#জীবন
অনেকদিন যাবত মনের কোণে ভেসে বেড়ায় কিছু স্মৃতি, কিছু কথা।
সেই কবে ছোট্টবেলায় বই,খাতা,কলম, পেন্সিল ইত্যাদির সাথে পরিচয়। রঙিন ছবিওয়ালা নতুন বই, বিভিন্ন রঙের রঙ পেন্সিল, নানা ধরনের কলম এসব নিয়েই আনন্দময় শৈশব। তবে সেই শৈশব থেকেই ছিলাম কঠোর পরিশ্রমী। মাত্র ১ মাসে ফুপাতো বোনেরা পেন্সিল ধরা থেকে শুরু করে ভার্তি পরীক্ষার জন্য যা যা লাগে সব শিখিয়ে পড়িয়ে প্রস্তূত করেছিলেন। বায়োজিদ লাইন স্কুলে তখন তুখোড় ভর্তি প্রতিযোগিতা চলতো। তাতে জয়ী হই ২৭ তম স্থান অধিকার করে। এরপর আক্রান্ত হই ম্যালেরিয়া রোগে! ম্যালেরিয়া কাটিয়ে উঠে ১ম সাময়িক পরীক্ষার মাত্র কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরি। বোনদের কল্যাণে শিশু শ্রেনিতে প্রথম সাময়িক দেই এবং গনিতে ২৫/২৫ সহ ক্লাসে ২য় স্থান অধিকার করি। এভাবেই শুরু আমার পথচলা। তখন থেকে আর কোনদিন জিরোইনি। পড়া ছাড়া আর কিছু জানতাম না। সত্যি বলতে কিছুটা হাবা ছিলাম। খেলাধূলাও পারতাম না। শুধু একটা কাজই পারতাম, তা হলো পড়া।
এরপর ৭/৮ টা স্কুল বদল হয়। নিজের প্রয়োজনে নয়, পরিবারের প্রয়োজনে। অনেক মানুষের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখি। সেই সুবাদে ২/৪ টা খেলাও শিখি। কিন্তু সেসবে ততটা মন লাগতো না, যতটা লাগতো পড়ায়। গল্পের বই হোক, পাঠ্যবই হোক, পড়াই ছিল আমার একমাত্র নেশা। পড়া ছাড়া অন্যকিছু করা যায়,তেমন কিছু আমার মাথাতেও আসতো না। কখনো কোনদিকে জীবনকে উপভোগ করা হয়ে ওঠেনি, পড়ার ক্ষতি হবে বলে। এমনকি বাবা মা কোথাও বেড়াতে যেতে বললেও যেতে চাইতাম না।গেলেও মনে হতো, কখন বাসায় ফিরব,কখন পড়তে বসব?
কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! সারাজীবন এত পরিশ্রম করার পরেও অর্জনের ঝুলিটা খুব সাধারন। পরিশ্রম করে যখন ১০ পা এগিয়েছি, ভাগ্য এসে ১১ পা পিছিয়ে দিয়েছে! এক ঝাপ্টায় সর্বদা যেন সব শেষ হয়ে যেত। ভাগ্যটা কেমন যেন ঢেউ হয়ে এসে সাগরপাড়ের বালির বাঁধের মত ভেঙে দিত সব স্বপ্নকে! ১০ম ধাপ থেকে ১২ তম ধাপ পর্যন্ত আর কোনদিন ওঠা হতো না। তার আগেই একটা ঢেউ এসে নিমেষে চূর্ণ করে দিতো সবকিছু!
একটা এ+ পাওয়া হলো না, একটা ভার্সিটিতে চান্স হলো না, এবার হয়ত একটা চাকরীও হবে হবে করে………
আজকাল আর কাওকে বলার সাহস পাই না, “পড়ো ভালো করে। পরিশ্রম করলেই সব পাবে,যা যা তুমি চাও সবই মিলবে!” কাওকে বলি নাহ। হেরে যাওয়া মানুষদের এসব বলতে নেই।
১৩টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
আপুনি ভেঙ্গে পড়োনা। সময়ই যা কিছু করায়। মনে রেখো তোমার জন্য সঠিক সময়টা আসছে। আমরা বুঝিনা। ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন ছিলো, পারিনি। কিন্তু এখন আফসোস নেই। কারণ এখানে এসে দেখি ভুরি ভুরি ডাক্তার ক্যাব চালায়। যাক মনকে শক্ত রাখো।
আমি জানো খুব ফাঁকিবাজ ছিলাম! পড়ার বইয়ের ভেতর গল্পের বই রেখে পড়তাম। জীবন পড়ার বই কম পড়েছি, আর গল্পের বইয়ে বেশী করে মন লাগিয়েছি। আমি জানিনা কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেছি। মামনি-বাপি বলে যদি মন দিয়ে পড়তাম!
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ। দোয়া করবেন আমার জন্য। সত্যিই যেন কিছু করে দেখাতে পারি।
নীলাঞ্জনা নীলা
অবশ্যই পারবে আপুনি।
মৌনতা রিতু
জীবন সংগ্রামে বাধা আসে। আমি আমাদের দিয়ে দেখেছি। আমি বিশ্বাস করি, অবশ্যই ভালো কিছু অপেক্ষা করে আছে। সব দরজা বন্ধ হলে এক দরজা অবশ্যই খোলে, আর তা থেকে নির্মল সু-শীতল বাতাস আসে।
রাত যখন হয়েছে, দিনের আলো ফুটবেই। কিছু রাত তো লম্বা হবেই।
শুভকামনা রইলো।
নীরা সাদীয়া
তাই যেন হয়। খুব শীঘ্রই যেন রাত কেটে যায়। দোয়া রাখবেন।
জিসান শা ইকরাম
এত সহজে ভেঙ্গে পরলে চলবে? সবাই সব কিছু প্রথম প্রথম পায় না। আমার ব্যবসায় জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে ১৭ বছর লেগেছে। প্রথম বছরেই যদি আমি হতাশ হয়ে ব্যাবসায় ছেরে দিতাম, প্রতিষ্ঠিত কি হতে পারতাম?
নীরা সাদীয়া
আমিও যেন সফল হতে পারি দাদা। প্রার্থনা করবেন আমার জন্য।
মোঃ মজিবর রহমান
জীবন এক চলন্ত সিঁড়ি চলবেই। তাই সঠিক সময় ও জিবনের ঐ মুহূর্ত আল্লাহ এখনো আপনাকে দেয়নি হইত তাই অপেক্ষা করুন এবং ঐ সময়টি সঠিক ভাবে বেচে নিন। আমি ভুগেছি। তাই আল্লাহ সময় দেবেই। বিশ্বাস রাখুক। আর সঠিক কাজ করে যান।
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা।
মায়াবতী
হতাশার নাম জীবন না সোনা, জীবনের অপর নাম পানি , চারিদিকে চেয়ে দেখো তোমার তেস্টা মেটানোর মত যথেষ্ট পানির ব্যবস্থা সৃষ্টিকর্তা করে দিয়েছেন। আমীন * জীবনের ব্যর্থতা কে খুঁজোনা শুধু সফলতা টুকু ও কি কম তোমার *** ভাল থাকো বোন দোয়া রইল
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনাকে। শুভকামনা জানবেন।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
পরীক্ষায় মার্ক আসে পঠিত পাঠ্য বই আর বাহিরের জ্ঞানের সমন্বয়ে লেখার মাধ্যমে।শুধু বই নিয়েই বসে থাকলেই পড়া হয় না হয় নিদিষ্ট লেখাটির মুখস্ত বিদ্যা।যে ছাত্রটিই এমন ভাব করতেন যে সে পড়া ছাড়া আর কিছুই সে বুঝেন না সে হয় শেষ পর্যন্ত পাগলের ন্যায় আচরণ করতেন নতুবা চুপ হয়ে গোমড়া হয়ে যেতেন।কারন বেশী কোন কিছুই ভাল ফল বয়ে আনে না।আর আমি ছিলাম আপনার উল্টো মাত্র তিন মাস পড়ে এইচ এস সিতে কমার্সে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি তাও হায়ার দ্বিতীয়স্তানে।যাক সে কথা মন খারাপের কিছুই নেই ভাববেন
যা হবার তাই হয়েছে -{@
নীরা সাদীয়া
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। তবে আমি হয়ত পোস্টটি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করে বোঝাতে পারিনি। আমি যে শুধু পাঠ্যবই নিয়ে থাকতাম, তা কিন্তু নয়। সাথে গল্পের বই ও পড়তাম,তা পোস্টে উল্লেখ আছে, আরো দেয়া আছে ২/৩ টি খেলাও শিখেছিলাম। একটা মেয়ের জীবনে এর চাইতে বেশি কিছু জানা হয়ে ওঠে না, বন্দী জীবন কাটাতে হয় বলে। আর হ্যাঁ, আমি জানতাম পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, সেজন্যই অন্য সবকিছুর চাইতে পড়াকে বেশি গুরুত্ব দিতাম, এর মানে এই নয় যে অন্যান্য কিছুই করতাম না, যেমন : খেলাধুলা,হাতের কাজ,গল্পের বই পড়া।
আর হ্যাঁ, এটাও বলেছি, আমি পরিশ্রম করে যতটা এগিয়েছি, ভাগ্য এসে পিছিয়ে দিতো। তেমনি, আমার এস এস সির সময়েও দূর্ভাগ্যের কারণে পড়তে পেরেছিলাম মাত্র ১ মাস। রেজাল্ট ছিল ৪.৭৫ যেখানে মোট জিপিএ ৫.০০।
জানি না বোঝাতে পেরেছি কিনা।
শুভকামনা রইলো।