
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশ আবার কৃষির দিকে বিশেষ মনোনিবেশ করুক। অচিরেই বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট মারাত্মক পর্যায় ধারণ করতে যাচ্ছে, করবে।
গ্রামের মানুষজন আজকাল কৃষিকাজে খুব অমনোযোগী হয়ে উঠেছিল। ছোটবেলায় দেখতাম, ঘরের পাশে উঠানের পাশঘেঁষে পুঁই/লাউয়ের মাচা, খালি জায়গায় বেগুন, কাকরুল যখন যে সীজন তাই আবাদ করা হত। বাড়ির কিনারে কিনারে পেঁপেগাছ ছিল। ওগুলো এখন চোখেচোখে ভাসে। আজকাল গ্রামে ঢুকলে আর এমনটা নজরে আসেই না। সবাই বাজারমুখী। শিল্পায়নের ফলে হাতে টাকা থাকায় পারিবারিক কৃষিকাজ থেকে প্রায় সকলেই হাত গুটিয়ে নিয়েছে।
আর ঘরেঘরে গোয়ালঘর, হাঁস-মুরগি পালন, পুকুরে মাছচাষ এগুলোও প্রায় বন্ধ। ফার্মভিত্তিক উৎপাদনের সাথেসাথে পারিবারিক উৎপাদন প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে। এবার মেহেরপুরে গিয়ে এই পারিবারিক উৎপাদনের চিত্রটি তাই আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল।
ফেসবুক একটি সামাজিক নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক এখন গহীন গ্রামেও ব্যবহৃত হয়। সেজন্যই এ লেখাটি লিখার প্রয়োজন অনুভব করছি। আমরা যারা নগরের বাসিন্দা, আমাদের পক্ষে কৃষিতে তেমন ভূমিকা রাখা সম্ভব না হলেও আপনারা যারা গ্রামে বা মফস্বলে আছেন, আপনারা এদিকে মনোযোগী হোন। বিশ্বব্যাপী যে অবস্থা, পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নিতে সময় লাগবে না।
এরই মধ্যে নিজেদের গুছিয়ে নিলে নিজেরাও খেতে পারবেন, প্রতিবেশীদেরও দিতে পারবেন। এ পর্যায়ে একটি বাস্তব গল্প বলি।
আমার বাবা ব্যাংকার ছিলেন বলে বদলীর কারণে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত। একসময় বৈষয়িক প্রয়োজনে আম্মাকে আমাদেরসহ গ্রামের বাড়িতে টানা ছ’বছর থাকতে হয়েছে। সেসময় দেখেছি, আমাদের বাড়ির সামনে কবরের পাশঘেঁষে একটা বিছরা (খালি জায়গা) ছিল। সেখানে আম্মা লোক লাগিয়ে মাচা তৈরি করে সীজনাল সবজির আবাদ করাতেন। গ্রামের যখন যার দরকার বিছরায় ঢুকে প্রয়োজনমতো তুলে নিয়ে যেত। ফলনও হত অনেক। এমন হয়েছিল যে, গ্রামের সবার জন্য কমন একটা সবজিক্ষেত হয়ে উঠেছিল এটি।
সেই আমাদের গ্রামে ঢুকলেও এখন দেখি এসব জায়গা পরিত্যক্ত হয়েই পড়ে থাকে। গ্রামের বেশিরভাগই এখন ইট-ভাটার কাজে ব্যস্ত, কৃষিকাজে সকলেই উদাসীন।
করোনার আঘাত আমাদের দেশে এখনও সেরকম চোখে না পড়লেও যেকোনো সময় এর ছোবল মারাত্মক হয়ে দেখা দিতেও পারে। না দিলেও করোনার আঘাতে বিশ্ব পরিস্থিতি এখন মন্দার দিকে ঝুঁকছে। বিশ্বায়নের এই যুগে এর ঢেউ আমাদের এখানেও এসে লাগবে।
কাজেই এ পরিস্থিতিতে তাল সামলাতে ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষিকাজে বিশেষ মনযোগ দেয়াও এখন সময়ের প্রয়োজন।
২০টি মন্তব্য
হালিম নজরুল
