
জয়া আর আমার সম্পর্কের অবস্থা বর্ষার আকাশের মতো ঘোলাটে। কারন জয়া, আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে কোন কিছুই ক্লিয়ার করেনি আর আমিও তাকে কিছু বলার সাহস পাইনি।
পরিচয়ের পর থেকেই তিনি নিজে থেকে কখনো ফোন দেন না। আমি ফোন দিলে আমাদের ফোনালাপ হুঁ, হ্যাঁ, চলছে, আছি এরমধ্যেই সীমাবদ্ধ।
জয়া, সারা সময় নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কি কি করেন তিনিই ভালো জানেন।। কিন্তু যখনি আমি ফোন দেই তিনি কখনো শীত, কখনও বর্ষা, আবার কখনো কালবৈশাখী আচরণ করেন। তখন আমি কনফিউজড হয়ে যাই। তিনি কি চান আমি তাকে ঘন ঘন ফোন দেই?
তবে মাঝেমধ্যেই তার ব্যস্ততার কারন জানতে পারা যায়। অতি ব্যস্ততা মানেই তিনি ইউটিউব দেখে স্কুইড, অক্টোপাস, কাঁকড়া এসব রান্না শিখছেন। আমার ধারনা, কোন একদিন আমি বলেছিলাম, আমার সি ফুড ভীষণ পছন্দ সেজন্যই তিনি এটা করেন। তবে তার কাছে জানতে চাওয়ার সাহস আমার নেই। কি থেকে কি ভেবে নেবে।
আমাকে নাকি দেখতে যতোটা সাহসী মনে হয় আমি অতোটা সাহসী না। এটা জয়ার অভিযোগ। তিনি যখন এমন ছোট ছোট অভিযোগ করেন তখন আমার মনে হয় তিনি আমাকে ভালোবাসেন।
ঈদের পর থেকেই জয়ার হুঁ, হ্যাঁ, চলছে এসবের পরিমান আরও বেশি বেড়েছে। কেন বাড়লো আমি গবেষণা করেও কুলকিনারা পাচ্ছিলাম না। আবার শোনার জন্য আমি বেশি জোরও দিতে পারছিলাম না। আমাদের সম্পর্ক হয়তো এখনও অতো জোড়াজুড়ির নয়।
তবে মন বলছে, আমি কদিন ফোন না দেয়ায় ভুল চাপ লেগে তার ফোন থেকে ফোন এসেছিল। আমি বজ্রপাতের মতো চমকিত হয়েছি। কিন্তু ছোট মানুষের ছোট ব্যস্ততার কারণে তার ফোনটা ধরা হয়ে ওঠেনি। আবার একটু রেগেও ছিলাম। সবসময় আমাকেই কেন ফোন দিতে হবে? তারও তো দায়িত্ব থাকা দরকার।
জয়া ঠান্ডা মাথার মেয়ে। তারপর থেকে আমার সাথে ঠান্ডা মাথায় সে প্রতিশোধ নিচ্ছে হুঁ, হ্যাঁ, চলছে এসব শব্দে।
তার এমন আচরনে আমি ভেতর ভেতর রেগে আগুন হলেও উপরে উপরে সে যা করছে আমি তাই মেনে নিচ্ছি। এভাবে আর কতোদিন? আমার এমন নীরবতায় জয়া নিজেকে বোধহয় আর আটকাতে পারেনি।
একসময় দাঁতে দাঁত চেপে বলেই ফেলেছে- কি দরকার ছিল ফোন দেবার? ইচ্ছে করে আমার ফোন ইগনোর করো আমি বুঝিনা? যেতে চাইলে চলে যাও, তোমাকে তো জোর করছি না,আটকাচ্ছি না। মরলে আমি ডুবে মরি!
