
ডাঃ তৌফিক অনিকের বাবাকে খুব ভালো করে চেক করে অনিককে নিয়ে বের হয়ে এসে নিজ চেম্বারে গিয়ে বসলো।
কি বুঝলে বন্ধু।
আনকেল এখন অনেক সুস্থ, আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে উনি আরও সুস্থ হয়ে যাবেন, এরপর আমরা উনাকে ঔষধপত্র দিয়ে রিলিজ করে দেবো।
সত্যি বলছিস?
হাঁ বন্ধু, রিলিজের পনেরো দিন পর আনকেলকে আবার ভর্তি করিয়ে দিস, তখন আমরা উনার এঞ্জিওগ্রাম করে দেখবো, যদি কোনো ব্লক পাই তাহলে উনাকে রিং পরিয়ে দেবো।
ঠিক আছে বন্ধু, খুব খুশি হলাম।
তা তুই কখন এলি?
এই ভোরেই এলাম।
তা বিয়ে থা এখনো করিসনি, নাকি সেই ছায়ার পিছেই ঘুরছিস?
অনিক হেসে দিয়ে বললো, সেই ছায়া এখন তোর ভাবী।
তা জানি, রওশন তো হটাৎ মারা গেলো শুনলাম, বেচারি ছায়ার কি কোনো খবর রাখিস?
সেই ছায়াই এখন তোর ভাবী, মানে আমার স্ত্রী।
তৌহিদ প্রথমে অবাক হয়ে হা করে রইলো দেখে অনিক বললো, তোর হাটা বন্ধ কর, মাছি ঢুকে যাবে।
কিভাবে?
অনিক সব খুলে বলার পর বন্ধু তৌফিক বললো, খুব খুশি হলামরে, তা ভাবী কই, সাথে এসেছে?
এই যে তৌফিক ভাই, আমি এসেছি।
ছায়ার আওয়াজ শুনে অনিক এবং তৌফিক দুজনেই ফিরে তাকালো অবাক হয়ে।
আরেহ ছায়া যে, আসো আসো, কেমন আছো তুমি?
আপনি আমাকে মনে রেখেছেন তাহলে, ছায়া অনিকের পাশের চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করলো।
কি যে বলোনা, তোমরা কতবার যে আমাদের মেডিকেল কলেজে এসে আড্ডা মারতে, তা ভুলি কি করে?
জ্বি, অনিক বাবার কি অবস্থা?
বাবা এখন সুস্থতার দিকে, হয়তো আগামী দুই চারদিনের মধ্যে রিলিজ দেবে, তা তুমি কিভাবে জানলে যে আমি কোথায়?
রবিন বললো।
তা বলো কি খাবে তোমরা?
না বন্ধু এখন কিছু নয়, সময় করে তোর বাসায় গিয়ে ভাবীর হাতের রান্না খাবো।
সত্যি তো?
শতভাগ বন্ধু, কিন্তু ছায়ার ব্যাপারে না বললেই ভালো হয়।
তোর ভাবী ছায়াকে চিনে।
কি বলিশ?
ছায়া তোমার বন্ধু নিশির কথা মনে আছে?
কোন নিশি, ঢাকা মেডিকেলের নিশি?
হাঁ, ওর সাথেই আমার বিয়ে হয়েছে।
ওয়াও রিয়েলি, তাহলে তো আপনার বাসায় যেতেই হবে।
নিশ্চয়, তাহলে আগামী শনিবার সন্ধ্যায়।
বাবা যদি সুস্থ থাকেন তাহলে নিশ্চয় আসবো।
ডাঃ বন্ধু একটা কাগজে ঠিকানাটা লিখে অনিককে দিয়ে বললো, ঠিকানাটা রাখ তোর কাছে।
ধন্যবাদ বন্ধু।
অনিক ছায়া বন্ধু তৌফিকের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলো।
শুনো মা বলেছেন, রবিন এখন থাকবে এখানে, তোমাকে বাসায় নিয়ে ফিরতে বলেছেন।
ঠিক আছে চলো, রবিনকে আসতে দেখে অনিক এগিয়ে গিয়ে বললো, তুই থাকতে পারবি তো?
হাঁ ভাইয়া তুমি ভাবীকে নিয়ে বাসায় যাও।
আচ্ছা তাহলে আমরা আসছি বলেই অনিকরা এগুলো বেরুনোর জন্য, বাইরে এসে অনিক ছায়ার দিকে তাকিয়ে বললো, গাড়ী কই?
