চোখ বুজে যে কোন একটা নদীর নাম ভাবতে বললেই
আমার মনে আসে দুঃখের কথা।
চোখ বুজে যে কোন একটা দেবীর মুখ ভাবতে বললেই
আমার মনে আসে এক অর্ধেক ইতিহাস আর অর্ধেক জীবন্ত নারীর কথা।
মেয়েটির নাম ছিলো আইসিস –
মিশরিয় পুরানের দেবী।
তার সাথে আমার পরিচয়, ট্রেন মিসকরা ব্যস্ততার মাঝে
ট্রেনের হুইসেল বাজছে… কুউউউউউউউ
ভীরাক্রান্ত ষ্টেশনে উতরোল কোলাহল।
তারমাঝে দুইজনে ছুট ছুট।
পেছনের লালবাতি দেখিয়ে ট্রেন চলে যায়।
আমি সেই ব্যস্ত গনগনে ভীরের মাঝেও কিভাবে কিভাবে যেন
ঠিক দেখে ফেলি তার নীরব কাহিনীময় গভীর ম্লান চোখ।
তার সাথে আমার ভাষার ব্যাবধান দুস্তর
সে জানেনা ইংরিজি আমি লাতিনে গোমাংস ক অক্ষর।
অথচ গভীরতর অনুভবের ভাষার দরকারই হয়না, হয়নি কোনদিন।
তার নাম আইসিস,
সে দেবীর মহিমায় নিশ্চিত বসে পরে প্লাটফর্মের ধুলোয়
পরবর্তী ট্রেন তাকে নিয়ে যাবে গন্তব্যে ,
আমার ভাবনায় খেলে যায় স্বর্গ শকটের অপেক্ষায় শস্য আর সন্তানের দেবী।
সে হাসছিলো হ্যালোজেন আলোকে ম্লান করে দিয়ে
অথচ তার চোখে স্ফিংক্সের নির্লিপ্তি ,যেনবা
এই সুকুমার অষ্টাদশী তার এই দুচোখে অনেক দেখেছে
হাজার বছরের পুরনো বিষন্নতা।
তার সাথে আমার কাটানো সময় কয়েকটি ঘন্টা মাত্র
তার অধিকাংশই নির্বাক,
যদিও তার চোখ বলছিল হাজার বছরের গল্পগাথা।
এবং পরবর্তী ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বলা আদিওস
তার নির্বিকার দেখে যাওয়া , তার ম্লান হাসি অস্ফুট কথাতে
সে রয়ে গেছে এই সাবেক কিশোরের দেবীরুপ কল্পনাতে।
৩৫টি মন্তব্য
কৃষ্ণমানব
বাহ ভালোইতো ।
হাজার লোকের হাজারো কাব্যকথা নিয়ে যানবহনটি কতটা পথ অতিক্রম করছে.,
উত্তসর্গের মানুষটির নামটা দেখেও ভালো লাগছে
সাইদ মিলটন
রেলগাড়ি দেখলেই আমার দূরে কোথাও চইলা যাইতে মনচায় 🙂
”কামরার গাড়ী ভরা ঘুম রজনী নিঝুম” 🙂
বন্য
একের পর এক কবিতা লিখেই যাচ্ছেন তাও দাগ কাটার মত,
চলিতে পথের স্মৃতি ধরে এগিয়ে যাওয়া ভাবনার বহিঃপ্রকাশ। “আমি” বাহুল্য বাদে আমার মনে হয় কবিতা এমনি হওয়া উচিত যা পড়তে পড়তে নিজের অজান্তেই ভালোলাগা সৃষ্টি হবে। কিছু কিছু শব্দের অর্থ বুঝতে পারিনি মনে হচ্ছে ইংরেজী স্ফিংক্সের, আদিওস, হ্যালোজেন।
ভালো লাগলো আবার বললাম সাইদ ভাই। শুভেচ্ছা।
সাইদ মিলটন
এইটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার গল্প তাই আমি এসেই যায়, আর আমার সব লেখাই আমি যা দেখি তাই লিখি বড় লেখকদের মতো না দেখে লিখতে পারিনা ভাই 🙁 তাই না চাইলেও আমি এসেই যায় ।
স্ফিংক্স – পিরামিডের ভেতর সমাহিত মৃতদের পাহারাদার আধা সিংহ আধা দেব মূর্তি
আদিওস – স্প্যানিশ (লাতিন) বিদায় সম্ভাষণ
হ্যালোজেন – এর বাংলা মানে আমিও জানিনা , প্রখর আলো দেওয়া বাতি হ্যালোজেন লাইট
ধন্যবাদ খুটিয়ে পড়ার জন্য
বন্য
শব্দগুলোর অর্থ জেনে নিলাম ভাইয়া, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন।
সাইদ মিলটন
আপনিও 🙂
বন্য
আর হ্যা উৎসর্গ যথার্থ হয়েছে।
সাইদ মিলটন
থ্যাংকস
মেহেরী তাজ
খুব ভালো হয়েছে।
সেই সাথে উৎসর্গ টাও……
সাইদ মিলটন
ধন্যবাদ মেহেরী 🙂
লীলাবতী
শুরুতেই নিয়ে এলেন দুঃখের নদীর কথা।অনেক সময়ই আছে যখন কথা বলতে ভাষার প্রয়োজন হয়না।শুধু দুজন দুজনকে দেখে যাওয়া,ভাষা হীনতায় বলে যাওয়া সমস্ত কথা।আইসিস হতে মনচায়।আদিওস শব্দটি এখানে বাংলা শব্দের চেয়েও ভালো লেগেছে।কবিতাটি ভালোই বুঝতে পেরেছি।
উৎসর্গ যাকে করলেন, ট্রেন ইষ্টিশন প্রেমি তিনি কয়েকদিন পুর্বেও এক ইষ্টিশনের ফটো দিয়েছেন।
ভাবছি নিজকে উৎসর্গ করে একটি পোষ্ট দেবো।নিজেকে দেয়া যাবেনা, এমন আইন তো আর নেই।
সাইদ মিলটন
অবশ্যই দেয়া যাবে 🙂
আপনি বুঝতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। আইসিস হতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক প্রতিটি মেয়ের মনেই বোধহয় দেবী হবার সুপ্ত ইচ্ছা থাকে 🙂
খেয়ালী মেয়ে
প্রথম ৪টা লাইন খুব মনে ধরেছে 🙂
সাইদ মিলটন
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু 🙂
হিলিয়াম এইচ ই
প্রথম দিকটা আসাধারন!! 🙂
সাইদ মিলটন
ধন্যবাদ হিলিয়াম 🙂
শুন্য শুন্যালয়
কতো ইস্টিশনে ঘুরলাম, কতো পোলার সাথে চোখাচোখি হইলো, এত সুন্দর কবিতা তো দূরের কথা একটা পঁচা কবিতাও কেউ লিখলো না 🙁
আমার মনে আসে এক অর্ধেক ইতিহাস আর অর্ধেক জীবন্ত নারীর কথা। এই লাইনটা অসাধারন হইছে।
ইস্টিশন প্রেমি মানুষ এমন উৎসর্গ পেয়ে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে। ধন্যবাদ দুজনকেই।
আবারও বলি, অনেক সুন্দর কবিতা।
সাইদ মিলটন
আহারে 🙁
আইচ্ছা দাড়ান শান্তাহার দাড়ায়া থাইকেন চোখাচোখি হইলে লেইখা দিবানি :p
আর অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🙂
