গিয়েছিলাম গ্যান্তিং আইল্যান্ড! মালয়েশিয়া আসার পরে এই জায়গাতেই সব চেয়ে বেশি ঘুরতে আসা হয়েছে কিন্তু ভুতুড়ে কোনোকিছুর মুখোমুখি হইনি। তবে অনেক গল্প শুনেছি এই গ্যান্তিং আইল্যান্ড সম্পর্কে। বেশ কিছু ভিকটিম পরিবারও দেখেছি। মালয়েশিয়া এশিয়ার এমন একটি দেশ ! হয়তো এখানেই সবচেয়ে বেশি প্যারানরমাল ঘটনা ঘটে।
গ্যান্তিং আইল্যান্ড সম্পর্কে একটু ধারণা দিচ্ছি। গ্যান্তিং হচ্ছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় একক মালিকানার ক্যাসিনো বা গ্যাম্বেলিং স্থান যা ভুপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ২০০ ফুট উপরে। সাধারণত দুই ভাবে যাওয়া যায় এখানে। স্কাইওয়ে ক্যাবল কারে অথবা বাই রোড কার ড্রাইভ করে/বাসে। বাই রোড অনেক সাবধানে যেতে হয় কারণ সাপের মত আঁকাবাঁকা ও উঁচু রাস্তা! এই রাস্তায় এক্সিডেন্টও হয় প্রচুর। তারপরেও ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে অনেকেই চলে যান সেখানে। হয়তো কেউ কেউ জিতে ফিরে আসেন। তবে অনেকেই নিস্ব হয়ে আত্মহত্যার মত দুঃসাহসী পদক্ষেপ নেন এবং সফল হন। তবে এই খবর বেশিরভাগই টাকার নিচে চাপা পরে যায়। ছোট্ট কিন্তু ভাল একটা নিয়ম এই ক্যাসিনো তে ১৮ বছরের নিচে কেউ ঢুকতে পারে না। তবে বাচ্চাদের জন্যও আছে অনেক বড় থিম পার্ক। সম্পূর্ণ গ্যান্তিং আইল্যান্ড প্রায় ২ লক্ষ স্কয়ার ফিট বা প্রায় ১৯ হাজার স্কয়ার মাইল। এই ১৯ হাজার মাইলের ভেতর যেমন রয়েছে অনেক পাঁচ তারকা হোটেল, আছে বিনোদনের বিশাল সমাহার ঠিক তেমনি রয়েছে ভয়ংকর রহস্য বা ভৌতিক এক্টিভিটিস যা সবসময় ই লিখিত আলোচনার বাহিরে। বলা হয় এখানে ৭-১১ নারী আত্মা ঘুরেফিরে এবং সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করে যাতে কেউ অনেক পরিমান টাকা জিতে না ফিরতে পারে। অনেক অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এখানে। অনেকেই দেখেছে রাতের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে কিছু হোটেলের বেলকনি থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করতে কিন্তু হোটেলের নিচে এসে লাশ পাওয়া যায়নি। বলা হয় যারা এক সময় এখানে আত্মহত্যা করছিলো তাদের অতৃপ্ত আত্মাই এমন করে অনেকে এও দেখেছে থিম পার্কের আশেপাশে সাদা পোশাকের লম্বা চুল ওয়ালা মানুষের অবয়ব ভেসে বেড়াতে।
আমার এক চাইনিজ আংকেল আছেন। পেশায় কন্সট্রাশন সুপারভাইজার। আংকেল বলেন অপঘাতে মৃত ব্যাক্তির আত্মা শান্তিতে থাকে না তাই তারা যে সময়ে আত্মহত্যা করেছিলো সে একই সময়ে একই কাজ রিপিট করে ও করবে তাদের নির্দিষ্ট জীবন শেষে নরমাল মৃত্যু “সময়” আসার আগ পর্যন্ত। গ্যান্তিংয়েও তিঁনি কাজ করেছিলেন এবং তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা আছে সেখানকার প্যারানরমাল এক্টিভিটিস নিয়ে। উঁনার কথায় ই আমার আগ্রহ জন্মে এমন কিছু এক্টিভিটিস দেখার। অপেক্ষা করি আমার এক বন্ধুর। কিছুদিন আগে বন্ধুও এসেছে সিংগাপুর থেকে ব্যাবিসায়িক কাজে। বলেছিলো সময় পেলে মালয়েশিয়া ঘুরে দেখবে। সেই সুবাদে সবার অফ ডে দেখে আংকেলকে রাজি করিয়ে ২৬/১/১৮ শুক্রবার সকালে আংকেলের ফোরহুইলার ফোর্ড নিয়ে আমরা চার জন গিয়েছিলাম