
কে কী ভাবছেন জানিনা। কিন্তু আমি ভাবছি, রাষ্ট্রকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে একশ্রেনি না হয় মরিয়া। তারা গুজব রটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ? তাদের কী এতোটাই বোধ আক্কেল কমে গেলো যে খোদ রাজধানীর কেন্দ্রবিন্দুতে বসবাসকারীরাও এ ধরণের গুজবে প্রভাবিত হয়ে একটা মানুষকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে!
কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না, বরং মনে হচ্ছে সংঘবদ্ধভাবে একটা গ্রুপকে এ কাজে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। স্থানেস্থানে এরা অরাজকতা তৈরি করে মানুষকে তাৎক্ষনিক উস্কে দিয়ে নিজেরাই এসব ঘটনার জন্ম দিয়ে সটকে পড়ছে।
মনে আছে? কিছুদিন আগে বাসেবাসে মেয়েদের জামা কেটে দেয়ার ঘটনা খুব বেড়ে গিয়েছিলো?
তেমনি বেশ কয়েক টার্ম এমনও হয়েছে, হঠাৎ চারদিকে ধর্ষণের মহোৎসব শুরু হতো। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় অই সিরিয়াল মহোৎসবগুলো বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা ছিলো না, পূর্বপরিকল্পিত ঘটনারই রুপ।
আবার খেয়াল করে দেখুন, থেমেথেমে সাম্প্রদায়িক গুজবও পূর্বপরিকল্পিত ঘটনারই রুপ।
আর সেজন্যই গতরাত থেকে বাড্ডার ঘটনাটি আমাকে বেশ ভাবাচ্ছে।
রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপর তো কোন আশাই করতে পারিনা। রাষ্ট্র পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা, তাদেরও কোন কাজেরই আউটপুট নেই। তদন্ত তদন্ত করে কয়েকদিন দৌড়ঝাঁপ, তারপর মানুষের হল্লা থেমে গেলেই সব ফাইলবন্দি হয়ে হিমঘরে চলে যায়। এভাবে চালিয়ে আপনারা দেশটাকে মগের মুল্লুকে পরিণত করে চলেছেন।
আর যদি ধরেই নিতে হয় যে, না এটা গুজবেরই ফল। সাধারণ মানুষই ছেলেধরা সন্দেহে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে। তবে বলবো, তাহলে এদেশটি আর উঠে দাঁড়ানোর কোন উপায়ই রইলো না। যেখানে সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মানুষ দলবদ্ধভাবে একটি মানুষকে সাপ বিচ্ছুর মতো এভাবে পিটিয়ে, মাথা বরাবর লাত্থাইতে লাত্থাইতে মেরে ফেলছে, সেখানে এদেশটি আর কিছুতেই আলোর মুখ দেখবে না। ক্রমেই জাতিটি বর্বর আর হিংস্র জাতিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
কেনো এতো দ্রুততার সাথে মানবমনের এই অধঃপতন? এ বুঝার জন্য কি সমাজতত্ত্ববিদ হওয়া লাগবে? না, সুক্ষ্মভাবে একটু পিছনে তাকিয়ে দেখুন তো। রাজিব হায়দারকে মারার পর জনমনে কী প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো? তখনও মানুষ অতটা ধর্মান্ধ হয়ে উঠেনি। কারণ, ধর্মান্ধতার বীজ বপনকারীরা তখনও রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পায়নি। যেদিন থেকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা লাভ করে, সেদিনের পর থেকে তাদের চাষের সীমানা বিস্তৃত হতে হতে এখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যেও তা সম্প্রসারিত হতে শুরু করেছে। গত কয়েকবছরের পারিপার্শ্বিক অবস্থানের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে তা সহজেই অনুধাবন করতে পারবেন প্রত্যকেই।