চমৎকার আহবান।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আহ্বানে সাড়া দিতে উদ্ভুদ্ধ করুন সব্বাইকে।
শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সময়পোযোগী পোষ্ট দেবার জন্য ধন্যবাদ। এখন থেকেই শুরু করা দরকার যার যা জায়গা আছে বা ছাদেও অনেকেই করছে। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ, তেমনটাই দরকার যদি সুযোগ থাকে।
তৌহিদ
আইডিয়া কিন্তু দারুণ, এই ছুটিতে বাসার টবেও এসব করা যায়। আর মন্দ কি! ফ্রেশ শাকসবজি খেতে পারলাম, সময়টাও ভালো কাটলো। ইকোসিস্টেম সতেজ হওয়াটা জরুরি আর এর দায়িত্ব আমাদেরই।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
পরিবর্তন আসা দরকার। আগামীতে বিশ্বমন্দা ভালোই প্রভাব ফেলবে।
তৌহিদ
তা যা বলেছেন। সমস্যায় পড়বে আমাদের মত দেশগুলো যাদের লক্ষকোটি ডলার ঋন আছে অন্য দেশের কাছে।
ফয়জুল মহী
ভালো লাগলো। ঘরে থাকুন। ভালো থাকুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আপনিও ভালো থাকুন।
সুরাইয়া নার্গিস
ভালো আইডিয়া সবার কাজে আসবে, সময় উপযোগী পোষ্ট আপু।
ভালো থ্কুন, সুস্থ থাকুন শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
শুভকামনা। সুস্থ থাকুন।
এস.জেড বাবু
সময় উপযোগি পোষ্ট-
অনুপ্রেরন দিবে কৃষি কাজে লজ্জা পাওয়া বর্তমান যুগের ছেলেদের। উন্নত বিশ্বে কৃষিতে ডিপ্লোমা শেষ করেই মানুষ কৃষি কাজ করে।
শিক্ষিত সমাজ এগিয়ে এলে পাল্টে যাবে কৃষি কর্মের ধারা।
অনেক শুভকামনা-
এ বিষয়ে আরও লিখুন।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
দরকার তাইই। কৃষিতে শিক্ষিত যুবকের ভূমিকা আমাদের সুজলা সুফলা বাংলাদেশকে কৃষিতে বিশ্বের বুকে ভিন্ন পরিচয়ে নিয়ে আসতে পারে।
এস.জেড বাবু
লিখুন এ টপিক নিয়ে-
আমি প্রায়ই লিখি এফবিতে-
তবে আপনার মতো এতো গুছিয়ে লিখতে পারি না।
একদিন ফিরবে এ জাতি আবারও কৃষিকাজে। এটাও অবশ্যই সম্মানজনক পেশা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আমাদের কৃষি জমি আছে আমরা নিজেই শাকসবজি চাষ করে থাকি।
যা নির্ভেজাল শাকসবজি।
.
খুবি মানসম্মত বিষয় নিয়ে লেখনী।
ধন্যবাদ দিদি।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আহা! জেনে খুশি হলাম ভাই।
সুরাইয়া পারভীন
চমৎকার সময়োপযোগী গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট।
দারুণ আহ্বান। কথা গুলো সত্যিই ভেবে দেখা দরকার। অজস্র ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটি পোস্ট করার জন্য
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এ আহ্বানটা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক সময়ের প্রয়োজনে।
জিসান শা ইকরাম
খুবই ভালো প্রস্তাব।
কৃষিকাজে আবার ঝাপিয়ে পড়ব শিউর।
শুভ কামনা
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আমাকে খাওয়াতে হবে কিন্তু। শাকসবজি আমার সেই প্রিয়।