
অনিকের বাসা থেকে সবাই দ্রুত চলে এলেন হাসপাতালে, অনিকের মা তো ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলেন, সবার চোখেই পানি।
মা তুমি কাঁদছো কেন, আমি ঠিক আছি তো।
অনিকের মা চোখ মুখ মুছে বললেন, না আর কাঁদবোনা বাবা, তুই একদম সুস্থ হয়ে যা, বাসায় ফিরেই তোদের বিয়ের আয়োজন করবো, রবিন, সায়মা (অনিকের ভাই বোন) ওরা খুব টেনশনে আছে, ওগো তুমি ওদের ফোন করে বলে দাও।
হাঁ হাঁ আমি বলে দিচ্ছি, বলেই অনিকের বাবা চোখের পানি মুছে বাইরে চলে গেলেন।
আমি তোমাদেরকে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলাম না মা?
বাবারে টেনশন থাকবেনা, ছায়া তো এ কদিন খাওয়া দাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছিলো।
ছায়া লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফেরালো।
মেয়েটা না থাকলে কি যে হতোনা আমাদের, খুব সেবা যত্ন করেছে ও।
অনিক হাসলো।
অনিকের বাবা ফিরে এলেন,চসাথে লেভিন ও আফরিন সাথে।
এসেছো তোমরা, দেখো আমার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠছে, অনিকের মা বললেন।
লেভিন অনিকের পাশে এসে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছো বন্ধু।
এখন একটু ভালো আছি, তোমার খবর কি, ব্যবসার কি অবস্থা?.
অল ইজ আন্ডার কন্ট্রোল মাই ফ্রেন্ড, তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো, অনেক কাজ বাকি পড়ে আছে।
আফরিন তুমি ভালো আছো?
আফরিন পাশে এসে কেঁদে ফেললো, আমরা ভালো আছি, তুমি ঠিক আছো তো?
তোমাদের সবাইকে দেখে খুব ভালো লাগছে।
ডাক্তারকে আসতে দেখে সবাই সরে গেলো, ডাক্তার আবার চেক করে নার্সকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনিকের বাবাও সাথে গেলেন।
নার্স সবাইকে ওয়েটিংরুমে বসতে বলে নিজে মন দিলো ড্রেসিং করতে, কাজ শেষ করে সে বেরিয়ে এলো।
অনিকের বাবা ফিরে এসে অনিকের মাকে বললো, ডাক্তার বললো আর কয়েকদিন পর রিলিজ দেবে।
খুব ভালো কথা ভাই, আচ্ছা এইখানে ভীড় না করে থেকে এখন আমি থাকি, আপনারা সন্ধ্যায় আসেন, কি বলেন ভাই সাহেব, রওশনের বাবা বললেন।
আনকেল আপনাদের আপত্তি না থাকলে এখন আমি থাকি, আপনারা রেস্ট করুন, আফরিন বললো।
হাঁ আফরিন, তুমিই থাকো, ছায়া বললো।
এক সপ্তাহ পরঃ
আজ অনিককে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে, পুরা ঘর জুড়েই আজ আনন্দের বন্যা, অনিকের মা নিজেই আজ রান্না করছেন ছেলের জন্য, ছায়াকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন অনিককে দেখা শুনার।
ছায়া অনিককে ভেজা কাপড় দিয়ে পুরা শরীর মুছে দিয়ে ফ্রেস কাপড় পড়িয়ে দিলে অনিক বললো, আমি একটু ড্রয়িংরুমে বসতে চাই।
ঠিক আছে চললো বলে ছায়া অনিকের ক্রাচটা ধরিয়ে দিয়ে নিজে হেল্প করলো উঠে দাঁড়াতে, এরপর নিজে ধরে ধরে নিয়ে গেলো অনিককে।
কিচেন থেকে অনিকের মা দৌড়ে এলেন আর জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার তুই বেরিয়ে এলি কেন বাবা?
