এ শহর, স্বপ্নের শহর। বাহারি রঙ্গের আর নানান ঢঙ্গের স্বপ্নের মায়ায় নিমজ্জিত জনপদের ধারক এই শহর। তবুও এই শহর ছেলেটির স্বল্প দুরন্ত মনটাকে ধরে রাখতে পারছে না তার আপন গলিপথে। দিনের পর দিন এই শহরের ভেতর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সরু সব গলিপথ ধরে নিজেকে হারাতে কিংবা হারিয়ে যাওয়া নিজেকে খুঁজে পেতে ছুটে চলে ছেলেটি। কিন্তু দিন শেষে ফলাফল সেই শূন্যের কোঠাতেই আটকে থাকে। যেখান থেকে শুরু ঘুরে ফিরে ঠিক সেখানে এসেই থামতে হয় তাকে। মেলেনা তার আত্মার মুক্তি, হারিয়ে কিংবা আপন সত্ত্বাটাকে খুঁজে এই চেনা-অচেনার শহরে।
এ শহর, মায়ার শহর। অদৃশ্য মায়ার জাল বিছিয়ে তাতে সে বন্দী রেখেছে লক্ষ কোটি মানুষ। কেউ নেই, কিছুই নেই। দিন শেষে সবই যেখানে শূন্য ঠিক সেখানেই শহুরে ঐ মায়ার বলে মানুষ খুঁজে ফিরে আপন পূর্ণতা। সেই মায়ার জাল এতটাই শক্ত যে কেউ ইচ্ছে করেও সেই জাল ছুড়ে ফেলতে পারে না নিজের উপর থেকে, পারে না ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে তার ভেতর থেকে। যে বুঝে যায় সে ঐ মায়াতে বন্দী পড়ে গেছে, সে ছটফট করে বেড়ায় ঐ স্বল্প দুরন্ত ছেলেটির মতন করে। মনে মনে সংকল্প করে গোপনে, খুবই সন্তর্পণে; একদিন এই মায়া চিড়ে শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবে দূরে কোথাও। কোন কোন দিন সেই সংকল্পকে কাজে লাগানোর জন্যে বেরিয়ে পরে পথে। তারপর ঘুরপাক খেতে থাকে চেনা-অচেনার ঐ শহরের পথ ধরে। মায়ার টানে পথ ভুলে ঐ শহর ছেড়ে আর বেরিয়ে যেতে পারে না কোনদিন।
এ শহর, পূর্ণতার শহর। কি নেই এই শহরে! গাড়ি আছে, নারী আছে, হাজার কোটি বাড়ি আছে। ঐ বাড়িগুলোর দায়রা আছে, আর দায়রার ভেতরে আটকে আছে অবিরাম সুখী পরিবারের অভিনয় করে যাওয়া কিছু চমৎকার অভিনেতা আর অভিনেত্রী। বাদ পড়ে নি শিশুশিল্পীরাও, তারাও সমান তালে সুখী পরিবারের অংশ হয়ে অভিনয় করে যাচ্ছে ঐ দায়রার বলয়ের ভেতরে। অভিনয়ে তারা পূর্ণতা দিচ্ছে শহরকে বিনিময়ে শহর তাদের দিচ্ছে সম্মুখ পানে এগিয়ে চলার স্বপ্ন। তারা এগিয়ে যায়, ঐ স্বপ্নকে পূরণ করার অভিপ্রায়ে। তারা এগিয়ে যায়, নিজেকে পুনঃ পুনঃ পূর্ণতা দিতে। শুধু চোখ মেলে দেখে না, যে থলের ভেতর প্রাপ্তি গুলি লুকিয়ে রাখছে ক্ষণে ক্ষণে সেই থলের তল বলতে কিছু নেই, কোন কালে ছিলও না। আর সেই থলের অতল গহ্বরে প্রতি মুহূর্তে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের আপন কৃতিত্বের দ্বারা অর্জিত প্রাপ্তিরা।