ঐ আসছে বলে ছায়া দেখিয়ে দিলো।
গাড়ী এসে দাঁড়ালে ওরা উঠে পড়লো, ওরা চলেছে বাসার উদ্দেশ্যে, ছায়া বললো, বাসায় প্রচুর মেহমান এসেছেন।
এই সময় মেহমান কেন?
সবাই বাবার খবর নিতে, সাথে আমাকে দেখতে এসেছে।
কি বলো, দেখা হয়েছে?
না, মা ফোন দিয়ে বললেন।
তাই, তা আমাদের বাড়িটা কেমন লাগলো?
অনেক বড় বাড়ি, তোমার বেডরুমটা তো বিশাল।
কি বলো, আমার বেডরুম এখনো আছে?
কেন না থাকার কি কিছু আছে?
না মানে আমেরিকা যাওয়ার পর আর আসা হয়নি আমার।
কি বলছো, এতো বছরে একবারও আসোনি, ছায়া অবাক হলো।
চারদিন পরঃ
আজ অনিকের বাবাকে গতদিন নিয়ে আসা হয়েছে, এখন উনি মোটামুটি সুস্থ আছেন, অনিক অনলাইনে অফিসের নির্দেশনা দিচ্ছে আফরিন এবং লেভিনকে, এই মুহূর্তে অনিকের যাওয়া সম্ভব না যতক্ষণ না অনিকের বাবার সকল চিকিৎসা সম্পন্ন হয়।
সকালে ফ্রেস হয়ে ছায়া ওর শ্বাশুড়িকে কিচেনে হেল্প করছে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে, অনিক রুম থেকে বেরিয়েই ওর বাবার রুমে গেলো, ওর বাবা ইজি চেয়ারে বসে আছেন।
বাবা কেমন আছো?
আয় বাবা আয়, তোর কি অবস্থা?
এইতো বাবা আমি ভালো আছি, তোমার কেমন লাগছে?
আমি তো একদম ফিট এন্ড ফাইন, এতো সহজে আমি যাবোনা বলেছি না, তোদের বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাবোনা আমি, কি বলিস?
বাবা আপনি নিশ্চয় নিয়ে যাবেন স্কুলে আপনার নাতি নাতনিদের, ছায়া রুমে প্রবেশ করে বললো।
অনিক পিছন ফিরে তীর্যক চোখে তাকালো ছায়ার দিকে।
ছায়া এসে অনিকের বাবার সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো, কি চান আপনি, নাতি নাকি নাতনি?
নাতনি হলে তো আমার কথায় নেই মা, বলেই মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললেন অনিকের বাবা।
আচ্ছা ঠিক আছে, এখন চলুন ব্রেকফাস্ট করার জন্য, অনিক তুমিও আসো।
অনিক চিন্তিত মনে ওর বাবাকে ধরলো নিচে যাওয়ার জন্য।
ব্রেকফাস্টে মুরগীর কলিজি ভুনা, মুগডাল দিয়ে মুরগীর হাড় রান্না দেখে অনিকের চোখ চকচক করে উঠলো, ওর মার দিকে ফিরে বললো, ওহ মা তুমি জিনিয়াস, এ আইটেম কত বছর পর যে দেখছি, আহ।
ওর মা হেসে বললেন, পাগল ছেলে, তুই যে এসব পছন্দ করিস তা তো জানি, প্লেটে পরটা দিয়ে বললেন আবার, নে শুরু কর, ছায়া তুমি বসছোনা কেন, বসে যাও।
হাঁ মা বসছি, বাবার ভেজিটেবল কই?
তুমি শুরু করো, আমি দিচ্ছি ওকে।
আমি কি ডাল খেতে পারবোনা, অনিকের বাবার আকুতি।
খবরদার, তুমি ওসব এখন ধরতেই পারবেনা।
আচ্ছা আচ্ছা রুটি ভাজিই দাও।
অনিকের মা মুচকি হেসে কিচেনে গেলেন।
বাবা আমি তোমাকে লুকিয়ে একটুবখাইয়ে দেবো, শুধু টেস্ট করবে, আহা কি যে টেস্ট হয়েছে।
এই বাদর ছেলে, আমি টেস্ট করবো কেন, খাওয়ালে ভালো করে খাওয়াবি।
থাক দরকার নেই, মার মাইর একটাও মাটিতে পড়বেনা, বলেই অনিক হো হো হো করে হাসতে লাগলো।
ব্রেকফাস্ট শেষে অনিক উঠে পড়লো কফির মগটা নিয়ে।
কই যাস, ওর মা জিজ্ঞেস করলো?
