১লা জানুয়ারী ১৯৮৮ ইংরেজী। আমি তখন ইন্টার প্রথম বর্ষের ছাত্র, গ্রামের বাড়িতেই থাকি। সকালে বাবা সেজ মামার সাথে নবীনগর গেছেন। মামা পুলিশে চাকরী করেন এবং বর্তমানে নবীনগর থানায় পোস্টিং আছেন। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানা। পরে একবার আমিও বেড়াতে গিয়েছিলাম বাক্ষ্মণবাড়িয়া থেকে তিতাস নদীর ইঞ্জিন চালিত বোটে করে। এ সেই তিতাস নদী যাকে নিয়ে কাব্য লিখেছেন কবি আল মাহমুদ। এখানে খুব সম্ভব চিত্র নায়ক আলমগীরের বাড়ি ছিল।( আমার সেজ মামা চাকরি জীবন শেষ করে সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে অবসর নিয়ে বর্তমানে অবকাশ জীবন যাপন করছেন।)
আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে ডলুনদীর পাড়ে দোকান ঘাটায় গিয়ে সমিতির অফিসে নোটিশ লাগিয়ে দিয়ে এসেছি। নববর্ষের শুভেচ্ছার নোটিশ। সামাজিক সমিতি, সমিতির নাম সোনাকানিয়া সোনা ছড়ি সংঘ (সোসোস)। উক্ত সমিতি স্থাপিত হয় গতবছর ১৯৮৭ ইংরেজী। আমি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সভাপতি হলেও সমিতির প্রায় সব দাপ্তরিক কাজ আমিই করি। সকালে অফিস খুলে পত্রিকা এনে টেবিলে রাখা থেকে প্রায় সব কাজই আমি করি। প্রচার সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদকের জন্য কাজ রেখে দিলে সমিতির গতি শ্লথ হয়ে একসময় সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। সভাপতির পদ বলে সম্মানের উচ্চাসন দখল করে গুটিয়ে বসে থাকলে সে সমিতি কখনো প্রাণ পাবে না। তাই আমি নিজের থেকেই সব করি। সেখান থেকেই সামাজিক কাজে আমার হাতে খড়ি।
যাই হোক, সমিতির শুভেচ্ছা নোটিশ লাগিয়ে আমি ডলুনদী পাড় হয়ে সাতকানিয়া গেলাম। সেলুনে সেভ করে বাড়িতে চলে আসি। দুপুরে ভাত খেয়ে নামায পড়ে আবার নদী পেরিয়ে ভোয়ালিয়া পাড়া হয়ে সাতকানিয়া যাই। সাতকানিয়া গিয়ে মোহামেড়ান স্পোটিং ক্লাবের খেলোয়াড়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। শহরে টেলিফোন করলাম। বেলা আড়াইটায় শহর থেকে মোহামেড়ান ক্লাবের খেলোয়াড়রা এসেছেন। তাদেরকে মির্জাখীল পাঠিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে গিয়ে সেখান থেকে মুকুল ভাইয়ের সাইকেলে করে মির্জাখীল চলে যাই। সেখান থেকে বড় হাতিয়া ইউনিয়নের কুমিরাঘোনা পাঁচকোণা মাঠ। এই মাঠের বিশেষত্ব হচ্ছে এটি পাহাড়ের উপর এবং এর পাঁচটি কোণা। তাই এই মাঠকে পাঁচকোণা মাঠ বলা হয়। বর্তমানে বায়তুশ শরফের যেখানে দুদিন ব্যাপী সিরাতুন্নবী/ওরশ/সভা হয় তার সামান্য পশ্চিমে সবুজে ঘেরা অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে মাঠটি খুব সম্ভব এখনো আছে। কক্সবাজার রোড হয়ে আসলে আধুনগর দিয়েও আসা যায় আবার চুনতি পুলিশ ফাঁড়ি দিয়েও আসা যায়। আমরা অবশ্য সোজা মির্জাখীল রোড দিয়েই আসা যাওয়া করি।
করিম ভাই শহর থেকে আমাদের টীমের জন্য মোহামেড়ান স্পোটিং ক্লাবের ছয়জন খেলোয়াড় হাইয়ার করে এনেছেন। চট্টগ্রামে তখন আবাহনী, মোহামেড়ান এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের বেশ রমরমা সমর্থক। আমার জেঠাতো ভাই আমার সমবয়সি জাহেদুল আলম জাহেদ তখন চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবের দূর্ধান্ত খেলোয়াড়।(আমার ভাই জাহেদ ১৪/১৫ বছর আগে মারা গেছেন, আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসীব করুন, আমিন।) পাঁচকোণা মাঠে কমিঠির সিনিয়র বড় ভাই নাসির ভাইয়ের সাথে দেখা।
ফুটবল বরাবরই আমার প্রিয় খেলা, তখনো, এখনো। আমি নিজেও ফুটবল খেলি। প্যারেড মাঠে ৩/৪ বছর আগে আমি ফুটবল খেলার একটি দূর্ধান্ত ভিডিও ফুটেজ কিন্তু এখনো অনলাইনে আছে!
বিকাল ৪ টায় খেলা শুরু, ৪.১৩টায় প্রথম গোল আমাদের বিপক্ষে যায়। তারপর দ্বিতীয় গোল। এসময় খেলার মাঠে হৈচৈসহ গোলমাল হয়। তারপর আবার খেলা শুরু। আবার গোলমাল এবং মারামারি। অতপর মেহমান খেলোয়াড়, ফারুক ভাই ও সেলিম মাস্টারসহ আমার বাড়িতে চলে আসি। বাড়িতে নাস্তা পর্বের পর খেয়োয়াড়দের বিদায়। ওরা মাইক্রোবাসে করে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায়। দুপুরে খেয়ায়াড়রা আসার সময় একই মাইক্রোতে শহর থেকে আমার বড় ভাইও এসেছিল।
দেখুন, ডায়েরি এমন একটি জিনিস এক লহমায় অতীতের একটি বিশেষ জায়গায়
হুট করে দাঁড় করিয়ে দেয়। অতীতের একমাত্র সাক্ষী এই ডায়েরি নামক বস্তুটি।
যা দেখে আমরা আমরা হাসতে/কাঁদতে পারি নিরালায়।
আপনি দাদা, ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কি নিজের ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে রাখেন? এটাও কিন্তু একটা ডায়েরি। ডাপা ডায়েরি থেকে বর্তমান যেই ডায়রিতে লিখলেন। এটা সোনেলা ডায়েরি। সেই ডাপা ছিড়ে গেলেও, এই সোনেলা ডায়েরি কখনোই ছিড়ে যাবে না, হারিয়ে যাবে না। স্মৃতি হয়ে নিজেদের কাছে কিনারেই ঘুরফাপ খাবে। যা দেখা যেবে গুগলে সার্চ করলেই।
শুভকামনা দাদা। ভালো থাকবেন আশা করি।
আমার নানাবাড়ি বি-বাড়িয়া, সেখানে গেলেই তিতাস নদীর পাড়ে মাঝে মাঝে যাওয়া হয়। নদীর পানিতে গ্যাসের প্রকোপ দেখি। আশেপাশের নলকূপ গুলোতে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আপনার ডায়েরীর পাতা খুলাতে একটি লাভ হলো, আপনি যে পুলিশের ভাগ্নে তা জানতে পারলাম। মামার মত আপনিও পুলিশে যোগ দেননি কেন? তার সহকারীর প্রায় সব কাজই যেহেতু আপনার জানা ছিলো, চাকরীতে ঢুকলে আপনার বেশি কিছু শিখতে হত না।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার ফুটবল খেলাটি অবশ্য নিয়মিত কোন খেলা নয়। বিকাল বেলার শরীর চর্চা বলতে পারেন। এ বয়সে তো আর টীমে খেলা সম্ভব নয়। তবুও ছোট একটি ফুটেজের লিংক দিলাম। খেলায় মাথায় সাদা ক্যাপ পরাটাই আমি। https://www.youtube.com/watch?v=HC8gFtXvwG8
আর লিংকের চ্যানেলে আমার অভিনীত একটি সর্টফিল্ম আছে কিন্তু। নাম NissaN. দেখে নিবেন আপু….
সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়লে মেঘনার পর তিতাসের সর্বশেষ লঞ্চঘাট রামচন্দ্রপুর। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী ও ঢাকার সাথে নৌ যোগাযোগের কারনে প্রসিদ্ধ বাজার। লঞ্চ ঘাটে দাড়ালে এখনও মিষ্টি পট্টির পিছনের অংশে ব্রিটিশদের করা নদীর পাড়ের ইটের দেয়াল ও ড্রেনেজ ব্যাবস্থা চোখে পড়ে।
আপনার ডাইরির পাতা আমাকে সেইসব মনে করিয়ে দিলো।
আর হ্যাঁ- ভিডিও লিংক পেলে সেই খেলাটা দেখার ইচ্ছে আছে।
চমৎকার স্মৃতি জমিয়ে রেখেছেন।
আশা করি আরও কপাতা আমাদের সাথে নিয়ে উল্টে দেখাবেন।
আমার ফুটবল খেলাটি অবশ্য নিয়মিত কোন খেলা নয়। বিকাল বেলার শরীর চর্চা বলতে পারেন। এ বয়সে তো আর টীমে খেলা সম্ভব নয়। তবুও ছোট একটি ফুটেজের লিংক দিলাম। খেলায় মাথায় সাদা ক্যাপ পরাটাই আমি। https://www.youtube.com/watch?v=HC8gFtXvwG8
পড়লাম আপনার ডায়েরি,
আসলেই মফস্বলের ক্লাব গুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সভাপতিরই সব দাপ্তরিক কাজ করতে হয়,
নইলে ক্লাব টিকিয়ে রাখা যায় না।
খেলার মাঠে মারামারি 🙂 ঐ বয়সে যেন চলে গেলাম আমি আপনার লেখা পড়ে।
১৭টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন, ডায়েরি এমন একটি জিনিস এক লহমায় অতীতের একটি বিশেষ জায়গায়
হুট করে দাঁড় করিয়ে দেয়। অতীতের একমাত্র সাক্ষী এই ডায়েরি নামক বস্তুটি।
যা দেখে আমরা আমরা হাসতে/কাঁদতে পারি নিরালায়।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
একদম ঠিক বলেছেন। ডায়রীর পাতা উল্টালে মনে হয় জীবন থেকে চলে যাওয়া বছরগুলো যেন টেনে টেনে চোখের সামনে আনছি।
আনমনা হয়ে যাই ……
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে প্লাসিত ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
নিতাই বাবু
আপনি দাদা, ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কি নিজের ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে রাখেন? এটাও কিন্তু একটা ডায়েরি। ডাপা ডায়েরি থেকে বর্তমান যেই ডায়রিতে লিখলেন। এটা সোনেলা ডায়েরি। সেই ডাপা ছিড়ে গেলেও, এই সোনেলা ডায়েরি কখনোই ছিড়ে যাবে না, হারিয়ে যাবে না। স্মৃতি হয়ে নিজেদের কাছে কিনারেই ঘুরফাপ খাবে। যা দেখা যেবে গুগলে সার্চ করলেই।
শুভকামনা দাদা। ভালো থাকবেন আশা করি।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
একসময় নিয়মিত ডায়রী লিখতাম। ৮/১০ বছর টানা লিখেছিলাম। এখন ডায়রী লিখার সময় কই?
