বানিয়াচঙের সোনাফর দেওয়ানের দুই ছেলে আলাল ও দুলাল। দেওয়ানের স্ত্রী মৃত্যুশয্যায় থেকে স্বামীকে অনুরোধ করে গেছেন তাঁর মৃত্যুর পর যেন স্বামী আর কাওকে বিয়ে না করেন, সন্তানদের জন্য যেন সৎ মা না আনেন। স্ত্রী সৎ মায়ের অত্যাচার বোঝাতে একটি কবুতরের গল্প বলেন যেখানে স্ত্রী কবুতর মারা গেলে পুরুষ কবুতরটি বিপাকে পরে। ছানা দুটোকে রেখে খাবার আনতে যাবে নাকি ছানাদের পাহাড়া দেবে? তাই একটি নতুন স্ত্রী কবুতর আনে। সেই সৎ মা ছানা দুটোকে মেরে ফেলে। এরকম কাতরভাবে সোনাফর দেওয়ানের স্ত্রী অনুরোধ করে আলাল দুলালকে স্বামীর হাতে শপে দিয়ে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুুর পর তাদের সংসার এলোমেলো হয়য়ে পরে। উজির নাজির সর্বক্ষণ পরামর্শ দেয় ২য় বিবাহ করার জন্য। কিন্তু স্ত্রীর অনুরোধের কথা ভেবে সে রাজি হয়না। অবশেষে উজির নাজিরের পরামর্শে সোনাফর রাজি হয় এবং সৎ মা আনে। কিন্তু ছেলে দুটোকে দূরে সরিয়ে রাখে। নতুন স্ত্রী দেখতে পেল দেওয়ান তাকে সময় দেয় কম, বাচ্চাদের দিকে মনযোগ বেশি।তাতে সোনাফরের স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয় এবং নতুন প্ল্যান করে। স্বামীকে বলে বাচ্চাদের তার কাছে আসতে। সে যত্ন করে রাখবে। তারপর তাই হয়। সৎ মা খুব আদর করে আর মনে মনে তাদের মারার চিন্তা করে। একবার সেই সুযোগ পেয়ে যায়। নৌকাবাইচ এ তাদেরকে পাঠায় এবং মাঝি হিসেবে পাঠায় এক জল্লাদকে। জল্লাদ তাদেরকে সব চক্রান্ত বলে দেয় কিন্তু মারতে পারেনা।তার মায়া হয়। এভাবে তারা বেঁচে যায় এবং এক গেরস্থের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু অালাল সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং এক সম্পদশালী লোকের সাহায্যে অনেক সম্পদ গড়ে বানিয়াচঙের দেওয়ান হয়। তারপর সেই ব্যাক্তিকে কথা দেয় তাঁর দুই মেয়েকে তারা দুইভাই বিয়ে করবে। ততদিনে দুলাল সেই গেরস্থের মেয়ে মদীনাকে বিয়ে করে সংসার শুরু করে।একটি পুত্র হয় নাম সুরুজ জামাল। অালাল বলে মদীনাকে তালাক দিয়ে আমার সাথে চলো বানিয়াচঙে আমার দিওয়ানী। তাই হল।মদীনার ভাইয়ের হাতে তালাকলানামা ধরিয়ে দিয়ে দুলাল চলে যায় বানিয়াচঙে এবং ২য় বিয়ে করে।
এদিকে মদীনা তালাকের কথা বিশ্বাস করে না।হেসে উড়িয়ে দেয় এবং দুলালের পথ চেয়ে রয়। কিন্তু সে ফেরেনা। এরপর একদিন মদীনা তার ছেলে এবং ভাইকে পাঠায় বানিয়াচঙ।দুলাল তাদের বলে, সে আর ফিরবে না। তারা যেন অার না আসে। এতে দুলাল লজ্জায় পড়ে যাবে,সব জানাজানি হয়ে যাবে। এসব খবর শুনে মদীনা দুঃখে পাগল হয়ে যায়। একসময় খাওয়া নাওয়া ছেড়ে মদীনা মৃত্যু বরন করে।
ছ’মাস পর, দুলাল তার ভুল বুঝতে পেরে মদীনার কাছে ফিরে আসে ঠিকি কিন্তু ততদিনে সেই মদীনা কবরে ঘুমিয়ে। দুলাল কবরের ওপর পরে কান্নাকাটি করে। তারপর আর ফেরেনা সেই বানিয়াচঙে। ফকিরের মত পথে পথে ঘুড়ে দিন কাটায়।