মা রুমে যাচ্ছি, ছায়া তোমার শেষ হলে রুমে এসো তো।
হাঁ আসছি।
কিছু সময় পর ছায়া রুমে এলে অনিক বললো, দরজাটা লক করে দাও।
ছায়া লক করে দিলে অনিক বারান্দায় নিয়ে গেলো ছায়াকে।
কি ব্যাপার, ছায়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো?
তোমার কি হয়েছে তা বলো?
আমার কি হবে?
তুমি বাবার সাথে মিথ্যা মিথ্যা প্রমিজ করছো কেন?
ছায়া গম্ভীর হয়ে বললো, আমি মিথ্যা প্রমিজ করিনা অনিক।
তাহলে তুমি কিভাবে বাবার কাছে প্রমিজ করলে?
দেখো আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা বাবা মা হতে পারি।
অনিক যারপর নাই অবাক হয়ে বললো, কিভাবে, তুমি তো জানোই সব।
তুমি ভুলে গেছো, আমার এখনো একটা চান্স আছে?
অনলি ওয়ান পার্সেন্ট, এইটা কি সম্ভব, হতাশ হয়ে অনিক বললো।
ছায়া অনিককে জড়িয়ে ধরে বললো, বাবু, আমিও মা হতে চাই।
…… চলবে।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
১৪টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
দুর্দান্ত প্রকাশ। ভালো লাগলো
ইঞ্জা
অনিঃশেষ ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
মা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছায়ার ইচ্ছে পূরণ হোক। অনিকের বাবার অসুস্থতা হয়তো ছায়া আর অনিককে সন্তান নেয়ার চেষ্টা করতে ফলপ্রসূ করবে। অনিকের মাও খুব খুশি নাতনী পেলে।
তৌহিদ প্রথমে এই নাম দেখে ভালোই লাগলো পরে দেখি আমার জায়গায় ছোট ভাই তৌফিক কে এনেছেন!! কি ব্যাপারটা কি দাদা? আমার গোটা গুষ্ঠিরে লেখায় আনবেন নাকি ভাই? ধন্য আমি ধন্য।
শুভকামনা রইলো দাদা।
ইঞ্জা
সত্যিকারেই আমার এক বন্ধু আছে তৌফিক, সে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের বড় ডাক্তার, তৌহিদ নামটা সবসময় বলি বলেই বাকিটা ইতিহাস হয়েছিলো। 😆
ছাইরাছ হেলাল
আমরা নাতি দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
নাতি দেখবেন, আইচ্চা দেখামু নে ভাইজান। 😉
হালিম নজরুল
অনিক- ছায়ার বাচ্চা হোক। সেই প্রত্যাশা রইল।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অফুরান ভাই।
শামীম চৌধুরী
দারুন দারুন দারুন। ভাইজান, ছোট বাচ্চার জন্ম দেয়া যায় না
ইঞ্জা
আপনি চেষ্টা করলে নিশ্চয় হবে। 😉
সুপর্ণা ফাল্গুনী
গল্পের ট্রাজেডি মনে হচ্ছে এখন শুরু হবে? সন্তান না হওয়াটা মেয়েদের জন্য অনেক কষ্টের, বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। দেখি কিভাবে নাতনির মুখ দেখবো! অপেক্ষায় রইলাম। শুভ কামনা রইলো
ইঞ্জা
হাঁ এইটাই বড় সমস্যা মেয়েদের জন্য, আমি চাইনা কোনো মেয়ে এই কষ্টটা পাক, সৃষ্টিকর্তা সবার মঙ্গল করুন।
জিসান শা ইকরাম
একপার্সেন্ট সম্ভাবনাতেই ইনশা আল্লাহ্ অনিক ছায়ার সন্তান হবে আশাকরি।
এই পর্ব সহ পরের পর্বও আগেই পরেছি। মন্তব্য দেয়া হয় নি।
ভালো লাগছে খুব।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ইনশা আল্লাহ ওদের নিশ্চয় সন্তান হবে ভাইজান।
আমি জানি কমেন্ট না পেলেও আপনি প্রতিটি লেখায় পড়ছেন।
অফুরন্ত ধন্যবাদ ভাইজান।