
শুক্রবার বলে প্রচুর লোক এসেছে আজ, সবাই ভিতরে প্রবেশ করছে জিয়ারত করার জন্য, আমি ঘরটার কোনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ জিয়ারত করলাম সুরায়ে কালাম পড়ে, জিয়ারত শেষ হলে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে এক মওলানা মুনাজাত করলেন, যদিও আমি আগেই মুনাজাত শেষ করেছি এরপরেও সবার সাথে শরীক হলাম, মুনাজাত শেষে আমার মাতোয়ালি খাজা বাবার দরবারে বাঁধা লাল হলুদ সুতার তাগিয়া আমার হাতে বেঁধে দিয়ে ঘরের অন্য দরজা দিয়ে বের করে নিয়ে গেলেন বাইরের অন্য অংশে, ইতিমধ্যে আজান শুরু হলে সবাই খাজা বাবার কবর মুবারক ছেড়ে বেরিয়ে যেতে লাগলো, মতোয়ালি আমাকে নিয়ে গেলেন খাজা বাবার সন্তানদের কবর জিয়ারত করতে যা ঘরটির লাগোয়া ছিলো, উনি আমাকে সিজদাহ্ করার জন্য বললে আমি অপারগতা প্রকাশ করে জিয়ারত শুরু করলাম।
জিয়ারত শেষে আমি বেরিয়ে এলাম সামনের দিকে, যেখানে অসংখ্য মানুষ জুমার নামাজ আদায় করার জন্য কাতার ধরে বসে আছে, আর আলাদা জায়গাতে মহিলাদের নামাজের স্থানেও দেখলাম অসংখ্য মহিলা নামাজের জন্য বসে আছে।
নামাজের শুরুর জন্য পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের থেকে কামান দাগার শব্দ হলো, ইমাম সাহেব যিনি এতক্ষণ বয়ান করছিলেন উনি খুতবা পাঠ শুরু করলেন, ইতিমধ্যে আমরা অনেকেই সুন্নত নামাজ পড়ে খুতবা শুনছি, খুতবার শুনার পাশাপাশি পাহাড়টিকে খুব ভালো করে দেখলাম, পাহাড়ের গায়ে অসংখ্য বাড়ি ঘর আছে, ওখানকার কোথাও থেকে কামানের শব্দ হয়।
খুতবা শেষ হলে আবার তোপ দাগা হলে সবাই আমরা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম নামাজের জন্য, নামাজ শেষে মুনাজাত হলো, এরপর ফরজ নামাজ পড়ে বের হয়ে আসলাম মতোয়ালি সহ, উনি জিজ্ঞেস করলেন খাওয়া দাওয়া কি করতে চাই, গরুর মাংস খেতে চাই কিনা?
আমি তো এক পায়ে খাড়া, উনি আমাকে গেটের পাশ দিয়ে এক গলির ভিতরে নিয়ে গেলেন, ওখানে এক রেস্টুরেন্টে গরুর মাংস দিয়ে বাসমতী চালের ভাত খেলাম পেট পুরে খেয়ে বেড়িয়ে এসে কিছু তবারুক কিনলাম, এইখানে সাদা রঙের ছোট ছোট মিষ্টি তবারুক পাওয়া যায় যা সবাই নিয়ত করে খান, সাথে নিলাম লাল হলুদ সুতার কিছু তাগিয়া আত্মীয় স্বজনের জন্য, এরপর মতোয়ালি সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম উনাকে কত দিতে হবে?
উনি বললেন, আপনার যা খুশি দিন, এইখানে আমরা কাউকে কোন জোড় করে কিছু নিইনা, না দিলেও আমরা অখুশি নই, আমরা মুসাফিরদের খেদমত করি।
আমি উনাকে এক কি দেড় হাজার রুপি দিলাম, উনি আমার সাথে কোলাকুলি করে বিদায় জানালেন, সাথে একটা কার্ড দিলেন যেন ভবিষ্যতে যোগাযোগ করতে পারি।
এরপরের গন্তব্য আমার জয়পুর, যাকে ভারতের পিংক সিটি বলে।
………. চলবে।
ছবিঃ গুগল।
২৯টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
পড়লাম মন্ত্রমুগ্ধের মতই।
কামান দাগা হয় কি খুতবা আরম্ভের জন্য?
ওখানে গেলে আপনার কাছ থেকে কার্ড নিয়ে যেতে হবে ওনার।
অপেক্ষা পরবর্তী পর্বের জন্য,
ইঞ্জা
খুতবা, নামাজ শুরুর আগে কামান দাগা হয় ভাইজান।
প্রায় পনেরো বছর আগের কার্ড এখন আছে কিনা সন্দেহ আছে, কিন্তু ওখানে গেলেই অনেক মতোয়ালি পেয়ে যাবেন।
এর পরবর্তী যাত্রা আমার জয়পুর যা রাজারাজড়াদের এলাকা, আমি নিজেই অভিভূত হয়েছিলাম এলাকাটিতে গিয়ে, আশা করছি আগামীদিন পাবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যা কামান দাগা নামাজের খুতবা শুরুর আওংকেত??
