
অন্ধকার বারান্দায় চুপচাপ বসে আছেন রাহেলা বানু। যেন নিজের আবেগকে সামলে নেবার চেষ্টা করছেন। রাতুলের ভবিষৎ চিন্তায় আজ কাল তিনি একটু দিশেহারা বোধ করেন। রাতুল তার একমাত্র সন্তান। স্বামী মারা যাবার পর তিনি একাই রাতুলকে লালন পালন করে বড় করেছেন। বেশ কিছু দিন যাবত রাতুলের বিয়ে নিয়ে মা ছেলের মধ্যে ঝামেলা চলছে। আজ রাহেলা বানু পরিষ্কার রাতুলকে জানিয়ে দিয়েছেন নিতুকে বিয়ে করলে তিনি আর রাতুলের সাথে কোন যোগাযোগ রাখবেন না।
: মা, তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারি?
বারান্দার প্রবেশ মুখে দাড়িয়ে আছে রাতুল।
রাহেলা বানু কিছু বললেন না। চেয়ার ছেড়ে উঠে বারান্দার কোনায় মানি প্লান্ট গাছটার পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন।
রাতুল এসে মায়ের পাশে দাঁড়াল তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল –
: মা, তুমি যা চাইবে তাই হবে। তুমি না চাইলে নিতুর সাথে আমার বিয়ে হবে না।
রাহেলা বানু রাতের আলো আধারিতে রাতুলের চোখে চোখ রাখলেন।
চোখ নামিয়ে রাতুল বলল –
: তুমি যে মেয়েকে পছন্দ করবে তাকেই আমি বিয়ে করব বলে বারান্দা থেকে চলে গেল।
আজকাল রাহেলা বানু ভীষণ ব্যস্ত। দিন রাত একে তাকে ফোন করে ভাল একটা মেয়ের খোঁজ চাইছেন। বিয়ের ব্যাপারে রাতুলের সিদ্ধান্ত পাল্টে যাবার আগেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে চাইছেন তিনি।
প্রথম দেখাতেই মৌটুসিকে পছন্দ করে ফেললেন রাহেলা বানু। মেয়েটি দেখতে যেমন মিষ্টি তেমন তার ব্যবহার। জোছনার মতন উজ্জ্বল গায়ের রং আর কাটা কাটা চেহারার ভাজে মৌটুসি যেন সাক্ষাত দেবী। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে এবার বিবিএ কম্পিল্ট করেছে। রাতুলের চেয়ে বয়সে বছর তিনেক ছোট হবে।
মায়ের পছন্দে দ্বিমত করল না রাতুল। বিয়ে হয়ে গেল রাতুল আর মৌটুসির। বিয়েতে ইচ্ছে মতন খরচ করলেন রাহেলা বানু। রাহেলা বানু সিঙ্গেল মাদার হলেও আর্থিকভাব যথেষ্ট স্বচ্ছল। তিনি বাংকে ভাল একটি অবস্থানে চাকুরি করেন। তাছাড়া শশুড় বাড়ি, বাবার বাড়ি দুই পক্ষ থেকেই পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছেন যথেস্ট।
রাতুলকে নিয়ে মনে মনে রাহেলা বানু চিন্তিত থাকলেও পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে রাতুল স্বাভাবিক ছিল। বিয়েতে আগত অতিথিরা মৌটুসির প্রসংশায় পঞ্চমুখ। সবার মুখে একি কথা যেমন রাতুল হ্যান্ডসাম তেমনি মৌটুসি সুন্দরী। একেবারে সোনায় সোহাগা।
বাসর ঘরে গোলাপ ছড়ানো পালঙ্কে বসে আছে মৌটুসি। রাতুল খুব স্বাভাবিক ভাবে মৌটুসির সাথে কথা শুরু করল। রাতুলের প্রথম কথা –
: আমি যদি তোমাকে “মৌ” বলে ডাকি তাতে কি তোমার কোন আপওি থাকবে?
