
নামটা যদিও হবে করোনা আক্রান্ত, এরপরেও আমার মনে হলো এটাই উপযুক্ত হবে বলেই দিলাম।
আসলে কোভিড-১৯ করোনা আক্রান্ত হওয়ারই ঘটনা নিয়ে আসলাম আজ, ভাবলাম আমার অভিজ্ঞতা দিয়েই আপনাদের যদি উপকার হয় তাহলে ভালোই।
করোনাকাল যখন বাংলাদেশে শুরু হলো তার প্রথম এক মাস আমার পরিবারের সবাই ঘরে টাইট হয়ে রয়ে গেলাম, আমার আগে থেকেই উপলব্ধি ছিলো করোনা কি ধরণের আঘাত হানতে পারে এই দেশে, তাই করোনায় বন্দী হওয়ার বা লকডাউনের আগেই ঘরে দুই মাসের জন্য জরুরী সকল পন্য খরিদ করে ঘরে স্টক করেছিলাম, যার মধ্যে চাল, ডাল, ডিম, আলু, অল্প কয়টা মুরগী, মাছ ছিলো, তেল এমন কিছু আইটেম ছিলো স্টকে, প্লান ছিলো আগামী দুই মাস ঘরের ভাইরে যাওয়া হবেনা।
এক মাস পরেই ছেলেকে বের হতে হলো ওর অফিসের কাজে, প্রথম প্রথম দুই এক ঘন্টা, এরপর আধা দিন, শেষের দিকে এসে সারাদিন কাটাতে হতো বাইরে।
ও যখন বাইরে যেতো তখন যথাযথ ভাবে মাস্ক, ভালো কোয়ালিটির হ্যান্ড গ্লাভস সহ পুরা শরীর ঢেকে বের হতো, সাথে সবসময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার থাকতো, ও যখন ফিরে আসতো তখন পুরা শরীর মাথা মুখ এবং খোলা জায়গা ছাড়া ব্লিচিং পাউডারের তৈরি পানির স্প্রে মারা হতো, জুতার উপরে এবং নীচে মারা হতো।।
জুতা বাইরে খুলে আলাদা পলিব্যাগে নেওয়া হতো, এরপর মাস্ক, মানিব্যাগ আলাদা করে পলিব্যাগে নেওয়া হতো, ওর হ্যান্ড গ্লাভস আলাদা পলিব্যাগে নিয়ে দিয়ে দ্রুত জ্বালিয়ে ফেলা হতো।
সে ঘরে প্রবেশ করেই বাথরুমে প্রবেশ করতো, সেখানেই নিজের পড়নিয় কাপড় খুলে সাবান পানিতে ভিজিয়ে নিজে ফ্রেস হয়ে সব ধুয়ে এরপর গোসল সেরে বের হতো।
ওর যাবতীয় সকল কাপড় আলাদা রাখার ব্যবস্থা হয়েছিলো, এমন কি ওর ভেজা কাপড়ও আলাদা শুকাতে দিতো ও।
কিন্তু ঈদের তিন দিন আগে ও অফিস থেকে ফিরে এসে গোসল করে ইফতার করে বললো, ওর জ্বর জ্বর মনে হচ্ছে, এতে আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, দ্রুত ওর জ্বর মাপা হলো, তখন ১০০° হলেও রাতের মধ্যেই তা ১০২/১০৩° এ উঠে গেলো।
ঘরে আগে থেকেই ইমারজেন্সি হিসাবে নাপা এক্সটেন্ড, ফেক্সো রাখা ছিলো, তাই দেওয়া হলো।
পরদিন সকালেও দেখি জ্বর উঠে আর পড়ে, দ্রুত পরিচিত ডাক্তার কাজিনকে কল দিলে সে বললো জিমেক্স৫০০ শুরু করার জন্য প্রতিদিন একটা করে, সাথে নাপা এক্সটেন্ড চলবে।
মেডিসিন শুরু করার পরও একি অবস্থা, গিন্নি ছেলের কষ্ট দেখে নিজের জানের পরোয়া না করে প্রতিদিন দুই তিনবার ছেলের মাথা ধোয়া, জলপট্টি দেওয়া শুরু করলেন, আমি এবং মেয়ের উপর মার্শাল ল দিলেন কেউ ছেলের রুমের আশেপাশে যেতে পারবোনা, খাওয়া দাওয়া রুমে দেওয়া হবে।
এইভাবে ঈদের দিন পর্যন্ত চললো।
ঈদের দিন আমার এক ডাক্তার বন্ধু যে ঢাকার উত্তরা ল্যাবএইডে প্রাকটিস করে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে ফোন দিলাম, সে জানালো সেও করোনা আক্রান্ত কিন্তু সিনটম হলো খুব জ্বর ছাড়া আর কিছুই নয়।
আমি বললাম সে টেস্ট করেছে কিনা?
