
এক সপ্তাহ পরঃ
সকাল নয়টার সময় অনিকের ঘরের সবাই ব্রেকফাস্ট করছে, এই সময় কলিংবেলের শব্দ হলে ঘরের কাজের ছেলেটা গিয়ে দরজা খুললো, কিছু সময়ের মধ্যেই ও ফিরে এসে অনিককে বললো, ভাইজান দুইজন মানুষ এসেছেন আপনার সাথে দেখা করতে।
অনিক অবাক হয়ে বললো, কে এসেছেন জিজ্ঞেস করেছো?
সোহেল সাহেব।
ওহ আচ্ছা আসছি, উনাদেরকে বসাও আর কফি আর বিস্কিট দাও।
অনিকের বাবা চিন্তিত স্বরে বললেন, সোহেল চৌধুরি এইখানে, কি ব্যাপার অনিক, কোনো সমস্যা নাতো?
না বাবা কিসের সমস্যা হবে, আমি উঠছি, দেখি গিয়ে।
আমিও আসছি বলে অনিকের বাবা পিছন পিছন গেলেন।
ওদিকে ছায়াও চিন্তিত হয়ে উঠে গেলো।
অনিক ড্রয়িংরুমে এসে অবাক হলো সোহেল চৌধুরির সাথে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব সাহেবকে দেখে, মুলহে বললো, কি ব্যাপার, আপনারা দুজন এইখানে?
মি. অনিক প্লিজ বসুন আপনারা।
জ্বি বসছি, কি খাবেন বলুন?
আসলে আমরা খেয়েই বেরিয়েছি, সচিব সাহেব আপনার সাথে কথা বলতে এসেছেন।
জ্বি বলুন।
স্যার আসলে আমার বড় ভুল হয়ে গেছে, বলেই উনি কিছু কাগজ এগিয়ে দিয়ে বললেন, আপনাদের সব কাগজ আমি একদম ঠিক করে দিয়েছি, এখন আর কোনো ঝামেলা হবেনা।
অনিকের বাবা অনিকের কাছ থেকে কাগজ গুলো নিয়ে পড়তে শুরু করলেন।
আর এই চেকটি নিন প্লিজ, আপনার টাকাটা ব্যাংকে জমা আছে, আজই তুলতে পারবেন চাইলে।
অনিক দেখলো পুরা টাকার চেক দিয়েছে উনি।
কি ব্যাপার, টাকাটা ফেরত দিচ্ছেন কেন?
স্যার আমার ভুল হয়েছে, ক্ষমা করে দিন, আপনি যে স্যারদের ঘনিষ্ঠ আগে বললে এই ভুল হতোনা, আমি এখন উঠছি।
কিছু খেয়ে যান।
না না, ধন্যবাদ আর কোনো খাতির করতে পারলে জানাবেন।
আচ্ছা।
সচিব বেরিয়ে গেলে অনিক সোহেল চৌধুরির দিকে অবাক হয়ে তাকালো।
কাজের ছেলে কফি দিয়ে গেলে একটা চুমুক দিয়ে সোহেল চৌধুরি বললো, আপনার অবাক হওয়ার কিছুই নেই মি. অনিক, ওদের সবার চেয়ার আমাদের হাতের ইশারাতে থাকে, এই ভয়েই ওরা টাকাটা ফেরত দিয়েছে, আমরা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারিনা।
কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো ভাই, আপনারা এইভাবে হেল্প করতে থাকলে আমি লজ্জিত হবো।
না আপনাকে লজ্জিত করতে চাইনা মি. অনিক, সময় হলে আপনিও আমাদেরকে হেল্প করবেন, কি করবেন না?
সিউর।
তাহলে আজ উঠি।
জ্বি আবারও ধন্যবাদ।
সোহেল চৌধুরি বিদায় নিলে অনিকের বাবা জড়িয়ে ধরলেন ছেলেকে।
বাবা তুমি খুশি তো?
খুব খুশি হয়েছি।
চল ভিতরে চল, খুশির খবরটা তোর মাকে দিয়ে আসি।
চলো বাবা।
এই শুনছো, অনিকের মা, রবিন তোরা কোথায় বলে অনিকের বাবা হাঁক ছাড়লেন, মা ছায়া একটু সবাইকে ডাক দাও তো।
সবাই এলে অনিকের বাবা খুশির খবরটা জানিয়ে বললেন, আজকে আমার ছেলেটার কারণে আমাদের বাড়িটা রক্ষা পেলো, অনিকের মা তুমি আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করো আগামীকাল, আমার ঘরে নতুন বউ এসেছে, সেই হিসাবেও তো একটা অনুষ্ঠান করতে হয় নাকি?
বাবা এসবের দরকার নেই, আমি তো আর এখন নতুন নেই, ছায়া লজ্জিত মনে বললো।
না না, তুমি এই ঘরে প্রথম এসেছো, তাই তোমাকে বরণ করে নেওয়ার জন্যই অনুষ্ঠান আয়োজন হবে, অনিক তুই তোর বন্ধু বান্ধবদের দাওয়াত দিয়ে দে।
বাবা আমার বান্ধবীদের দাওয়াত দেবোনা, সায়মা আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
না না ঐ পেত্নীদের দাওয়াত করার দরকার নেই, রবিন মুচকি হেসে খোঁচা মারলো ছোটো বোনকে।
বাবা, দেখছো ও কি বলে?
অনিকরা সবাই হো হো হা হা করে হাসতে লাগলো।
রাতে সবাই যখন ঘুমাতে গেলো তখন অনিক রুমে বসে আছে ল্যাপটপ নিয়ে, অনলাইনে লেভিনের সাথে কথা বলছে।
কবে আসবে তোমরা, ইংরেজিতে লেভিনের জিজ্ঞাসা?
আগামী পরশু আমার বাবার এঞ্জিওগ্রাম হবে, এরপর দ্রুতই ফিরে আসার চেষ্টা করবো বন্ধু।
ওকে, এদিকে ফিলিপাইন থেকে নতুন বায়ার কন্টাক করেছে, ওদেরকে তোমার জন্য ওয়েট করিয়ে রেখেছি।
কি বলো, ওদের ডিটেইলসটা পাঠাও তো আমাকে।
আমি স্ক্যান করে রেখেছি, তোমার মেইলে দিচ্ছি।
ওকে, আর কোনো নিউজ আছে?
হাঁ, তোমাকে আরও কিছু ডকুমেন্টস পাঠাচ্ছি, তুমি ইলেকট্রনিক সিগ্নেচার করে পাঠিয়ে দিও।
ঠিক আছে বন্ধু।
ওকে নাও আই এম সাইনিং অফ।
টেক কেয়ার, বাই, বলে অনিক ল্যাপটপ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো, কিছু সময় পর ছায়া বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে।
কি ব্যাপার, তুমি এতক্ষণ বাথরুমে কি করো?
এই ফ্রেস হলাম, ব্রাশ করলাম।
তাই বলে এতক্ষণ?
সাহেব, মেয়েদের সবকিছুতেই একটু আধটু সময় লাগে জানেন না?
ধ্যাত বিরক্তিকর।
ছায়া মুচকি হেসে অনিকের পাশে এসে বসলো।
আচ্ছা তোমার কি মনে হয়, আমরা বাচ্চা এতিম খানা থেকে নিয়ে নিলে ভালো হতোনা?
না বাবু, ওসব তুমি বাদ দাও, আমরা আমেরিকায় গিরে গেলেই বাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে সিরিয়াস হবো।
অনিক বিরক্ত নিয়ে বললো, তুমি অসম্ভবকে সম্ভব করতে বলছো তা কি বুঝতে পারছোনা?
এ বিষয়ে আমার ডাক্তারের সাথে কথা হয়েছিলো যখন অপারেশন হচ্ছিলো আমার।
অনিক আগ্রহ ভরে জিজ্ঞেস করলো, তা ডাক্তার কি বলেছিলো?
ওরা আমার জরায়ু পুরা কেটে ফেলেনি, যতটুকু এফেক্ট হয়েছিলো ততটুকুই কেটে বাদ দিয়েছিলো।
তো?
এতে আমার বাচ্চা নেওয়ার ক্ষমতা রয়ে গেছে।
তাই?
জ্বি হাঁ অনিক সাহেব, আচ্ছা শুনোনা?
কি বলো?
আমার না ড্রিংক্স করতে ইচ্ছে করছে।
এখন?
হাঁ, বের করোনা ঐটা যেটা তোমার বন্ধু দিয়েছিলো গত সপ্তাহে?
গ্লাস আছে?
আমি নিয়ে আসছি।
ওকে সাথে বরফ নিয়ে এসো।
কিছু সময়ের মধ্যেই ছায়া বরফ আর গ্লাস নিয়ে ফিরলে অনিক জিজ্ঞেস করলো কেউ দেখেছে কিনা?
নাহ কেউ দেখেনি।
অনিক আগে থেকেই বদকার বোতলটি বের করে রেখেছিলো, গ্লাসে বরফ দিয়ে বদকা ঢালতে শুরু করলে খেয়াল করলো ছায়া কয়েকটা লেবু কাটছে।
এ কই পেলে?
ফ্রিজে ছিলো নিয়ে এসেছি।
খুব ভালো, দাও লেবু দাও আমি নিংড়ে নিচ্ছি।
ড্রিংক্স করা অবস্থায় ছায়া বললো, অনিক আমার কি মনে হয়?
কি মনে হয়?
আফরিন তোমাকে ভালোবাসতো?
কি আবোলতাবোল বকছো, এক পেগেই ধরে গেলো তোমার?
নাগো, ধরবে কেন?
তাহলে এমন কথা বলছো কেন?
আমি কয়েকটা সিনটম দেখেই বলছি।
কি দেখেছো?
