
চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের প্রতি নজর দেয়া সময়ের সেরা দাবী
একজন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী মিঃ হাসান নির্ধারিত কয়েকটি কঠিন ধাপ সফলভাবে পেরিয়ে পদোন্নতি লাভ করলেন। তার গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে-অন্য কিছু নয়। তিনি এখন ঊনিশতম গ্রেডের কর্মচারী, আগে ছিলেন বিশতম। ঊনিশ তম গ্রেডে পদোন্নতি মানে চাকুরী জীবনে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া তবে চতুর্থ শ্রেনী হতে তৃতীয় শ্রেনী নয়।
চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী মানে অফিস সহায়ক, পিওন, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ফরাশ, সুইপার, দপ্তরী ইত্যাদি। এদের বসের অভাব নাই। অফিসে সবাই এদের বস। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বস বটে-সেই সাথে উপরের ধাপের সহকর্মীদের আচরণ অনেক সময়ই বসসুলভ হয়ে থাকে।
চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উঁচু-নিচু সকলের কেমন যেন নেতিবাচক হয়ে থাকে। যদিও সব চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীরাই অষ্টম শ্রেণী পাশ নয় বরং গ্রাজুয়েশন করা অনেক লোকও এই পদে চাকুরী করছে। অথচ সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত আচরণের মুখোমুখি এদের হতে হয়। আবার আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা থেকেও এরা বঞ্চিত হয় অন্যদের তুলনায় বেশি।
আমাদের মিঃ হাসানের কথাই ধরেন। পদোন্নতি দিলেন চীফ বস। অথচ অফিস আদেশ পৌছানোর নাম করে প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে খুশি না করলেই নয়। এই স্যার আবার ভদ্রলোক মানুষ। মুখে কিছু চান না আবার ইশারায়ও বলেন না। যা বুঝার তা মিঃ হাসান সাহেব বুঝেছেন। তাই লম্বা সালাম ও সাথে কিছু হাদিয়া দিয়ে রক্ষা পেলেন।
হাসান সাহেবের মতো লোকেরা আমাদের দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সচেতন সকলে চান দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন হোক। মাঝে মাঝে ভিন্ন ভিন্ন অভিযানও আমাদের নজর কাড়ে। অথচ বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর মানসিক উন্নতি না ঘটিয়ে দুর্নীতি কতোটা নির্মূল করা সম্ভব তা প্রশ্নবিদ্ধ। ব্যক্তি পর্যায়ে তাক্বওয়ার অনুশীলন দুর্নীতি বন্ধে সবচেয়ে কার্যকর বলে আমি মনে করি।
আমাদের সমাজে স্বভাবের অভাবি ও বাস্তবিক অভাবি নামক দুটি শ্রেনী রয়েছে। স্বভাবের অভাবিরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকা স্বত্বেও দুর্নীতিতে জড়িত থাকেন। পক্ষান্তরে যারা সত্যিকার অর্থে অভাবি তাদের কথা বলাই বৃথা।
দুর্নীতি বন্ধে স্বভাবের অভাবিদের অভাব দূরীকরণে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সত্যিকারের অভাবিদের অভাব দূরীকরণেও প্রতিষ্ঠানিকভাবে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
► পদোন্নতি যোগ্য পদসমূহে উপযুক্ত প্রার্থীকে পদোন্নতি প্রদান করা যেতে পারে;
► পোশাক-পরিচ্ছদ, পোশাক ভাতা দেয়ার বিধান থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা দেয়া হয় না। যথাযথভাবে এই সুবিধাটা দেয়া যেতে পারে;
► একজন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী অফিসে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার পরেও অতিরিক্ত সময় কাজ করে থাকে। তাই ওভার টাইমের ব্যবস্থা করা সময়ের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন;
► বিভিন্ন ভাতা, প্রণোদনা ইত্যাদির ব্যবস্থা রেখে তাদের উৎসাহ যোগাতে হবে;
► চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা একটা বড় সমস্যা। আবাসন সমস্যা সমাধান করতে হবে।
► চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের চিকিৎসা, সন্তানদের পড়াশোনা ইত্যাদির ব্যাপারে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
কার্যকরী ও সময়োপযোগি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা সময়ের দাবী।
৭টি মন্তব্য
ইঞ্জা
প্রথমেই স্বাগতম জানাই সোনেলা উঠোনে।
আসি আপনার লেখার বিষয়ে, আপনার বিষয়বস্তু একান্ত অনুভূতি না দিয়ে সমসাময়িক হলে সবচাইতে ভালো হতো।
আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত আমি, চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকুরীজীবিদের প্রতি সরকারের খেয়াল রাখা উচিত, আসলে সত্যিকার অর্থে এদেরই বেশি দেখভাল দরকার, যদি এরা সত্যিকারের পৃষ্টপোষকতা পাই তাহলে এদের জীবনাচরণ আরও উন্নত হয়ে উঠবে।
এমন একটি পোস্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই, নিয়মিত এমন সব বিষয় নিয়ে লেখার অনুরোধ রইলো।
শুভকামনা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
সোনেলার উঠানে স্বাগতম আপনাকে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। একদম সহমত পোষণ করছি লেখাটার সাথে। চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের দেখে নাক না সিঁটকে তাদের নিয়ে ভাবা উচিত
সুপর্ণা ফাল্গুনী
স্বাগতম সোনেলার আঙ্গিনায়। প্রথমেই এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় তুলে ধরেছেন দেখে ভালো লাগলো। এসব কর্মচারীদের ও ঘুষ দিতে হয়, সবাইকে মান্য করে চলতে হয়, এদেরকেই শ্রমটা বেশি দিতে হয়, সবার বকাঝকা ও খেতে হয় উঠতে বসতে। এদের নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ঘুষ দেয়ার বিষয়টি সমূলে উৎপাটন করা খুব কঠিন কারণ এটি এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গেছে। সবাইকে তার প্রাপ্য পাওনা, সম্মান, যোগ্য পজিশন দিতে হবে, সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দিতে হবে, আইনের কঠোর প্রয়োগ থাকতে হবে তাহলেই এ থেকে পরিত্রাণের আশা করা যেতে পারে। ভালো থাকবেন সবসময় শুভ কামনা রইলো। শুভ সকাল
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর বিষয় নিয়ে ভাল লেখেছেন অনেক শুভ্চেছা জানাই
শামীম চৌধুরী
যদিও চাকুরী করি না তাই গ্রেড বুঝি না। তবে আপনার লেখায় চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারীদের যে দাবী বা অধিকারগুলি প্রস্তাব করেছেন তার সঙ্গে আমি সহমত।
আরজু মুক্তা
স্বাগতম সোনেলার উঠোনে।
আপনার পোস্টটির সাথে একমত। এরা অনেক অমানবিক জীবন যাপন করে। সরকার এদের দিকে সুদৃষ্টি দিবেন, এটা আশা করি।
দারুণ ও মানবিক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
হালিম নজরুল
আপনার লেখনিতে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।