মা কতক্ষণ এইভাবে বসে থাকবো, তাই একটু বেরুলাম, তুমি পোলাও করছো মা, পুরা ঘর মৌ মৌ করছে, খেতে পারবো তো?
হাঁরে বাবা, ডাক্তার বলেছে তুই সব ধরণের খাবার খেতে পারবি, কোনো অসুবিধা নেই।
মা তাহলে মুরগির রোস্ট হচ্ছে নিশ্চয়?
আমি তোর পছন্দের সব করছি বাবা।
আন্টি আমি ওকে বসিয়ে আসছি।
এই মেয়ে, তুমি আমাকে আবার আন্টি ডাকলে মার খাবে, এখন থেকে মা ডাকবে।
ছায়ার মুখ রক্তিম হয়ে উঠলো।
অনিক ওর বাবা এবং রওশনের বাবার সাথে গল্প করছে, কিছুক্ষণ আগেই সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই ছায়া ও অনিকের মাও এসে যোগ দিলেন বাকি সবার সাথে।
তা বাবা অনিক, তোমার ঘটনা খুলে বলো শুনি আমরা, অনিকের বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
বাবা এগুলো তোমাদের না জানাই ভালো, ও সময় গুলো খুবই জঘন্য ও নৃশংস ছিলো।
কিন্তু তোর মতো ডেয়ার ডেভিল ছেলেকে ওরা কিডন্যাপ কিভাবে করলো, তুই বাধা দিস নাই?
অনিক ছায়ার দিকে একবার তাকালো, এরপর চোখ সরিয়ে বললো, বাবা ওরা যে অস্ত্র তাক করেছিলো।
তাই বল, জানেন সুলতান ভাই, ছেলেটার কারণে দেশে সারাক্ষণ ভয়ে জড়সড় হয়ে থাকতাম, ওকে ঘরে দেখতাম নম্র ভদ্র আর বাইরে সবার কাছে ছিলো বাঘ, ওর ছেলেবেলায় একদিন খুব মেরেছিলাম, কারণ ও পাড়ার এক মাস্তানকে ইট দিয়ে এমন মার মেরেছিলো যে প্রায় মর মর অবস্থা, এরপরেও অনিককে আমি ঠেকিয়ে রাখতে পারিনি।
রওশনের বাবা হাসলেন।
কি ভাই হাসছেন কেন?
হাসলাম কারণ আমিই জানি অনিক জুয়েল একটা ছেলে, ও আজ পর্যন্ত কাউকে অন্যায় ভাবে মারেনি, রওশন বলেছিলো আমাকে।
যাও বাবা কিছুক্ষণ রেস্ট করো, মা ছায়া নিয়ে যাও ওকে।
জ্বি আনকেল বলে ছায়া উঠে গিয়ে অনিককে ধরলো, অনিককে উঠতে সাহায্য করে এরপর নিয়ে গেলো অনিকের রুমে, অনিককে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললো, তুমি ঘুমাও আমি যাচ্ছি।
বসোনা পাশে, কথা বলি।
ছায়া পাশে বসে বললো, তুমি কিডন্যাপারদের হাতে ইচ্ছাকৃতই ধরা দিয়েছিলে না?
কেন এমন ভাবলে?
কারণ আমি আগেও দেখেছি তুমি অস্ত্র দেখে ভয় পাওয়ার মানুষ না, তুমি আমার উপর রাগ করেই আত্মসমর্পণ করেছিলে, পায়ের নক দিয়ে কার্পেট খুটতে খুটতে ছায়া বললো।
আরেহ না, ধুর কি যে বলো না, আগের সেই দিন আছে নাকি, অনিক মিথ্যে বললো ছায়ার কাছে।
ছায়ার চোখ দিয়ে টপ করে পানি পড়তে দেখে বুকে টেনে নিলো আর বললো, তুমি কাঁদছো কেন, আমি তো এখন তোমার কাছেই ফিরে এসেছি।
দরজায় নক শুনে ছায়া দ্রুত উঠে চোখ মুছে নিয়ে দরজা খুলে ধরলো, অনিকের বাবা এসেছেন।
অনিক তোর সাথে বাংলাদেশ এম্বেসি থেকে সোহেল চৌধুরি সাহেব এসেছেন, রুমে নিয়ে আসবো?