যেদিন তোমাকে মেহেন্দি দিচ্ছিলো তখন ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো?
ওতো চোখ জ্বলছিলো বলেই এমন হয়েছে?
নাগো বুঝলেনা, ও সময় আর কারো তো চোখ জ্বলেনি?
শুনো ছায়া, ও আমার এমপ্লয়ি আর ভালো বন্ধুও আমাদের, অযথা ও আমাকে কেন ভালোবাসতে যাবে?
ছায়া চুপ করে রইলো দেখে অনিক আবার বললো, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, আমি বিবাহিত, ওসব কথা মাথায়ও আনবেনা।
ছায়া সেকেন্ড পেগ শেষ করে বললো, এখন রাখো এইসব, চলো এখন, আমি তোমাকে ভালোবাসা দেবো।
অনিক মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে ছায়ার পাশে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগুলো।
………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
হুম এদেশে এখনো সৎ অফিসার আছেন বটেই। যাক অনিকের বাবাও এই খুশির খবরে ভালো হয়ে উঠছেন। তবে আমি চাই অনিক আর ছায়ার ইচ্ছে পূরণ হোক। নিজের স্বামীদের গোপনেও কেউ ভালোবাসুক এটা কোন স্ত্রীই সহ্য করতে পারেনা।
ভালো থাকুন দাদা।
ইঞ্জা
সৎ অফিসার কই পেলেন, উনি বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের বাঁশ খেয়েই টাকা এবং দলিল দিয়ে গেছেন।
হাঁ কোনো নারীই স্বামীর পাশে দ্বিতীয় কাউকে সহ্য করতে পারেনা।
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সবকিছু ভালোভাবে আগাচ্ছে। দারুন। বাচ্চার বিষয়টি ঘাপলা মনে হচ্ছে। যাইহোক অপেক্ষায় রইলাম সব ঠিকঠাক মতো হোক। কোনো স্ত্রী তার স্বামীর ভাগ দিতে পারে না। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন
ইঞ্জা
গাপলা তো কিছু হবেই আপু, বাকিটা সত্যই বলেছেন, কোনো নারীই স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ আপু।
সুপায়ন বড়ুয়া
সচিব সাহেবের টাকা ফেরত দেয়ার টা খুব ভাল লাগলো।
এই রকম সবাই হয় দেশটা সোনায় ভরবে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
ইঞ্জা
সহজে দেয়নি দাদা, উপরের বাঁশ খেয়েই ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
হালিম নজরুল
সুখবরে অনিকের বাবা ভাল হয়ে উঠছেন।
ইঞ্জা
জ্বি ভাই।
ধন্যবাদ পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
ফয়জুল মহী
যথার্থ বলেছেন। ভালো লাগলো ।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
হাহাহা, অবশেষে ছায়া প্রমাণ করিয়া দিলো, মেয়েদের চোখে কিছুই এড়ায় না, আর বউর চোখ ফাঁকি দেয়া অসম্ভব । পরীর নজর পড়লে হাজব্যান্ড বুঝুক আর না বুঝুক, ওয়াইফ ঠিকই বুঝতে পারে। দারুণ, মেয়েদের প্রখর সিক্সথসেন্স টাকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন ভাইজান।
শক্তের ভক্ত নরমের যম, এটা সব সেক্টরে বিদ্যমান। ঘুষ খাওয়াকে যারা বৈধ ভাবে নিয়ে নেয়, তারা শুধু উপর ওয়ালাদেরই ভয় পায়। বাস্তব সত্য।
গল্প চালু থাকুক, পড়ছি মন দিয়ে, শুধু সময়ের অভাব আমায় নিয়মিত মতামত দিতে দিচ্ছে না।
ভালো থাকুন ভাইজান,
শুভ কামনা অবিরত 🌹🌹
ইঞ্জা
একমাত্র আপনিই সকল বিষয়্যি খুটিয়ে পড়ে জানলেন আপু, সত্যি এই সব ঘুষখোররা শক্তের ভক্ত নরমের যম।
আর হাঁ ঠিকই বলেছেন, মেয়েদের সিক্সথ সেন্সের তো জবাবই নেই, ধন্যবাদ প্রিয় আপু।
শামীম চৌধুরী
ভাইজান বরাবরের মতন এবারও পর্বটি ভাল লাগলো। তবে সময় করে প্রথম দিকের পর্বগুলি পড়তে হবে।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই
ছাইরাছ হেলাল
স্পীড মানি ফেরৎ গল্পে গল্পেই হয়, তবুও আমরা স্বপ্ন দেখি এমন কিছু স্বপ্নরাজ্যের।
হিংসা এবং হিংসা,
চিনে নিয়েছে একে অন্যকে!
ইঞ্জা
সত্যি তাই ভাইজান, এ শুধু গল্পেই হয়।
মানুষকে চিনে রাখতে হয় ভাইজান, তবেই এগুতে পারবেন।
ধন্যবাদ।