এদিকে কানাইর মা-বোন যেই মহল্লায় থাকে, সেখানকার এক লোকের বাড়ি আছে ভারতে। তা শুধু জানতো মহল্লার লোক আর কানাই; জানতো না রমেশ। অথচ ওই লোকটাকে রমেশও ভালো করে চিনে-জানে। ভারতে ওই লোকটার বাড়ি আছে, বাড়ি পাহারা দেবার মতো লোক নাই। কানাই সেই লোকের সাথে আলাপ করল, রমেশের কথা। রমেশের কথা শুনে বাড়ির মালিক সাথে সাথে রাজি হয়ে যায়। কারণ; রমেশকে লোকটির স্ত্রীও ভালো করে চিনে।
সেই সংবাদ নিয়ে এক ফাঁকে কানাই রমেশের কাছে আসে। রমেশের কাছে এসে কানাই বলল, “শুন রমেশ, রতন চক্রবর্তীকে তো ভালো করে চিনিস। তার একটা বাড়ি আছে পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলার ফুলিয়ায়। সেখানে অনেক টেক্সটাইল মিল আছে, তা মানে প্রতি ঘরে-ঘরেই তাঁত। আমি রতনদা’র সাথে কথা পাকাপাকি করে এসেছি, তুই তার বাড়িতেই থাকবি।”
রমেশ বলল, “তুই যেটা ভালো মনে করিস তাই হবে, তোর মতের বাইরে আমার কোনো মত নাই।”
কানাই বলল, “তুই আমার শুধু বন্ধু না, ভাইয়ের চেয়েও অনেক বেশি। আমি চাইব না যে, তোর কোনো সমস্যা হোক। তুইতো ভালো কাজ জানিস, সেখানে গেলে তু-ই হবি টেক্সটাইলের গুরু। ভালো একটা মিলে লাগিয়ে দিতে পারলে তোর নাগাল আর পায় কে? তখন রতন চক্রবর্তীর বাড়িতে থাকলে_থাকবি, না থাকলে নাই।”
রমেশ কানাইর কথা শুনে বলল, “ঠিক আছে তাই হবে। তো যাইবি কবে?”
কানাই বলল, “এইতো সামনের রবিবার! তুই রেডি আছিস তো?”
রমেশ বলল, “হ্যাঁ আমি পুরোপুরিভাবে রেডি আছি। চাকরি ছেড়েছি আজ তিনদিন হলো, ওদেরও শশুড়বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। আমি বর্তমানে থাকছি বড়দা’র বাসায়।”
কানাই রমেশের কথা শুনে বলল, “ঠিক আছে, আর কোনো টেনশন নাই, এবার যাবার পালা।”
রবিবার সকালে রমেশ বড়দা’র বাসা থেকে নাস্তা সেরে জামাকাপড় রেডি করল। আগেই ভারতের ব্যাপারে বড়দাকে বিস্তারিত খুলে বলেছিল। এখন আর নতুন করে কিছু বলার দরকার নাই, যা বলার আগেই বলেছে রমেশ। দাদার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে রমেশ কানাইদের বাসায় আসে। তখন ঠিক দুপুরবেলা, কানাইদের বাসায় চলছে খাওয়াদাওয়ার পর্ব। কানাইর মা রমেশকেও খেতে দিলেন, রমেশ খেলেন। কানাই রমেশকে জিজ্ঞেস করল, “সাথে টাকাপয়সা কিছু এনেছিস?”
রমেশ বলল, “হ্যাঁ আছে কিছু, তা হাজার খানিক হবে।”
কানাই বলল, তা চলবে, ওখানে গেলে তো আর টাকার অভাব হবে না। আমি নিজেই তোকে মাসেকখানি চালাতে পারবো।”
রমেশ কানাইকে জিজ্ঞেস করল, “রওনা দিবি কয়টা বাজে?”