ঠিক আছে বাবা নিয়ে আসো।
আমি যাচ্ছি বলেই ছায়া বেরিয়ে গেলো।
সোহেল চৌধুরি রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, হ্যালো মি. অনিক, এখন কেমন আছেন?
জ্বি অনেকটা ভালো, আপনি এইখানে?
হাঁ একটু দরকার ছিলো, বলেই একটা চেয়ার টেনে অনিকের সামনে বসলো।
মি. অনিক, আসলে আমাদের কিছু জিজ্ঞাসা ছিলো।
জ্বি বলুন।
ওরা আপনাকে কিডন্যাপ করার পর থেকে এ পর্যন্ত কি কি হয়েছে খুলে বলুন প্লিজ।
অনিক একে একে সব খুলে বলতে শুরু করলো, ওর শেষ হলে সোহেল চৌধুরি বললো, এর অর্থ হলো ওরা জানতে চাইছিলো আমাদের পরিচয়।
হাঁ।
আপনাকে এতো নির্যাতন করার পরও আপনি আমাদের পরিচয় কেন বলেননি?
প্রথমতঃ ওদেরকে বলে ফেললে ওরা আমাকে মেরে ফেলতো।
আর?
দ্বিতীয়তঃ আমি চাইনি আমার দেশের কারো ক্ষতি হোক।
জেনে খুশি হলাম, ওরা বড় ধরণের সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে রেখেছে, চাইলে সত্যি ওরা আমাদের ক্ষতি করতে পারতো, এনিওয়ে আমি আজ উঠছি, যদি কখনো দরকার হয়, বাংলাদেশ সরকার সবসময় আপনার পাশে থাকবে, শুধু একটি ফোন কল মাত্র।
ধন্যবাদ।
আসি তাহলে, get well soon.
……. চলবে।
সমাপ্ত।
ছবিঃ গুগল।
জনস্বার্থেঃ
২৭টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
যাক বাবা অনিক দ্রুত সুস্থ হচ্ছে
জেনে ভাল লাগলো।
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
দাদা নিয়মিত পড়ছেন দেখে আপ্লুত হলাম, ধন্যবাদ।
ছাইরাছ হেলাল
পোলাও রোস্টের আয়জনের জন্য ধন্যবাদ।
চলুক।
ইঞ্জা
😁
ধন্যবাদ নিরন্তর ভাইজান।
সুরাইয়া পারভীন
একদম এ দিকে চোখ দেওয়া যাবে না
কিটো ডায়েটে ছিলেন এই তো…😛😛
ইঞ্জা
হা হা হা হা আপু আপনিও বেশ পারেন, ধন্যবাদ। 😆
ছাইরাছ হেলাল
আচ্ছা, দিলাম না।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আনন্দের ঝর্ণা বয়ে যাচ্ছে অনিককে ঘিরে। এতো তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে গেল ভাবতেই ভালো লাগছে। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ সন্ধ্যা
ইঞ্জা
তাড়াতাড়ি কোথায় আপু, এগুলো তো কাট বাই কাট চলছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
তাইতো দেখছি। আমরা আনন্দ চাই এবার বিয়েটাও হয়ে যাক । পোলাও ,কোরমা, রোস্ট সব খাবার জন্য অপেক্ষার তর সইছে না
ইঞ্জা
আপু গল্পে বিয়ের বর্ণনা দেওয়া কি উচিত হবে, গল্পের সৌন্দর্য্য নষ্ট হবে নাতো?
