জয় ফোনে কয়েক বার ট্রাই করার পরও সেই মুহুর্তে ফোনের অপর প্রান্ত হতে কেবল ফোন বিজি বলছিল।এ দিকে ফোনে খবর দিতে না পেরে জয়ের সমস্থ শরির ঘামে একাকার।দারোগা তার হাতের মোবাইল ও কাধে ঝুলানো ব্যাগটি নিয়ে আসতে এক সিপাহীকে অর্ডার করেন।সিপাহী তা নিয়ে এসে দারোগার টেবিলের উপর রাখলেন।সব ঝামেলা শেষ দারোগা বাবুর টেলিফোনে ফোন আসে।রাতের গভীরতায় চোখে তার ঘুমন্ত ভাব ,ফোনের রিং শুনে ফোনটি কানে ধরে স্যার স্যার বলে দাড়িয়ে পড়েন।
-জ্বি স্যার,জ্বি স্যার,জ্বি স্যা,হ্যা স্যার এক জন,জ্বি ভার্সিটির….ওকে স্যার এক্ষুনি করছি,,,আচ্ছা স্যার,কাউকে কিছু বলব না।ঠিক আছে স্যার।সালামুআলাইকুম স্যার।
দারোগা ফোনটি রেখে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে সিপাহীকে ধমক দিয়ে ফ্যানের সুইচটি বাড়িয়ে দিতে বললেন কারন টেলিফোনে হয়তো কোন বড় মাপের লোকের সাথে কথা বলতে বলতে ঘেমে সে জামা পিঠে একাকার।তারপর সে জয়কে ডেকে আনতে বললেন।জয় মাথা নীচু করে দারোগার সামনে এসে দাড়ালেন।
-তোর নাম জানি কি বললি?
-জয়,
-ও হ্যা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে,তা এখন পর্যন্ত কেউতো তোকে নিতে এলো না।ঐ দিকে উপরের অর্ডার হইছে তোকে এক্ষুনি rab এর হাতে তুলে দিতে।কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওরা আসবে,তোকে নিতে।
-কিন্তু কেনো স্যার আমাকেতো কোর্টে চালান করবেন বলেছিলেন তাছাড়া এখনতো রাত দশটা বাজে মাত্র।সকাল হওয়ার আগেই দেখবেন মা ঠিকই এসে পড়বে।
-তা আর হবে না,তোর নামে মামলা হয়েছে।
-মামলা!কেনো আমিতো কোন অপরাধ করিনি!
-অপরাধ করিসনি তা ঠিক আছে তবুও তুই অপরাধী।
-মানে,এটা কি মগের মুল্লুক নাকি!
-মগের মুল্লুক না ক্ষমতার মুল্লুক।
-আমার অপরাধের কি প্রমান আছে?
-প্রমাণ!সেতো মামলা করতে অবশ্যই লাগবে…।
দাড়োগার টেবিলে রাখা তার কাধে ঝুলানো ব্যাগ হতে একটি পিস্তল কিছু জিহাদী কাগজ পত্র বের করলেন।এ গুলো দেখে জয় চিৎকার করে বললেন।
-এ গুলো আমার না,
-তাতো আমি আর তুমি জানি কিন্তু কিছু ক্ষণ পর পত্রিকার সাংবাদিক আর rab জানবে এগুলো তোর ব্যাগের ভিতর থেকে পাওয়া গেছে।আর সকালে পত্রিকায় হেড লাইন আসবে জয় নামক একজন জঙ্গি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
দেয়ালের ওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ানো জয় ক্রোধকে সামলে নিজের চুলগুলোকে হাতের আঙ্গুলে টেনে চাপা ক্রন্দন রত ধীরে ধীরে ওয়াল ঘেষে বসে পড়েন।কিছু ক্ষণ পর আবারো দারোগার সামনে গিয়ে দাড়ালেন জয়।
-স্যার আমাকে ছেড়ে দিন আমি নিরপরাধ আমাকে ছেড়ে দিন…।
দারোগার মনে ভয় ঢুকে; rab এলে এই হারাম জাদা যদি কোন ঘাবলা করে তাই ও যাতে কোন কথা বলতে না সে জন্য তাকে রাম ধুলাই দিতে হবে,মনে মনে জপেই দারোগা হঠাৎ জয়ের চুলের মুষ্টি ধরে দামারদাম কয়েকটি ঘুষি মারলেন ওর চেহারায়।মা মা বলে জয় চিৎকার দিয়ে পাকায় লুটিয়ে পড়লেন সে।
মায়ের মন,চোখে একটু ঝিমুনি এসেছিল ওমনি হঠাৎ খোকা খোকা.. বলে খাবার পাশে নিয়ে বসে থাকা অর্ধ ঘুমন্ত হত ভাগী ফুলী।দরজা খুলে বাহিরের উঠোনে দাড়িয়ে ছেলের আসার পথ পানে চেয়ে রইলেন।ঠিক সে সময় বাড়ীর পাশে যাতয়াতের রাস্তা দিয়ে এক এলাকার খুব পরিচিত লোকাল পত্রিকার রিপোর্টার যাচ্ছিলেন ফুলীকে দেখে সে নিজেই কাছে এসে এতো রাতে এ ভাবে একা দাড়িয়ে থাকার হেতু জিজ্ঞাসা করলেন।
-কি খবর খালা,তুমি এতো রাতে কিসের জন্য দাড়িয়ে আছো?নিশ্চয় ছেলের জন্য?