সে না বললো, সাথে এও বললো যার যায় হোকনা কেন, মানে জ্বর সর্দি কাশি যায় হোক তা সাধারণ হলেও করোনা হিসাবে ট্রিটমেন্ট হবে বিধায় সে টেস্ট করেনি কিন্তু বাংলাদেশে এই মুহূর্তের বহুল প্রচলিত চিকিৎসা সে নিচ্ছে, এবং ছেলের জন্যও তা দিয়ে দিলো বন্ধুটি।
তার প্রেস্ক্রাইবড মেডিসিন গুলো হলোঃ
Tab. Scabo, 6mg, 3 tab only one time,
Cap. Doxicap, 100 mg, I + 0 + 1, for 7 days, or, Tab. Azyth/zimax, 500mg, 1 tab, once daily for 5 to 7 days,
Ta. Zinc, three times a day,
Tab. Defrol, 1000iu, once daily
(ভুলেও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ না করে খাবেন না প্লিজ)
আমি আর দেরি না করে লোক পাঠালাম মেডিসিন গুলো আনার জন্য, তা আনিয়ে দ্রুত শুরু করে দিলাম।
মেডিসিন গুলোর সাথে প্রচুর পরিমানে জলিয় পানিয়, মোছাম্বী বা মাল্টা, কাগজী লেবু পানিয়, গরম লেবু চা, সাথে আদা লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ দিয়ে চা, গরম পানির ভাপ নেওয়া, গরম পানি লবন দিয়ে গলগলা চলতে লাগলো।
আল্লাহর অশেষ রহমতে ছেলে আমার মেডিসিন সেবনের ৩/৪ দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গেলো, যদিও মুখের স্বাদ নেই এখনো যা অল্প অল্প রিকভার হচ্ছে।
আমার কথা হলো আপনারা ভয় পাবেন না, মাথা ঠান্ডা রাখুন, নিয়মিত ডাক্তারগণের সাথে যোগাযোগ করে মেডিসিন সেবন করুন, তাহলেই সাধারণ জ্বর বা সর্দি কাশি হোক বা করোনা হোক, সুস্থ হবেনই।
শুধু মাত্র যারা অন্যান্য রোগে ভুগছেন, যেমন হাই প্রেশার, অতিরিক্ত ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, হাঁপানি আছে তারা দ্রুত ৩৩৩ ডায়াল করে সহায়তা চান।
মনে রাখবেনঃ ভয় নয়, সতর্কতায় প্রয়োজন।
সমাপ্ত।
জনস্বার্থেঃঃ
১৪টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সাধারণ ভুলভ্রান্তি গুলো বুঝিয়ে দেবার জন্য। এই পোস্ট টি সবার উপকারে আসবে বিশেষ করে যারা ভুক্তভোগী হবে। ভাইয়া আপনার ও আপনার পরিবারের সবার জন্য দোয়া রইলো। ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন
ইঞ্জা
জ্বি আপু, আমারও এই কথা, আমার লেখা পড়ে যদি মানুষ উপকৃত হয় তাহলে অসুবিধা কি?
