রাত বাজে মাত্র সাড়ে দশটা। জাহিদের চোখ ভেঙে ঘুম নামছে! অথচ, সে অনেক রাত পর্যন্ত জাগে সাধারনতঃ। আজ সারাদিন সে ঘরেই ছিল। বলতে গেলে শুয়ে বসেই কাটিয়েছে সারাদিন। মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল নানান দুশ্চিন্তা। সাধারনতঃ দুশ্চিন্তায় থাকলে ঘুম আসতে চায়না। তবে কি দুশ্চিন্তা মানুষকে ক্লান্ত করে ফেলে! এসব আবোল তাবোল ভাবতে ভাবতে কোন সময় ঘুমিয়ে পড়েছিল সে টের পায়নি।
গভীর রাত্রে হঠাৎ জাহিদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে ধড়মড় করে উঠে বসে। টের পায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে তৃষ্ণায়। সে মোবাইলে সময় দেখে, রাত ২ টা ৪৪ বাজে। বুকটা ধ্বক ধ্বক করছে তার, যেনবা কেউ তার বুকের ভেতরে উদ্দাম আফ্রিকান ড্রাম পেটাচ্ছে। সেই ড্রামের শব্দ যেন স্পষ্ট শুনতে পায় সে। বিছানার পাশের টেবিলে রাখা জগ থেকে পানি ঢেলে ঢক ঢক করে খেয়ে নেয় সে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে থাকে তার। সে ডিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমায়না, তাই তার শোবার ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকে। অথচ এখন কেমন যেন মোলায়েম একটা আভা সারা ঘর জুড়ে। সেই ড্রামের শব্দ যেন মনে হয় সত্যিই শুনতে পায় সে। তার সাথে যোগ হয় হালকা মধুর একটা সঙ্গীত আর অনেকগুলো কন্ঠের গুনগুন আওয়াজ, অনেকটা সম্মিলিত দোয়াপাঠ বা মন্ত্রোচ্চারণের মত। সামনে তাকিয়ে সে দেখে দেয়ালটা নেই হয়ে গেছে। দেয়ালের ওপাশের বাগান আর উঠোনটা নেই। তার জায়গায় মায়াবী আলো বিকীরণ করা একটা প্রশস্ত পথ। সে অবাক হয়ে দেখে বেশ ক’জন দিব্যকান্তি, হাসিখুশি পুরুষ ও রমনী অপূর্ব সাজে সেজে সে পথ ধরে হেঁটে আসছে তার দিকে।
সে মূর্তির মত বসে থাকে বিছানায়। কিন্তু তার কেন যেন ভয় লাগেনা। একসময় তারা সবাই তার বিছানার চারপাশ ঘিরে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুদর্শন আর রূপসী যে দুজন, তারা মুখে হাসি নিয়ে তার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে, “চলো আমাদের সাথে!” আমতা আমতা করে জাহিদ বলে “কোথায়?” তারা বলে, “গেলেই দেখতে পাবে!” জাহিদ বলে, “কিন্তু এখন যে আমি যেতে পারবোনা, আমার অনেক কাজ বাকি!” স্মিত হেসে তারা বলে “ওসব নিয়ে ভেবনা। কোনও কাজই, কিছুই কারও অভাবে থেমে থাকেনা। এবার এসো তো, তৈরী হয়ে নাও।”
একটা ঘোরের মধ্যে জাহিদ ভাবে, হয়তোবা তাদের কথাটাই ঠিক! তারপর তাদের বলে “ঠিক আছে, তৈরি হয়ে নিই।”
সে এটা বলতেই সে দু’জন তার দু’পাশের কাঁধ ছোঁয়। তারা ছোঁয়ামাত্রই সে অবাক হয়ে দেখে ঝলমলে পোষাকে সে তৈরি হয়ে গেছে। তারা হাত ধরে তাকে বিছানা থেকে নামায়। হাত ধরেই এগিয়ে নিয়ে যায় যে পথে তারা এসেছিল, সেদিকে। তার ঘরের দেয়ালটা যেখানে ছিল, সে জায়গাটা পার হওয়ার পর সে পেছন ফিরে তাকায়। দেখে তার শোবার ঘরটা নেই পেছনে। তার জায়গায় সামনের আলো বিকীর্ণ করা পথের মতই সীমাহীন একটা পথ চলে গেছে দৃষ্টির সীমানারও বাইরে। সে গভীর একটা শ্বাস নিয়ে তাদের সাথে সামনে আগায়। খুব ফুরফুরে লাগতে শুরু করে জাহিদের অনেকদিন পর…
প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ! যাদের ফেলে যায় তাদের জন্য কষ্টের, কিন্তু যে যায় তার জন্য তো আনন্দময় হতেও পারে! এজন্যই যাত্রার এরকম একটা সুন্দর ছবি আঁকার চেষ্টা….
১৭টি মন্তব্য
মশাই
সুন্দর গল্প। গল্পের উপস্থাপন বেশ লেগেছে। শেষে এসে পাঠককে ভাবনার মাঝে রাখে গেছেন লেখক। সুন্দর।
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ মশাই
বোকা মানুষ
🙂 ধন্যবাদ
রিমি রুম্মান
শেষটা যেন শেষ হয়েও হল না… সুন্দর !
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
দারুন লিখেছেন ভাই । অনেক দিন পরে আসলেন ।
বোকা মানুষ
🙂
শুন্য শুন্যালয়
ভয় লাগছে তো !!! কবে যে দুজন এসে আমাকে নিয়ে যাবার নিমন্ত্রণ জানায়..ভাইয়া মাঝে মাঝে আমাদের ভুলে যান নাকি মাঝে মাঝে মনে করেন?
বোকা মানুষ
আগে বা পরে, যেতে তো সবাইকে হবেই। যাওয়াটা যেন সুন্দর হয়, সেটাই চাওয়া। নিজেকেই তো মাঝে মাঝে ভুলে যাই…. 🙁
অপরাজিতা সারাহ
আপনার লেখনী খুব সুন্দর।গল্পের শেষে এসে এইভাবে চলে যাবে ভাবিনি।কারো চলে যাওয়া সত্যিই কষ্টের।
বোকা মানুষ
প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ! যাদের ফেলে যায় তাদের জন্য কষ্টের, কিন্তু যে যায় তার জন্য তো আনন্দময় হতেও পারে! এজন্যই যাত্রার এরকম একটা সুন্দর ছবি আঁকার চেষ্টা….
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকার যাত্রার গল্পে ভালোলাগা। উন্মাদীয় শুভেচ্ছা।
বোকা মানুষ
আপনাকেও শুভেচ্ছা! -{@
খসড়া
জাহিদের মৃত্যু দেখে সহজেই বলা যায় মরন রে তুঁহ মম শ্যাম সমান।
বোকা মানুষ
🙂 সেটাই
তুহিন
ভাল লাগল গল্প , সুন্দর -{@
বোকা মানুষ
ধন্যবাদ আপনাকে