ঘুম থেকে উঠেই টিভিতে ব্রেকিং নিউজ—-
“ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু । আহত অনেক। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।”
কি বিভৎস! কি করুন! খারাপ লাগছে, সামান্য একটা শাড়ী নিতে গিয়ে হুড়োহুড়ি করে পদদলিত হয়ে জীবনটাই শেষ!!
ধনকুবেররা যাকাত দিবে সস্তা দরের কিছু শাড়ী আর তা অধিকারে আনতে গিয়ে প্রাণহানি!
আমি যতোদূর বুঝি, ‘যাকাত’ হচ্ছে যাকাত প্রদানকারীর জন্যে সম্পদকে শুদ্ধ করার উপায়। ধর্মীয় বিধানে সম্পদশালীদের জন্য যাকাত প্রদান ফরজ করে দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য যাকাত বিতরণের মাধ্যমে সহায়-সম্পদহীন মানুষ যাতে কিছুটা আর্থিক সহায়তা পায়।
কিন্তু বর্তমানকালে দেখা যাচ্ছে, আর্থিক সহযোগিতা নয়, বরং কে কতো বেশি পরিমান মানুষকে যাকাত দিতে পারছে, ধনকুবেরদের মধ্যে যেনো তাই প্রতিযোগিতা চলে! ফলে যাকাত যা দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে যাকাতগ্রহীতারা কতোখানি উপকৃত হচ্ছে সেদিকে কারোরই নজর নেই।
ঈদ এগিয়ে আসার সাথে সাথে শপিং সেন্টারগুলোর আশেপাশে গজিয়ে উঠে কিছু ভাসমান দোকান আর সাইনবোর্ড এ লিখা থাকে ‘এখানে যাকাতের শাড়ী পাওয়া যায়।’ অই দোকানগুলো দেখলেই বুঝা যায় যে ওখানে যাকাতের কাপড়ের নামে বিক্রি হয় এতো নিম্নমানের কিছু শাড়ী, যেগুলো একবার ধুইলেই জাস্ট ন্যাকরা বা ত্যানাতে পরিনত হয়। আর বেশি সংখ্যক মানুষকে যাকাত প্রদানের মানসিকতা নিয়ে অনেকেই ছুটছেন অই সস্তা দরের ন্যাকড়া কেনার জন্যে, যা আদৌ উচিত নয়। আমার যদি একজনকে সহায়তা করার উদ্দেশ্যই থাকে, তাহলে শাড়ী-লুঙিই দিতে হবে কেনো? এমন কিছু কি দেয়া যায় না, যা দিয়ে সে স্থায়ীভাবে উপার্জন করে খেতে পারে।
কয়েকদিন যাবতই ভাবছি, ঈদ এগিয়ে আসছে আর ঈদের আনন্দের পাশাপাশি কিছু মর্মান্তিক ঘটনারও জন্ম হবে। রোজা ঈদে যাকাত এবং লঞ্চ দুর্ঘটনা যেনো বাধ্যতামূলক।
আর আজ তেমনই একটি খবরে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।
২৪টি মন্তব্য
সঞ্জয় কুমার
সত্যিই মন খারাপ করা মত খবর
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কতোটা খারাপ লাগে সামান্য এক শাড়ীর জন্য এমন একটা মর্মান্তিক ঘটনা!
অরণ্য
এভাবে “বিজ্ঞাপন দিয়ে বা মাইকিং করে যাকাতের শাড়ী বিতরণের সিস্টেম” কে আইন করে বন্ধ করা উচিৎ।
“এখানে যাকাতের শাড়ী পাওয়া যায়” – এই সাইনবোর্ড, ব্যানারও বন্ধ করা উচিৎ।
তবে “এখানে যাকাতের শাড়ী পাওয়া যায়” এই ব্যানারগুলো এসেছে ঐ সেই ধনকুবের আর তার চ্যালাদের নাম ফুটানোর রাস্তা তৈরির পথ ধরে। আমি কিভাবে বলি এ যাকাত? এতো তার এডভারটাইজমেন্ট, প্রোমোশন আর পাবলিক রিলেশনের বাজেটের টাকা। কেউ হয়তো নিয়্যাতের কথা বলবেন, আমিও তাই বলছি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আরে! ধনকুবেররা কি কেউ ধর্মীয় বিধানমতে সম্পদ শুদ্ধিকরণের জন্য যাকাত দেয় নাকি? দেয় তো এডভারটাইজমেন্ট এর জন্যেই। সে জন্যই কোন দায় বা দরদ নেই।
ছাইরাছ হেলাল
দেখুন এমন করুণ মৃত্যু আমরা প্রতি বছরই প্রত্যক্ষ করি,
কারো কোন বোধোদয় হচ্ছে বলে মনে হয় না, এ মৃত্যু মিছিল চালু থাকবে। দু’ তিন দিনেই
সব আগের মতই হয়ে যাবে। আমরাও সব ভুলেটুলে যাব।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এই তো স্বাভাবিক রে ভাইয়া! কিন্তু তা বলে তো আর চুপ করে বসে থাকা যায় না।
অনিকেত নন্দিনী
শাড়ি-লুঙ্গিতেই আটকে আছে আমাদের যাকাত বিতরণ। সেই শাড়ি লুঙ্গিও মাশাআল্লাহ্! অধিকাংশ গুলিই ধোয়ার পর সুতা বা রঙ কোনোটাই নজরে আসেনা।
আমি যতদূর জানি নিজের জন্য যা পছন্দ করা হয়, তাই অন্যদের দেয়ার নিয়ম কিন্তু এসব মানে কে?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
