
নীলুদা ডাক্তার তামাকু সেবনে বড়ই পটু।
পূর্বে আনা তামাক গুলোতে দুর্গন্ধ ধরছে।
যা খাওয়ার উপযোগী নয়।
হরিবাবুকে ডেকে বলছেন আমার জন্য ভদ্র তামাকু সেবনের ব্যবস্থা করো। না হলে আমি আর পারছি না।
হরিবাবু ঠিক আছে বলে,মোহনকে পাঠিয়ে দিলেন বাজারে।
মেছোভূত, ডাকিনী, পেত্নী, শাঁকচুন্নি, স্কন্ধকাটা, ডাইনি ইত্যাদি ইত্যাদি কতরকমের ভূতপ্রেতের বসবাস না কি জমিদারবাড়ির বাগানবাড়িতে।
এসব ভূত নাকি আফ্রিকার গভীর অঞ্চলে ছিলো একসময়।
পাহাড়িয়া জনগোষ্ঠীর গোলাবারুদের প্রভাবে অনেক ভূতপ্রেত আহত ও নিহত হয়েছে।
বাণিজ্যের সুবাদে একবার হরিবাবু আফ্রিকায় যান সপ্ততরী করে। ফেরার পথে এসব ভূতপ্রেত নাকি তাঁর সপ্ততরী করে এসেছিলো।
আজ শনিবার।
সন্ধ্যায় আনন্দপুরের প্রবীণ চা বিক্রেতা রহমত আলীর মুখে এ গল্প শুনতে পেলো রাঘব ও বিনু।
জমিদারবাড়ির আমন্ত্রণ শেষে আজ থেকে বাগানবাড়িতে থাকার কথা। কিন্তু রহমত আলীর কথাশুনে দুজনের মনে আতঙ্ক কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে।
এমন কথা পূর্বে রহমত আলী ও জমিদারবাবু ছাড়া আর কেউই জানেনা।
বিনুর একটা স্বভাব আছে দূতের মতো এক জায়গার কথা অন্যজায়গায় বলা। একজনের কথা আরেকজনের কাছে ইনিয়েবিনিয়ে বলা এসব রাঘব মোটেও পছন্দ করে না।
কিন্তু এতরকমের ভূতের কথাশুনে যেকোনো কাউকে একবার হলেও ভাবতে হয়।
বিনু একা সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালমোহনকে বলে আরও কয়েকদিন জমিদারবাড়িতে থাকতে।
রাঘব তা মেনে নেয়নি।
সে এইবার ডাক্তার নীলুদা শঙ্করকে নিয়ে ভূত ধরতে চায়। আসলে আদৌ কী নীলুদা শঙ্কর ভূত দেখেছেন।
এবং ভূত কি ধরেছেন তা নিয়ে বিনুর আগে থেকেই সন্দেহ জাগছিল।
ডাক্তার নীলুদার কথাশুনে বিনুও রাজী হয়ে যায় সে আজ হতে বাগানবাড়িতে থাকবে।
বাগানবাড়ির ফল চুরি হওয়ার পর থেকে হরিবাবু পাহারাদার বাড়িয়েছেন অনেক।
সকল পাহারাদাররা অতন্দ্র প্রহরী।
পুরো বাড়ি রাত্রি হলে আলোর মশালে জ্বেলে উঠে। এতসবের মাঝে আফ্রিকার ভিন্নরকমের ভয়ংকর ভূতপ্রেত থাকবে তা নিয়ে ভাবছে রাঘব।
রাঘব রহমত আলীর মুখে শুনেছিলো আফ্রিকার ভূতপ্রেত এসবকিছু আলোর মশাল ও পাহারাদারদের ভয় পায়না। আর এসব ভূতপ্রেতের সাথে না কি হরিবাবু যোগসূত্রও রয়েছে!
আজকালকার বিদেশি ভূতপ্রেতকে তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে থামানো যায়না। তাও আবার আফ্রিকান ভূতপ্রেত।
চারটে খানি কথা নয়।
বিদেশি ভূতপ্রেতকে থামাতে হলে উচ্চতন্ত্রের সাধনের প্রয়োজন। যা ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের কিছুটা জানা আছে। তা সবসময় কাজে আসেনা।
কেননা ডাক্তার নীলুদা অনেক বৃদ্ধ লোক। গোপন তন্ত্রমন্ত্র দাঁতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
হঠাৎ করে ঘোর বৃষ্টি নামলো।
রাত্রি প্রায় দশটার কাছাকাছি। বাগানবাড়ির একপাশ থেকে চিরযৌবনা কোন এক মেয়ের হাসির শব্দ ভেসে আসছে। তা একমাত্র রাঘব ও নীলুদা শঙ্করের কর্ণপাত হলো। এত রাত্রি আর এমন হাসির শব্দ শুনে দুজনকে আকস্মিক করে দিয়েছে। নীলুদা বুঝতে পারলেন নিশ্চয় এ পেত্নী ডাকিনীর হাসির শব্দ।
এ বৃষ্টিতে রহমত আলী কোথায় হতে হাতে ছোটখাটো ব্যাগ নিয়ে জমিদারবাড়ির উঠানের দিকে ছুটতে লাগলেন। জমিদারবাবু তা দেখে বলছেন রহমত আলী কোথায় চলেছ।
আজ্ঞে না জমিদার মশাই আজ বাজার থেকে ফিরতে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। বিনু এমন কথা শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছে। কেননা সন্ধ্যাবেলায় আনন্দপুরের বাজার শেষ হয়ে যায়। কিন্তু রহমত আলী এতরাত্রিতে জমিদারবাড়ির উঠোনের মধ্য দিয়ে হাতে ব্যাগ নিয়ে যাচ্ছেন। না কি তাঁরও কোথায় ভূতের সাথে যোগসূত্র আছে!
বাগানবাড়ির আশেপাশে অনেক হাসনাহেনা।
শীতের রাতে হাসনাহেনার গন্ধে সকল ভূতপ্রেত ছুটে আসে। ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে অনেক ডাইনি নাকি চিঠি লিখে। মাঝেমধ্যে এসব চিঠি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যাই হোক সব ভূতপ্রেতেরা চিঠিপত্র পত্র লিখতে জানে। সেটা প্রেমপত্র হোক বা জমিদারকে বশীকরণের পত্র হোক।
দেশীয় ভূতপ্রেত আজকাল দেখা যায়না। আর দেশীয় ভূতদেরকে কেউ ভয় পায়না।
রাত্রি একে তো গভীর।
তারমধ্য শীতের মাস,মাঘমাস।
ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের হাত পা থরথর করে কাঁপছে সাথে রাঘবেরও। হঠাৎ করে আবারও শুনা গেলো ডাকিনী পেত্নীর হাসির শব্দ। এদিকওদিক লাইট মেরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। অশরীর হলে তো দেখার স্বপ্নই হয় না। বরং দুজনি চুপচাপ বসে আছে।
১৬টি মন্তব্য
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
মজার তো ! — শীতের রাতে হাসনাহেনার গন্ধে সকল ভূতপ্রেত ছুটে আসে। ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে অনেক ডাইনি নাকি চিঠি লিখে। মাঝেমধ্যে এসব চিঠি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যাই হোক সব ভূতপ্রেতেরা চিঠিপত্র পত্র লিখতে জানে। সেটা প্রেমপত্র হোক বা জমিদারকে বশীকরণের পত্র হোক।
— এগিয়ে চলুক গল্প। ভুতের চিঠি পরে পড়া হবে। শুভ কামনা ।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,আপনাকে।
যথার্থ মন্তব্যের জন্য।
সুরাইয়া নার্গিস
দারুন গল্প চলছে।
ছোট ভাইয়া, মাঝে কয়েক পর্ব পড়া হয়নি, সময় করে পড়ে নিব।
খুব ভালো লাগছে পর্বটা পড়লাম, পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ঠিক আছে,দিদি।
সাধুবাদ আপনাকে।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শীতের রাতে হাসনাহেনার গন্ধে সকল ভূতপ্রেত ছুটে আসে। ফুলের ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে অনেক ডাইনি নাকি চিঠি লিখে। মাঝেমধ্যে এসব চিঠি মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। যাই হোক সব ভূতপ্রেতেরা চিঠিপত্র পত্র লিখতে জানে। সেটা প্রেমপত্র হোক বা জমিদারকে বশীকরণের পত্র হোক।
দেশীয় ভূতপ্রেত আজকাল দেখা যায়না। আর দেশীয় ভূতদেরকে কেউ ভয় পায়না। – ভূতপ্রেত চিঠিপত্র লিখতে জানে জানা ছিলো না। 😇😇। দেশীয় ভূতদের কেউ ভয় পায়না কি দারুন দারুন কথা। 🤣🤣। শুভ কামনা রইলো
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দিদি।
ভালো থাকুন অনেক।
সুপায়ন বড়ুয়া
“ডাক্তার নীলুদা শঙ্করের হাত পা থরথর করে কাঁপছে সাথে রাঘবেরও। হঠাৎ করে আবারও শুনা গেলো ডাকিনী পেত্নীর হাসির শব্দ। “
যাক পেত্নীর হাসির শব্দ পাওয়া গেল
এখন দেখার পালা।
ভাল লাগলো শুভ কামনা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,দাদা।
ভালো থাকুন অনেক।
ফয়জুল মহী
অসাধারণ শব্দ চয়নে অনবদ্য একটি লেখা
প্রদীপ চক্রবর্তী
সাধুবাদ,আপনাকে।
তৌহিদ
হাসনাহেনার গন্ধে অশরীরী আত্মা আসে নাকি? ভয়ের কথা দাদা! আমার বাসাতেও একটা গাছ আছে কিনা তাই।
চলুক গল্প। ভালো থাকুন দাদা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
আসতেই পারে বলা যায়না না দাদা!
সাধুবাদ,আপনাকে।
নিতাই বাবু
আসলে কি সত্যি? যদি রাতেরবেলা ফুলের গন্ধে ভূতপ্রেত আসে, তো আমার বাসার সামনে একটা হাসনাহেনা ফুলগাছ আছে; তা শীঘ্রই কেটে ফেলতে হবে। বলা তো যায় না, না জানি কখন কাকে ধরে ফেলে! তাহলে তো একসময় নিজেকেও ধরে ফেলতে পারে। তারচে বরং কেটেই ফেলবো!
গল্প পড়ে বেশ ভালো লাগলো, দাদা। এমন গল্প আরও চাই।
প্রদীপ চক্রবর্তী
হাহাহা।
দয়াকরে কাটবেন না দাদা।
বরং দু এক রাত্রি জেগে দেখুন ভূতের দেখা পান কিনা।
যদি পেয়ে যান তাহলে নিশ্চয় আপনি ভাগ্যবান।
ভূতের দেখা পেলে আমায় কিন্তু জানাতে ভুলবেন না দাদা।
কামিনী ফুল হাসনাহেনা ফুল নাকি ভূতের কাছে সুগন্ধি।
সাধুবাদ দাদা।
ভালো লাগলো আপনার মতামত।
নিতাই বাবু
আচ্ছা, ঠিক আছে দাদা। দু-এক রাত জেগে থেকে দেখতে হবে। যদি দেখা পাই…
জিসান শা ইকরাম
আফ্রিকার ভুত ধরতে হলে আফিকান ভাষা জানা লাগবে। তা কি ডাক্তার নীলুদা জানে?
নীলুদা, রাঘবের সাথে আমরাও বসে থাকি ভুতের অপেক্ষায়।
শুভ কামনা।