তবুও ছেলেটি মাঝে মাঝেই ভাবে হারিয়ে যাবে, নিশ্চিত এইবার হারিয়ে যাবে। পিছু ছাড়িয়ে নিবে এই মায়ার শহর থেকে। এই মিথ্যে পূর্ণতার খেলা থেকে ছুটি নিয়ে পাড়ি দিবে দূর কোন অজানায়। কিন্তু তারপরই ছেলেটি বুঝতে পারে আসলে যাবার কোন জায়গা নেই। নেই ‘অচেনা’ কিংবা ‘অজানা’ কোন অবস্থান পুরো পৃথিবী জুড়ে। সবাই এখন সব কিছু চেনে, সব কিছু জানে। এখন আর নেই মায়া ছাড়া কোন জনবসতির ভিন্ন কোন অবস্থান। নেই অদ্ভুত স্বপ্নে ডুবে যাওয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা কোন যাত্রীর দল। নেই অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষার পেছনে ছুটে চলা কোন কাফেলা।
এখন পুরো পৃথিবীটাই একটা শহর, শুধু নাম পাল্টে নিজেকে আলাদা করে একে অপর থেকে। তবুও এগুলি শহর, জনপদের সমষ্টির শহর। স্বপ্নের শহর, মায়ার শহর, পূর্ণতার শহর……
২৬টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
শহরে কি মায়া থাকে কংক্রিটের ভেতর? কি জানি!
অলিভার
মায়া না থাকলে কি করে পড়ে থাকে ছোট ছোট বাক্স সম ঘর গুলিতে! আমার তো মনে হয় মায়ায় অন্ধ বলেই ছোট পরিসরে বন্দী থেকেও নিজেকে মুক্ত কল্পনা করে নিতে পারে।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্যে 🙂
ব্লগার সজীব
এটি মায়া নয়, মোহ 🙂
অলিভার
মায়া, মোহ যেটাই হোক, আটকে তো রাখছে। আর আটকে থাকতে থাকতে মুক্ত হবার বাসনাই ছেড়ে দিচ্ছি আমরা। এই জঞ্জালেই আটকে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি এখন।
স্বপ্ন নীলা
এখন পুরো পৃথিবীটাই একটা শহর, শুধু নাম পাল্টে নিজেকে আলাদা করে একে অপর থেকে। তবুও এগুলি শহর, জনপদের সমষ্টির শহর। স্বপ্নের শহর, মায়ার শহর, পূর্ণতার শহর……—- দারুন ভাল লাগলো লেখটা — এই ইটকাঠের শহরে বাস করতে করতে শহরটার জন্য একধরণের মায়া পড়ে যায় এটা ঠিক, কিন্তু এখানে কেউ কারো খোঁজ রাখে না —
অলিভার
মায়ায় বন্দী হয়ে নিজের অপার্থিব স্বপ্ন পূরণে ছুটছে যে সবাই। দাড়িয়ে অন্যকে দেখার সময় কই তাদের হাতে!
অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে।
শুভ অপরাহ্ণ 🙂
স্বপ্ন
অনেক কিছুই আছে,তবে নেই মানবতা।নেই অন্য মানুষের জন্য দেয়ার জন্য সময়। লেখা ভালো লেগেছে ভাইয়া।
অলিভার
অনেক কিছুই আছে,তবে নেই মানবতা।নেই অন্য মানুষের জন্য দেয়ার জন্য সময়।
আপনি আমার চেয়েও চমৎকার বলেছেন 🙂
অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্যে, শুভ কামনা জানবেন -{@
খেয়ালী মেয়ে
মায়া খুব খারাপ জিনিস–কোন কিছুর উপর একবার মায়া জন্মালে সেটা আর কেউ ছাড়তে পারে না..
অলিভার
মায়াটাকে কে কিভাবে দেখছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। মায়া আছে বলেই কিন্তু আমরা টিকে আছি এই অব্ধি। নয়তো ছন্নছাড়া হয়ে হারিয়ে যেতাম বহু আগেই।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে 🙂
মেহেরী তাজ
ইট কাঠ পাথরে কি মায়া আছে?
সবায় অভিনেতা অভিনেত্রী ঠিকই বলেছেন…….
