
ভূতপ্রেতরা অদ্ভুত জগতের এক বাসিন্দা। তাদের বসবাস মনুষ্য সমাজ থেকে বহুদূর।
মনুষ্য সমাজ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে ঘাড়চেপে ধরে। বিশেষ করে গ্রামের লোকজন ভূতপ্রেতে বিশ্বাসী। এ বিশ্বাসকে মনে করিয়ে জমিদারবাড়িকে গ্রামের লোকজন নাম দিয়েছে ভূতবাড়ি।
তান্ত্রিক মহাতান্ত্রিকরা হার মেনেছেন বাগানবাড়ির বিদেশি ভূতপ্রেতের কাছে।
এইবার ঠিকে আছেন ডাক্তার নীলুদা ও মিস্টার নগেন জ্যোতিষী।
লোকজন মনে করে থাকে ভূতপ্রেতরা নাকি সর্বদা কালোরঙের হয়ে থাকে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো,
ডাক্তার নীলুদার মতে ভূতপ্রেতের গায়ের রঙ ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে!
দুঃখের ব্যাপার হরিবাবুকে কতবার ভূতপ্রেত আঁকড়ে ধরছে। কিন্তু আজও বলতে পারেননি ভূতের গায়ের রঙ কেমন! জিজ্ঞাসা করতে গেলে রেগে চড়া হয়ে উঠেন। এমনকি তাঁর বদন থেকে ভূতপ্রেতের গল্পের চারটে কথাই বের হয়ে আসেনা।
তবে একটা ব্যাপার আছে,
আজকাল ডাক্তার নীলুদার মুখে ভূতপ্রেতের গল্প শুনে বিনু ও রাঘব দুজনি মুগ্ধ হয়ে উঠছে।
বলা যায় শ্রোতা হিসেবে মন্ত্রমুগ্ধ।
ভূত দেখার ব্যাপারে ডাক্তার নীলুদার সাথে যুক্তি কাটিয়ে তাঁকে কথায় হারানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
সিগারেটে টান দিয়ে দিয়ে এইবার নীলুদা আরেকটা কথা বললেন। তিনি নাকি পদ্মায় ভূতের সাথে ইলিশ মাছ ধরেছেন। তাও আবার হাত দিয়ে। ভূতপ্রেতেরা নাকি তাঁর হাতকে লম্বা করে দেয়। তাদের জাদুর মাধ্যমে।
গল্প যত শুনছে দুজনি ভেবাগঙ্গারাম হয়ে পড়ছে।
রাঘব ভাবছে সব রহস্য তো নীলুদাকে নিয়ে।
কারো কাজকাম নেই। সারাদিন খাওয়া আর ঘুমানো। বেশ ভালো দিনকাল কাটছে সকলের। বিনু ও রাঘব দুজনি বাড়ি যাওয়ার কথা প্রায় ভুলে গিয়েছে।
সেটা স্বাভাবিক বিশেষ করে বিনুর কাছে। এতো ভালো ভালো খাবার পেলে কেউ কি চলে যায়।
অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে এখনো অব্ধি রহমত আলীর খুঁজ খবর নেই।
আনন্দপুরের কয়েক কিলোঃ দূরে নাথতলা নামে একটা জায়গা। সেটা এখন ভূতনাথতলা নামে পরিচিত।
সে জায়গাটা দেশী ভূতপ্রেতের দখলে। এছাড়াও রয়েছে সুন্দরী পরীদের বসবাস। আর এ পরীদের সাথে নাকি রহমত আলীর যোগাযোগ আছে! সেটা আজ অব্ধি সাকিনাবিবি জানেন না।
যাই হোক রহমত আলী এইবারের মত ছাড়া পেলেন।
না হলে ভূতনাথতলার পরীরদের সাথে আরেকটা বিয়ে হয়ে যেতো। বলা যায় ভাগ্যের গুণে ফিরে আসা।
বেলা গড়িয়ে অনেক।
বাড়িতে ফিরে আসলেন রহমত আলী। বাড়িতে আসা দেখে সাকিনাবিবি তান্ত্রিক নগেন জ্যোতিষীকে ডেকে এনে ফুঁ ফা দেওয়াতে লাগলেন। যাতে করে ভূতপ্রেত থাকলে তা চলে যেতে।
গোপনসূত্রে জানা গিয়েছে রহমত আলী জমিদার হরিবাবুর গুপ্তচর।
রহমত আলী নাকি ভূতপ্রেতের খবর নিয়ে থাকেন। সাকিনাবিবিও জানেননা এমনকিছু।
আজ শুনতে পেয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়লেন।
রহমত আলী নিশাচর লোক।
আর এসকল লোক এমনি হয়ে থাকে। তাঁদের সংসারের প্রতি মায়া নেই। যখনতখন বেরিয়ে পড়েন ভূতপ্রেতের সাথে দেখা করতে।
