গত পর্ব ( বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-৫ ) ছিল নাইন-ইলাভেনের শেকড় অধ্যায়ের শেষ পর্ব। বলেছিলাম, এতো কেবল সুচনা গেল, আগামী পর্বগুলোতে আমরা সবাই মিলে সুত্র মিলাবোঃ নাইন-ইলাভেনের ষড়যন্ত্রের ফসল ঘরে তুলতে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে কি কি ইতিহাস ধিকৃত অমানবিক কান্ড ঘটিয়েছিল আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব সহ তাদের দোসর পাকিস্তান। জানবো, আফগানিস্তান যুদ্ধের ঘটনার অন্তরালের ঘটনাগুলো একটার পর একটা সুত্র মিলিয়ে। মিলাবো তথ্য সুত্র পর্বঃ ৬ এ।
এক নজরে চলুন দেখে নেই, আফগানিস্তানের জঙ্গিবাদের বীজতলায় যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, সৌদি আরব এর ধংস যজ্ঞের যে তথ্য সুত্র মিলাবো, উত্তর খুজবো কি কি প্রশ্নের, তাঁর সুচিরুপঃ
চলুন এই অধ্যায়ের উত্তর খুঁজি পর্ব ৬ থেকেঃ
২০১৪ সালের জুনে মার্কিন দৈনিক খবর ফাঁস করেছে-‘বিন লাদেনের পুতুল তৈরি করছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’। দানবীয় চেহারার এই লাদেন পুতুল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিখ্যাত খেলনা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হাসব্রো এক্সিকিউটিভকে। চীনে চলছে এই পুতুল বানানোর কাজ। ভয়ঙ্কর চেহারার লাদেন পুতুলকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেবার পরিকল্পনা সিআইএ’র। উদ্দ্যেশ্য ছোটবেলা থেকেই শিশুদের মনে লাদেনরুপি জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ঘৃনা তৈরি করা।
আল-কায়দা তথা বিন লাদেনের জন্ম রহস্য যারা জানেন এই খবর তাদের কাছে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা কৌতুক। সেটা এ কারনে যে ২০১৪ সালের দানবীয় লাদেন পুতুলই শুধু নয়। রক্ত মাংসের একজন লাদেন আর আল-কায়দা নামের ভয়ঙ্কর একটি দানবীয় সংগঠনের জন্মদাতা যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর দীর্ঘ দিনের বন্ধু সৌদি আরব। পুরো ৮০’র দশক থেকে শুরু করে নতুন শতাব্দির সূচনা পর্যন্ত দুই দশকে অর্থ, অস্ত্র আর প্রশিক্ষন দিয়ে কিভাবে একটু একটু করে বিন লাদেন ও আল-কায়দা নামের এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করা হল সেই তথ্য এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার পতন আর সেই পতনের পর নয়া শত্রু হিসেবে জঙ্গীবাদের উত্থান; ইতিহাসের এই দুই পর্বেই যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ও সৌদি আরবের প্রানের বন্ধু ছিলেন বিন লাদেন। এমনকি এই বন্ধুত্ব অটুট ছিল নাইন-ইলাভেনের সূচনা লগ্নেও। ফ্রান্সের ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা তথ্য অন্তত সেটাই বলছে।
২০০১ সালের নভেম্বরে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে ছাপা হওয়া একটা খবর দুনিয়াজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। খবরটা হলো-‘বিন লাদেনের সাথে এজেন্টের সাক্ষাত’। সময়টা ছিল নাইন-ইলাভেন ট্র্যাজেডির মাত্র দুই মাস আগে। ৪ জুলাই ব্যাক্তিগত একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও চার দেহরক্ষী নিয়ে পাকিস্তানের কোয়েটা থেকে দুবাইয়ে আসেন বিন লাদেন। তাঁর শরীরের অবস্থা ভাল নয়। তিনি হেপাটাইটিস সি-তে ভুগছেন। সেই সাথে কিডনিতে ইনফেকশান। নিয়মিত কিডনি ডায়াকাইসিস করাতে হচ্ছে তাকে। লাদেন ভর্তি হয়েছেন দুবাইয়ের একটি আমেরিকান হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগে। সেখানেই তাঁর সাথে দেখা করতে আসেন দুবাইয়ে থাকা সিআইএ’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। প্রথমে তাকে ঐ হাসপাতালের লিফটে এবং পরে তাকে লাদেনের রুমের দিকে যেতে দেখা গেছে। এর কদিন পরই সি আইএ’র ঐ অফিসারকে ওয়াশিংটনে ডেকে পাঠানো হয়। তারপর আসেন আরো একজন সিআইএ এজেন্ট। দশদিন ঐ হাসপাতালে ছিলেন লাদেন। এই দশদিনে সৌদি আরবের আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তার আনাগোনা দেখা গেছে, ঐ হাসপাতালে। তাদের একজন সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স তুর্কী আল ফয়সাল। নাইন-ইলাভেনের আগে পরে যুক্তরাষ্ট্রে তুর্কীর রহস্যময় তৎপরতার কথা আপনারা আগেই জেনেছেন। মূলত ৮০’র দশক থেকেই আফগান মিজাহিদ এবং বিন লাদেনের সাথে তুর্কীর যোগাযোগ। (The Guardian, Thursday, 1 November, 2001)।
ছবিঃ দানবীয় চেহারার লাদেন পুতুল ও আফগানিস্তানে রুশ বিরোধী লড়াইয়ে বিন লাদেন।
লাদেনের অবস্থা তখন রীতিমত সংকটাপন্ন। ডাক্তাররা বলছিলেন তিনি বড়জোর দুই কি তিন বছর বাঁচবেন। নিয়মিত কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য তাকে একটি বহনযোগ্য মেশিন আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যাবার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা। তবে দুবাইয়ের এই রিপোর্ট নয়-বরং গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নেতারা। খবরটা বরাবরই জোর গলায় অস্বীকার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। যেমনটা অস্বীকার করা হয়েছিল টুইন টাওয়ারে হামলা-হামলার পূর্বাপর অনেক তথ্য। ফরাসি গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এই তথ্য ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তখন অনেকখানি জল ঘোলা হয়েছিল। সে অন্য ইতিহাস। আমরা একটু ফিরে যেতে চাই আরও অতীতে ১৯৮৬ সালের বসন্তে!!!!!!
কি সেই ইতিহাস, মিলাবো তথ্য সুত্র, জানবো পর্বঃ ৭।
সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, চোখ-কান খোলা রাখুন; নিরাপদে থাকুন।।
বিঃদ্রঃ বে দুঃখ প্রকাশ করছি যে, একেকটা পর্ব দিতে আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, প্রতি শনিবার পর্বগুলো দেবার ইচ্ছে থাকলেও ব্যাক্তিগত কাজের ব্যাস্ততার কারনে পোষ্ট দিতে দেরি হয় বলে আমি দুঃখিত, যারা নিয়মিত পর্বগুলো পড়ে আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ। সোনেলা কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ, লিখাটি নিয়মিত প্রকাশে সহযোগিতা করার জন্য। অনেকে সীমান্ত উন্মাদের ফেইসবুক আইডিতে সীমান্ত উন্মাদের পরিচয় জানতে মেসেজ দিচ্ছেন, কিন্তু আমি নিরাপত্তা জনিত কারনে আমার পরিচয় জানিয়ে আপনাদের অনেকের পাঠানো ফেইসবুক বার্তার উত্তর দিতে পারছিনা বলে অনেক অনেক ব্যাথিত এবং একি সাথে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছিঃ হুমকিই যেখানে আশ্বাস, বেঁচে থাকাটা সেখানে বোনাস বলে বিবেচিত হচ্ছে। সীমান্ত উন্মাদ এই সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের ১৭ কোটির মানুষেরই প্রতিচ্ছবি। সীমান্ত উন্মাদ সোনেলা ব্লগের প্রত্যেক ব্লগারের কণ্ঠ কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি, যারা প্রানের চেয়ে ভালবাসে দেশ, মাটি ও মাতৃভূমিকে। শুভকামনা নিরন্তর।
আগের পর্বগুলোঃ
বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। ভূমিকা পর্ব।
বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-১।
বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-২।
বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-৩
বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-8।
বিশ্ব রাজনীতি বনাম আলকায়দা থেকে আইএস-বিহাইন্ড দি সিন। পর্ব-৫।
১৩টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! সব গড়ায় গণ্ডগোল!