মানে না কারন তারা যাকাতের মাধ্যমে গরীবের হক আদায়ের উদ্দেশ্যে তা দেয় না। আর এজন্য তাদের কোন দায়ও বর্তায় না।
লীলাবতী
খবর দেখে আমারো মন খারাপ হয়ে গিয়েছে আপু।এত জনসমাগম হবে,প্রশাসনের সহায়তা নেয়া উচিৎ ছিল ধনকুবের।নতুবা নিজের স্বাচ্ছাসেবক দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দিয়ে দিলে পারতেন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কি বলো তুমি? খবরে পড়লাম উলটো পিটিয়েছেও।
এরা তো আসলে যাকাতের উদ্দেশ্য নিয়ে যাকাত দেয় না।
ব্লগার সজীব
এতগুলো তাজা প্রান, চলে গেলো। ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। যাকাত এখন প্রদর্শনের জন্য দেয়। কোরবানীর মত।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, বিত্তবানরা এখন নাম কামাইয়ের জন্য যাকাত প্রদান করে। আর সে জন্যেই তাদের মধ্যে কোন দায়বদ্ধতা কাজ করে না।
নীলাঞ্জনা নীলা
খবরটা পড়ে এতো কষ্ট হয়েছিলো সেদিন। খুব সত্যি মধ্যবিত্তদেরই মন আছে কিন্তু তেমন ক্ষমতা নেই। আপনার কথাটার সাথে আমি একমত। শাড়ী-লুঙ্গি না দিয়ে এমন কিছু দেয়া উচিৎ যাতে তাদের আয়ের একটা পথ হয়। কিন্তু কে দেবে?
খবরটা বাসী হয়ে গেছে, আর কিছুদিন পর কারুর মনেই থাকবে না। মানুষ এতো নিষ্ঠুর।
লেখাটা (y)
মারজানা ফেরদৌস রুবা
একজনকে আয়ের পথ করে দিতে গেলে তো বেশকিছু টাকা ওখানে আটকে যাবে! একজনের টাকা দিয়ে যদি দশ জনকে দিতে পারে তো অই টাকা জলে ফেলবে কেনো? একজনকে দিলে লোক দেখানো যাকাত প্রদানকারী তো মানুষের দৃষ্টি আর্কষন করতে পারবে না।
উদেশ্যে: আল্লাহর সন্তুষ্টি নয়; মানুষের দৃষ্টি আর্কষন!!
হক মাওলা……
রিমি রুম্মান
টিভিতে নিউজটি দেখে কোন কাজেই মন বসাতে পারিনি। হাড্ডি চর্মসার সেই সব মানুষের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে চোখের সামনে। সেইসব চাহনি। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকা মুখগুলো। প্রতিক্ষার প্রহর গুনা মুখগুলো। প্রতিক্ষা শেষ হয় বটে ! অতঃপর সবকিছুই শেষ হয় ! শেষ হয়না শুধু মহাজনের বিচার, বিত্তশালীর বিচার … 🙁
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আগেকার মতো ঈদের আনন্দ আর তেমন করে কাজ করে না, তবুও ঈদকে কেন্দ্র করে আশপাশের মানুষের আনন্দ দেখলে মনটা অনেক ভরে উঠে। কিন্তু ঈদ এগিয়ে আসছে আর কান্না বাড়ছে। যাকাতের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার সিলেটে রাজনকে পৈশাচিকভাবে মেরে ফেলার দৃশ্য মনকে কেবল আড়ষ্টই করে তুলছে। আবার জানি লঞ্চ র্দুঘটনার খবর কখন আসে।
গতবছর তোবা র্গামেন্টসকে কেন্দ্র করে ঘটনা, লঞ্চ র্দুঘটনা সব আনন্দকে মাটি করে দিয়েছিলো।
শুন্য শুন্যালয়
আশ্চর্য্য মানুষ এরা। এগুলো কে যাকাত বলে? আরো যে কি কি শুনবো কে জানে। গরীব মরে গেলে কিছুই যাবে আসবেনা আমাদের 🙁
মারজানা ফেরদৌস রুবা
কাঙালের ধন চুরি করে এরা বিত্তের মালিক হয়। এরা দিবে যাকাত? এটা যাকাত নয়, পুজিঁবাদী সমাজ ব্যবস্থায় একপ্রকার বিনিয়োগ!
মেহেরী তাজ
🙁 যাকাত হলো বড়লোকদের নতুন একটা ফ্যাশন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক, ফ্যাশন!
ইমন
সহমত আপনার সাথে (y)
মারজানা ফেরদৌস রুবা
(y)
জিসান শা ইকরাম
যাকাত কোরবানী এখন আমাদের দেশে আর এর আসল অর্থ বহন করেনা
প্রদর্শনের একটি বিষয় হয়ে গিয়েছে।
যাকাত যখন এর আসল অর্থ হাড়িয়েছে,এমন ঘটনা ভবিষ্যতেও আরো ঘটবে।
অত্যন্ত দুঃখ জনক এবং লজ্জা জনক একটি উদহারন হয়ে থাকবে যাকাতে এত মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমার মতে, যাকাত এখন রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রনে বন্টনের ব্যবস্থা হওয়া উচিত; যেমন করে ত্রান বন্টন হয়। যে যেমনই যাকাত প্রদান করতে চায়, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেবে আর সরকার সেখান থেকে আর্তের সহযোগিতায় খরচ করবে।