
চন্দনা টিয়া আকারে কাকের চেয়েও বড়। টিয়া প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে চন্দনা সবচেয়ে বড় টিয়া। এর দৈর্ঘ্য ৫৩ সে.মি.। দেহ সবুজ। পুরুষের গলায় লাল মালা ও থুতনির নিচে কালো। বিশাল লাল ঠোঁটের শেষ প্রান্ত কমলা। চোখ লেবুর ভিতরের অংশের মতো মাঝে কালো। সবুজ দেহের ডানার দুই পাশে লাল রঙের দাগ আছে। মোট কথা দেখতে খুবই অসাধারণ সুন্দর একটি পাখি!
বাংলাদেশে ৭ প্রজাতির টিয়া পাখি দেখতে পাওয়া যায়। সবগুলোই আমাদের দেশীয় বা আবাসিক পাখি। অঞ্চল ভেদে এই পাখিগুলোর বিচরণ। বাসন্তী লটকন টিয়া, ফুলমাথা টিয়া ও মদনা টিয়া সবুজ বনে পাওয়া যায়। এরা লোকালয়ে আসে না। আর বাকিগুলো লোকালয়ে থাকে। এরা আবার গ্রীন ফরেস্টে তেমন যায় না। এই সাত প্রজাতির টিয়াই ফলভোজী। তবে চন্দনা টিয়া ফুল বেশি পছন্দ করে। সূর্যমুখী ফুল ও বীজ চন্দনা টিয়ার পছন্দের খাবার। এ ছাড়াও পলাশ ফুলের মধু ও পাঁপড়ি চন্দনার খাবারের অংশ। রঙ্গিন ফল চন্দনার বেশ প্রিয় খাবার।
ইংরেজিতে কেন এই পাখির নাম আলেকজেন্ডার প্যারাকিট রাখা হলো তার একটি কারণ আছে। ইতিহাসের পাতা থকে পাওয়া যায় সম্রাট আলেকজান্ডার পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে এই পাখিগুলো ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেন, যেখানে এগুলো সম্ভ্রান্ত মানুষদের মধ্যে উচ্চমূল্যের শৌখিন পাখি ছিল এবং এগুলো তারা বড় খাঁচায় পুষত। তাই সম্রাট আলেকজান্ডারের নামানুসারে ১৭৬৬ সালে এই প্রজাতি টিয়ার নামকরণ করা হয় Alexandrine parakeet. বাংলায় চন্দনা। চন্দনার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ সম্ভ্রান্ত বংশীয়, অথবা অভিজাত দেশোদ্ভুত। বৈজ্ঞানিক নামটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় লাতিন শব্দ psittacula মানে তোতা আর গ্রিক eu মানে সম্ভ্রান্ত বা ভালো এবং patria মানে বংশ অথবা পিতৃভূমি। সুতরাং সম্ভ্রান্ত বংশীয়। ফ্রেঞ্চ প্রাণিবিদ Mathurin Jacques Brisson প্রথমে একে Psittaca Ginginiana বা La Perruche de Gingi অর্থাৎ The Gingi’s Parakeet বলেন ১৭৬০ সালে। যা কিনা দক্ষিণ ভারতীয় একটি শহর যেখানে একদা ফ্রেঞ্চদের ফাঁড়ি ছিল।
তৎকালীন সময়ে বন্দীদশায় এ পাখিকে খাঁচায় পুরে কথা শেখান হতো। জানা যায় যে যেসব পাখি বন্দীদশায় শিস দিতে শিখেছিল তারা পরবর্তীতে আর কথা বলতে পারেনি। সে আমলে সার্কাসের চাহিদা থাকায় এই পাখিকে ব্যবহার করে নানা রকম কসরত করিয়ে নেয়া হতো। ফ্রেঞ্চরা তৎকালীন পাখি শিকারীদের কাছ থকে জেনে ছিলেন যে অন্ধর অস্রবাদ উপত্যকার এবং গুজরাটের রাজপিপলা অঞ্চলের চন্দনা পাখি দ্রুত কথা শিখতে পারে। তাই তাদের চাহিদা ছিল বেশি। এই পাখির একটি বিশেষ গুণ হলো এর দুটো আঙ্গুল সামনে ও দুটো পিছনে, আর এই কারণেই এরা পা বা ঠোঁটের সাহায্যে যেকোনো জিনিস বেয়ে উঠতে পারে। আর একটি মজার ব্যাপার হলো, এরা মানুষের মতো খাবার বেলায় ডান বা বাম হাতি। বাংলায় এই পাখিকে হিরামন বা পাহাড়ি তোতা বা চন্দনা টিয়া বলা হয়।
ছবিগুলো ঢাকার রমনা পার্ক থেকে তোলা।
২৫টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
ছোটবেলায় আমার একটা চন্দনা টিয়া ছিল। আহ আমার কি আবেগ!
শামীম চৌধুরী
ছোটবেলায় আমরা অনেকেই টিয়া আসক্ত ছিলাম। আমিতো টিয়ার বাসার খোড়লে টিয়ার ছানা ধরার জন্য নারিকেল গাছে উঠতাম। এর জন্য মা’র কাছে অনেক পিটুনী খেতাম।
ছাইরাছ হেলাল
এ পাখির বিষয় জানলাম, কিন্তু আমরা বাড়িতে যে টিয়ে পাখি পুষি সেগুলো কোন প্রজাতির ?
