বিচার

আজিজুল ইসলাম ১৪ জুলাই ২০১৪, সোমবার, ০৭:৫৯:২৩অপরাহ্ন গল্প ১৮ মন্তব্য

দেশের সবোর্চ্চ আদালতকক্ষ । শেষ রায়ের অপেক্ষা । আগে  হাইকোর্টে রায়  হয়েছে চাকরী রক্ষার  কোন সুযোগ নাই তার । আপীল করা হয়েছিল , আজ সেই আপীলের রায় ।
অন্য  অনেকের সাথে আদালতে উপস্থিত আছেন যার চাকরীর বিষয় , সেই  আজিজ । হাইকোর্ট  সোজা বলে দিয়েছিলেন , চাকুরীবিধি তিনি  লংঘন  করেছেন চাকুরিরত  অবস্থায় । তিনি  নাকি এ-দেশ  থেকে সকল  অনাচার , অবিচার , অস্বচ্ছতা  দূর করার উদ্দেশ্যে  প্রতিটি  সরকারকে সকল  সময়  চাপে রাখার মত  সারাদেশব্যপী একটি দল  গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনূভব করেন এবং এই লক্ষ্যে  প্রচার , প্রচারনাও চালান । যদিও  সেই  সংগঠন  কোনদিন  সরকারে  যাওয়ার  চেষ্টা করবেনা , শুধ বাইরে  থেকে  অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করে যাবে অপকর্মগুলির সুরাহা না হওয়া পর্য্যন্ত । আদালতে আজিজ এটা অস্বীকার করেননি । হাইকোর্টের  রায়ের  সময়  আজিজ  কিছু  বলেওছিলন , আইনজীবিরাও  ছিলেন , তারাও  বলেছিলেন । আজিজ  বলেছিলন , আজ মহামান্য  আদালত  আমাকে দন্ডিত  করলেও একদিন  আদালত  হয়তো অনূধাবন করবেন , আদেশটা  ঠিক  হয়নি । কারন , আমি তো খারাপ কিছু করিনি , আমিতো রাজনীতি করতে চাইনি । আমি চেয়েছি দেশে যে অপরাজনীতি চলছে , তার শুদ্ধীকরন । এক পর্য্যায়ে  আদালতকেই  তিনি  বলেন অপরাজনীতি চলছে কি-না , বলুন মহামান্য আদালত । এর থেকে পরিত্রানের উপায় খোঁজা  কি আমার  অন্যায় ? আমি  সরকারী  কর্মচারী ; আমি তো এদেশের মানূষও । দেশ সম্পর্কে আমার চিন্তা-ভাবনা থাকতেই পারে । কোন অসৎ  উদ্দেশ্যে আমি  তো এটা করছিনা । মাননীয়  আদালত  রায়  ঘোষনায়  বলেন , আজিজ যা বলছেন , তাতে যূক্তি আছে কি নাই , আদালতের বিচার্য বিষয় তা নয় । তিনি জানেন চাকুরীরত  অবস্থায়  রাজনীতি  করা যায়না । কিন্তু তা করেছেন , অতএব  তার  চাকুরী  থাকবেনা । এই  রায়  ঘোষিত  হল ।
তাকে  দেশের  কেউ  চিনতনা । তিনি নিজে রাজনীতি  করতেনওনা । নোবেলজয়ী  ড. মোহাম্মদ ইউনূস এবং  সুশীল  সমাজের , মিডিয়ার কিছু ব্যক্তিত্বের কাছে এ-সম্পর্কিত তার কিছু বক্তব্য ছিল  লেখনীর  আকারে । দেশের  মাদ্রাসা  ছাত্রদের  প্রচলিত  ধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্তকরন এবং এটা কিভাবে সম্ভব , সে সম্পর্কেও তার  কিছু  লেখা  রয়েছে । এগুলি একটি   প—স্তিকা আকারে  প্রকাশের ও  প্রচারের  ব্যাবস্থা  হয় । দেশের মানুষ , বিশেষতঃ  ছাত্রলীগ-যুবলীগ , ছাত্রদল-যুবদল  ছাড়া  সারা  দেশব্যপী  বিশাল  যে  ছাত্র-যুব  সমাজ  রয়েছে দেশে , যারাই মূলতঃ উক্তরকম দলের প্রধান শক্তি , কেবলমাত্র-ই যারা পারে চাপে রেখে সরকারকে স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা , নায্যতা  নিশ্চিত  করতে  বাধ্য  করতে , তাদের  মধ্যে প্রচারনা চালানো  হয় ; কি  কারনে ও  কি  পদ্ধতিতে  সরকারকে  চাপে  রেখে বাধ্য  করা  যায় । তারাও  এগিয়ে  আসার  সূচনা  করেন বা করতে চান । এমন সময় আজিজের  আপীলের শুনানি চলে । ইতিমধ্যে  কিছু  বিশিষ্ট  আইনজীবি  স্বেচ্ছায়  এগিয়ে আসেন তার পক্ষ হয়ে । শুনানির শেষদিন  আজিজ  আইনজীবিদের  বলেন , শেষটা  আজ  আমি  বলব । আদালতের  সন্মতি  নিয়ে  বলা  শুরু  করেন  আজিজ ।
মাননীয়  আদালত , মহামান্য  হাইকোর্টের  রায়ে আমার চাকুরী  গেছে । সর্বোচ্চ আদালতের এই শুনানিতে , এমনকি আমার পক্ষের  মাননীয়  আইনজীবিগনও  চাকুরী  থাকার  পক্ষে  বলতে  খানিকটা হলেও  দ্বিধা  করেন  বলে  মনে  হয়েছে । তাই  আমারটা  আমি-ই  বলি ।
মাননীয়  আদালত , আজ এখানে  যে  রায়  হবে , তাতে  আমি  সন্তোষজনক  চিত্তে  বাসায়  ফিরবো , এটা আমার  মন বলছে । আগেও  দেখেছি  যখনই  কোন  বিপদে  পড়েছি , মনে  হয়েছে উদ্ধারের পথ সংকুচিত হয়ে পড়ছে । কিন্তু  পরম  করূনাময় খোদা তা’লার অসীম কৃপায় উদ্ধারও পেয়ে গেছি , কিছু ক্ষেত্রে অলৌকিকভাবে । আজও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পরম করূনাময়ের  কৃপার  সীমানার  বাইরে  আমি , এই  অধম  এখনও  চলে  যাইনি ।
আমি  বুঝে  পাইনা  মাননীয়  আদালত , দেশে  যে অনাচার চলে সব সরকারেরই সময় , তা থেকে মুক্তির  সম্ভাব্য পথ নিয়ে আলোচনা  আমি  কেন  করতে  পারবনা , যেখানে  দেশ  আজ  ছারখার  হতে  বসেছে । সব চেয়ে ঘনবসতিপূর্ন এবং দারুনভাবে বেকারের এদেশে ঘুষ ছাড়া কোন সরকারী চাকরী হয়না । এতো কেন নির্লজ্জ হয়ে পড়ছি আমরা মাননীয় আদালত যে, চাকরীর জন্য হাহাকাররত মানুষের কাছ থেকে আমরা ঘুষ খাই ? রাজনীতিবিদরাই দেশ পরিচালনা করেন ।  তাঁদের পরিচালিত  এ-দেশে বছরের পর বছর ধরে টেন্ডারবাজী চলছে । তাতে করে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের অগুনিত সাধারন ঠিকাদার । ঘটনাগুলি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে । বলা যায় , এগুলির  সর্বোচ্চ  শিখরে  পৌঁচেছে । এর  চেয়ে  এগুলি  বেশী  হলে  দেশ  কোন  পর্য্যায়ে চলে  যাবে , তা আমরা কল্পনাও করতে পারবনা । এগুলির কারনে  আজকের  তরুনরা  হাসতে  পারেনা , তারা  হাসতে  জানেনা । এই  দুঃখ , এই  বেদনা  কিভাবে  বয়ে  বেড়াবে তরুনরা , মাননীয়  আদালত , এটা কোটি কোটি টাকার  একটি  প্রশ্ন ; যার  উত্তর  ভূক্তভোগীরা  যদি  জানতে চায় , কিভাবে  তাদের  আপনি  অপরাধী  বলবেন ?