অলিভার
মায়াটা ইট কাঠ পাথরে থাকে না, সেটা জন্ম নেয় এই ইট কাট পাথরের উপর। তারপর সেখানেই আটকে যাই আমরা।
ধন্যবাদ সময় নিয়ে দেখার জন্যে 🙂
কিছুদিন ব্লগে আসি নি, আপনার দুষ্টুমি মার্কা পোষ্ট গুলি চোখ এড়িয়ে গেছে। আশা করি নতুন কিছু খুব দ্রুতই পাবো আপনার কাছ থেকে 🙂
লীলাবতী
এখন পুরো পৃথিবীটাই একটা শহর, শুধু নাম পাল্টে নিজেকে আলাদা করে একে অপর থেকে।— ভালো লাগলো খুবই।
অলিভার
হ্যাঁ, শহর বদলে নিজের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটানো যায় ঠিকই। কিন্তু বন্দী হতে হয় এক শহর ছেড়ে আবার সেই শহর নামের অবস্থানেই।
অনেক ধন্যবাদ সময় নিয়ে দেখার জন্যে 🙂
শুভ কামনা জানবেন
জিসান শা ইকরাম
ছেলেটি হারিয়ে যাবে কোথায়? যাবার যে স্থান নেই।
ছেলেটির বোধ না থাকলে হারাতে পারতো।
লেখা ভালো লেগেছে।
অলিভার
বোধ না থাকলে হয়তো কখনোই শহর ছাড়া ইচ্ছেটাই জাগত না।
ধন্যবাদ ভাইয়া, সময় নিয়ে দেখার জন্যে 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
স্বপ্নের শহর, মায়ার শহর, পূর্ণতার শহর……
মমতাবোধ আছে বলেই শহরে বসবাস করতে পারছি।
অলিভার
মমতা বোধের কারণেই আটকে আছি মায়ার শহরে।
ধন্যবাদ ভাইয়া, সময় নিয়ে দেখার জন্যে 🙂
মারজানা ফেরদৌস রুবা
প্রাণহীন এই শহরে আছে কেবল হন্যে হয়ে ছুটে চলা। কিন্তু দিনশেষে প্রাপ্তি কিছু নেই।
ভালো বলেছেন।
অলিভার
দিন শেষে হাতের মাঝে সবই শূন্য, সেটা জানার পরও কি এক অজানা ধরার জন্যে ছুটে চলেছি অবিরাম।
সময় নিয়ে লেখাটির জন্যে অনেক ধন্যবাদ 🙂
কৃন্তনিকা
ভালো লাগলো।
লেখাটি পড়ে চিরকুট ব্যান্ডের ‘জাদুর শহর’ গানটি মনে পড়ে গেল…
শুনছেন কিনা জানি না… সময় হলে শুনবেন 🙂
https://www.youtube.com/watch?v=dKA45jbR2g4&index=5&list=PLekmxCaCiJ6vATMirmLxYob__Y31lwn0i
অলিভার
গানটি সত্যিই চমৎকার। আগে শুনিনি, আজই শুনলাম। এতটুকুতে মন ভরছিল না তাই পরে পুরোটাই সংগ্রহ করে নিলাম।
অনেক ধন্যবাদ গানটি উপহার দেবার জন্যে 🙂
রিমি রুম্মান
শহরে “মায়া” নামক অনুভুতি থাকে। আমি যখন যে শহরে থাকি, তার প্রতি মায়া জন্মে যায়। ভালোলাগা রইল।
অলিভার
আগলে রাখুক মায়া আপন শহরে, নিরাপদে।
শুভ কামনা আপনার জন্যেও 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
লেখাটি পড়তে অনেক ভালো লেগেছে।ইচ্ছে করলেও শহর থেকে দূরে চলে যাওয়া যায় না।
অলিভার
শহর ছেড়ে যাবার জায়গা নেই। যদিও এখনো কিছু কিছু জায়গায় যাবার উপার রয়েছে, কিছুদিন পর সেগুলিরও বিলুপ্তি ঘটবে। শহরে শহরে ভরে যাবে পুরো পৃথিবী।
ধন্যবাদ, সময় নিয়ে লেখাটি পড়ার জন্যে 🙂