কান টানলে মাথা আসে। সে ভাবনায় রাঘব রহমত আলীর কাছ হতে ভূতপ্রেতের আদি অন্ত জানতে চায়।
বেশ কয়েকদিন গত হলো ভূতপ্রেতের জন্য ঘুম নেই ঠিকমতো। ভূত না দেখে গেলে এবং দু একটা না ধরলে কেমন হয়।
বেশকদিন যাবৎ হতে চলছে বাগানবাড়িতে তান্ত্রিক পূজার আসর বসছে না। রাতের পর রাত জেগে থাকতে আর ভালো লাগছে না রাঘব ও বিনুর। এতদিন হয়ে গিয়েছে ভূত ধরা তো দূরের কথা ভূতের দেখা মেলেনি।
তবে এইবার ডাক্তার নীলুদা কে সাথে নিয়ে ভূত দেখতে ও ধরতে হবে।
মিস্টার নগেন জ্যোতিষী আজ বাগানবাড়ির অতিথিশালায় বসে হুকা টানছেন। আর আপন সুরে একের পর এক গান গেয়ে যাচ্ছেন।
হঠাৎ রহমত আলী এসে হাজির। নগেন জ্যোতিষীর কথায় রহমত আলী গান ধরেছেন,
ও পরী,
পরীরে আমারে কেন
বিয়ে করতে চাস?
আমি তো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
আমি যে জমিদারবাবুর গুপ্তচর।
কেন যে তোরা আমায় যখনতখন দিয়ে থাকিস যন্ত্রণা?
ও পরী,
পরীরে বল না।
এমন গানে মিস্টার নগেন জ্যোতিষী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পড়লেন।
এ কেমন গান রহমত?
সত্যিই তো দেখছি পরী তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল।
হ্যাঁ জ্যোতিষী মশাই।
আপনার ফুঁ ফা কাজে লেগেছিল বলে আর বিয়ে হয়নি। না হলে তো আমার স্ত্রী সাকিনাবিবি বাড়ি হতে বের করে দিতো।
লালমোহন তখন সকলকে চা বানিয়ে দিচ্ছে।
মোহন জব্বর চা বানায়। এমন চা খেয়ে পঞ্চমুখে প্রশংসা করতে লাগলে নীলুদা।
ডাক্তার নীলুদা উত্তরবঙ্গের লোক বাংলাভাষার পাশাপাশি হিন্দিতে কথা বলতে পারদর্শী।
তাই মোহনকে বলছেন,
চিন্তা করনে কি কোই বাত নেহি মোহন। এইসা মস্ত চায় খানেকে বাদ আপকি বিবি আপকো বহত পেয়ার করেগি। অব আপ যাইয়ে আপকে জিজাজি কো এক কাপ চায় দেকে আইয়ে।
আজকের চায়ের কাপে গল্প ছিলো জমিদারবাড়ির কালোবিড়ালকে নিয়ে। কয়েকদিন হতে বাড়ির কালোবিড়াল লাপাত্তা হয়ে আছে।
হরিবাবুও খু্ঁজ খবর নিতে চান না।
বিড়ালের বারী বয়স হয়েছে। চারপুরুষের ঐতিহ্যগত কালোবিড়াল। হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে চায় রাঘব।
নাকি ভূতে ধরেছে। গল্পের আড্ডায় রহমত আলীর গানের আওয়াজ আসলে হঠাৎ একসঙ্গে সকলে চুপ হয়ে যায়।
৬টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
সুন্দর চমৎকার। এগিয়ে যান দাদা। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি ।
ভালো থাকুন অনেক।
ফয়জুল মহী
অপূর্ব । লেখা পড়ে বিমোহিত হলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন অনেক।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
ভূতপ্রেতরা অদ্ভুত জগতের এক বাসিন্দা। তাদের বসবাস মনুষ্য সমাজ থেকে বহুদূর।
মনুষ্য সমাজ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গেলে ঘাড়চেপে ধরে। বিশেষ করে গ্রামের লোকজন ভূতপ্রেতে বিশ্বাসী। এ বিশ্বাসকে মনে করিয়ে জমিদারবাড়িকে গ্রামের লোকজন নাম দিয়েছে ভূতবাড়ি।— গ্রামের মানুষের ভূতপ্রেত নিয়ে কুসংস্কার এবং বিশ্বাস আছে।
সুন্দর গল্প, এগিয়ে চলুক অব্যাহতভাবে।
শুভেচ্ছা রইলো।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।