আজকে  আপনি  কোন  পক্ষ  নিবেন , সেটা আপনার  উপর  নির্র্ভরশীল মাননীয় আদালত । রোগশয্যায়  শায়িত  স্বামীর  পাশে বসে মাষ্টার্স  করা  বেকার  যুবক  ছেলেকে জড়িয়ে  ধরে কান্নায়  বুক ভাসায়  যে মা , গ্র্যাজুয়েট  যে  ছেলেটি  চাকুরী  পেতে  ঘুষ দিয়ে  টাকা  ফিরে  না  পেয়ে  পরিবারটাই  যার  ঋনের জালে জড়িয়ে  পালিয়ে  বেড়াচ্ছে , দারিদ্রের  কষাঘাতে  পড়ে  যে  জননী আমার,  একটি-ই  মাত্র  কাপড় , গোসল  করে  যা  না শুকানো পর্য্যন্ত  কাপড়হীন অবস্থায় থাকেন , তাদের!  নাকি  সফেদ  সাদা পাঞ্জাবী  পরিহিত  সন্মানিত  নেতাগন , যারা রাজনীতির , দেশের  মাঠ  দাপড়িয়ে  বেড়াচ্ছেন , আর তাদের চামচারা তাদেরই আশ্রয়-প্রশ্রয়ে  অপকর্ম  করে  বেড়াচ্ছেন , কাদের পক্ষ  আপনি  নিবেন , তা  ভেবে  দেখতে  অনূরোধ  করি  সবিনয়ে । খোদার কাছে  কি জবাব  দেব  আমরা  মাননীয়  আদালত , যদি  আমরা  সঠিক  সিদ্ধান্ত—  না  নেই ?
মাননীয়  আদালত , দুর্নীতি  এবং  দুঃশাসনের  ধারাবাহিকতা যদি  আমরা লক্ষ্য করি , দেখতে  পাব, এরশাদ  যত  দুশ্চিন্তা  নিয়ে দুর্নীতি  করতেন , এখনকার  নেতারা  এবং  সরকারী  লোকজনের  মধ্যে  সেই  দুশ্চিন্তার  কোন  ছিটেফোঁটাও  নাই । নিশ্চিন্তমনে এখন দুর্নীতি  করা  যায় । গ্রাম-গঞ্জে  আগে টেস্ট-রিলিফের  কাজ , রাস্তা-ঘাটের  কাজ বেশ ভালো মানেরই  হত । তারপর  ধীরে  ধীরে এই  মান কমতে  কমতে এখন এমন অবস্থায় এসে পৌঁচেছে যে , ভৌতিক  ভৌতিক  সব  নাম দেখিয়ে  এখন  টেস্ট-রিলিফের খাদ্য-শস্য , টাকা  আত্মসাৎ  করা  হয় । এজন্য  কারো  কোন  সাজা  হয়না । পাকা রাস্তার কাজ  এখন  এরকম  মানে  এসেছে যে , এর  নীচে  আর  কোন মান হয়না । আর দুঃশাসনের  বিষয়েও  একই  কথা  প্রযোজ্য । ঋন  জালিয়াতি  আগে  কি  পরিমানে হত  আর  এখন  কি  পরিমানে  হচ্ছে , সাম্প্রতিক  হলমার্ক  কেলেংকারীসহ  অন্যান্য  বড় বড় ব্যাংক জালিয়াতিগুলোর দিকে দেখলে তা পরিষ্কার হয় । রাজনৈতিক ক্যাডার কর্তৃক থানাসমূহের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপের  পরিমানও  দিনকে  দিন আশংকাজনকভাবে  বেড়ে যাচ্ছে । এরকম  হতে থাকলে থানার কোন প্রয়োজনই থাকবেনা একসময় ।  রাজনৈতিক  দলীয়করন  প্রশাসনের  সকল  ক্ষেত্রে চলে এসেছে । মিডিয়াতে এটা ছিলনা , এটাতেও এসে গেছে । মিডিয়া আজ আওয়ামীপন্থী এবং বিএনপিপন্থী , এই  দুইভাগে  সুস্পষ্টভাবে  বিভাজিত  হয়ে  গেছে । এই  স্রোতের পক্ষে যারা , তারা  দিব্যি  চালিয়ে  যাচ্ছে । আর যারা এই  স্রোতকে  মেনে  নিতে  পারছেনা  অর্থাৎ  প্রশাসনে , মিডিয়ায় , পুলিশেসহ  সব  সার্ভিসেই  এই  স্রোতের  বিরুদ্ধের  কিছু ব্যক্তি  আছেন , তারা  কি  করবেন  মাননীয়  আদালত ?
সরকারের  সকল  অপকর্মের  ক্ষেত্রে  প্রতিবাদের  ঝড়  তোলার  জন্য  এদেশে প্রেশারগ্রুপ জাতীয় একটি শক্তিশালী সংগঠন প্রয়োজন । কারন প্রতিবাদ  না  করে  এরকমভাবে একটা  সভ্য  দেশ  চলতে  পারেনা , চলতে  আমরা  দেবনা । তরুনদেরকে একাজ শুরু করতে হবে এবং এতে  সকল  শ্রেনী-পেশার মানূষের প্রত্যক্ষ সমর্থন  থাকতে হবে । নাহলে  সংগঠনটা  ততখানি  শক্তিশালী  হবেনা , যতখানি  শক্তিশালী  হলে  একটি  সরকারকে  সবসময়  সকল  অপকর্ম  থেকে  বিরত  রাখা  যায় । আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই, যেদেশে কোন অনাচার থাকবেনা, দুঃশাসন থাকবেনা, থাকবে শুধু শুদ্ধাচার, শুধুই সদাচার । এভাবে আমরা এদেশটাকে মানবিক, উদারনৈতিক একটি দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই । তরুনদের  অনতিবিলম্বে একাজ শুরু করার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়ে যেতে চাই । সরকারকে চাপে রেখে দেশে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই । আর কিছু না । ক্ষমতায় যাওয়ার আমাদের কোন অভিলাষ নাই এবং আমরা কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার কোন চেষ্টা করবোনা ।
অনেকক্ষন  কথা  বলে  একটু  থামেন  আজিজ । তাকান  এদিক-ওদিক । না , কারো  সমর্থনের  আশায়  নয় । কারন তিনি জানেন এবং বিশ্বাস  করেন , দেশের  প্রতি  অনুভূতিসম্পন্ন সকল  শ্রেনী-পেশার মানূষ  এরকম  উদ্যোগ সমর্থন না করে পারেননা । দেখেন , কিছু  মানূষ , তাঁদের  মধ্যে  আইনজীবিরাও  আছেন , প্রসন্ন  দৃষ্টি  মেলে  তার  বক্তব্য  শুনছিলেন, যা  তখনও  ধরা আছে ।
মাননীয়  আদালত , স্বতঃপ্রণোদিত  হয়ে  আপনারাও  অনেকসময়  রায়  দেন  বিবেকের  তাড়নায় । আবার  বলা শুরু করেন আজিজ । আপনারা  সরকারকে  কিছু  পর্যবেক্ষন  দিতে  পারেন , যেমন , (১) সম্পুর্ন স্বচ্ছভাবে সরকারী নিয়োগে সকল কাজ সম্পন্ন করতে হবে, ঘুষের অভিযোগ উঠলে সে-নিয়োগ বাতিল করতে হবে এবং ঘুষ গ্রহনকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে ; (২) প্রশাসনে  কোন  দলীয়করন  করতে  পারবেনা সরকার , সিনিয়রিটির  ভিত্তিতে  পদোন্নতি  দিতে  হবে ; (৩) থানা  প্রশাসনে  রাজনৈতিক  ক্যাডারদের কোনরকম হস্তক্ষেপ চলবেনা ; পুলিশ  প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে  কাজ করতে দিতে  হবে , তবে তারা সঠিকভাবে  কাজ  করছে  কি-না, তা  যাচাই করতে  হবে ; (৪) দুর্নীতি , তা রাজনীতিবিদই  করুক বা সরকারী  কর্মকর্তা , সঠিক এবং নায্য  বিচার  করতে  হবে ; (৫) দলীয় অংগ সংগঠনের  পক্ষে  না  হয়ে  সরকারকে  জনসাধারনের  পক্ষে  সকল  সময়  কাজ  করতে  হবে , ইত্যাদি । আমরা সবাই মিলে  এভাবেই  প্রতিটি  সরকারের  আমলে  সরকারকে  সকল  রকম  অনাচার , অবিচার  করা  থেকে  দূরে  রাখতে  পারব ।
মাননীয়  আদালত , অনেকে  ভাবতে  পারেন , রাজনীতি  আপনা-আপনি  শুদ্ধ  হয়ে  যাবে । শুদ্ধ  হয়ে  যাওয়ার  জন্য  কোন  দল করতে  হয় ? এ-বিষয়ে  বলতে  চাই , মানূষ  যাতে  কূ-পথে  না  যায় , সেজন্য  কেন  আমরা  তৎপর  থাকি , কেন  আমরা  তাকে  চাপ প্রয়োগ করি  যাতে  সে অপরাধ না  করে ? এটাও  সেরকম  বিষয় । আসলে চাপ না থাকায় এবং শাস্তি না হওয়ায় সরকারগুলি ধরাকে শরা জ্ঞান করছে । আমরা সেই জায়গাটায় বাধা দিতে চাই । প্রচন্ড শক্তিশালী একটা দেয়াল গড়ে তুলতে চাই এটার বিরুদ্ধে । আর কিছু নয় । এভাবে আমরা রাজনীতিকে  শুদ্ধ  করতে  চাই  মাননীয়  আদালত । যাতে  এদেশের  বেকার আপামর  যূব-গোষ্টী তথা তাদের অসহায় পরিবারগুলো  স্বস্তি  পায় । আমাদের  ক্ষমতায়  যাওয়ার  কোন  লক্ষ্য  নাই এবং  সেভাবে  আমরা  সংগঠিত  হবোওনা ।
আমি আর বেশি কিছু বলবনা । দীর্ঘদিন ইঞ্জিনিয়ারিং চাকুরী করা সত্ত্বেও আমার কোন সম্পদ নাই । আমার চাকূরীচ্যুতির  হাইকোর্র্টের  রায়  যদি  বহাল  রাখা  হয়  আজ , তবে  আমাকে  স্রেফ  পথে বসতে  হবে । তবু চাকুরী  যাওয়ার  সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমি এই দলগঠন  সম্পর্কিত  কথাগুলি  প্রচার  করেছি  শুধুমাত্র  বিবেকের  তাড়নায় । এগুলি  না  করে  থাকতে  পারিনি আমি । কারন  আমি  জানি  রাজনীতি  শুদ্ধকরনের  আর  কোন  পথ  নাই , নাই  এবং  নাই । মাননীয়  আদালতের  কাছেও  সম্ভবতঃ  নাই । তাই  আজ  আমি  আমার  পক্ষে  আদালতের  রায়  প্রত্যাশা  করে  আমার  বক্তব্য  শেষ  করছি ।
