সুদর্শন বিকেল আস্তে করে গড়িয়ে চলে নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়।
বুকের কোণে মুচড়ে ওঠে আজন্মের হাহাকার, আহ ; নিস্তব্ধতা কি ভয়াবহ । অথচ, হাওয়াদের কানাকানি উথলে ওঠে গহিনে – পরাণের গহীণ ভেতরে।
একা জ্বলে থাকি নিঃসঙ্গ ল্যাম্পপোস্ট।
ধুধু প্রান্তর আর ল্যাভেন্ডার।
এই প্রান্তর জুড়ে উধাও সবুজ। সতেজ, জীবন্ত। তাতে বিছিয়ে আছে সুঘ্রাণ ল্যাভেন্ডার। এইসব মিঠেকরা সবুজ সুঘ্রাণ এড়িয়ে চোখে পরে চশমার কাঁচে হঠাত সবুজের ঝলকানি … স্বেচ্ছায় অন্ধ হবার মতো সুন্দর। ল্যাভেন্ডার এর সুগন্ধি পেড়িয়ে এলেই ডেইজির চাদরে ঢাকা পরে যাওয়া তেপান্তর…… কেমন করে যেন একলা একটা ডেইজি চলে যায় তোমার বারান্দায়।
সুঘ্রাণ মাখা মৌনতায় ডুবে থাকি।
নির্জনতা মাখা অলস সড়ক।
… সন্ধ্যার মুখে ব্যস্ততাহীন সড়ক, পরাবাস্তব সিনেমার দৃশ্যের মতো আবছায়া সিল্যুয়েটে লাল বাতি জ্বলে থাকে; অন্ধ চোখের মতো নির্বিকার। অন্ধকার অপেক্ষায় থাকে সবুজ বাতির ইশারায় ডুবিয়ে এবার একেবারে মিটিয়ে দেবার। ছায়া ঢাকা কোণ থেকে ভেসে আসা উগ্র পারফ্যুমের গন্ধ ডাক দিয়া যায় – নষ্ট হবার।
হলুদ বাতির মতো ক্ষণস্থায়ী খোলা জানালা জমিয়ে রাখে পা, নিষেধে।
তোমার জানালা মাঝেমধ্যে খুলে যায়, আলো আসে – আসে সুগন্ধি হাওয়ারাও…. সেই সুঘ্রাণ তোমার বুকের ভেতর যখন উথলে দেয় জল, তুমি ঝপ করে আলো নিভিয়ে সাটার টেনে দাও জানলায়।সুগন্ধি বাতাস একা গুমড়ে মরে তেপান্তরের মাঠে – দারুচিনির বনে ঝড়, শুধু তোমার জানলায় আলো নেই বলেই বিফল আয়োজন।
দারুচিনির বনের সুঘ্রাণ ঝড়ো বাতাসে পাক খাই, সুতো ছেড়া ঘুড়ি।
মরে যাওয়া নক্ষত্রের মতো একা পরে থাকে, হারিয়ে ফেলা মানুষের মুখ – বুকের অলিন্দ জুড়ে। আধখাওয়া চাঁদের ভুতুড়ে আলোয় হাহাকারের মতো দেখায় পথঘাট। …. নিটোল নৈঃশব্দ্য বুকপাজরে। গান শুনি, শতাব্দী … শতাব্দী।
মাঝেমধ্যে গানগুলো সব জীবনের মতো সত্যি হয়ে যায়। আর অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকি – একা।
ফেরত চাইলেই পাওয়া হয়না, জীবন সারাক্ষণ বদলায়।
কেবল ভালোবাসাই স্থবির।
– সোনালুর মতো দেখতে হলুদ ফুলের নাম আমিও ভুলে গেছি, কতকি ভূলে যাই। কাউকে কখনো সত্যি সত্যিই ভালোবেসেছিলাম কিনা তাও ভুলে গেছি।
কেউ কেউ ভুলে যায় একেবারে –
প্লাবনভূমি ভাসিয়ে নেয় বিস্মৃতির ঢেউ,
অবহেলে ; টুকটাক করুণায়, মনে রাখে কেউ।
১২টি মন্তব্য
মাহমুদ আল মেহেদী
… স্বেচ্ছায় অন্ধ হবার মতো সুন্দর। আনেক ভাল লাগার শব্দ দিয়ে গড়া এই লাইনটা ,
আগুন রঙের শিমুল
হু, মাঝেমধ্যে সুন্দর এতটাই বেশী সুন্দর হয়ে সামনে আসে – মনে হয় আর কিছুই দেখবার নাই 🙂
মৌনতা রিতু
চমৎকার প্রকাশ। লেখাটায় ডুবে থাকার মতো। কেমন যেনো একটা ঘোর।
একা ভিষণ একা ফিল করা একটা লেখা। তেপান্তরের মাঠে, গোধূলির সময়টিতে এমন লেখাটি পড়লে মনে হয় আরো ডুবে যাওয়ার মতো।
লেখাটা নিলাম নোটবুকে। আবারো পড়ব।
লিখছেন কম কি?
আগুন রঙের শিমুল
জীবন বাঁদর নাচ দেখাচ্ছে, আমি দেখছি 🙂 সময় পাচ্ছিনা আজকাল, মহার্ঘ্য সময়
জিসান শা ইকরাম
কেমন এক ঘোর লাগা আচ্ছন্নতা, একাকীত্ব, ভালোলাগায় ডুবে থাকার মত লেখা।
এত কম কম লিখলে চলবে? 🙂
আগুন রঙের শিমুল
ধন্যবাদ দাদা 🙂
সবকিছু বদলায় যাচ্ছে, কি করব 🙁 সময় পাইনা দাদা
মোঃ মজিবর রহমান
জিবনে কত কই যে ভুলে গেছি তা জানিনা।
পড়লাম মুগ্ধ হলাম প্রিয়ো।
আগুন রঙের শিমুল
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
কেবল ভালোবাসাই স্থবির -{@ এটাই স্থবির এবং স্থায়ী।আর সব জীবন মায়া আদর সোহাগ সবিই জোয়ার ভাটায় তলিয়ে যায় হারিয়ে যায়।লেখাটা মন ছুয়ে গেল। -{@
আগুন রঙের শিমুল
হ, একপক্ষীয় ভালোবাসা স্থবির ভাই 🙂 এইটাতে কোন হারজিত নাই, প্রতিদ্বন্দ্বী নাই, কিছুই নাই
মায়াবতী
ভুলে যাবার মধ্যে ভাইটামিন আছে ভাই জাননে তো, যত দ্রুত ভুলে যাবেন তত রাতের ঘুম নিশ্চিন্ত হবে । সুন্দর লেখা আপনার । -{@
আগুন রঙের শিমুল
হাহাহা, এই ভাইটামিনের জোরেই বাঁইচা আছি 🙂