মানুষের চিন্তাশক্তি লোপ পাচ্ছে। বুদ্ধি বিবেচনার ব্যবহার দিয়ে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা ক্রমশ কমছে। অল্পতেই হিংস্র হয়ে উঠছে। মানবিকবোধ ক্ষয়ে যাচ্ছে। বিকারহীন দানবে রুপ নিচ্ছে। এর ফল ভয়াবহরুপে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাতে যাচ্ছে।
চরম হতাশায় দিন গুনে চলেছি। ক্রমশ আমরা উন্নয়নের ধুসর চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছি।
১৪টি মন্তব্য
রাফি আরাফাত
এখন যা হচ্ছে তা দেখে মনে হচ্ছে এ যেন এক দুষ্টচক্র এর চক্রান্ত। সমসাময়িক বিষয়ে ভালো লাগলো লেখাটি ভাই।
ভালো থাকবেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
খুব সুক্ষ্মভাবে দেখলে স্পষ্টতই চোখে পড়ে দুষ্টচক্রের কার্যকলাপ। সমস্যা হচ্ছে দুষ্টচক্রটি যেখান থেকে দমন করার কথা সেখানেই চক্রটি বাসর সাজিয়েছে। এর মধ্যে যে দু’একজন ন্যায়ের পথে হাঁটতে চায়, ধাক্কা মেরে মুহূর্তেই তাকে খাদে ফেলা দেয়া হচ্ছে।
রাফি আরাফাত
একদম ঠিক বলেছেন আপু। ভালো মানুষ আজ এতো কম যে পড়ালেখা না করেও তাদের সংখ্যা আজ একজন গননা করতে পারবে।
শুভ কামনা
জিসান শা ইকরাম
এটি খুব পরিকল্পিত একটি কার্যক্রম মনে হয়।
দেশকে অকার্যকর প্রমানিত করার জন্য।
সরকার কেন যে এটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেনা, তার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
সরকার কেনো গুরুত্ব দিচ্ছে না বা মানবসম্পদ উন্নয়নে সরকার এতোটা অমনোযোগী কেনো তাই বুঝে উঠতে পারছি না!
ইঞ্জা
আপনি ঠিকই ধরেছেন আপু, এইসবই পূর্বপরিকল্পিত, কিন্তু এর এফেক্টটা গুরুতর, আমরাও কেমন সব গুজবেই কান দিই, এতো শিক্ষা দিক্ষা কই গেলো আমাদের, সরকারের নির্লিপ্ততাও আমাকে ভাবাচ্ছে আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, সরকারের নির্লিপ্ততা প্রশ্নবোধক! অথচ এর রেশ বহুকাল টানতে হবে।
ইঞ্জা
আল্লাহ্ তুমি রক্ষা কর।
তৌহিদ
আমার কাছে এটি পরিকল্পিত ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে কিছু কুচক্রী মহল এমন গুজব রটাচ্ছে এবং ঘটাচ্ছে। সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন এই মুহূর্তে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পরিকল্পিত ঘটনা কেমন টাইট দিতেই থেমে গিয়েছে দেখেছেন?
তৌহিদ
হ্যা আপু, একটা ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে অন্য ঘটনার জন্ম হয়। এটাই এখন এদেশীয় কালচার।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
না, এখানে ঠিক একথাটি প্রযোজ্য না। এখানে আমি গতদিনের মন্তব্যে যা বলতে চেয়েছি তা হলো, গুজবপ্রচারওয়ালা গোষ্ঠিটি টাইট খেয়ে একেবারে সোজা।
সাবিনা ইয়াসমিন
এক দূর্নীতিকে ঢাকার জন্যে নতুন দূর্নীতি জনসম্মুখে প্রচার করা এখন রাজনৈতিক কৌশলে পরিনত হয়েছে। যতবড় গুজব ছড়ানো হয়, তার আড়ালে আরও বড় কোনো ঘটমান অপরাধ লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটানো হয়। আমাদের দেশ ক্রমশই অস্থির পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।
আপনি নিয়মিত কেন লিখছেন না রুবা আপু?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমার লেখাটা আসলে এক ধরণের প্রতিক্রিয়া থেকে আসে। এজন্যই বোধহয় মাঝেমধ্যে থেমে যাই। লেখার হাত ভালো কী মন্দ অই চিন্তা থেকেও প্রতিক্রিয়া যখন মনকে আন্দোলিত করে তখন অটোই কলম হাতে চলে আসে।
ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।