– বাবা টাকা দাও।
– কত?
– হাজার দু’য়েক।
– এতো তো নেই। ২০ টাকা আছে, চাইলে দিতি পারি।
– ইয়ার্কি হচ্ছে ছেলের সাথে! আমার পুরোটাই লাগবে।
– কি করবি?
-শীত এসে গেছে। কিছু শীতের পোষাক লাগবে।
– ঐটা আমি এনে দিবো।
শাকিল আর কিছুই বললো না। মাস্টরের ছেলে হওয়া বড়ই যন্ত্রনাকর। প্রশ্ন করে করে হাড্ডির তেল শুকিয়ে দেয় মাইরি। টাকাটা ওর দর্কার ছিলো। পাঁচ’শ টাকা দিয়ে একটা উইলের জাম্পার আর বাকীগুলা পাড়ার ব্যাডমিন্টন খেলার সরঞ্জাম এবং চাঁদা। শালারা এবার চাঁদা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাবা তো টাকা দিলো না। কি করবে না করবে তাই ভাবছে শাকিল। হটাৎ ই কারেন্ট আসার মতোই চট করে একটা আইডিয়া এলো তার মাথায়।
বাস স্ট্যান্ডে আজকে অনেক মানুষ। শাকিল প্ল্যান মতো একটা ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেল। একটা পকেট খুব অসাবধানে আছে। পকেটের ফোলা অবস্থা বলে দিচ্ছে টাকা কম হবে না। শাকিল চট করে পকেট থেকে মানিব্যাগ নিয়ে জটলা থেকে বের হয়ে এলো।
২.
হাসনাত সাহেবের মনটা খারাপ। তার জীবনে কখনো এমন বাজে ঘটনা ঘটে নি। বাসে উঠার সময় পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগ নেই। মানিব্যাগে টাকা অবশ্য বেশি ছিলো না। হাজার পনেরশ হবে। কম টাকা নিয়ে বের হওয়া হাসনাত সাহেবের অভ্যাস।
তিনি আজ আর কলেজে গেলেন না। বাসায় এসে জামা কাপড় বদলে বউকে এক কাপ চা দিতে বলে বারান্দায় গেলেন পত্রিকা পড়তে।
আজকাল পত্রিকায় ভালো খবর নেই। সব খুনাখুনি। মুসমানরা জাগায় জাগায় মারা খাচ্ছে। প্রতিবাদও খুব একটা দেখা যায় না। আলেম, হুজুর, মোল্লা সবাই চুপ। হয়তো একতা জিনিসটা এখন আর কাজ করে না।
৩.
শাকিলের মনটা বেশ খুশি। এক মানিব্যাগেই তার খেলার সকল ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মানিব্যাগটা বেশ সুন্দর। এটা বাবাকে দেয়া যায়। কে জানে কিপ্টা মানুষটা সেই বিয়ের আগের মানিব্যাগ ইউজ করছে কিনা।
শাকিল বাবাকে পত্রিকা পড়তে দেখে আর বলেন নি “বাবা তোমার জন্য একটা নতুন মানিব্যাগ কিনেছি। ” সে মানিব্যাগটা বাবার পকেটে রেখে খেলার বন্দোবস্তো করতে চলে গেল।
৪.
– হ্যাগো! আজ কলেজে গেলে না যে?
– এমনি।
– যাও নি। তা ভালো করেছ। শাকিলের মামা আসবে আজকে। বাজার থেকে একটু ঘুরে আসো তো।
– আহহা! সবে পত্রিকাটা নিয়ে বসলাম।
– যাও তো। পত্রিকা পড়ে আমার কি এমন দেশ উদ্ধার করছো!
– যাচ্ছি যাচ্ছি।
হাসনাত সাহেব প্যান্ট শার্ট পড়ছেন। প্যান্টের পকেটটা ভারী মনে হলো। হাতড়ে দেখেন মানিব্যাগটা সেখানেই আছে। কিন্তু টাকাটা নেই। কি আশ্চর্য! ব্যাগ পকেটে অথচ মানি উধাও!!!
৯টি মন্তব্য
শাহানা আক্তার
গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লেগেছে। ধারাবাহিকভাবে পেলে আরও ভালো লাগতো। সে সম্ভাবনা আছে কি?
অরুনি মায়া অনু
ভালই লাগল গল্পটি। তবে শিক্ষকের ছেলের এমন কাণ্ড দুঃখজনক।
নীলাঞ্জনা নীলা
খুবই ভালো লেগেছে গল্প। একেবারেই অন্যরকম।
হঠাৎ, স্ট্যান্ড, মানিব্যাগ, উধাও—-শব্দগুলোর বানান এমন হবে।
ছাইরাছ হেলাল
পাকা লিখিয়ে হয়ে যাচ্ছেন না বলে, হয়ে গেছেন বলাই যায়,
আবু খায়ের আনিছ
মুসমানরা জাগায় জাগায় মারা খাচ্ছে। লাইনটা কটু ঠেকেছে।
ব্লগার সজীব
শেষ পর্যন্ত গুনধর পুত্র ভিরের মধ্যে বাবার মানি ব্যাগই নিয়ে নিলো? 🙂 আপনার গল্পে চমক থাকে আর উপস্থাপনা হয় আকর্ষনীয়।
ইঞ্জা
আহা আজকালকার ছেলেরা কি ভাবে নষ্ট হচ্ছে তারই চিত্ররুপ আপনার গল্পে, ভালো লাগলো।
শুন্য শুন্যালয়
বাবার পকেটেই চুরি? ধর্ম নিয়ে শংকিত, অথচ ছেলের দিকে খবর নেই। এটাই বাস্তবতা। বেশ ভালো লিখেছেন।
জিসান শা ইকরাম
ছেলে সন্তানদের সঠিক ভাবে মানুষ করা আজকাল বিভিন্ন কারনে অনেক কষ্টই বটে।
ভাল লিখেছেন বরাবরের মত।