যা বাবা! আমি তাকে ডুবালাম কখন। তার নীরবতায় আমি নিজেই তো ডুবে বসে আছি।
মেয়েদের এই এক অবস্থা। ভালোবাসা প্রকাশ করতে হলে আমি তোমাকে ভালোবাসি বলা জরুরী। আর তাও এক আধবার বললে হবে না। প্রতিদিন নিয়ম করে বললে তবেই সে বিশ্বাস করবে তাকে ঠিকঠাক ভালোবাসা হচ্ছে।
আবার যদি ভালোবাসা বুঝতেও পারে তবুও শান্তি পায় না। ছোট ছোট কথা মনে পুষে রাখে। এবং তা নিয়ে সময়মতো শুনিয়ে ছাড়ে। আরে মরবেই যখন, আমাকে বলার দরকারটা কি? বলার কারন তার অনেক বেশি চাই। নিজেকেই যেন তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
আজ আমার ব্যস্ততা ফেলে রেখে সাতসকালে তাকে ফোন দিলাম। তিনি বোধহয় ‘ ক্লিয়ার সি ফুড সুপ‘ রান্না ট্রাই করছিলেন। ফোন রিসিভই করলেন না। আমি কিন্তু মোটেও রাগ করলাম না। কারন বলার সুযোগ আমারও তৈরি হওয়া দরকার। আমিও ফোন দিয়েছিলাম তিনি রিসিভ করেননি। এটা ভীষণ জরুরি।
সাথে দুষ্টু বুদ্ধিও মাথায় চাপলো। নিশ্চয়ই তিনি এসময় ফোন থেকে দুরে বঋেন। আমি টপাটপ কয়েকটা মিসট কল দিয়ে রাখলাম। পরে দেখে যেন কল মনে করে আফসোস করতে থাকে।
খুশিতে দিন ভালোই কাটছে। গুছিয়ে নিলাম নিজেকে। এতগুলো কল দেখার পর তিনি যখন হন্তদন্ত হয়ে ব্যাক করবেন। আমিও তাঁকে একগাদা কথা শুনিয়ে দিবো।
যথারীতি সন্ধ্যায় তার ফোন এলো। আমি ভারী গলায় অতি অভিযোগের সুরে জানতে চাইলাম- কি এতো ব্যস্ততা তোমার? এতোবার ফোন দিলেও ফোন ধরো না। আর তুমি একবার ফোন দিয়েই না পেলে যা তা ভেবে বসে থাকো। আমি কিছু,,,,, কথা আর শেষ হলো না,,,,
জয়া ঠান্ডা গলায় জানতে চাইলো- কতবার ফোন দিয়েছিলে?
-ফোনে দেখ, সাত আটবার তো হবেই!
-ও তাই! কিন্তু আমি তো দেখলাম মাএ একবার ফোন এল। আর বাকি ক’বার মিসট কল দিলে। তাও খুবই ছোট্ট ছোট্ট মিসট কল। এই বয়সেও তুমি তাহলে বান্দরামী ছাড়নি। তোমার ফোনের সময় আমি ফোনের পাশেই ছিলাম। ইউটিউব দেখে ‘ অক্টো ফুড সালাদ‘ ট্রাই করছিলাম।
আমি হতভম্ব! মানসম্মান তামাম শেষ। কি অক্টোপাস মহিলা রে বাবা! পেটে পেটে এতো আমার তো জানা ছিল না। আমাকে তো পুরাই পড়ে ফেলেছে। এমন মেয়ে থেকে দশহাত দুরে থাকাই ভালো!!!
উৎসর্গ- অনিক ও জয়াকে।
ছবি- নেট থেকে।
১০টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
আচ্ছা,
জয়াকে ভালোবাসা হচ্ছে আবার লুকিয়ে রেখে মজা পাচ্ছ!
বুঝতে পারছি একটা দফারফা করতে হবে।
ব্লগকে ধন্যবাদ!
সেই সুবাদে অন্তত জানলাম, জয়া ও ভালোবাসা কত কাছাকাছি
রোকসানা খন্দকার রুকু
লিখতে গেলে আমার দুটো সমস্যা হয়- শিরোনাম ও চরিত্রের নাম খুঁজে পাই না।
সকালে কবিতা পড়তে গিয়ে অনিকের কবিতায় জয়াকে পেলাম। ইচ্ছে হলো তাদের জন্য লিখি। যদিও অনুমতি নেয়া হয়নি।
আসলেই ব্লগকে ধন্যবাদ।।।
ফয়জুল মহী
মিসট কল এটা বাংলা লিখলে আরো ভালো নয় কী। আজ লেখাটায় একটু একটু বানান ভুল কেনো সিস্টার
রোকসানা খন্দকার রুকু
জীবনের যতো পতন সব বানানের জন্য। ও আমার কোনকালেই শুধরালো না। আমি সরি!!
বোরহানুল ইসলাম লিটন
কঠিন অবস্থা!
একটু চালাকী করারও উপায় নেই!
অশেষ মুগ্ধতা ও শুভ কামনা রেখে গেলাম পাতায়।
রোকসানা খন্দকার রুকু
হা হা হা মহা বিপদ!!!
হালিমা আক্তার
দারুন। বেচারা চালাকি টাও বুদ্ধি করে করতে পারলো না। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কৃতজ্ঞতা অশেষ 🌹🌹
নার্গিস রশিদ
‘ছোটো খাটো কথা মনে রাখে এবং সময় মত শুনিয়ে দায়’ ঠিক কথাটি সুন্দর ভাবে বলা হয়েছে। শুভ কামনা ।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুভ কামনা 🌹🌹