সীমান্ত উন্মাদ
সেটাই ভাই, গোড়ায় গণ্ডগোল।
ধন্যবাদ এবং শুভকামনা নিরন্তর জানিবেন ভাই।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক সময় নিয়ে ধৈর্য্য ধারণ করে লেখাগুলো দিয়েছেন, আর দিয়েছেন বলেই
আমারা জানলাম অনেক, যা জানা হোত না।
ধন্যবাদ।
সীমান্ত উন্মাদ
আসলে আমি আমার দায়িত্ববোধ থেকেই দিচ্ছি লিখাগুলো, কারন এই দানবের ভয়াল থাবার হুমকি থেকে মুক্ত নয় আমাদের দেশও, আর আমাদের দেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিগুলো মুখিয়ে আছে এদের দোসর হতে।
পরিশেষে বলতে চাই, আপনাদের পাশে পাই বলেই সাহস পাই এগিয়ে যাবার।
লীলাবতী
অজানা অনেক কিছুই জানছি উন্মাদ ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।
সীমান্ত উন্মাদ
সাথে থাকার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ আপু।
শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া কারো ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয়ার প্রয়োজন নেই বলেই মনে করি। আর একটি কথা এতো কষ্ট করে যে লিখছেন, এমন পোষ্টের জন্য অপেক্ষার মতো ধৈর্য ধরে থাকতে পারবো।
নিজেকে যত্নে রাখুন। সাবধানে থাকুন। অনেক ভালোবাসা।
সীমান্ত উন্মাদ
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু সাথে এবং পাশে থেকে সব সময় উৎসাহ দেবার জন্য।
শুভকামনা জানিবেন নিরন্তর।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক পড়তে হয়েছে তোমাকে এ লেখাটি লিখতে গিয়ে, সেটা বুঝতেই পারি। ধন্যবাদ অনেক তোমাকে। নিয়মিত পড়ছি।
লাদেনের বীভৎস পুতুল বানাবে, ভালো বুদ্ধি। বুশ, আমেরিকার পুতুল বানাবে কোন চাইনিজ দেশ?
সীমান্ত উন্মাদ
হয়ত অবাক হচ্ছেন যে চাইনিজ দেশ কিভাবে বুশ আমেরিকার পুতুল বানাবে, এখানে চাইনিজ দেশ রাষ্ট্র হিসেবে সমর্থন দিয়ে পুতুল বানায় নি, বানিয়েছি তাদের ব্যাবসার উদ্দেশ্যে। তারা ব্যাবসায় মনোযোগি এতে কার কি হল তাদের কিছু আসে যায়না। এরা ব্যাবসার জন্য কোন কিছু কে সমর্থন ও করে না আবার অসমর্থনও করে না। চায়নিজদের ডিপ্লোমেসি হলো ব্যাবসায়িক ডিপ্লোমেসি।
ধৈর্য নিয়ে আমার লিখা পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা নিরন্তর।
শুন্য শুন্যালয়
উহু, আমার বলার উদ্যেশ্য সমর্থন নিয়ে ছিলনা। লাদেনের ভয়ংকর পুতুল তৈরি হচ্ছে, কিন্তু লাদেন কে যারা তৈরি করছে সেই আমেরিকার পুতুল কিন্তু তৈরি হচ্ছেনা।
জিসান শা ইকরাম
সবই আসলে পাতানো খেলা
ভিন্নভাবে সাম্রাজ্যবাদ এবং আধিপত্য কায়েমের কৌশল।
চলুক,
সোনেলা আছে লেখার সাথে।
সীমান্ত উন্মাদ
এই সম্রাজ্যবাদীরাই আবার তৃতীয় বিশ্বের দেশর গনতন্ত্র রসাতলে গেল গেল বলে চিল্লায়।
আপনারা সাথে আছেন বলেই লিখা এগিয়ে যাচ্ছে।
শুভকামনা নিরন্তর।