
করোনার আগ্রাসী সময়ে আমরা প্রায় সবাই ঘরেই থাকছি, এইবারের রমজান চলছে অন্যান্যবারের চাইতে আলাদা, রাতে দেরি করে ঘুম, সেহরি, এরপর ঘুম, ঘুম থেকে উঠার কয়েক ঘন্টা পর ইফতার, কোন কষ্ট নেই, খাই আর ঘুমাই, মাঝখানে ওয়াক্তের নামাজ, এইতো আর কি?
যখন চট্টগ্রামে থাকাকালীন সময়ে সেহেরিতে আমাদের জন্য দুধ ভাত কম্পালসারি ছিলো, প্রতি সেহেরিতেই কলা আর দুধ সহযোগে দুধ ভাত আমার এখনো পছন্দের।
চট্টগ্রামে আরও কিছু জিনিস ফেমাস, তার একটি হলো মহিসের দুধে তৈরি দই, আহা তার কি স্বাদ, যখনই পেতাম এই দই দিয়ে ভাত খাওয়া হতো, এই দই আর গাভীর দুধের দইয়ের স্বাদ আকাশ পাতাল তফাৎ লাগে আমাদের।
আরেকটি হলো গোয়ালার তৈরি ফ্রেস মাখন, যা সেহেরির সময় গোয়ালা নিয়ে আসতো ফেরি করে করে, আব্বা নিতেন আমাদের জন্য, এখনো এর স্বাদ মুখে লেগে আছে।
এছাড়া আমাদের পরিবারের ট্রেডিশন হলো, সেহেরিতে আমরা সবজি মাছ খায়না, প্রতি সেহেরিতে মুরগী, গরু, খাসির মাংস, এখনো সেই ট্রেডিশন আমাদের রয়ে গেছে।
এখন আসি ইফতারে, ছোলার বুট ছাড়া চট্টগ্রামের কারোরই ইফতার শুরু হয়না, সাথে বেগুন, পিয়াজু, শরবত, হালিম, জিলাপি, পান্তারাশ, মাংসের কিমা দেওয়া আলুর চপ থাকবেই।
এইবারই ঐসবে ছন্দপতন হয়েছে, করোনাকালে যা পাই তাই খাই অবস্থা, এরপরেও মাংস বাদ যায়নি, যদিও দুধকলার ভাত, দই ভাত নেই পাতে, নেই সেইসব উৎসাহ, এরপরেও বাঁচতে হবে বলে দাঁত মুখ খিচে এইবারের রমজান পালন হচ্ছে।
আপনারাও ভুলেও ঘরের বাইরে যাবেননা প্লিজ, ঘরেই থাকুন, বেঁচে থাকুন।
শুভকামনা।
সমাপ্ত।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
৩৫টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
যেসব খাবারের কথা বললেন তাতে কি আর ভালো থাকতে দিলেন! মহিষের দুধের দধি খেতে মন চাইছে সাথে ফ্রেশ মাখন। আহ্। দুটোই পছন্দের তবে টক মিষ্টি দধি টা বেশী ভালো লাগে। এবারের সবকিছু ই অন্যরকম। কতদিন থাকতে হবে জানিনা , সরকার তো ব্যবসায়ীদের পাল্লায় পড়ে সব দোকান খুলে দিছে সামনে কি যে অপেক্ষা করছে ঈশ্বর জানেন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন শুভকামনা রইলো
ইঞ্জা
আজকাল মহিষের দধি পাওয়া যায়না, যা আসে তা দুধ হিসাবেই বিক্রি হয়ে যায়।
সরকার যা করেছে তাতে আমারও সায় আছে আপু, কারণ মানুষ না খেয়ে থাকতে থাকতে এক সময় হিংস্র হয়ে উঠবে, এছাড়া কতদিন মানুষ না খেয়ে থাকবে বলুন?
চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
চট্টগ্রামের ইফতারী সবাই মিলে করার
মজাটাই আলাদা ছিল। চনার সাথে মুড়ি
দুই খেজুর জিলাপী তো আছেই সাথে নানান পদ
এবার গৃহবন্দী রোজা সংযমীর প্রকৃষ্ট উদাহরন
হয়ে থাকবে। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
সত্যি তাই দাদা, চট্টগ্রামের খাদ্য রসনা আর কোথাও পাওয়া যায় কিনা আমার সন্দেহ আছে, প্রতি ইফতারে না না রসনা সামগ্রী দিয়ে ইফতার এক আলাদা পরিবেশের সৃষ্টি করে।
এইবারের রমজানই সত্যি সংযমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
ধন্যবাদ দাদা।
তৌহিদ
দাদা, চট্টগ্রামের মানুষের রসনাবিলাস সম্পর্কে যা জেনেছি তা কিছুটা আপনার মাধ্যমেই। আজ আবার নতুন করে অনেক কিছু জানলাম। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
আসলে এখন আর বাবা বেঁচে থাকাকালীন সেই আনন্দ সেহেরী, ইফতার কিছুতেই পাইনা। আর সে সময় যেসিব ফ্রেশ খাবার পাওয়া যেত এখন সেরকম পাওয়া যায়না। সব রেডিমেড আর ভেজালে ভর্তি।
বাবার এবং মা দুজনার জন্যই দোয়া রইলো। ভালো লাগলো লেখা পড়ে। শুভকামনা রইলো ভাই।
ইঞ্জা
সত্যি তাই, সেহেরি ইফতারে শুধু নয় চট্টগ্রামের রসনা বিলাসে বাংলাদেশের মানচিত্রে আলাদা এক স্থান দখল করে আছে যা জগত বিখ্যাত, আজকালকার ভেজালের দিনে সেইসব ম্লান হতে চলেছে।
আমার বাবা মার জন্য আপনাদের দোয়াই অনেক বেশি আমার জন্য, কৃতজ্ঞতা জানবেন ভাই।
ধন্যবাদ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
একসাথে সকলকে নিয়ে খাবার খাওয়ার মজাই আলাদা।
মহিষের দুধ মামার বাড়িতে খেয়েছিলাম সেই ছোটবেলা এখন আর খাওয়া হয়না।
তবে বাড়িতে গাভী আছে তাই দুধ আছে বারোমাস ঘিও আছে মাঝেমধ্যে ছানার ব্যবস্থা হয়।
.
শুভকামনা দাদা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন।
ইঞ্জা
মহিষের দুধের দধি এক সময় সারা বাংলায় বিখ্যাত ছিলো যা এখন করপোরেট দুনিয়ায় পাওয়াই অসম্ভব।
এক সময় দুধ জ্বাল দিলেই ছানায় ভর্তি হয়ে যেতো যা এখন আমরা শহরে পাইনা বললেই হয়, আপনি সেদিকে সৌভাগ্যবান দাদা।
ভালো থাকবেন।
শুভকামনা।
ফয়জুল মহী
অনেক ভালো আছেন । শোকর করেন আল্লাহের কাছে। অনেকে হিমসিম খাচ্ছে।
ইঞ্জা
সত্যি তাই, এই জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
ধন্যবাদ ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
আহা কত কষ্ট করে-রে না খেয়ে খেয়ে,
এবারে আসলে আমাদের অনেক কিছুই শিক্ষা দিয়েছে করোনা।
আপনিও সাবধানে থাকবেন, ভাই।
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাইজান, করোনাকালের কষ্ট প্রতিটি ঘরে ঘরেই।
ধন্যবাদ।
সুরাইয়া নার্গিস
ভাইজান চমৎকার একটা পোষ্ট পড়লাম।
চট্রগ্রামের ঐতিহ্য ও আপনাদের পরিবারের রেওয়াজ অনেক ভালো লেগেছে।
আমি অবশ্য দুধ তেমন পছন্দ করি না তবে আপনার গল্পে মহিষের দুধের দই শুনে একটা লোভ হচ্ছে।
দেখা যাক একদিন দুধ খাওয়ার চেষ্টা করবো, আমাদের এখানে মহিষের দুই পাওয়া যায় কিনা খোঁজতে হবে।
যদিও পাওয়া না যায়, গরুর দুধ দুধের দই খেয়ে ভাববো মহিষের দই খাচ্ছি 😋
ভালো থাকবেন ভাইজান।
ইঞ্জা
আপু সত্যি বলতে কি, এখন মহিষের দুধ গরুর দুধের সাথে মিক্সড হয়ে প্যাকেটজাত হয়ে যাচ্ছে, কারো ঘরে যদি মহিষ পালে তাহলেই হয়ত পেতে পারেন।
ধন্যবাদ আপু, সাবধানে থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
আমাদের এলাকায় মহিষ নেই, তাই এর দইই নেই। এর স্বাদ কেমন তাই অজানা বলতে গেলে। ভোলায় অবশ্য মহিষের দই পাওয়া যায়, দু একবার খেয়েছি অনেক বছর আগে, স্বাদ এখন আর মনে নেই।
যে বর্ননা দিলেন, এরপর মহিষের দই খাবার জন্য হলেও চিটাগাং যেতে হবে।
খাটি মাখন এখন আর স্বপ্নেও পাইনা ভাইজান। একটি সময়ে পেতাম বাস্তবেই। যার স্বাদ মুখে লেগে আছে এখনো।
স্মৃতিতে রমজান পড়ে ভালোই লেগেছে।
করোনাকালের বাসায় রোজার দিনগুলো আপনার মতই ভাইজান।
ভালো থাকুন, শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান, মহিষের দুধের দই যেমন ঘন হয়, তেমনি তার স্বাদ, মুখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ যা গরুর দুধের দইয়ে হয়না, সুযোগ থাকলে খেয়ে দেখুন।
এখন এই দই চট্টগ্রামে পাওয়া যায়না, কারণ সবই প্যাকেটজাত হয়ে মিক্সড হচ্ছে।
খাঁটি মাখন কলা পাতায় মুড়িয়ে বিক্রি হতো তখন, তাও এখন করপোরেট হয়ে গিয়েছে।
ধন্যবাদ ভাইজান।
নিতাই বাবু
এই করোনাকালে ভালো লিখেছেন, দাদা। এই ঘাতক করোনাভাইরাস এবারের সবকিছু কেড়ে নিয়ে গেল! জানা নেই পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ এবার কেমন হয়। তবুও আশা রাখি ভালোভাবেই যাতে হয়।
আমিও লিখবো আমার ফেলে আসা ছোটবেলায় পূজোর কিছু স্মৃতি নিয়ে। আশা করি দুই একদিনের মধ্যেই সোনেলায় পোস্ট করবো। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় দাদা।
ইঞ্জা
দাদা অপেক্ষায় রইলাম আপনার পূজোর স্মৃতি পড়ে নিজের স্মৃতিকে খুঁজে ফিরতে।
ভালো থাকবেন দাদা।
সুরাইয়া পারভীন
আমাদের তো তাও এতো সব জুটছে
অনেকেই তো পেট পুরে ভাতই খেতে পারে না ভাইয়া
ইফতারীতে ছোলা, বন্দি, বিভিন্ন রকম পকোড়া, পিঁয়াজু, চপ ঘরেই করছি।
আপনার ট্রেডিশলান রসনা বিলাস জেনে ভালো লাগলো।
ইঞ্জা
সত্যি তাই আপু, আমরা এই সময় তো যা খাচ্ছি বা পাচ্ছি তাই অনেক, সামনে কি হবে তা আল্লাহই জানেন।
ধন্যবাদ আপু।
সুরাইয়া পারভীন
ভালো থাকবেন ভাইয়া
ইঞ্জা
শুভকামনা আপু।
কামাল উদ্দিন
সেহরির “পান্তারাশ” জিনিসটা কিন্তু চিনলাম না ভাই।
কামাল উদ্দিন
সেহরির “পান্তারাশ” জিনিসটা কিন্তু চিনলাম না ভাই।ইফতারির “পান্তারাশ” জিনিসটা কিন্তু চিনলাম না ভাই।
ইঞ্জা
পান্তারাশ হলো মাংসের পুর ভরা রোল যা আবার ডিমে চুবিয়ে বিস্কুটের গুড়া মাখিয়ে ভাজা হয়, খেতে নরম এবং সুস্বাদু।
কামাল উদ্দিন
জীবনে কতো কিছই যে খাওয়া হলো না 🙁
সুরাইয়া পারভীন
কামাল ভাইয়া আমি বানাতে পারি এটা
যদি আপনি আমাকে ফটোগ্রাফি শিখান
তাইলে আপনাকে খাওয়াবো😋😋
ইঞ্জা
তা ঠিক, যেমন আমি দেশ বিদেশের এতো খাওয়া টেস্ট করেছি যা অনেকেই পারেননা।
কামাল উদ্দিন
তাহলে কোন একদিন গিভ এন্ড টেক হয়ে যাবে আপু 😀
আতা স্বপন
লেখাটা পড়ে ইফতার আর সেহরীল আইটেম গুলো খাওয়ার লোভ হচ্ছে। কিন্তু যেহেুত করোনার সময় অনেকের খাবার নাই । এই লোভ করাটা ঠিক হবে এখন? ধন্যবাদ ।
ইঞ্জা
এই করোনাকালে আমরা যা খাচ্ছি তা আল্লাহর নেক দান, আল্লাহ রাভুল আলামিন আমাদের হেফাজত করুন, আমীন।
হালিম নজরুল
লোভ হচ্ছে। কিন্তু করোনা বড় অন্তরায়।
ইঞ্জা
ভাই লোভে পড়ার কিছুই নেই, ঘরেই তো থাকেন নিশ্চয়, সময় পেলে লিখবেন। 😊
সাবিনা ইয়াসমিন
এতদিনে বুঝলাম আমাদের ইঞ্জা ভাইজানের এতো সুন্দর লাবণ্যময় রুপের রহস্য। অরিজিনাল বাটার সাথে মহিষের দই-ভাত! থাকতো খাসি, গরু, মুরগীর ভুনা গোসত। আর তেলে ভাজা ছোলা-পিয়াজু!
এগুলোই আপনাকে এতদিন তেল-চকচকে করে রেখেছে। এই করোনা এসে ভাইজানের খাওয়ার আইটেম কমিয়ে দিলো 🙁
দই আমার খুব পছন্দের ডেজার্ট। মহিষের দই খাইনি এখনো, তবে চান্স পেলে মিস করবো না।
শুভ কামনা ভাইজান,
ভালো থাকুন সব সময় 🌹🌹
ইঞ্জা
ওগুলো ছিলো ছেলেবেলার গল্প, যদিও এখনো রমজানে মাছ, সবজি চলেনা আমাদের, মহিষের দই অনেক বছর হলো চোখে দেখিনা, ফ্রেস মাখন, মাঠা এখন পাওয়াই যায়না, যদিও চট্টগ্রাম শহরেই একটি দোকানে ফ্রেস মাঠা পাওয়া যায়।
ভালো থাকুন আপু, ধন্যবাদ।