ব্লগও ডায়রীর মতই, ঠিক বলেছেন।
আপনার জন্যও শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
সুরাইয়া পারভিন
স্মৃতিরা সব সময়ই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল হৃদয়ের মানসপটে।
চমৎকার স্মৃতির বিন্যাস
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
অনন্য অর্ণব
সমিতির নামটা বেশ চমৎকার ছিলো। তবে খেলাটা মনে হয় শেষ পর্যন্ত হারতেই বসেছিলেন। প্রিয় খেলায় হেরে যাওয়ার দুঃখে দিলেন প্রতিপক্ষকে ধোলাই😄😄
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আমাদের গ্রামের একটি খরস্রোতা ছোট খালের নাম সোনাছড়ি খাল। সেই খালের নামে আমরা সমিতি করেছিলাম। আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
আমার নানাবাড়ি বি-বাড়িয়া, সেখানে গেলেই তিতাস নদীর পাড়ে মাঝে মাঝে যাওয়া হয়। নদীর পানিতে গ্যাসের প্রকোপ দেখি। আশেপাশের নলকূপ গুলোতে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। আপনার ডায়েরীর পাতা খুলাতে একটি লাভ হলো, আপনি যে পুলিশের ভাগ্নে তা জানতে পারলাম। মামার মত আপনিও পুলিশে যোগ দেননি কেন? তার সহকারীর প্রায় সব কাজই যেহেতু আপনার জানা ছিলো, চাকরীতে ঢুকলে আপনার বেশি কিছু শিখতে হত না।
ইউটিউবের লিংকটা এড করে দিন। আমরাও আপনার স্বরনীয় মুহুর্ত গুলো দেখি 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
চাটিগাঁ থেকে বাহার
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
আমার ফুটবল খেলাটি অবশ্য নিয়মিত কোন খেলা নয়। বিকাল বেলার শরীর চর্চা বলতে পারেন। এ বয়সে তো আর টীমে খেলা সম্ভব নয়। তবুও ছোট একটি ফুটেজের লিংক দিলাম। খেলায় মাথায় সাদা ক্যাপ পরাটাই আমি।
https://www.youtube.com/watch?v=HC8gFtXvwG8
আর লিংকের চ্যানেলে আমার অভিনীত একটি সর্টফিল্ম আছে কিন্তু। নাম NissaN. দেখে নিবেন আপু….
এস.জেড বাবু
সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়লে মেঘনার পর তিতাসের সর্বশেষ লঞ্চঘাট রামচন্দ্রপুর। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী ও ঢাকার সাথে নৌ যোগাযোগের কারনে প্রসিদ্ধ বাজার। লঞ্চ ঘাটে দাড়ালে এখনও মিষ্টি পট্টির পিছনের অংশে ব্রিটিশদের করা নদীর পাড়ের ইটের দেয়াল ও ড্রেনেজ ব্যাবস্থা চোখে পড়ে।
আপনার ডাইরির পাতা আমাকে সেইসব মনে করিয়ে দিলো।
আর হ্যাঁ- ভিডিও লিংক পেলে সেই খেলাটা দেখার ইচ্ছে আছে।
চমৎকার স্মৃতি জমিয়ে রেখেছেন।
আশা করি আরও কপাতা আমাদের সাথে নিয়ে উল্টে দেখাবেন।
শুভকামনা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
আমার ফুটবল খেলাটি অবশ্য নিয়মিত কোন খেলা নয়। বিকাল বেলার শরীর চর্চা বলতে পারেন। এ বয়সে তো আর টীমে খেলা সম্ভব নয়। তবুও ছোট একটি ফুটেজের লিংক দিলাম। খেলায় মাথায় সাদা ক্যাপ পরাটাই আমি।
https://www.youtube.com/watch?v=HC8gFtXvwG8
এস.জেড বাবু
একটা লাইক মেরে দিলাম ভিডিওতে।
চমৎকার অভ্যাস
শরীর চর্চা এবং স্বাস্থ সুরক্ষা
দোয়া রইলো ভাইজান।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
ঐ চ্যানেলে আমার অভিনীত একটি সর্ট ফিল্ম আছে। সময় করে দেখে নিয়েন।
জিসান শা ইকরাম
পড়লাম আপনার ডায়েরি,
আসলেই মফস্বলের ক্লাব গুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সভাপতিরই সব দাপ্তরিক কাজ করতে হয়,
নইলে ক্লাব টিকিয়ে রাখা যায় না।
খেলার মাঠে মারামারি 🙂 ঐ বয়সে যেন চলে গেলাম আমি আপনার লেখা পড়ে।
শুভ কামনা।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
লেখা পড়ে সুন্দর মন্তব্যে খুশি হলাম।
আপনার জন্যেও শুভ কামনা রইল।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলো।