
বিজ্ঞানের অভিনব অগ্রযাত্রায় তথ্য প্রবাহের প্রযুক্তিগত উন্নতিতে দিন দিন মানুষের যোগাযোগ সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠছে । দেশ বিশ্ব যেন হাতের মুটোয় চলে আসছে ক্রমশ । আর মানুষের জীবন থেকে সুখ দুঃখের সাত কাহনের লেখা চিঠি, চিঠির আদান প্রদান অনেকটা বিলুপ্ত হতে চলেছে । সেই নব্বই দশকের গোড়ার দিকে পর্যন্ত চিঠির আদান প্রদান ছিল । আমার কিছু ব্যাক্তিগত আবেগের কথা বলছি — আমি ১৯৮৯ ইংতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরীরত অবস্থায় ঢাকায় ছিলাম। আমার বন্ধুরা আমাকে চিঠি পাঠাতো আর তা দিনে কতবার যে পড়তাম তা বলে শেষ করা যাবেনা । মাঝে মধ্যে ওয়াস রুমে গিয়ে বসদেরকে ফাঁকি দিয়ে বার বার চিঠি পড়তাম ।
একসময় মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমের অন্যতম ছিল চিঠি । পিতা মাতা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী যখন একে অপরের দূরে থাকতো তখন সবাই তীর্থের কাকের মতো বসে থাকত কখন পোস্টম্যান চিঠি নিয়ে আসবে । প্রবাসীদের স্বজনদের চিঠি পাওয়ার পর সেকি আনন্দ আর উল্লাস ! সুন্দর হস্তাক্ষর, বিভিন্ন কবিতা গানের উদ্ধৃতি সিনেমার ডায়ালগ দিয়ে এবং বিভিন্ন কারুকাজ করে চিঠি লেখাটাও একটা আর্ট বা শিল্প ছিল । এতে করে মানুষের সুপ্ত অন্তর্নিহিত সুকুমার মননশীল সৃষ্টির প্রকাশ বিকাশ ঘটেছে এবং অনেক গল্প কবিতা ছড়ার মাধ্যমে শিল্প সাহিত্যের প্রকাশ এবং বিকাশের মাধ্যমে শিল্প সাহিত্যের জগতও যে সমৃদ্ধ হয়েছে তা অনস্বীকার্য । তখন আবার প্ত্রমিতালী ছিল যা তরুণ প্রজন্মকে বেশ আবিষ্ট করে রাখতো । এই মিতালী জীবন মিতালী পর্যন্ত গড়িয়েছে অনেকক্ষেত্রে । তখনকার প্রেমিক প্রেমিকাদের কথা আর নাইবা বললাম । যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ কাছে এলেও চিঠি লেখার প্রচলন ফুরিয়ে যাওয়ায় মানুষের আবেগ অনুভূতি সুকুমার প্রবৃত্তি প্রকাশের একটি সুন্দর ক্ষেত্র আমরা হারিয়ে ফেলেছি । এখন আর কেউ বলে না — চিঠি দিও প্রতিদিন , চিঠি দিও !
১৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
সব সহজ কিন্তু হৃদয় ও মানুষ অশান্ত হয়েছে ভাই। অপেক্ষার পালা শেষ হলেও কাছে পাবার জ্বালা রইয়েই গেছে কারণ সবাই এখন অস্থির ও বিশ্বাসহীনতায় দূরে চলে যাওয়ার পাল্লায় বেশি।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাই ।
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রযুক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নত ব্যবস্থাপনায় এখন চিঠি লেখা হয়ে উঠে না। অথচ একটা সময়ে মানুষ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষা করতো একটা চিঠির জন্য। কেউ হয়তো নিজে লিখতে/পড়তে পারেনা, কিন্তু তার-ও অপেক্ষা থাকতো,চেষ্টা থাকতো প্রিয়জনের চিঠি পেতে /কাউকে পাঠাতে।
শুভ কামনা 🌹🌹
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপু আপনার যুক্তিপূর্ণ মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আসলেই প্রযুক্তিগত যোগাযোগের কারণে চিঠির কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। শুভ কামনা রইলো।
ত্রিস্তান
বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ। এখন ও মানুষ কথা বলে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ করে। তবে এখন আর আগের সেই হৃদিক সম্পর্ক নেই। মানুষ এখন অনেক বেশি এককেন্দ্রিক।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
খুব চমৎকার কথা বলেছেন প্রিয় সুহৃদ — “তবে এখন আর আগের সেই হৃদিক সম্পর্ক নেই। মানুষ এখন অনেক বেশি এককেন্দ্রিক”। শুভ কামনা রইলো।
আরজু মুক্তা
চিঠি নাই বলেই না বলা কথাগুলো বলা হয় না।
নস্টালজিক পোস্ট। ভালো লাগলো
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলেই আপা চিঠি নেই বলে আমরা আমাদের না বলা কথা আর বলা হয়ে উঠে না। চিঠির মাধ্যমে যেভাবে মনের ভাব, ব্যাথা, চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করা যায় সরাসরি তা কখনোই সম্ভবপর হয়ে উঠে না। ধন্যবাদ।
হালিমা আক্তার
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের জীবনে গতি দিয়েছে। আধুনিক সভ্যতার আরাম-আয়েশ দিয়েছে। কিন্তু আমাদের সুকুমারবৃত্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। চিঠির ভাষায় যে আবেগ ছিল। তা এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবু বিজ্ঞানের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। শুভ কামনা রইলো।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আপা আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন বিজ্ঞান আমাদের আরাম আয়েশ দিয়েছে কিন্তু আমাদের সুকুমারবৃত্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আসলেই পড়াশুনার সময় মাকে চিঠি লিখতাম। বাবা টাকা পাঠাতো পোষ্ট অফিসে গিয়ে। সিগনেচার করার পর শেষের অংশটুকুতে কিছু লিখে দিতো। কতো ভালোবাসা মেশানো থাকতো তাতে। এখনও কিছু রয়েই গেছে পড়লে মন ভালো হয়।।
শুভ কামনা ভাই।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
আসলেই আপু সে সময় চিঠিগুলোতে — “কতো ভালোবাসা মেশানো থাকতো তাতে। এখনও কিছু রয়েই গেছে পড়লে মন ভালো হয়”।।
শুভ কামনা রইলো।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চিঠির বদলে এখন ভার্চুয়াল মাধ্যম চলে এসেছে। কিন্তু চিঠির আবেগ, অনুভূতি খুঁজে পাওয়া যায় না এখন আর। সব কেমন জানি বোধহীন লাগে। যারা চিঠির যুগ পেয়েছে তারা কখনো তাকে ভুলতে পারবে না আর যারা এটা পায়নি তারা বুঝবে না এর মর্মার্থ। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। অবিরাম শুভ কামনা
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
দিদি আপনার চমৎকার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ঠিকই বলেছেন — “ঃযারা চিঠির যুগ পেয়েছে তারা কখনো তাকে ভুলতে পারবে না আর যারা এটা পায়নি তারা বুঝবে না এর মর্মার্থ”।
শুভ কামনা রইলো।
ছাইরাছ হেলাল
আহারে!! এগুলো মনে করিয়ে দেয়া ঠিক না, কতশত স্মৃতি কত কত ঘটনা,
আর এখন এক চুটকিতেই খেল খতম।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
যাক ভাইয়া মধুর এবং চমৎকার স্মৃতিতে একটা টোকা দিতে পেরেছি। ভালোই লাগছে। শুভ কামনা রইলো।