ইঞ্জা
হাঁ ভাই, যা আমি অন্য কোথাও দেখিনি।
মোঃ মজিবর রহমান
আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহ ভরসা
ইঞ্জা
আমীন।
ছাইরাছ হেলাল
আমার জানায় নূতন সংযোজন, কামান দাগা, জানা ছিল না।
আল্লাহ আপনাকে কবুল করেছেন, আমিন।
সাথে আছি।
ইঞ্জা
আমিও কখনো এমন বিষয় দেখিনি, যা এইখানে দেখলাম, ভাইজান।
আমীন।
ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিন
মাজার জিয়ারতের সময় আমাদের এখানেও দেখি, এক শ্রেনীর মানুষ কবরকে সিজদা করে। অথচ নামাজ ও কোরআনের বিশেষ আয়াত পাঠ ছাড়া সিজদা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার অদ্ভুদ লাগে তারা আসলে কেমন মুসলিম ধর্ম পালণ করে!
ভালো লাগছে পড়তে।
পরের পর্বের অপেক্ষায়…🌹🌹
ইঞ্জা
যারা মাজারে সিজদা করে ওরা অতি আবেগে সিজদা করে, কিন্তু ওরা জানেনা এইটা শিরক ছাড়া আর কিছুই নয় আপু।
আগামী পর্বে পড়বেন জয়পুর দ্যা পিংক সিটিতে ভ্রমণ কাহিনী, আশা করি কাল দেবো।
ধন্যবাদ আপু।
নিতাই বাবু
ঈশ! ভারত গিয়েও পবিত্র আজমির শরিফ যাওয়া হলো না আমার। সব নষ্টের মূলে টাকা-পয়সা। আর কী কখনো ভারত যেতে পারবো? মনে হয় না। তাই আফসোস রয়ে গেল। তা থাকুক! আমার শ্রদ্ধেয় ইঞ্জা দাদার পোস্ট পড়েই মনের স্বাদ মেটাই। অনেক ভালো লাগলো শ্রদ্ধেয় ইঞ্জা দাদা।
ইঞ্জা
সৃষ্টিকর্তা আপনার মনের আশা পূরণ করুক দাদা।
ভ্রমণ কাহিনীর মজাটা এইখানেই দাদা, যেখানে যেতে পারেননি তাকে জানা হয়।
ধন্যবাদ।
চাটিগাঁ থেকে বাহার
পড়লাম। পারিপ্বার্শিক অবস্থা জানলাম। জেনে ভালো লেগেছে।
আপনার বর্ণনা সুন্দর, সাবলিল। পরের পর্বের আশায় থাকলাম।
ইঞ্জা
আগামী পর্ব জয়পুর দ্যা পিংক সিটি।
হৃদয়ের কথা
প্রতিটি পর্বই পড়লাম ভাইয়া। আপনার লেখায় যেন আমিও চলে গেলাম আজমির শরীফ। শুভেচ্ছা আপনাকে।
ইঞ্জা
পাশে থাকুন, পরের পর্ব আরও রোমাঞ্চক হবে।
আরজু মুক্তা
আপনার সাথে ঘুরে এলাম আজমির।
ইঞ্জা
আলহামদুলিল্লাহ্।
মনির হোসেন মমি
ভ্রমণ কাহিনী বেশ ভাল লাগছে। পবিত্র ঘরের জিয়ারত করা যায় সিজদা একমাত্র মসজিদে আল্লাহর নিকট। খুব ভাল করেছেন বঝা গেল আপনি অন্ধ ভক্ত নন। কামান দাগার শব্দ শুনে ভয় লাগার কথা। চলুক পর্ব।
ইঞ্জা
এ হলো আমার শিক্ষা ভাই, ওরা জোর করে, কিন্তু মানা উচিত না।
আমিও প্রথমে অবাক হয়েছিলাম, পরে বুঝতে পারলাম কি হচ্ছে।
মনির হোসেন মমি
হুম তাহা শিরক।ধন্যবাদ ভাইজান।
তৌহিদ
আজমীর শরীফ ভ্রমনের পর্বগুলি পড়ে সত্যি অনেক সমৃদ্ধ হলাম নিজে। আমি নিশ্চিত পাঠকরাও তাই। আপনাকে ধন্যবাদ দাদা, এমন লেখা সবার কাছে শেয়ার করার জন্য।
পরের ভ্রমন কাহিনী কি হবে বলুন? অপেক্ষায় আছি কিন্তু 🌹
ইঞ্জা
ভাই আজই লেখার কথা ছিলো, কিন্তু ব্লগে প্রবেশ করতে না পেরে লিখিনাই।
ধন্যবাদ ভাই।
তৌহিদ
আচ্ছা দিন সময় করে দাদা☺
ইঞ্জা
😍
রেজওয়ান
ভাইজান আপনার ভ্রমণকাহিনী লেখার শেষে ছোট্টকরে খরচের একটা হিসাব দিলে খুবই উপকার হয়।😎ধারণা পাওয়া যায়, প্ল্যান করতে সুবিধাও হবে❤
ইঞ্জা
ভাইরে, আমার খরচের হিসাব শুনলে মাথা ঘুরাবে তোমার, আমি ভালো গাড়ী নিয়ে ট্রাভেল করতে পছন্দ করি, দামি হোটেলে থাকি, খাই ভালোটা, দিই ভালোটা, তাহলে কেমনে বলি বলো? 😃
রেজওয়ান
আমিও ট্যুর দেই ই খরচের জন্য🤣সমস্যা নেই ভাইজান🤘
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা রইলো, ঘুরে আসো।