অনেকদিন ধরে ছোট একটা ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম। ইচ্ছাটা খুবই সাধারণ ছিল, আমার ইচ্ছে গুলো সব সময় খুব সাধারনই হয়। যাতে করে আমি আমার ইচ্ছা গুলো খুব সহজেই পূরণ করতে পারি। আমি কখনো আকাশ কুসুম কোন ইচ্ছা পোষণ করি না যা কখনো পূরণ করতে পারব না।
যাহোক, আমার এই ইচ্ছাটা ছিল কোন একদিন কোন এক স্টেশনে রাত কাটাবো। খুব সাধারন একজন মানুষ হিসেবে কেমন সময় কাটায় স্টেশনের প্লাটফর্মে, আমার খুব দেখার ইচ্ছে ছিল। একদিন হঠাৎ করে ইচ্ছাটা প্রবল আকার ধারণ করল। প্রথমে অনেকেই আমার এই ইচ্ছাটা খুব সহজেই মেনে নিতে পারলেও আসার সময় টা কেউ সায় দিচ্ছিল না। আমিও নাছোড়বান্দার মতো একা একাই বেরিয়ে পড়লাম আমার মেস থেকে। প্রথমে একটা ছোট ভাই সাথে থাকার সৎ সাহস দেখালে পরে আর সাহস করতে পারেনি। রাত এগারোটার সময় চলে আসলাম স্টেশন। গভীর রাতে খাবারের সমস্যা হতে পারে ভেবে আগেই খাওয়া দাওয়ার পর্ব টা শেষ করে নিলাম। স্টেশনে রাত কাটানোর সাথে সাথে আমার অবশ্য আরো একটা ছোট ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ হয়ে গেল সেটা হল জ্যোৎস্না বিলাস যদিও পূর্ণিমা একদিন আগেই হয়ে গেছে। আমার অবশ্য একটা সৌভাগ্য হয়েছে সেটা হলো প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্যারের জন্মবার্ষিকীতে জ্যোৎস্না বিলাস করা। প্রথমে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলাম প্ল্যাটফর্মের বাহিরে দেখলাম মন ভরে জোসনার সৌন্দর্য।
স্টেশন ভরা মানুষজন যে যার মত বসে আছে কথা বলছে যখন যার গন্তব্যে ট্রেন আসছে চড়ে চলে যাচ্ছে। আমিই কিন্তু অদ্ভুত এক প্রাণী যার কোন গন্তব্য স্থান ছিল না অথচ স্টেশন বসে আছি। আরো অনেকে আছে যাদের কোনো গন্তব্য স্থান নেই তারাও কেউ আমার মত বসে নেই শুয়ে পড়েছে। খুব আরামের সহিত ঘুম পারছে, এত কোলাহল এতকিছু কোনকিছুই তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। অপরদিকে স্টেশনে থাকা মশাগুলো আমাকে আপন করতে একটুও ভুল করছে না। একটা সময় আমার ক্লান্তি খুব করে ধরেছে। আমিও শুয়ে পরলাম স্টেশনে বসার ব্যবস্থা করা চেয়ার গুলোতে। ততক্ষণে রাতটা একটা বেজে 30 মিনিট। মোটামুটি এক ঘণ্টার মতো চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলাম উপলব্ধি করলাম কেমন করে তারা রাতের পরে রাত স্টেশনে শুয়ে কাটিয়ে দেয়। মেস থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত সকলে আমার এই সিদ্ধান্ত পাগলামি মনে করছিল। বারবার নিষেধ করছিল আমাকে। অনেক ধরনের কথা বলে আমার সিদ্ধান্তটা কে দুর্বল করার চেষ্টা করেছিল। আমিও নাছোড়বান্দার মতো বলেছিলাম তোরা এমন কিছু বলিস না যাতে আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসি, দুর্বল হয়ে পড়ে আমার মনোবল। কিন্তু সত্যি সত্যি এখন কি পরিমান ভালো লাগছে এইটা লিখে প্রকাশ করার মতো নয়। সবকিছু আসলেই বলে কয়ে হয় না,করা যায় না। মোটামুটি অনেক সময় কেটে গেল , আমি উপলব্ধি করলাম আমার এখন চা খাওয়া দরকার শরীরটাকে একটু চাঙ্গা করে নেওয়া দরকার। শুরু করলাম চা খোঁজ করতে। প্লাটফর্মে থাকা প্রত্যেকটা চা স্টলে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই যে