ছাইরাছ হেলাল
বাহ্ দারুণ। চোখাচুখিতেই চলুক। খুব নিরাপদ পদ্ধতি। খুবই ছোট গল্প।
আপনার লেখা পছন্দ করি ।
আর উৎসর্গের কথা নূতন করে আর কী ই বা বলার আছে।
সাইদ মিলটন
আমি আপনার সেন্সিবলটি পছন্দ করি , লেখা কি পরিমান পছন্দ করি অইটা আর কইলাম না 🙂
চোখাচোখি হয়েছিল একদিন তখন ইতালীয়ান স্প্যানিশ কোন ভাষাই বুঝতাম না 🙂 আর এখন রীতিমতো ঝগ্রাঝাটি করতে পারি 😀 কিন্ত এখন আর তেমন কারো লগেই চোখাচোখি হয় না ;(
জিসান শা ইকরাম
আইসিস সম্পর্কে কিছুই জানতামনা,
আপনার লেখা দেখে জানলাম কিছুটা–
কিভাবে পুরানের চরিত্রকে নিজের কাছে এনে লিখতে পারেন, শিখলাম কিছুটা।
মুগ্ধ হলাম সাঈদ ভাই।
কত ভাবেই না আপনি লিখতে পারেন।
ষ্টেশন পাগলাও বলতে পারেন আমাকে
এবার কুষ্টিয়া গিয়ে শুধু ষ্টেশন প্রিতির কারনে ট্রেনে খুলনা গিয়েছি
ছবিও দিলাম এত কিছু থাকতে পোড়াদহ ষ্টেষনের 🙂
ধন্যবাদ আপনাকে।
সাইদ মিলটন
দাদা আইসিস মিশরীয় শস্য সন্তান আর উর্বরতার দেবী, ভাগ্যক্রমে আমার পয়লা শ্বেতাঙ্গী বান্দুবির নামও আইসিস :p অর মা আবার ইজিপশিয়ান 😀
আমিও ইষ্টিশন পাগল মানুষ দাদা 🙂
জিসান শা ইকরাম
নেটে সার্চ দিয়ে পড়ে ফেলেছি আইসিস সম্পর্কে 🙂
নামটা এখানে না দিলে জানা হতোনা তাঁর সম্পর্কে ।
শত ব্যস্ততায় সোনেলায় সময় দেয়াতে খুশি খুব।
প্রবাসে ভালো থাকুন।
সাইদ মিলটন
থ্যাংকস দাদা 🙂
ব্লগার সজীব
খুব ভালো লেগেছে ভাইয়া।
সাইদ মিলটন
ধইন্যা সজীব 🙂
হৃদয়ের স্পন্দন
অসাধারন লিখেছেন, তা জিশান ভাই কেই উৎসর্গ নিসন্দেহে কাহীনি আছে :p 😀
সাইদ মিলটন
থ্যাংকস , কাহিনী উৎসর্গেই লিখে দিছি তো উনি ইষ্টিশন পাগলা তাই 😀
মোঃ মজিবর রহমান
কবি লেখে কবিতা
উৎসর্গ করে গুনীকে
খুব ভাল লাগলো।
সাইদ মিলটন
ধন্যবাদ ভাই 🙂
বনলতা সেন
সোনেলা দেখছি ইস্টিশন হয়ে যাচ্ছে।
আইসিসের দুর্ভাগ্যই বলতে হবে। তখন কথা না বলে এখন ফুলঝুরি ছোটালে হবে ?
উৎসর্গ একদম সঠিক হয়েছে দেখছি।
সাইদ মিলটন
তখন আমি জানতাম না লাতিন ভাষা সে জানতোনা ইংরেজি 🙂
এখন দুইজনেই দুইটা জানি কিন্ত সে এখন চাকরি নিয়া মিডল ইষ্টে দুবাইয়ের এক ফাইভ স্টার হোটেলের ড্যামেজার থুক্কু ম্যানেজার 🙂
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
হুম
সাইদ মিলটন
🙂
ইসিয়াক
প্রথম চারটি লাইন খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া।
শুভকামনা রইলো্