
পৃথিবীর প্রতিটি দেশে যুদ্ধ হয়েছে।
আর এ যুদ্ধের সাথে বিবর্তন ও পরিবর্তন হয়েছে ভূতপ্রেতের। ভূতেরা নাকি কামান ও ভয়ানক আগ্নেস্ত্রাকে ভয় পেত। সে ভয়ে অনেক ভূত পালিয়েছে। তেমনি হরিবাবুর জমিদারবাড়িতে হয়েছে।
যা একসময় আফ্রিকান ভূতপ্রেতেরা হরিবাবুর সপ্ততরী করে চলে আসে।
গ্রামের লোকজন সন্ধ্যা হলে জমিয়ে দিত নানান গল্প। আর এ গল্প ভূতপ্রেতকে নিয়ে।
যা আজকাল শুনাই যায়না। যাই হোক দুএকজন পুরনো লোক থাকায় বিনু ও রাঘব ভূতপ্রেতের গল্প শুনতে পাচ্ছে।
মৃদু গলায় রহমত আলীর গান শুনতে পেয়ে হতবাক। সবাই ছুটতে লাগলো বাগানবাড়ির অতিথিশালায়। এমনকি হরিবাবুও।
তার আগেই রহমত আলী গান গাওয়া বন্ধ করে দিলেন। পরীদেরকে নিয়ে গান শুনলে সাকিনাবিবি তেজেমেজে উঠবেন।
জ্যোতিষী মশাই আজ একটা সত্য কথা বলি।
বলো রহমত,
কী বলতে চাও?
মশাই আপনি যে কাঠে শুয়ে আছেন সেটা একসময় ভূতপ্রেতের দখলে ছিলো।
আজ আপনার দখলে।
জানি,জানি রহমত আমি সব জানি।
আমি জ্যোতিষী।
আমি সবকিছুই জানি।
ভূতেরা আমায় ভয় পায় তাই এ কাঠ ছেড়ে বটতলা ও হাসনাহেনায় বাসা বেঁধেছে।
বিনু প্রথম থেকেই জমিদারবাবুর সাথে লেগে পড়ে আছে নানান প্রশ্ন নিয়ে। জমিদার হরিবাবু বললেন সবসময় সব প্রশ্নের উত্তর ও ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়।
সামনে আসছে ভূতচতুর্দশী।
রাঘব আড়ষ্টগলায় ডাক্তার নীলুদা শঙ্করকে বলছে এই সুযোগ হাতছাড়া না করতে।
ভূতচতুর্দশীতে দেখা যাবে,
ডাক্তার নীলুদা সত্যিই কী ভূত ধরতে পারেন। নাকি শুধু ইনিবিনিয়ে কথা বলতে জানেন।
কয়েকদিন পেরিয়ে আগামীকাল ভূতনাথতলায় ভূতচতুর্দশী পূজার আয়োজন করা হয়েছে।
শীতের সকাল কুয়াশা ভেজা ঘাস মাড়িয়ে সকলেই আসছে জমিদারবাড়ির দীঘিতে স্নান করতে।
শীতল জলে স্নান সেরে নিলো বিনু ও রাঘব।
সাথে ছিলেন ডাক্তার নীলুদা ও মিস্টার নগেন জ্যোতিষী। স্নান সেরে সকলে সামান্য ঘিভাত খেয়ে সকাল সকাল রওয়ানা হলেন ভূতনাথতলায়।
অনেকটা পথ হলেও পদব্রজে যাত্রা শুরু করলেন।
একে একে সবাই হাজির।
অপরাহ্ণ থেকে ভূতের পূজা আরম্ভ হবে।
সেই কবে থেকে নগেন জ্যোতিষী তামাক টেনে যাচ্ছেন।
উপস্থিত সকলেই উচ্চমার্গের তান্ত্রিক।
বিশেষ গুণের অধিকারী। তাঁদের মধ্যে মিস্টার নগেন জ্যোতিষী কম নয়। পূর্ববঙ্গের নামকরা সনদপ্রাপ্ত একজন জ্যোতিষী।
চারদিক জুড়ে অরণ্য। ভূতপ্রেতের জন্য জায়গাটা বেশ জম্পেশ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। সময়ের গভীরতার সাথে গভীরতর হচ্ছে রাত্রি। আচমকা ঝড়তুফানে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। বসে থাকার নির্দিষ্ট জায়গা খুবি সংকীর্ণ।
বিনু নগেন জ্যোতিষীকে বলছে ব্যাপারটা এমন কেন মশাই?
ব্যাপার ভালো না।
বেশ ভালো না, বিনু।
আজ ভূতনাথতলার ভূত আমাদের একটা বিহিত করেই ছাড়বে। রাঘব মনেমনে ভাবছে আজ যা হবার হবে ভূত দেখেই ছাড়ব।
রাঘব সর্বদা নাছোড়বান্দা।
যা বলে তাই করে।
আটকে রাখার সাধ্য কারো নেই।
আজ ভূত দেখতে ডাক্তার নীলুদাও পিছপা হচ্ছেন না।
এদিকে লালমোহন ও বিনু ভয়ে কাঁপছে।
হঠাৎ সকলের সামনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে মস্তকহীন প্রকাণ্ড অদ্ভুত কালোরঙের এক বনমানুষ।
ভয়ানক এমন বনমানুষের আকার আকৃতি, রূপ বর্ণনা করার পূর্বেই অনেকেই ভয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়বে।
দেখামাত্র সকলেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর রাঘবের জ্ঞান ফিরলে দেখতে পায় ছোট্ট একটা মেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে।
ভূত মনে করে যেই ধরতে গিয়েছে মেয়েটা দৌড় দিয়ে পালাতে লাগলো। রাঘব মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মেয়েটির পিছুপিছু দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তা হারিয়ে ফেলে।
ততক্ষণে মেয়েটি কোথায় পালিয়ে যায়।
বিনু,মোহন,নগেন জ্যোতিষী ও ডাক্তার নীলুদার জ্ঞান ফিরলে খুঁজে দেখেন রাঘব নেই।
রাত পুহিয়ে সকাল হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু রাঘবের খুঁজ এখনো অব্ধি নেই।
ভূত দেখতে আসার পর কি হলো তা আর কেউ জানেনা। খানিকক্ষণ পর ডাক্তার নীলুদা বলছেন কিরে কাল রাত্রিতে কিছু দেখতে পেয়েছিলে?