-হরে বাজান।ছেলেডা হেই সকালে বের হলো এহনো এলো না।
-চিন্তার বিষয় রাততো কম হয়নি,আচ্ছা ঠিক আছে আমি ঐ ভার্সিটি হয়ে থানায় যাবো যদি দেখা পাই তোমার কথা বলবোনে।
-হ একটু খবর দিও।
মানুষ মানুষকে এ ভাবে কেউ আঘাত করে!দারোগা তার উপর এমন নির্যাতন চালিয়েছেন যে ওর নাক মুখ চেনার উপায় নেই রক্তে ভিজে গেছে শার্টটি।ঠিক মত তাকিয়ে থাকতেও পারছেনা সে,চোখে ঝাপসা ঝাপসা দেখছেন।হাটুর আঘাতের কারনে ঠিক মত দাড়াতেও পারছেন না।জেলের ভিতর দেয়ালে হেলান দিয়ে মাথা নীচু করে বসে রইলেন জয়।যেন এ দেশে প্রতিবাদী যুবক হয়ে জন্মানোটাই ভুল।
২০০৪ সালে ২৬ মার্চে জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের(র্যাব)জন্ম।জন্মের পর পরই এই ফোর্সের ব্যাটালিয়ন সমূহ সাংগঠনিক কর্ম কান্ডে ব্যস্ত থাকেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় এর মধ্যে প্রথম অপারেশনাল দায়িত্ব পায় ২০০৪ এ ১৪ই এপ্রিল তারিখে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান-রমনা বট মুলে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে। এর পর আবার র্যাব মূলত তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
২০০৪ সালের ২১শে জুন থেকে rab ফোর্সেস পূর্ণাঙ্গ ভাবে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করেন।সেই থেকে আজ পর্যন্ত দু-একটি বিচ্ছিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া মানুষের আস্তাবাজন সংস্থায় পরিনত হয়।অপরাধের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল দেশে বিশেষ করে অজানা এক ধর্মীয় শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।যা কন্ট্রোলে rab সহ অন্যান্য প্রশাসনিক সংস্থা গুলো ব্যার্থ হতে থাকে।এছাড়া rab এর একটি বিশেষ গোষ্টি টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন গুম হত্যার মত জগণ্য কাজ করতে থাকেন যা নারায়ণগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জের সেভেন মার্ডারে প্রমানীত এবং কিছু rab কর্ম কর্তা ও সদস্যদের ফাসির রায় হয়।(এ সম্পর্কে সোনেলায় আমার একটি পোষ্ট পড়তে পারেন)।তখন থেকে rab এর প্রতি মানুষের আস্থা কমতে থাকে যার জন্য কাউন্টার টেররিজম নামে একটি বাহিনীর সৃষ্টি হয়।
rab এর একটি দল থানায় হাজির হন।rab কর্ম কর্তাদের দেখে দারোগা দাড়িয়ে স্যালুট দিলেন।পাল্টা স্যালুটে জয়ের অবস্থান বদল।rab কর্ম কর্তা তার ব্যাগটি চেক করে দেখলেন অবৈধ অস্ত্রটির নীচে খয়রী রংয়ের একটি ডায়রী।ডায়রীটি হাতে নিয়ে পৃষ্টাগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে উল্টোতে থাকলেন হঠাং তার চোখে পড়ল জয়ের রানিং কিছু গৌরভময় অধ্যায়।সে অত্র ভার্সিটির বিরোধী দলীয় ভিপি।সামাজিক বিভিন্ন সংস্কৃতি ৴মানবতা৴উদারতা৴শিশু ভক্ত৴নিষিদ্ধ বৃদ্ধা শ্রম৴ইত্যাদিতে মাঠে ময়দানে অন লাইনে সয়লব উচ্চ কণ্ঠে একটি শ্লোগান “আমরা আমাদের পিতা মাতাকে কখনোই বৃদ্ধাশ্রমে দিব না”।ইত্যাদি সেবা মুলক লেখা গুলোতে চোখ বুলিয়ে বললেন৴সালায় নাস্তিক না আস্তিক কে জানে কিছুতো ভেজাল আছেই হয়তো…।
