লম্বা লম্বা শ্বাস নিচ্ছি।শান্ত করছি নিজেকে।দু’দিন যাবৎ মনটা খারাপ। এতটাই যে শান্তি পাচ্ছি না কিছুতেই। জীবনে এমন উদ্ভট কিছু ঘটে ক্ষমা করা যায় না নিজেকে। ফ্রয়েডীয় কোনো ব্যাখ্যাও দাঁড় করানো যাচ্ছে না।দূর-প্রবাসের এক বন্ধু শুধু জানে।কিছু বার্তা, কিছু বিষয় একান্ত আপনার।কাউকে জড়াতে হয় না।এখানে বন্ধুটি জড়িয়ে যায়।বন্ধু আমাকে প্রবোধ দেয়।কষ্টটা তাকেও ছুঁয়।আমার প্রাণের বন্ধু।মনের অবস্থা এতটা খারাপ হয়েছিল ভেবেছি এবার সবকিছু বাদ দিব। হঠাৎ কনিষ্ট এক বন্ধু ‘অমি’ আমার একটা কবিতা আবৃত্তি করে পাঠায়।একটু স্বস্তি পাই। মনে ভাবি এখনো ভালোবাসার কিছু মানুষ আছে।
বন্ধুত্ব এমন। যখন কেউ পাশে থাকে না তখন বন্ধুরা থাকে। পড়ালেখা কালীন সময় থেকে টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস।অনাদরে পড়ে ছিলো এতদিন ।আবার ফিরে আসাতে দু একজন নতুন বন্ধুর সাথে পরিচয়। এমন এক বন্ধুর আন্তরিক ইচ্ছায় ব্লগে লেখা।যা কখনো ভাবিনি আমি । একদম কিচ্ছু না জানা আমাকে ব্লগে নিয়ে আসে।কৃতজ্ঞতা তাঁকে।
বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ লিখতে গিয়ে অপার এক ফ্রেন্ডলি লাভ বা আত্মীক ভালোবাসার কথা মনে পড়লো।কুনাল বসুর গল্প। এত সুন্দর গল্প খুব একটা দেখা যায় না।গল্পটা গ্রামের তরুণ এক বাঙালি স্কুল শিক্ষকের সাথে জাপানি তরুণীর বায়বীয় প্রেমের এক অসাধারণ কাহিনি।গল্পের পরাবাস্তব এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে অপর্ণা সেন নির্মাণ করেছেন দারুণ রোমাঞ্চকর এক মিষ্টি মুভি।নাম ‘দ্যা জাপানিজ ওয়াইফ’।ছবিটা আমি দু’বার দেখেছি।কি অপরূপ চিত্রায়ণ। বলে বুঝানো মুশকিল। সুন্দরবন ও ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মাতলা নদী তীরের এক অজগা’য়ের স্কুল শিক্ষক স্নেহময় চট্টপাধ্যায়। আর জাপানের মিয়াগি নামক এক তরুণীর পত্রমিতালির সম্পর্ক নিয়ে ছবি।যা এক সময় ভালোবাসায় রূপ নেয়।
ইংরেজিতে দুর্বল স্নেহময় চিঠি লিখতে ডিকশনারির আশ্রয় নেয়।চিঠির অক্ষরে অক্ষরে দু’জনের জীবনের গল্প এগোয়।দৈনন্দিন জীবনাচরণ ,আশেপাশের পরিবেশ ,পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পরিচিতি চিঠির মাধ্যমেই একজন থেকেই অন্যজন জানে।চিঠির বর্ননা দৃশ্যপটে তুলে আনা হয়।কোনো একঘেয়েমি নেই।ঘটনার পরম্পরা আবিষ্ট করে রাখে পরবর্তী কি ঘটছে জানার।মিয়াগি স্নেহময়কে বিয়ের সিদ্ধান্ত জানান।তার আহবানে এক সময় ডাকের মাধ্যমে মিয়াগি স্নেহময়কে আংটি আর স্নেহময় মিয়াগিকে সিদুঁর-বালা পাঠায়।এই বিনিময়ের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের। দুই জন দুই দেশে কেউ জানে না তাদের সেই বায়বীয় বিয়ের কথা।গোপন রাখে বিয়ের প্রসঙ্গ স্নেহময় ।তাঁর মাসির কাছে।মাসির কাছেই মানুষ স্নেহময়। বিধবা মাসির সাথেই বসবাস।
স্নেহময়ের বিয়ের জন্য মাসি ব্যস্ত হয়ে পড়লে পনের বছর পর মাসি তা জানতে পারে তার বিয়ে হয়ে গেছে।প্রথমে না মানতে পারলেও পরে মেনে নেয় মাসি।গভীর মমতায় আত্মীক প্রেমে লালন করা দুজনের কথা শুনে মুগ্ধ হয় মাসি।কত ঘটনার ভিতর দিয়ে এগুতে থাকে জীবন।দেখা নাই,শুনা নাই এমন নির্মল মিষ্টি প্লেটোনিক ভালোবাসা। খুব সুখের সময় পার করছে দুজন। এমন একটা সময়ে এসে মিয়াগি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।অস্থির হয়ে যায় স্নেহময়।কি করবে বুঝে উঠতে পারে না।সে যে জাপান যাবে অমন আর্থিক সঙ্গতি নাই।দিগ্বিদিক হারিয়ে স্কুল থেকে বিনাবেতনে ছুটি নেয়।কারণ মিয়াগির চিকিৎসার জন্য নানান জায়গায় ছুটতে হয়।