গ্যান্তিং আইল্যান্ড থাকার ইচ্ছা ছিলো ২ রাত ৩ দিন। কিন্তু পরদিন সকালেই ফিরে এসেছি আমরা। আমার ইচ্ছা ছিলো সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাটা ভিডিও করা কিন্তু পারিনি। সকাল ১১ টার দিকে আমরা পৌছাই। সাবাই বলে সময় নষ্ট করা যাবে না। সারাদিন থিম পার্কের গেম গুলোতে সময় কাটাবো, ছবি তুলবো, সন্ধায় থাকবো ক্যাসিনোতে, রাতে একটা মুভি দেখবো তারপর রাত দুইটার দিকে এক হন্টেড জায়গায় যাবো।
সারাদিন প্ল্যান মাফিক সব হলো। রাত ১২টার দিকে আমরা হন্টেড জায়গার দিকে রওনা হবো। চাইনিজ আংকেল আমকে গাড়ির চাবি দিয়ে বললো রেজওয়ান go ahead i wanna sleep for while. আমি ওকে বলে চাবি নিলাম।পেছনে আংকেল ও আমার এক ইউনিভার্সিটি ফ্রেন্ড AD (নাম অ্যাড্রিয়্যান) ড্রাইভিং সিটে আমি ও আমার পাশে সিংগাপুরিয়ান বন্ধু পোকিয়ং। চার জনের গ্রুপে আমিই বাংলাদেশি তার উপর শুক্রবার আমি ওদের বললাম আমাদের দেশে ভুতের গল্প নিয়ে এক অনুষ্ঠান হয় অনেকদিন লাইভ শোনা হয় না আজ শুনবো if you all agree যদিও তাঁরা ভাষা বুঝে না তারপরেও সবাই রাজি হলো। মালয়েশিয়ান সময় রাত ১:৫৯ মিনিটে শুরু হয়। AD আমার ফোন নিয়ে রেডিও অ্যাপটা অন করলো আমি গাড়ি চালাচ্ছি। আর গল্প শুনছি। রাত ২:৩০ এর দিকে আমাদের গন্তব্যে পৌছে গাড়ি থেকে বের হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমরা তিন জন, আংকেল গাড়ির ভেতর ঘুমাচ্ছে। এফ এম শুনছি আর আমার পাওয়ার ব্যাংক খুঁজতেছি। এর মাঝে স্ক্রিনশট নিয়ে সেই এফ এম এর ফেসবুক পেইজে কমেন্ট করলাম, এক ভৌতিক প্লেসে আছি কিন্তু তেমন কিছুই দেখছি না। এলাকার এক ছোট ভাই কমেন্টে হাহা রিয়েক্ট দিলো জিজ্ঞাসা করলাম কেন? বললো কমেডি ফিল করছে। ঘটনার শুরু তখন থেকেই। প্রথমে অ্যাপ জ্যাম তারপর একসাথে সবার ফোনের ডাটা কানেকশন অফ হয়ে গেল। সবাই মনে করছি হয়তো অনেক উপরে আছি তাই এমন হয়েছে। সবাই সবার পাওয়ারব্যাংক ইউজ করছি কিন্তু কারো ফোন ই চার্জই হচ্ছে না তখন একটু অবাক হয়েছি এমন তো কখনো ফেস করিনি। আস্চর্য করার বিষয় এক মিনিটের মধ্যে সবার ফোন অফ হয়ে যায়। তখন আমরা গাড়ির কাছে গিয়ে দেখি আংকেল গভির ঘুমে। তাঁর কোনো খবর ই নাই। আমরা এদিকে একটু ভয়ে আছি। AD অভয় দিয়ে বললো হয়তো নেগেটিভ এনার্জি আশেপাশে আছে তাই এমন হচ্ছে তেমন কিছু না। তারপরেও সবাই ভয়েই ছিলাম। গাড়ি ভেতর সবাই বসে লক করে স্টার্ট দিয়ে সামনের এক রেস্টুরেন্টে যাওয়ার চিন্তা করলাম। ম্যাক্সিমাম ২ কিলোমিটার হবে রেস্টুরেন্টের দুরত্ব। আমার গাড়ির স্পিড ৯০/কিলোমিটার ৫ মিনিটও লাগার কথা না কিন্তু মনে হচ্ছে প্রায় ৩০/৩৫ মিনিট ধরে ড্রাইভ করছি। কারো ফোন অনও হচ্ছে না, পাওয়ারব্যাংকেও চার্জ নেই এমনকি গাড়ির রেডিও ও চলছে না। পোকিয়ং ডাটা কেবল নিয়ে গাড়ি থেকে ফোন চার্জ করার চেষ্টা করলো কিন্তু হচ্ছে না এমন সময় আমাদের আংকেল ঘুম থেকে উঠে বললো তোমরা কি করছো? কয়টা বাজে? ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে অনেক কিছু দেখা যায়। আমরা আংকেল কে কিছুই জানালাম না। শুধু বললাম কিছু দেখিনি তাই হোটেলে যাচ্ছি। এমন সময় বিকট শব্দে গাড়ি অফ হয়ে গেল। কিছু বুঝার আগেই সবাই একসাথে চিৎকার দিলাম। পরে আংকেল বললো হয়তো চাকা ব্লাস্ট হয়েছে,পেছনে এক্সট্রা চাকা আছে চল ঠিক করি। নেমে দেখি চাকার কিচ্ছু হয়নি। কোনো এক্সসিডেন্ট ও হয়নি তবে অনেক বিস্রি পচাঁ গন্ধ ছিলো। গাড়িতে বসে আমি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু হচ্ছে না এমন সময় AD ই প্রথম খেয়াল করলো আমরা যেখানে এসে গাড়ি রেখেছিলাম সেখানেই আছি!! প্রায় ৪০ মিনিট যে ড্রাইভ করলাম এক ইঞ্চিও আগাইনি কিন্তু গাড়ির মিটারে স্পিড দেখাচ্ছিলো তখন। সবাই ভয়ে গাড়িতে বসে রইলাম এবং আংকেল কে সব বললাম। আংকেল বললো এমনটা হয় এখানে, ভয়ের কিছু নেই সবাই গাড়ির ভেতরে বসো আমি চালাচ্ছি। আমি বললাম আংকেল গাড়ি তো স্টার্ট ই নিচ্ছে না বলে আংকেলকে চাবি দিয়ে পাশের সিটে বসলাম। AD ও পোকিয়ং পেছনে। আংকেল গাড়ি স্টার্ট দিতেই স্টার্ট নিলো এবং আমরা সকাল ৫টার দিকে হোটেলে এসে পৌছালাম। তখনো আমাদের চার জনের ই ফোন,পাওয়ারব্যাংক অফ। হোটেলে এসেই চেক আউটের সিদ্ধান্ত নিলাম এবং চেক আউট করলাম। ১০:৩০ এর মধ্যে আমরা গ্যান্তিং ছেড়ে অনেক দুর চলে আসছি কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে। আংকেল ড্রাইভ করছে তাঁর ফোনও বন্ধ। আমাদের সবার ফোন ই যার যার হাতে হাতে হঠাৎ আমার ফোন অন হলো আর ওমনি আপনাদের ভাবি কল পেলাম জিজ্ঞাসা করলো কেমন আছি সবাই? কোনো সমস্যা হয়েছে কিনা? ফোন অফ ছিলো কেন? বললাম ফোনে ও পাওয়ারব্যাংকে চার্জ ছিলো না, এমনে সব ঠিক ই আছে কোনো সমস্যা হয়নি আজকেই চলে আসতেছি এসে কথা বলবো বলে রেখে দিয়ে দেখি সবার ফোন ই অন কোনো সমস্যা নেই। সকালের নাস্তা করার সময় আমি ফোন গ্যালারী চেক করে দেখি আমার ফোনে শুক্রবার সারাদিনে যত ছবি তোলা হয়েছিলো কোনো ছবি ই নেই। সাথে সাথে সবাই চেক করে দেখে কারো ফোনেই সেই দিনের ছবি গুলো নেই। তবে আমরা সবাই ভাল ও সুস্থ আছি।
হয়তো বেশিরভাগ পাঠক ই অবিশ্বাস করবে, হয়তো আহামরি কিছু হয়নিও কিন্তু আমরা যারা ফেস করেছি তারাই জানি কেমন সিচুয়েশন ছিলো তখন। সবাইকে একটা কথাই বলতে চাই যেখানেই থাকেন সাবধানে থাকবেন। প্যারা যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতিতেই আসতে পারে।
😇 ভাল থাকবেন, আমাদের জন্য দোয়া করবেন এই কামনায়…
৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সত্যিই দুঃহসাহসিক জার্নি।আমারতো ভয় লেগে গেছিল।গ্যান্ডিংটা মালেশিয়ায় ছিলো জানা ছিল না।জানলাম।আমি সিঙ্গাপুরে ছিলাাম আট দশ বছর সেখানে এমন কিছু দেখিনি তবে সন্তুসা সাকরাা তোয়াজের ভয়াবহতা দেখেছিি।
রেজওয়ান
মেরিনা বে তে ও অনেক অঘটন ঘটে শুনেছি। তবে এই ভুতুড়ে অভিজ্ঞতা না থাকাই ভাল ;(
মোঃ মজিবর রহমান
রেজয়ান ভাই, আমি এসব কিছুই জানিনা। এবং এসবের ফেস ও করি নাই।
ভাল থাকবেন।
রেজওয়ান
ফেস না করাই ভাল ভাই। হঠাৎ ফেস করলে ভয় লাগে
মোঃ মজিবর রহমান
তা ঠিক রেজয়ান ভাই। তবে এগুলো একটা জানাও ভাল।
জিসান শা ইকরাম
” আমরা যেখানে এসে গাড়ি রেখেছিলাম সেখানেই আছি!! প্রায় ৪০ মিনিট যে ড্রাইভ করলাম এক ইঞ্চিও আগাইনি কিন্তু গাড়ির মিটারে স্পিড দেখাচ্ছিলো তখন। ” ^:^
কিভাবে সম্ভব এটি? !!!!!!!
রেজওয়ান
উত্তর জানা নেই আমার ;( তবে অনেক ভয় পেয়েছিলাম সেদিন