বিয়ের আগে রাতুলকে মাত্র একদিন দেখেছিল মৌটুসি কিন্তু কোন কথা হয়নি। মৌটুসি মনে মনে কথা বলতে চাইলেও রাতুল মুরব্বিদের জানিয়ে দিয়েছিল কথা বলার প্রযোজন নেই। এটাই রাতুলের সাথে মৌটুসির প্রথম কথা। এত মায়া দিয়ে রাতুল তাকে মৌ বলে ডাকতে চাইল যে ভাল লাগায় মনটা আদ্র হয়ে উঠল মৌটুসির।
: মৌ, তুমি তো জানোই আমি আমার মায়ের একমাত্র সন্তান। আমার বয়স যখন আট মাস তখন আমার বাবা রোড একসিডেন্টে মারা যান। এরপর আমার দাদা নানা সবাই মাকে আবার বিয়ে দিতে চাইলেও তিনি তা করেননি। আমার মা ই আমার সব। যে কোন মূল্যে মাকে খুশি দেখতে চাই আমি। তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ আমি কি বলতে চাইছি?
মৌটুসি আসতে করে শুধু “হুম” বলল।
খানিকটা বিরতি নিল রাতুল তারপর
: বিয়েতে মা আমাকে একটি পয়সাও খরচ করতে দেননি। কিন্তু আমার নিজেও তো তোমাকে কিছু দিতে ইচ্ছে করে বলে সেরোয়ানীর পকেট থেকে একটি ছোট বক্স বের করল। তোমার হাতটা দাও বলে নিজেই মৌটুসির বাম হাতটা টেনে নিয়ে অনামিকায় একটি ডাইমন্ডের আংটি পরিয়ে দিল।
বাহ্! অংটিটা দেখি একদম ঠিকমত হয়েছে। আমি একটু চিন্তিত ছিলাম সাইজ নিয়ে! তোমার কি পছন্দ হয়েছে মৌ?
: খুব পছন্দ হয়েছে। ভীষণ পছন্দ হয়েছে।
: মৌ তোমাকে আমার জীবনের একটা জরুরী কথা বলতে চাই। তোমার সাথে কোন মিথ্যা বা কোন কিছু গোপন করে জীবন শুরু করতে চাই না। আর তাছাড়া ব্যাপারটা সবাই জানে। অন্য কারো কাছ থেকে জানার চেয়ে আমার কাছে জানাটাই ভাল মনে করি।
হঠাৎ মৌটুসির বুকটা ধরফর করতে থাকে। কি কথা বলতে চায় রাতুল! হঠাৎ করে রাতুলের মুখটা এত কঠিন আর বিষন্ন দেখাচ্ছে কেন?
: মৌ, আমার একটি অতীত আছে। সেই অতীতে একজন মানুষের বাস ছিল। সেই মানুষটির নাম নিতু। আসলে নিতুকে ছাড়া আমার একটা জীবন হতে পারে সেটি আমি কোন দিন ভাবিনি।
বাসর রাতে স্বামীর মুখ থেকে এমন কিছু শোনা যে কোন নব বধুর জন্যই নরক যন্ত্রনার সামিল। হতবাগ হয়ে রাতুলের দিকে তাকিয়ে রইল মৌটুসি।
: আমি জানি মৌ এমন কথা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত থাকে না কিন্তু
রাতুলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মৌটুসি জানতে চাইল –
: নিতুর সাথে আপনার সম্পর্কটা টিকল না কেন?
কোন ভনিতায় না গিয়ে রাতুল সরাসরি বলল-
: মা চাননি আমি নিতুকে বিয়ে করি।
: কিন্তু কেন?
…… চলবে
২৬টি মন্তব্য
ইঞ্জা
চমৎকার ভাবে শুরু করলে, জীবনের অনেক বিষয় আছে যা নিজে বলে ফেললেই ভালো, এতে পরবর্তী জীবন সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, মায়ের বাধ্য ছেলে আগামীতে কি করে তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম বন্ধু।
শুভকামনা জানিয়ে গেলাম।
দিপালী
পিতামাতা সব সময়ই সন্তানের মঙ্গল চান। তাই তাঁদের মেনে চলতে পারলে সন্তানের মঙ্গলই হয় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। দেখা যাক আগামী পর্বে কি ঘটে। তোমাকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
ইঞ্জা
পরের পর্ব কি দিয়েছো?