সুরাইয়া পারভীন
আজকের পর্ব দারুণ। ছায়ার অপরাধ বোধ হয়তো থেকেই যাবে সারাজীবন।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় ভাইয়া
ইঞ্জা
গল্পের মোর ঘুরবে তা ধরে ফেলেছেন আপু।
ধন্যবাদ৷ সত্যি বুদ্ধি আছে আপনার।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনিক তাহলে ইচ্ছে করেই ধরা দিয়েছিলো! ব্যাপার কি হতে পারে? মনে হচ্ছে অনিকের দলের পরিচয় কিডন্যাপাররা যেমন জানতে চাইছিলো, তেমনি অনিকও ইচ্ছে করে ধরা দিয়ে তাদের দলের হোতাদের চিনতে চেয়েছে। যাক, ভালোই হলো। মনে হচ্ছে মূল এ্যাকশন সামনে আসতে যাচ্ছে।
চলুক, পরের পর্ব আমরাও পড়বো।
শুভ কামনা রইলো ভাইজান 🌹🌹
ইঞ্জা
এতো কিছু বললাম এরপরেও ধরতে পারেননি দেখে অবাক হলাম, শেষের দ্বিতীয় প্যারাতেই তো ছায়া বলে ফেললো কেন অনিক আত্মসমর্পণ করেছে। 😳
আপুর মনে হয় কিডন্যাপের পর্বটা পড়া হয়নি, তাহলে আরও বুঝতে পারতেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
ছবিটা খুব বড় হয়ে গেছে। একটু ছোট করে নিলে ভালো দেখাবে।
ইঞ্জা
আপু ছবি বড় হলেই তো সুন্দর, সাইজে কিন্তু অনেক ছোট, ৩০কেবির আশ পাশেই আছে।
ধন্যবাদ।
তৌহিদ
অনিকের দেশপ্রেম প্রশংসারর যোগ্য। ছায়া এবং অনিক দুজনাই একে অপরকে অনেক ভালোবাসে আসলে। অনিক সুস্থ্য হচ্ছে এটা সুসংবাদ। ভালো লাগছে আবার প্রেমিক যুগল একসাথে হয়েছে দেখে। অনিক ইচ্ছে করেই ধরা দিয়েছে এটি ছায়ার মনে হলো কেন?
ভালো থাকবেন দাদা।
ইঞ্জা
ছায়ার উপরে অভিমান করেই অনিক কোন বাধা দেয়নি ভাই তা কি আর বলতে হবে, যেদিন কিডন্যাপ হলো সেই মুহূর্তেই তো অনিকের মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো, ভুলে গেছেন?
তৌহিদ
ইয়েস! মনে পড়েছে। মাথায় আর এত কিছু কাজ করছেনা ভাইজান। 😂 ভুলে যাওয়া রোগ হয়েছে।
ইঞ্জা
হে হে হে, আসলেই কারো মাথা কাজ করছেনা ভাই।
ফয়জুল মহী
অনন্যসাধারণ লেখা। শুভেচ্ছা । দোয়া রইলো আপনিও করবেন
ইঞ্জা
ধন্যবাদ, সবসময় দোয়া ভাই।
হালিম নজরুল
অনিক সুস্থ হচ্ছে। আশার আলো দেখছি। দেশপ্রেম মুগ্ধকর্।
ইঞ্জা
সত্যিকারের হিরোরা দেশ প্রেমে মজে থাকে ভাই, ধন্যবাদ।
জিসান শা ইকরাম
যাক বাসায় এলো অনিক, এখন দ্রুত সুস্থ হওয়া দরকার।
অনিক ছায়ার বিয়ে খেতে হবে।
ভাল লাগছে ভাইজান,
শুভ কামনা।
ইঞ্জা
ভাইজান সরাসরি বিয়ের বর্ণনা দিলে গল্প কেঁচে যাবে নাতো?