কানাই বলল, “যেই গাড়ি করে আমরা যাচ্ছি, সেই গাড়ির সুপারভাইজার এই মহল্লার। সুপারভাইজার আসলেই আমরা রওনা দিবো।”
সন্ধ্যা হবার সাথে সাথে কানাই সহ সবাই রেডি হয়ে আছে। বাসের সুপারভাইজার আসলেই রওনা দিবে ভারতের উদ্দেশে। সন্ধ্যার একটু পরেই বাসের সুপারভাইজার কানাইদের বাসায় আসলো। কয়জন যাবে এবং কী কী নেওয়া হবে, তার একটা বিবরণ যেনে নিল সুপারভাইজার। সাথে নেওয়ার জিনিশগুলোর বিবরণ জেনে কিছুক্ষণ পর সবাই রওনা দিল। প্রথমে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা গাবতলি, সেখান থেকে উঠলো কেয়া পরিবহণে। যাবে বেনাপোল ভারত বাংলাদেশ বর্ডারে, বর্ডার পার হয়ে ভারত। বেনাপোল যেতে যাতে রাত ভোর হয়ে গেল, বাস থেকে নামলো সকাল ৭ টায়। বাসের বেশিরভাগ যাত্রীদেরই ছিল বৈধ পাসপোর্ট, ছিল না শুধু কানাই আর রমেশের।
পাসপোর্ট না থাকলেও কোনো সমস্যা নেই, আছে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সুপারভাইজার। বাস টার্মিনালে যাওয়ার সাথে সাথেই বর্ডার পাড় করার দালাল রেডি। সুপারভাইজার দালালের কাছে কানাইর দুই বোন ও রমেশকে বুঝিয়ে দেয়। দালালকে পাড় করার বিনিময় দিতে হবে জনপ্রতি ৩০০ টাকা। দালালের সাথে কথা পাকাপাকি হয়ে গেল বাসের ভেতরেই। এরপর সাথে নেওয়া জিনিশপত্রের ব্যাগগুলো আর কানাই ও রমেশের বহন করতে হয়নি; যা করার দালালের লোকজন করেছে। দালালদের ভ্যানগাড়ি করে চারজনকে নিয়ে গেল দালালদের বাড়িতে।
ভারত বর্ডার সংলগ্ন বাড়ি, মনোরম পরবেশ আর সৌন্দর্যময় জায়গা। অন্যান্য গাছগাছালির মধ্যে সেখানে বাঁশগাছই বেশি। বাসস্ট্যান্ড থেকে যাওয়ার সময় দেখা যায় বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়েই রাস্তা। রাস্তাও বেশ সুন্দর, আঁকাবাঁকা চিকণ রাস্তায় বাইসাইকেলের ছড়াছড়ি। দেখে মনে হয়, এ-যেন সাইকেলের রাজত্ব। সেখানে যার কিছুই নেই, তার একটা বাইসাইকেল অবশ্যই আছে। ওখানকার দৈনন্দিন জীবন চলার একমাত্র সঙ্গী হলো বাইসাইকেল। বেনাপোল বর্ডার সংলগ্ন মানুষের হাটবাজার, মালামাল পরিবহণ সহ সবকিছুই বাইসাইকেলের ওপর নির্ভর। সাইকেল দিয়েই নেওয়া হচ্ছে বর্ডার পারাপারের খবরাখবর। সময় সময় বর্ডার নিরাপত্তায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের কড়া নজরদারিতে থাকে। সে-সময় পাসপোর্ট বিহীন মানুষকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। ওইরকম ঝামেলায় পড়ে গেল রমেশ, কানাই সহ দুবোন । বর্ডার সংলগ্ন দালালদের বাড়িতেই বন্দি অবস্থায় থাকতে হয়েছে তিনদিন।
চলবে…..যতদূর সম্ভব ।
৮টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ দাদা পাসপোর্টহীন ভ্রমণ খুব কঠিন এবং জিবনের ঝুকি থাকে। আমি ভারতে একাবার পাসপোর্ট হারিয়ে অনেক ভুগে শেষে অবৈধ পথেই এসেছিলাম। কারন বৈধ পথে আসার জন্য ৩০০০ রুপি খরচ করেও কোন সুরাহা না হয়াতে বাঁকা পথ ধরলাম। তয় জামাই আদরেই এসেছিলাম ! কোন চেকিং নায় অথচ ইমিগ্রেশন দুইটয়াই পার হয়েছিলাম চেকিং বাদে।
নিতাই বাবু
মজিবর দাদা, পরের গল্পটা পড়ুন! আশা করি ভালো লাগবে।
ধন্যবাদ দাদা, ভালো থাকবেন। -{@
মোঃ মজিবর রহমান
পড়েছি ভাল লাগা রইল।
নিতাই বাবু
অনেকদিন পর আমার এই লেখায় আপনার সুন্দর মন্তব্যখানি চোখে পড়লো, দাদা। কিন্তু এর আগেই চোখে পড়ার কথা ছিল। দুঃখিত আমি!
সুন্দর মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আর হ্যাঁ, “ভারত ভ্রমণের গল্প” পোস্টের পর্ব আমি শেষ করতে পারিনি। তবে ইচ্ছে আছে শেষ করার।
কামাল উদ্দিন
আমারও অবৈধভাবে দালালদের মাধ্যমে ভারত যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনার গল্প পড়ে ১৯৯৭ সালের সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেল। আপনার সাথেই আছি, নো টেনশন।
নিতাই বাবু
এই “ভারত ভ্রমণের গল্প”-এর পর্ব কিন্তু শেষ করতে পারিনি, দাদা। কিন্তু আজ আপনার সুন্দর মন্তব্য দেখে লেখা শেষ করার ইচ্ছা জেগেছে মনে।
আশা করি ভালো থাকবেন শ্রদ্ধেয় দাদা।
কামাল উদ্দিন
আমি আসলে ব্লগের পুরোনো লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়ার চেষ্টা করি। আপনার গল্পের শেষ পর্যন্ত থকবো দাদা, লিখে ফেলুন বাকীটা।
নিতাই বাবু
অবশ্যই শেষ করবো,দাদা।