রেহানা বীথি
শুরুটা চমৎকার। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
দিপালী
আপনার কথায় অনুপ্রনিত হলাম। পরের পর্বেও আশা করি সাথে পাবো। শুভকামনা নিরন্তর।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর উপথাপনা আপু। জিবনের কথা চলুক। আপনার লেখা আগামীপর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
আপু স্পেস্টা একটু কমায়ে দিবেন। শুভেচ্ছা রইল।
দিপালী
স্পেস কমিয়ে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ। পরের পর্বেও আশা করি সাথে পাবো। শুভকামনা।
মোঃ মজিবর রহমান
শুভ ব্লগিং আপু।
ফয়জুল মহী
সুনিপুন ভাবনায় নান্দনিক চয়ন । বিমুগ্ধ অবিরাম ।
দিপালী
বাহ্! সুন্দর সাবলীল আন্তরিকতা। ভাল লাগল। শুভকামনা।
আলমগীর সরকার লিটন
না শুরুটা বেশ মজাই লাগল অল্পটা অপেক্ষায় থাকলাম আপু
দিপালী
আপনার ভাল লাগা আমার লেখা আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভাল থাকবেন। শুভকামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুণভাবেই শুরু হলো গল্প। খুব ভালো লেগেছে আপু। মা-বাবা সন্তানের মঙ্গল চায় কিন্তু সবসময় সেটা মঙ্গলজনক হয়না এটাই সত্যি। দেখি আগামী পর্বে কি আছে আমাদের জন্য। রাতুলের বিষয়টি ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
দিপালী
ধন্যবাদ সুপর্না আপা। শুরুটা ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল। রাতুল মায়ের খুব বাধ্য ছেলে। আর দুটো পর্ব আছে। আশা করি সঙ্গে পাবো। ভালো থাকবেন অনেক।
আরজু মুক্তা
ট্রাডিশনাল ওয়েতে গল্প শুরু।
দেখা যাক সামনে কি হয়?
ভালো লাগলো।
শুভকামনা
দিপালী
সাধারনের ভিতরে অসাধারন কিছু লুকিয়ে থাকলেও থাকতে পারে। আশা করি সাথে থাকবেন। শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
শুরু হলো। চলতে থাকুক।
শুভ কামনা।
দিপালী
খুব বেশি চলবে না। তিন পর্বেই শেষ হবে আশা করি। এই টুকু সময় সাথে থাকবেন আশা করি। ভালো থাকবেন।
শামীম চৌধুরী
প্রথম পর্বেই বাজিমাত। বাকী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
দিপালী
হাহাহা বাজিমাত হলো কি করে একটু বুঝিয়ে দিন প্লিজ। ভালো লাগল খুব। ভাল থাকবেন অহর্নিশ।
সাবিনা ইয়াসমিন
বাহ! প্রথম পর্বেই ভালোলাগা রইলো। পরের পর্ব পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেছে।
শিরোনামের সাথে পর্ব সংখ্যা উল্লেখ করলে পাঠকের খুঁজে পেতে সহজ হবে। অন্তরালের সে- ১ এভাবে দিন আপু।
আপনার নাম শিরোনামের নীচে আছে, লেখায় আলাদা ভাবে নাম লেখার প্রয়োজন নেই। # এটা ব্লগে ব্যবহার না করলেই ভালো হয়।
অনেক ভালো থাকুন। শুভ কামনা নিরন্তর 🌹🌹
দিপালী
সহযোগিতা করার জন্য সাবিনা আপুকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন।
সাবিনা ইয়াসমিন
অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকেও 🙂
উর্বশী
চিরাচরিত নিয়মের বেড়াজাল থেকে সব বাবা– মায়েরা সহসা বের হতে পারেন, বা কেউ কেউ বের হতে চানও না। জীবন মুখী সাধারণ ভাবে গল্পের শুরু। বাস্তবতার উপখ্যান ও বলা যেতে পারে।ভাল থাকুন,শুভ কামনা সব সময়।
দিপালী
সুন্দর বলেছেন। কথা গুলো ভাল লাগল। অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন অহর্নিশ।
তৌহিদ
রাতুল নীতুর জীবনের গল্প। হয়তো অমীমাংসিত থেকেই যাবে। সব ভালোবাসার পরিণতি হয়না।
চলুক গল্প। শুভকামনা সবসময়।