তা তো এমন বড় না। আমাদের ও ছিল এক সময় টিয়ে পাখি।
শামীম চৌধুরী
আমরা বাসা বাড়িতে দুই ধরনে টিয়া খাঁচায় পুষি। একটা হলো রিং রোজড প্যারাকিট বা সবুজ টিয়া আরেকটা রেড-ব্রেস্টেড প্যারাকিট বা মদনা টিয়া। আমি সবগুলি টিয়া নিয়ে এক এক করে পাখি পরিচিতি তুলে ধরবো ব্লগে। সেখানে আরো সম্যক ধারনা হবে পাঠকদের।
সুপায়ন বড়ুয়া
কথা বলা টিয়া পাখি
নামটা তার চন্দনা
শখ করে পুষেছিল
প্রিয়তমা অঞ্জনা।
আপনার লেখায় নতুন করে
দেখার লোভ সয় না।
তাইতো আমার পাখি ভাইকে
জানাই শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা দাদাভাই।
রোকসানা খন্দকার রুকু
টিয়া পাখির এত প্রকার! ইংরেজি নাম কেমন করে হল? কত কিছু জানা গেল।
শুভ কামনা রইলো ভাইয়া।
শামীম চৌধুরী
আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা আপু।
ভাল থাকবেন।
দালান জাহান
সুন্দর পাখি বিষয়ক পোস্ট। কিন্তু আমার কখনও কথা বলা চন্দনা ছিলো না। আমার চন্দনারা ওড়ে গেছে কথা বলার আগেই।
শামীম চৌধুরী
হায় হায় ভাই বলেন কি? এর জন্য কে দায়ী?
হা হা হা….। আবার পেলে কথা বলিয়ে ছাড়বেন। আর যেন উড়ে যেতে না পারে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার বর্ণনায় কতকিছু জানলাম, দেখলাম চন্দনা/হিরামন নিয়ে। ওদের গায়ের রং টা খুব সুন্দর লাগে। এতো প্রজাতির টিয়া আছে তাইতো জানতাম না। অফুরন্ত ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ভাইয়া। মহা নবমীর শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইলো
শামীম চৌধুরী
দিদিভাই,
মহা বিজয়ার শুভেচ্ছা।
আমি সবগুলি টিয়ার এক এক করে পরিচিতি তুলে ধরে ব্লগে পোষ্ট দিবো।
খাদিজাতুল কুবরা
আমাদের গ্রামের বাড়িতে প্রায় ঘরে ঘরে চন্দনা টিয়া পোষে এখনো। পাখিটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি কথা ও শিখতে পারে। পাখিটি সম্পর্কে পড়ে অনেক স্মতি মনে পড়ে গেল।
শামীম চৌধুরী
কুবরা আপু,
আপনাদের গ্রামের বাড়ি কোথায়?
এরা দেশের সব অঞ্চলে নেই।
জ্বী ঠিকই বলেছেন টিয়া কথা শিখলে বলতে পারে। ময়নার মতন।
খাদিজাতুল কুবরা
আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার বর্ণনায় কতকিছু জানলাম, দাদা,
আপনার জন্য শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
শুভ বিজয়া দাদাভাই।
আপনার জন্য রইলো পুজোর শুভেচ্ছা।
ভালো থাকবেন।
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ দাদা, আপনিও ভালো থাকবেন সব সময় শুভ কামনা।
কামাল উদ্দিন
আপনার এই পাখি বিষয়ক পোষ্টগুলো আমাকে খুবই টানে। এখান থেকে আমি অনেক কিছুই জানছি……..ভালো থাকবেন বড় ভাই।
শামীম চৌধুরী
আপনাদের ভাল লাগা আমাকে আরো বেশী বেশী কাজ করার শক্তি যোগায়।
আরজু মুক্তা
চমৎকার পোস্ট। বিমোহিত আমি!
শুভেচ্ছার ফুলঝুড়ি।
শামীম চৌধুরী
কৃতার্থ আপু।
তৌহিদ
এই পাখি পোষার খুব শখ ছিলো আমার। কিন্তু খাঁচায় বন্দী পাখি আমার ভালোলাগেনা বলে এ কাজটি করিনি।
ভালো থাকুন ভাইজান।
শামীম চৌধুরী
শুনে খুব খুশী হলাম যে তুমি ছোটবেলা থেকেই সচেতন বলে। ধন্যবাদ
উর্বশী
আমার মেজোবোনের হাজবেন্ড অনেক রকমের পাখি পোষে।কিন্তু যে দুই জোড়া টিয়া পাখি তাদের নাম জানা ছিলনা। মিলিয়ে দেখবো আপনার লেখার সাথে কোন পাখি মিলে যায়।
দারুন পাখিদের নিয়ে তথ্যবহুল লেখা ভাইয়া।অনেক ভাল লাগলো।আমার ছেলের খুব সখ পাখিদের নিয়ে সময় কাটানো।বিড়াল,কুকুর,পাখি কিছুই বাদ দিবেনা। নতুন ফ্লাটে ওঠার পরে আর সুযোগ করতে পারলো না। বিজি হয়ে গেল।
যাই হোক পাখিদের সম্পর্কে দারুন জানা হচ্ছে।