ইউনানি,আয়ুর্বেদ,কবিরাজি,হোমিওপ্যাথি এবং শেষ পর্যন্ত এলোপ্যাথির মাধ্যমেও মিয়াগিকে সু্স্হ করে তুলতে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ। সেই জাপানে থেকেও স্নেহময়ের পাঠানো এসব ওষুধ বিনাদ্বিধায় পরম যত্নে সেবন করে।একবার এক প্রবল ঝড়ের মধ্যেও মিয়াগির জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে কলকাতায় ছুটে স্নেহময় ।ঝড়-বৃষ্টিতে ভিঁজে ভিঁজে নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হয়।ঘরে থেকেই চিকিৎসা নিতে হয়। নিভৃত পল্লী,বর্ষা চলছে কোথাও নিয়ে যাবার ব্যবস্থা নেই। কয়েকদিন প্রচন্ড জ্বরে ভোগে একসময় স্নেহময় নিজেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়।ইতোমধ্যে মিয়াগি সুস্থ হয়। খবর শুনে মিয়াগি সাদা শাড়িতে বিধবা পোশাকে অজগায়ে স্বামীর ভিটাায় ফিরে আসে।নানা বাস্তবতায় জীবদ্দশায় দেখা না হলেও মৃত্যুর পর ফিরে এসে প্রেমের নির্মল এক পরিসমাপ্তি ঘটায়।এভাবে ছবিটা শেষ হয়।
প্রেম কি প্রেমময় হতে পারে। কি দুর্নিবার।এ প্রেম তো বন্ধুত্বের। আত্মীক, দেহলেশহীন, কামগন্ধহীন বন্ধুত্ব।যেখানে থাকে শুধু আত্মার একত্রীকরণ।
বন্ধুত্ব নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন ভাই। খুব সুন্দর কথা মন ছুঁয়ে যায় — এখানে বন্ধুটি জড়িয়ে যায়।বন্ধু আমাকে প্রবোধ দেয়।কষ্টটা তাকেও ছুঁয়।আমার প্রাণের বন্ধু।মনের অবস্থা এতটা খারাপ হয়েছিল ভেবেছি এবার সবকিছু বাদ দিব। হঠাৎ কনিষ্ট এক বন্ধু ‘অমি’ আমার একটা কবিতা আবৃত্তি করে পাঠায়।একটু স্বস্তি পাই। মনে ভাবি এখনো ভালোবাসার কিছু মানুষ আছে।
—- ভালো থাকবনে। শুভেচ্ছা রইলো ভাই।
১০টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
চমৎকার অসাধারণ উপস্থাপন করলেন ভাইয়া। কিছু ভালোবাসা এমন করেই ধরা দেয়। স্নেহময়ের মৃত্যুটা কষ্টদায়ক। কার যাবার কথা আর কে গেল! শুভ কামনা রইলো
সাজেদুল হক
আসলেই। কষ্ট দিয়েই শেষ হয় জীবন।
শুভ কামনা। ভালো থাকবেন।
আলমগীর সরকার লিটন
অসাধারণ লেখেছেন দাদা
সাজেদুল হক
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন ।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
বন্ধুত্ব নিয়ে অসাধারণ লিখেছেন ভাই। খুব সুন্দর কথা মন ছুঁয়ে যায় — এখানে বন্ধুটি জড়িয়ে যায়।বন্ধু আমাকে প্রবোধ দেয়।কষ্টটা তাকেও ছুঁয়।আমার প্রাণের বন্ধু।মনের অবস্থা এতটা খারাপ হয়েছিল ভেবেছি এবার সবকিছু বাদ দিব। হঠাৎ কনিষ্ট এক বন্ধু ‘অমি’ আমার একটা কবিতা আবৃত্তি করে পাঠায়।একটু স্বস্তি পাই। মনে ভাবি এখনো ভালোবাসার কিছু মানুষ আছে।
—- ভালো থাকবনে। শুভেচ্ছা রইলো ভাই।
সাজেদুল হক
অশেষ কৃতজ্ঞতা।
অনেক সুন্দর করে বললেন।
শুভকামনা ।
ফয়জুল মহী
মহনীয় লেখা ।
সাজেদুল হক
ধন্যবাদ। শুভকামনা।
ভালো থাকবেন ।
আরজু মুক্তা
প্লেটোনিক লাভ এর উপর লেখাগুলো দারুণ ভাবে নাড়া দেয়।
আপনার এই লেখাটা অনেকদিন মনে থাকবে
সাজেদুল হক
খুব ভালো লাগলো আপনার কথা শুনে ।
আপনাদের মতামত উৎসাহিত করে।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা ।