এক দুপুরে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে যাচ্ছি ছেলের স্কুলের দিকে। ছুটি হয়ে গেলে, আমায় না দেখলে ছোট্ট মানুষটির মন খারাপ হবে। আমার যে আগেভাগে স্কুল গেটে অধির আগ্রহে দাঁড়িয়ে থাকবার কথা। স্কুল গেটে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। একে একে অন্য শিশুদের সাথে রিয়াসাত বেরিয়ে আসে। জড়িয়ে ধরে। আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটছিলাম। ঠিক সেই সময়ে ফোন আসে। পৃথিবীর সবচাইতে ভারী এবং দুঃখের সংবাদ ! দেশে আমার সুস্থ সবল মা বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সে-ই যাওয়া ! আর ফিরেননি। মানচিত্রের এই প্রান্তে আমি যখন আমার সন্তানের হাতখানা শক্ত করে ধরে পথ চলা শেখাই, ঠিক সেই সময়ে অন্যপ্রান্তে আমার মা আমায় একলা চলতে শিখিয়ে, হাতখানি ছেড়ে দিয়ে পাড়ি জমালেন অনন্তের পথে…
আমার বাবাকে চিকিৎসার জন্যে যেদিন ঢাকায় আনা হলো, তাঁর ভাল হয়ে উঠবার আশায় তুমুল আনন্দ আর স্বস্তি নিয়ে সেদিন ঘুমোতে গেলাম। পৃথিবীর এক প্রান্তে আমি যখন বাবা’কে জড়িয়ে ধরার, হাত দু’টো ধরে বসে বসে আবারো আগের মতন গল্প করবার স্বপ্নে বিভোর, ঠিক সেই সময়ে অন্য প্রান্তে আমার সরল সংগ্রামী বাবা হাসপাতালের যন্ত্রগুলোর সাথে যুদ্ধ করে করে হেরে গিয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়লেন। জেগে উঠে আমি পাই শতাব্দীর নিষ্ঠুরতম সংবাদ। এক্লা হয়ে যাবার সংবাদ…
সন্তানদের এক্লা পথ চলতে শেখানো শেষে সব বাবা-মায়েদেরই কি পৃথিবীর পথ চলা ফুরিয়ে যায় !
যাঁদের বাবা-মা বেঁচে আছেন, তাঁরা অনেক ভাগ্যবান।
জানিনা ক’জনে আমার মতন
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়
আয় খুকু আয়…… 🙁
৩১টি মন্তব্য
আবু খায়ের আনিছ
আপু সমবেদনা জানাই। যার নাই সেই বুঝে এর যন্ত্রনা। সৃষ্টিকর্তা উনাকে স্বর্গবাস করুন।
রিমি রুম্মান
ঠিক বলেছেন। সময় থাকতে আমরা অনেক কিছুই বুঝেও বুঝি না। যখন সময় ফুরিয়ে যায়, তখন কেবলই হাহাকার।
ছাইরাছ হেলাল
প্রার্থনাটুকুই সম্বল আমাদের, এর বেশি কি ই বা করার আছে,
আমরা সবাই একলা আসি একলা যাই।
রিমি রুম্মান
একলা আসি একলা যাই,
মাঝে কিছু মায়ায় জড়াই 🙁
তানজির খান
এই লেখাগুলো আমি পড়তে পারিনা। আমার আব্বাকে হারানোর বেদনা আমাকে গ্রাস করে। গলা ধরে এসেছে। “আমার বাবা আমার হিরো” নামে একটা পেইজ আছে আমাদের কিছু একটিভিস্টদের। লেখাটা শেয়ার দিয়ে দিয়েছি সেখানে।
দোয়া রইল সবার জন্য
রিমি রুম্মান
পেইজ এর লিঙ্কটি দিলে সেখানে গিয়ে পড়তে পারতাম। নিশ্চয়ই সেখানে বাবাদের নিয়ে লেখা হয় ? “বাবা” নামের মানুষটির প্রতি আমার অনেক দুর্বলতা, অনেক মায়া, অনেক ভালোবাসা ।
তানজির খান
আপু আপনাকে লিংক পাঠিয়েছি এফবিতে।
মোঃ মজিবর রহমান
কি মন্তব্য করব এই লেখায় মাথায় ঠকে না কিছু মর্মান্তিক লেখা খুব ট্রাজেডি, বুক্টা মর্ম্মর করে ঠুকরে উঠে।
হ্যা আপু একলা আসা-এক্লা যাওয়া এটাই ধরা র স্বাসত ধারা।
রিমি রুম্মান
চিরন্তন সত্য আমাদের এই একলা আসা- যাওয়া।
তবুও মানতে চাই না, কেন যে !
মোঃ মজিবর রহমান
আমরা বাস্তবের চেয়ে আবেগকে আকড়িয়ে ধরি। যে আপু তাই।
জিসান শা ইকরাম
সন্তানদের পথ চলতে শিখিয়ে সব বাবা মা ই একদিন এমন করে চলে যান
বাবা চলে গিয়েছেন ১৯৯২ সনে,মা বেঁচে আছেন
শুধু মায়ের কাছে থাকবো এই আনন্দে জন্মস্থান ত্যাগ করার ইচ্ছে জাগেনি কখনো
আপনার বাব মা এর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
ভালো থাকুন আপনিও……
শুভ কামনা।
রিমি রুম্মান
বাবা কিংবা মা এর সাথে দীর্ঘদিন কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য খুব কম সন্তানেরই হয়। আপনি তাঁদের একজন। আমি মাত্র ১৮ বছর বাবা-মা’র উষ্ণ সান্নিধ্যে ছিলাম। অতঃপর দূরে। দূর হতে কেবলই সেই আঠারো বছরের স্মৃতিচারণ !
অরুনি মায়া
অনেক কষ্ট আপু | আমি এভাবে ভাবতেই পারিনা | পৃথিবীর কোন বাবা মা যেন সন্তানের সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেই কামনা করি | জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা যেন একসাথে থাকতে পারি,আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা |
রিমি রুম্মান
সেই প্রার্থনা রইলো প্রতিটি সন্তানের জন্যে।
ভাল থাকুক সকল সন্তান। ভাল থাকুক সকল বাবা মা।
সাঞ্জনা চৌধুরী জুঁথী
পৃথিবীর কিছু নিয়ম বড়ই নিষ্ঠুর। আমরা কিছুই করতে পারিনা বিশেষ করে যখন প্রবাসে থাকি। বাবা-মা, ভাই-বোন সবার থেকে দূরে।প্রবাস অনেক সুখ দিলেও ছিনিয়ে নেয় প্রিয়জনদের।
আপনার প্রতি অনেক অনেক সমবেদনা।
রিমি রুম্মান
প্রবাস অনেক দেয় বটে, আপু। কিন্তু কিছু কি কম কেড়ে নেয় ?
ভাল থাকুন আপনি। -{@
ভোরের শিশির
বাবা মায়েরা বেঁচে উঠে সন্তানের মাতৃত্বে ও পিতৃত্বের মাঝে।
পৃথিবীর সকল আগত ও অনাগত এবং অদৃশ্য বাবা মায়ের জন্য -{@
রিমি রুম্মান
শুভকামনা আপনার জন্যে। -{@
ভোরের শিশির
ধন্যবাদ এবং আপনাকেও আবার শুভেচ্ছা -{@
অনিকেত নন্দিনী
আপু, বিয়ের পর মেয়েরা বাবা মায়ের কাছে তেমন করে থাকতে আর পারে কই? দূর থেকে দূরে সরে যেতে হয় সময়ের তাগিদে, জীবনের তাগিদে।
বাবা মা অসুস্থ হয়ে পড়লে বড়জোর তাদের নিয়ে ডাক্তারের ক্লিনিকে যেতে পারি।
উপরওয়ালা আপনার বাবা মায়ের আত্মাকে শান্তিতে রাখুন আর আপনাকে তাঁদের হারাবার শোক সইবার শক্তি দিন।
অনেক অনেক ভালো থাকবেন আপু।
রিমি রুম্মান
এই যে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন, এটিই আমার কাছে অনেক বড়। আমার তো সেই সুযোগও হয়নি। কেবল তাঁদের সাথে কাটানো শৈশব, কৈশোর এর সময়টুকু আগলে থাকি একান্তে।
অনিকেত নন্দিনী
আপনার কথার উত্তরে কী বলতে হবে, কী বলা উচিত জানিনা আপু। শুধু চাই সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে ভালো থাকুন সুদূর পরবাসে।
মামুন
” সন্তানদের এক্লা পথ চলতে শেখানো শেষে সব বাবা-মায়েদেরই কি পৃথিবীর পথ চলা ফুরিয়ে যায় !
যাঁদের বাবা-মা বেঁচে আছেন, তাঁরা অনেক ভাগ্যবান।
জানিনা ক’জনে আমার মতন
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়
আয় খুকু আয়…… “মনকে বড্ড উন্মাতাল করে তুললো। 🙁
রিমি রুম্মান
আসলে বাবার মত কেউ থাকে না পৃথিবীতে। বাবা তো একজনই। বাবা তো বাবাই। 🙁
নীলাঞ্জনা নীলা
ঈশ্বর সহায় এখনও বাপি-মামনি আছে। কিন্তু যখনই কেউ বলে আমাদের বাবা-মা আর কতোদিন! “নেই” শব্দটি শুনতে চাইনা। রিমি আপু আমরা যতো বড়ো হচ্ছি, ততোই একলা হচ্ছি।
তবুও মন ভালো থাকুক সন্তানের হাসি দেখে। -{@
রিমি রুম্মান
আমরা একলা হচ্ছি বলেই সন্তানদের আঁকড়ে থাকতে চাইছি, তাই না নীলা’পু ? তোমার শরীর কেমন এখন ? মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি সুস্থ হয়ে উঠো যেন।
নীলাঞ্জনা নীলা
ঠিক তাই রিমি আপু।
তবে আমার ছেলেটা বড়ো কেয়ার করছে আমায়। যেটুকু পাচ্ছি সেটা নিয়েই অনেক আনন্দ।
ভালো রাখার পথটা তৈরীতে ব্রত। 🙂
শুন্য শুন্যালয়
সেদিন ফেসবুকে তাজের ওয়ালে একটা ভিডিও দেখেছি মা কি করে একটা মেয়েকে পথ চলতে শিখিয়ে হারিয়ে যায়, চোখে পানি এসে গিয়েছিল, আজ যেন সেই ভিডিওটা আবার আপনার লেখায় দেখতে পেলাম।
বাবা-মা রা সবাই ভালো থাকুক খুব, তাদের পূর্ন যত্ন যেন নিতে পারি। পৃথিবীর সকল বাবা-মার জন্য প্রার্থনা রইলো।
রিমি রুম্মান
ভাল থাকুন আপনিও। দোয়া রইলো সকল বাবা মায়ের জন্য, তাঁদের সন্তানদের জন্যে।
শুন্য শুন্যালয়
আপু কোথায় গেলেন আমাদের ফেলে? ২০১৬ র প্রথম দিনের আলোতে ফিরে আসুন, স্মৃতির অম্লমধুর আবেগ নিয়ে আপনার মত করে। শুভ নববর্ষ প্রিয় আপু। -{@
রিমি রুম্মান
আপু রে, অতিথি আমারে ছাড়ে না এই প্রবাসেও। ডিসেম্বর মাস পুরোটাই একের পর এক অতিথিরা বুক করে রেখেছে আগে ভাগেই। কেমন করে যে বাচ্চাদের খ্রিস্টমাস হলিডে চলে গেলো টেরও পেলাম না। -{@