চলবে।
chobi:online
১২টি মন্তব্য
ইঞ্জা
দুঃখজক অধ্যায়টা তুলে ধরলেন মমি ভাই, এইধরণের পুলিশের কারণে কতো নিরীহ ছেলেরা হয় মরে বেঁচেছে, না হয় সন্ত্রাসী হয়ে গেছে, আর কি বলবো, দুঃখ হয়।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
এটাই দুঃখ আইন ব্যাবস্থা আমাদের খুবই অসেবা মুলক।ধন্যবাদ -{@
ইঞ্জা
এই দেশ অসভ্য হয়ে গেছে ভাই
জিসান শা ইকরাম
ক্ষমতার জোরে এমনি কত শত জয় নির্যাতনে হারিয়ে যায় আমাদের সমাজ থেকে।
নিরাপরাধ হয়েও পরিচিতি পান সন্ত্রাসী জঙ্গি হিসেবে।
ভাল লিখছেন মনির ভাই।
মৌনতা রিতু
আসলে বাস্তব পোষ্ট চোখের সামনে অনেক কিছুই স্পষ্ট। আসলে কি জানেন মনির ভাই, অনেক সময় দারোগারও কিছু করার থাকে না। পানিশমেন্টও খেতে হয়। সিনিয়ার অফিসার, রাজনৈতিক চাপ তো আছেই। তবে সব কিছু পিছনে ফেলে যেসব অফিসার নৈতিকবোধ নিয়ে কাজ করে, তারা অন্তত রাতে নিজের বিছানায় মুক্ত একটা নিঃশ্বাসের সাথে ঘুমোতে পারে। এইসব অপরাধবোধটুকু অফিসারদের মধ্যে থাকা উচিৎ।
ভাল পোষ্ট। ভাল থাকবেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিষয়টা হচ্ছে এমন আমি অসৎ বলে আর সবাইকে অসৎ হতে এমন কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই।কেউ না কেউতো আছেই যার মাঝে দেশাত্ব বোধ আছে তারা এক দিন জাগবেই।ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
পুলিশদের একাংশ এখন এই ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে নিজেরাই আরেক অপরাধের সংগে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ হওয়া উচিৎ ছিল সাধারনের আস্থার জায়গা, তার উলটা হয়ে গেছে। যাদের ব্যাকয়াপ নেই, তাদের অবস্থা শোচনীয়। কে দোষী, কে নয় তার পার্থক্যই পালটে দিয়েছে পুলিশ ও ক্ষমতা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঠিক বলেছেন।মাদক নির্মূলে এক শ্রেনী প্রশাসন উদাসীনতায় থাকেন।কারন মাদক বিক্রেতা এবং সরবরাহকারীর মাঝে পুলিশ প্রশাসনের বিরাট যোগসূত্র আছে যার কারনে মাদক এবং সন্ত্রাস বন্ধ করা সম্ভব হয় না।ধন্যবাদ -{@
ছাইরাছ হেলাল
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার সাথে
এখনকার অনেক কিছুই মেলাতে পারিনা।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ঠিক তাই যখন স্বাধীনতার ইতিহাস পড়ি তখন মনে হয় আজকের পুলিশগুলো পাকিস্থানী বর্বর।ধন্যবাদ -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
নিরপরাধ কতো মানুষ যে এভাবে হেস্তনেস্ত হয়েছে, কেউ খুণ না করেও খুণী হয়েছে।
আমাদের দেশের শাসনব্যবস্থাই তো দলীয় নির্ভর।
ভালো লিখছেন মনির ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
ধন্যবাদ দিদি -{@