀
স্বপ্ন
আপনি পারেনও বটে। এই অবব্যাস্থার সমাধান কি আপু?
সিনথিয়া খোন্দকার
সমাধান ডাক্তারদের “অতিমানব” কিংবা “কসাই” না ভেবে শুধুই মানূষ ভাবা।
সীমান্ত উন্মাদ
আই লাভ ডাক্তার। কারন আমি যতবার ডাক্তারের কাছে গেছি এবং আমার উন্মাদীয় কথাবার্তা আর তাহাদের অনেকের যন্ত্রপাতি টেষ্ট করতে গিয়ে ভাঙ্গার পরও তাহারা আমাকে কিছুই বলেননি, এমনকি ভিজিট নিলেও কোন প্রকার জরিমানা করেনি। আপনি যাহাই বলেন তাহারা আমার কাছে অতিমানব। 😛
সিনথিয়া খোন্দকার
আপনি মহা ভাগ্যবান। বলিতেই হয়। :p
জিসান শা ইকরাম
দেশে হরিদাসপালের সংখ্যা দিনদিন আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পাইতেছে । ইহারা ক্যানভাসের ন্যায় একই ঔষধে ২২ রকমের চিকিৎসার গ্যারান্টি প্রদান করিয়া থাকে । এদের প্রজনন ক্ষমতা অবাক করার মত । ইহাকে এক ধরনের রোগ বলা যায় , যাহা মহামারীর আকার ধারন করিয়াছে । অতি দ্রুত ইহাদের বংশ দন্ড কর্তন করা না হইলে হরিদাসপালে দেশ ভড়িয়া যাইবে ।
দারুন পোষ্ট দিয়েছেন সিনথিয়া ।
সিনথিয়া খোন্দকার
তারা সবচে আগে “ডাক্তার” এই সংজ্ঞা শিখুক- এটাই আশা।
খসড়া
দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েদের একাংশ ডাক্তার হয়। তাদের কেউ মানুষ ভাবে না। এই মেধাবী মানুষগগুলি সাধারন মানুষের হিংসার পাত্র।শুধু সাধারন কেন ডাক্তারের বাইরে সব পেশার মানুষই তাদের হিংসা করে কারন প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়েই সে ডাক্তার নয়।
লেখা পড়ে খুব মজা পেলাম।
সিনথিয়া খোন্দকার
একশো কথার এক কথা। (y)
রিমি রুম্মান
মজা পেলাম পরে… সুন্দর পোস্ট 🙂
সিনথিয়া খোন্দকার
অনেক ধন্যবাদ আপু। 🙂
প্রহেলিকা
হা হা হা !!! ওমা কত সুন্দর কইরা ল্যাখছেনতো দেহি আফনে। ডাক্তারের নাম হুনলেই আমার রোগ আরো বাইরা যায়, তার উফরে যদি হুনি দাঁতের ডাক্তার তইলেতো আর কোনো কথাই না এক্কেবারে বেহুশ!!! :D)
সিনথিয়া খোন্দকার
মাউন্টেইন ডিউ খাইবেন। কারন ভয়ের পরেই জয়। :p
শুন্য শুন্যালয়
একদম জায়গা মতো… 😀
আমি তো আপনার পাংখা হই যাতেছি রে আপু…
সিনথিয়া খোন্দকার
সময় পাই না আপু। নাহলে আরো অনেক কিছু লেখার ছিল এইসব হরিদাস পালদের নিয়ে। 🙁
ব্লগার সজীব
:D) :D) হোক ডাক্তার , নিজের চিকিৎসা নিজেই করবে :p কিভাবে লেখেন এমনি করে ? (y) -{@