মামা চা খেতে হবে, চা আছে। সকলে সমস্বরে উত্তর দিল না মামা এখন চা হবে না। আমার অবস্থা তখন অনেক আগে পড়া একটা গল্প “অদ্ভুত চাখোরের” নেয়। স্টেশনের সব দোকান গুলোতে যখন পাচ্ছিলাম না তখন লক্ষ করলাম স্টেশন সামনে একটা চায়ের দোকান খোলা আছে, ছুটে গেলাম সেই চায়ের দোকান টাতে। এই মামা এখন কি চা হবে সে দোকানদার মামা হতাশার বাণী শুনিয়ে দিলেন, না মামা এখন চা হবেনা। আমার যখন যে রোগে পেয়েছে, তখন পথ্য খুঁজে পাওয়া দায়। আমার মনে তখন একটাই বাক্য উচ্চারিত হচ্ছিল ,বাংলার আকাশে আজ হতাশার ঘনঘটা, কে দেবে আশা ,কে দেবে ভরসা। কে দেবে সাহস, কে দেবে খুঁজে চায়ের নেশা দূর করিবার পথ। অতঃপর স্টেশনের এসে একটা পান-সিগারেটের দোকানে গিয়ে বললাম, এই মামা আমায় একটা পান দেন, মিষ্টি মসলা দিয়ে ভালো করে পান দেন। দোকানদার মামা অবশ্য যথেষ্ট ভালো করে একটা পান দিয়েছিল ।পান খাওয়ার জন্য মুখটা যেভাবে চালাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিল অবসর সময়ে গরু যেভাবে জাবর কাটে আমি সেইভাবে জাবর কাটছিলাম। বসে থেকে পান চিবুচ্ছি আর ভাবছি, দেখছি আর ভাবছি ,এভাবেই চলতে থাকে স্টেশনের প্রতিটা রাত। প্রকৃতির নিয়মের রাত হয় কিন্তু কোন স্টেশনে কখনো রাত নামে না। স্টেশনে থাকা দোকানগুলো কখনো বন্ধ হয়নি, সাধারণভাবে এই দোকানগুলো বন্ধ করার মত কোন ব্যবস্থা থাকে না।
রাত বেড়েই চলেছে ,বেড়েই চলেছে বললে ভুল হবে ।রাত শেষ হতে চলেছে। বেশ কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্টেশনটা নিঝুম হয়ে গিয়েছিল এখন আবার একটু সবর হতে শুরু করেছে।
যারা নতুন কোন গন্তব্যে যাওয়ার ইচ্ছে করেছিল তারা স্টেশনে আসতে শুরু করেছে ।খুব তাড়াতাড়ি ভোরের ট্রেন স্টেশনে এসে পৌঁছাবে। এখন অবশ্য চায়ের দোকানগুলো আস্তে আস্তে চা গরম করতে শুরু করেছে। আমার যে চা খাওয়ার খাইস এখনো ঝুলিতে তোলা ছিল, তাই তো আমি আমার চা খাওয়ার অনুমেয় ইচ্ছাটা পূরণ করলাম ।
আমি সবকিছু অন্তস্থল থেকে অনুধাবন করলাম উপলব্ধি করলাম অতঃপর একটি রাত স্টেশন বিলাস করে ফিরলাম নিজে গন্তব্যে।
১০টি মন্তব্য
ইসিয়াক
বেশ ভালো লাগলো্। শুভকামনা রইলো ।
নিরব সাগর
আমি সাধারণত গল্প লিখতে পারিনা , এইটা ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
ধন্যবাদ প্রিয় প্রশংসা করার জন্য।
ফয়জুল মহী
অনুপম ভাবনায় নান্দনিক লিখনশৈলি ।
নিরব সাগর
আমি সাধারণত গল্প লিখতে পারিনা , এইটা ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।
ধন্যবাদ প্রিয় প্রশংসা করার জন্য।
কামাল উদ্দিন
গভির রাতে নানা কারণে স্টেশনে ছিলাম, তবে পুরো একা রাত কাটানোর সুযোগ হয়নি একই স্টেশনে। কোন স্টেশনে একটি রাত এবং কোন বেদের বহরের তাবুতে একটি রাত কাটানোর ইচ্ছেটা এখনো অপূর্ণই রয়ে গেছে আমার………আপনি ভাগ্যবান আশাটা পূরণ করে নিয়েছেন।
নিরব সাগর
কতটুকু ভাগ্যবান জানিনা, খুব বেশি না হলেও একদম কম নই।
আপনার মনের আশাগুলো পূর্ণ হোক এই কামনা রইলো ।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা জানবেন ভাই
নিরব সাগর
ধন্যবাদ প্রিয়
নিতাই বাবু
খুব ভালো লিখেছেন দাদা। শুভকামনা থাকলো। সাথে পৌষ সংক্রান্তির প্রীতি ও শুভেচ্ছা!
নিরব সাগর
ধন্যবাদ দাদা