দেওয়ানা মদীনা
মনসুর বয়াতী
ময়মনসিংহ গীতিকা
★★★ কত সমৃদ্ধ আমাদের লোকগীতি! কত সমৃদ্ধ আমাদের ঐতিহ্য। যারা এটা পড়েন নি, তাঁদের প্রতি অনুরোধ রইল একবার পড়ে দেখতে পারেন। ঠকবেন না অাশা করি।★★★
১০টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
বাংলা সাহিত্য সম্রিদ্ব দেওয়ান মদিনা কাহিনিতে। অনেকদিন পর আপনার লেখা পেলাম। এই কাহিনি আপনি পরব দিতে পারেন। এবং দেওয়ার জন্য আবেদন করছি।
নীরা সাদীয়া
কাহিনীটা এটুকুই দাদা। এটাকে বড় করে পর্ব করার মত সুযোগ নেই। যদি থাকতো তবে আমি সর্বাত্নক চেষ্টা করতাম।তবে হ্যাঁ, এখানে লিখতে গিয়ে কিছুটা সংক্ষেপ করেছি। কিন্তু সেটুকু দিলেও এটা বড় হবে না, ফলে পর্ব করা সম্ভব হলো না। দুঃখিত দাদা।
তবে ময়মনসিংহ গীতিকায় আরো কিছু পালা রয়েছে। সেগুলোর কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। শুভকামনা জানবেন। অশেষ ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
জানার আগ্রহ থেকে গেলো যদিও কিছু পড়েছি আবার পড়ব।
নীরা সাদীয়া
ঠিক আছে। ভালো থাকবেন। আশা করি দ্রুত পরের পালাগুলো পোস্ট দিতে পারবো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ফেসবুকে পড়েছি। ময়মনসিংহ গীতিকা অনার্সের পড়েছিলাম। আমাদের পাঠ্য ছিলো। ফরমান আলী স্যার পড়াতেন পান চিবিয়ে চিবিয়ে। স্যারের পড়ানোটা বেশ মজা পেতাম।
ভালো লিখেছো আপুনি। ভুলেই গিয়েছিলাম, মনে করিয়ে দিলে আমায়। -{@
নীরা সাদীয়া
অনেক ধন্যবাদ আপি। অনেক শুভকামনা রইলো।
শুন্য শুন্যালয়
ছোটবেলায় পড়লেও ভুলে গেছি ময়মনসিংহ গীতিকা। আরেকটু সুন্দর হতে পারতো মনেহয়। মানে আমাদের নীরাপু আরো ভালো করে লিখতে পারতো। 🙂
আমাদের সংস্কৃতির আদি ধারাগুলো খুবই সমৃদ্ধ ছিলো। কি জানি, সব হারাতে বসেছি কিনা আমরা। সুন্দর বিষয়টা নিয়ে লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ নীরা।
নীরা সাদীয়া
ঠিক বলেছেন দিভাই। কিন্তু টাইপে আমার হাতের স্পীড অনেক বেশি। সে তুলনায় বড় কোন জিনিস লিখতে গেলে কয়েক লাইন লেখার পরই ফোন কেনন যেন স্লো হয়ে যায়। একটা অক্ষর টাইপ করে কয়েক সেকেন্ড বসে থাকা লাগে, তারপর সেটা স্ক্রীনে ওঠে। এরকম হলে লেখার মুডটাই নষ্ট হয়ে যায়,বলুন! এজন্যই মনের মত লিখতে পারলাম না। যতটা সম্ভব সংক্ষেপ করার চেষ্টা করেছি বাধ্য হয়ে।
শুভকামনা দিভাই।
মৌনতা রিতু
এমন সব লোক কাহিনির বিরাট এক ভক্ত আমি। তুমি জান না মিষ্টি মেয়ে আমার কতো প্রিয়। দক্ষিণ বঙ্গের কিছু তো আমি দিতে পারি। কপি করলাম কিন্তু। অনেক ভাল থেকো। -{@ (3 (3
নীরা সাদীয়া
আপনার পছন্দ হয়েছে জেনে খুব খুশি হলাম। অনেক ভালো থাকবেন। শুভকামনা।