ধন্যবাদ অনিঃশেষ আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে সাধারণ ভুলভ্রান্তি গুলো বুঝিয়ে দেবার জন্য।
ভাল লাগলো ভয়ে আতঙ্কে ছেলেকে আইসোলেশনে পাঠিয়ে মনোবল ভেঙে দেন নাই। সবাই পাশে থেকে
সুস্থ হতে সাহায্য করছেন।
আপনার ও আপনার পরিবারের সবার জন্য দোয়া রইলো। ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
,দাদা আমি সবসময় সচেষ্ট ছিলাম যেন কেউ আতংকিত না হই, বিশেষ করে ছেলের এবং নিজেদের নিরাপত্তা মাথায় রেখে এগুচ্ছিলাম, সাথে চাইছিলাম না ঘটনা জানাজানি হোক, এতে উল্টো আমরা মানষিক চাপে পড়ে যেতাম অন্যদের মাধ্যমে, সৃষ্টিকর্তা মহান, উনি সব ঠিক করে দিয়েছেন।
অনুরোধ করছি আমাদেরকে আপনার প্রার্থণায় রাখবেন দাদা, ধন্যবাদ।
তৌহিদ
যাক, ছেলে সুস্থ্য হয়েছে শুনে ভালো লাগলো। এখন সবারই সচেতন থাকতে হবে আরো বেশি। আর হ্যা শরীরে ব্লিচিং পানি ছিটাবেননা। সব কাপড় ছেড়ে সোজা বাথরুম এবং গোসল। পরনের কাপড় ২০ মিনিট সার্ফ এক্সেলে ভিজিয়ে রাখলেই এনাফ।
খাবার রুচি ফিরতে সময় লাগবে, তবে ঠিক হয়ে যাবে। সবার জন্য শুভকামনা দাদা।
ইঞ্জা
না সেইটা খেয়াল রেখেছি, যা মারা হয়েছে তা শুধু কাপড়ে, এরপরেও ভবিষ্যতে আরও এলার্ট থাকবো ভাই, ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
খুবি ভালো তথ্য দিলেন দাদা কৃতজ্ঞতা জানাই।
যাই হোক সুস্থ হয়ে উঠাতে খুশি হলাম।
আমাদের বাড়িতে এইভাবে খাবার মজুদ করে রাখা হয়েছিলো ওষুধসহ।
কাল থেকে আমার উপজেলায় কৃষি অফিসে ট্রেনিং পড়েছে। খুবি সাবধনতা ও সচেতনতা অবলম্বন করে চলতে হবে।
হ্যাঁ,
আমাদের আতঙ্ক না হয়ে সচেতন হতে হবে।
শুভকামনা দাদা।
ভালো থাকুক সবাই।
ইঞ্জা
জ্বি দাদা, আতংকিত না হয়ে সচেতন থাকতে হবে, তাহলেই জিতা যাবে এই মরণব্যাধি থেকে।
ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
আল্লাহ ছেলেকে আরও দ্রুত সুস্থ করে দিক এই প্রার্থনা জানাই।
খুব উপকৃত হলাম বিস্তারিত জেনে, যদিও খুব ভয়ে ভয় থাকি।
নিরাপদে থাকুন।
ইঞ্জা
আমীন।
ভাইজান, ভয় পেলে চলবেনা, বরঞ্চ এতে ক্ষতি বেশি।
শুভকামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
ছেলে বর্তমানে সুস্থ আছে জেনে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম ভাই।
কি একটা আতংক পেয়ে বসেছে আমাদের!
কঠিন এক অবস্থার সম্মুখীন আমরা সবাই।
বাইরে থেকে এসে সবকিছুতে এমন ভাবে নজর দেয়াও তো কঠিন আসলে।
যদিও সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
উপকারী পোষ্ট ভাই।
আপনার ও আপনার পরিবারের সবার জন্য শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান, আমাদের বুকে তো পানিই ছিলোনা এ কদিন, দোয়া রাখবেন।
এ সময় আতংকিত হওয়া যাবেনা মোটেও, মনে করুন এ সাধারণ সর্দি কাশি জ্বর, কোভিড নিয়ে চিকিৎসায় জড়িত ডাক্তারের নির্দেশনা অবশ্যই নিতে হবে এবং মেনে চলতে হবে, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
ধন্যবাদ ভাইজান।
আরজু মুক্তা
আতংকিত না হয়ে সাবধান হওয়াই ভালো
আপনার পরিবারের প্রতি থাকলো সমবেদনা
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, সত্যি আতংকিত না হয়ে সচেতন হওয়া উচিত।