বিনু বলছে না তো ডাক্তার মশাই।
আহারে এ কী বলছিস?
আমার মনে হয়েছে কাল আমাদের সম্মুখ দিয়ে অদ্ভুত কালোরঙের মস্তকহীন বনমানুষ গিয়েছে।
এটা ভূত ছিলোরে বিনু।
সত্যিই কী এটা ভূত ছিলো ডাক্তার মশাই ?
হ্যা রে।
ভূতটা রূপ ধরেছে বনমানুষের।
কথার উপর মিস্টার নগেন জ্যোতিষী বলছেন হ্যাঁ, আমারও তাই মনে হচ্ছে।
তাহলে সত্যিই কী আমরা কাল ভূত দেখেছি।
এ কথা শুনে বিনু ও মোহন দুজনি আফসোস করছে।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে কিন্তু রাঘবের খুঁজ নেই।
সে রাতের ঝড়তুফানে আগত তান্ত্রিক মহাতান্ত্রিকরা ভয়ে পালিয়েছে।
বেলা বাড়ছে সবাই জমিদারবাড়িতে ফিরে গিয়েছে।
হঠাৎ রাঘব চিৎকার দিয়ে বলছে ভূত দেখেছি ভূত দেখেছি।
ডাক্তার নীলুদা ও নগেন জ্যোতিষী মনেমনে ভাবছেন সত্যিই তো রাঘব ভূত দেখেছে।
তবে রাঘব দেখেছে ভূত দুই ধরণের একটা মস্তকহীন অদ্ভুত কালোরঙের ভূত আরেকটা মেয়ে।
মেয়েটা পরী ছিলো।
বিনু এ কথাশুনে আফসোস করছে।
আহারে সবাই ভূত দেখেছে আমি দেখতে পেলাম না।
এমন ভূত ডাক্তার নীলুদা ও নগেন জ্যোতিষী কস্মিনকালেও দেখেননি।
আর লালমোহন মনে মনে ভাবছে যাইহোক।
ভূতপ্রেত দেখি নাই।
বেশ হয়েছে।
না হলে আমরা বিয়েটা আটকে যেতো।
১৪টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
বাব্বা কাটা মস্তক ওয়ালা বনমানুষটি কি আসলে ভূত?
নাকি সাজানো,
জানার অপেক্ষায় রইলাম।
ভূতের গল্প আরেকটু গা ছমছমে হওয়া দরকার মনে হলো।
শুভেচ্ছা রইল দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বনমানুষটা ভূত ছিলো।
গা ছমছমে ও শিহরিত হয়ে উঠার জন্য পরবর্তী পর্বে অপেক্ষা করুন।
সাধুবাদ, দিদি।
সুপায়ন বড়ুয়া
ভূতপ্রেত দেখি নাই।
বেশ হয়েছে।
না হলে আমরা বিয়েটা আটকে যেতো।
সুন্দর ডায়লগ দিয়ে আজখের পর্বটা শেষ হলো।
যদিও আমার ও ভুত দেখা হয় নি
সুন্দর ঘুম হবে।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ভূতনাথতলায় এইবার ভূত দেখা হয়েছে কিন্তু বিনু ও মোহনের দেখা হয় নি!
দেখা যাক জমিদারবাড়ির বাগানবাড়িতে ভূত দেখতে পারে কি বিনু ও মোহন।
.
সাধুবাদ,দাদা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আহ্ শেষপর্যন্ত ভূত এলো বনমানুষরূপে। তাও মস্তকবিহীন। যাক অনেকেই দেখলো শুধু বিনু আর মোহন দেখলো না। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম আরো রোমহর্ষক বর্ণনা পাবো এই ভরষায়। শুভ কামনা রইলো দাদা
প্রদীপ চক্রবর্তী
হ্যাঁ,
সাধুবাদ দিদি।
তৌহিদ
পড়তে পড়তে খানিক ভয়ই পেয়েছিলাম। বনমানুষের রুপে ভুত! ভাবতেই গা কাঁটা দিচ্ছে দাদা।
চলুক গল্প। ভালো থাকুন।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
আপনিও ভালো থাকুন অনেক।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
তবে রাঘব দেখেছে ভূত দুই ধরণের একটা মস্তকহীন অদ্ভুত কালোরঙের ভূত আরেকটা মেয়ে।
মেয়েটা পরী ছিলো।
বিনু এ কথাশুনে আফসোস করছে।
আহারে সবাই ভূত দেখেছে আমি দেখতে পেলাম না। —– দাদা আমার ভূত দেখার ইচ্ছে নেই।
ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আফসোস রয়ে যাবে দাদা!
সাধুবাদ আপনাকে।
মাছুম হাবিবী
ভৌতিকগল্প আমার বরাবরের মতই পছন্দ। আপনার গল্পটিও পছন্দের তালিকায় যুক্ত হল।
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
সাধুবাদ আপনাকে।
সুরাইয়া নার্গিস
বাহ্! দারুন চলছে গল্প।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।