পিনপতন  নিস্তব্ধতাটা  আস্তে  আস্তে  কেটে  গিয়েই  আবার  শুরু  হল  যখন  মাননীয়  আদালত  বলে  উঠলেন , আজই  রায়  হবে , তবে ঘন্টাখানেক পর ।
ঘন্টাখানেক  পর  রায়  প্রদানের  উদ্দেশ্যে  আদালত  আসন  গ্রহন করলে  আবার  পিনপতন নিস্তব্ধতা  নেমে আসে । মাননীয় আদালত  বলতে শুরু করেন , আজ  আমরা  হাইকোর্র্টের  রায়কে  বহাল  রাখতেই  এসেছিলাম । কিন্তু  আমার  বলতে  দ্বিধা নাই যে , জনাব  আজিজ  যা  বলেছেন , তাতে  আমরা  প্রভাবিত  হয়েছি । হাইকোর্ট   রায়ের পর্যবক্ষনে বলেছিলেন , আজিজ যা বলেছেন , তাতে  যুক্তি  আছে  কি নেই  তা আদালতের  বিচার্য  বিষয়  নয় । আসলেই তাই , আইনের  ভাষাই এটি । আমরা আইনের  নতুন  কোন  বিষয়ের  অবতারনা  করতে  চাইনা , তবে  আজিজের  বক্তব্যের  গভীরতা উপলব্ধি  করতে চাই এবং সবাইকে তা  করতে  বলি । এই উপলব্ধি  করতেই  আমি এক ঘন্টা  সময়  নিয়েছি  রায়  দিতে । পরম  দয়াময়  খোদা তা’লাকে হাজির নাজির  করে আমি গভীরভাবে ভেবেছি , কি রায় আমার দেয়া উচিত । আমি  অনূধাবন করেছি , হাইকোর্র্টের  রায় বহাল রাখলে এটা  আজিজের  উপর  অন্যায়  করা হবে । আসলেই , তিনি যেমনটা বলেছেন , সরকারের উপর আদালতের কিছু পর্যবেক্ষন  থাকা উচিত । কারন সরকার  তো  অনাচার , অবিচার  করার শেষ  সীমায়  পৌচেঁছে । শুধু  এই  সরকারই  নয় ,  সব সরকারই  তা  করেছে । সরকার  যদি  অন্যায় , অবিচারের  শেষ পর্যায়ে পৌঁছে , তবে  আমাদের  কিছু  পর্যবেক্ষন  না  থাকাটা আসলেই  তো , অপকর্ম  হচ্ছেনা, এটাই  মেনে নেয়া । এটা  গভীর অনূধাবনের  বিষয় এবং এটা  আমাদের  নাই , হয়নি  বলে আসলেই  আমরা  দুঃখিত । আসলেই  গ্রাম-গঞ্জের  কুঁড়েঘরগুলিতে  বিরাজমান  কান্না  বুঝতে  আমরা  ব্যর্থ  হয়েছি এটা স্বীকার করতে  আমার  কোন  লজ্জা  নাই । কারন  আমাদের  চাকুরীই  তো  তাদের  মুখে  হাসি  ফোটানো ।
এগুলো  অনূধাবন  করার  কথা  তো তার  না । তিনিতো  একজন  ইঞ্জিনিয়ার , সরকারী  চাকূরী  তার । আর  সকলের  মত আলস্যে  গা  ভাসিয়ে  দিনযাপন  করা  তার  দৈনন্দিন  অভ্যাসে  পরিনত  হওয়াটা স্বাভাবিক । কিন্তু  তা  না  করে  দেশ  সম্পর্কে তার  চিন্তা-ভাবনা  কত গভীরে , তা সবাই আমরা শুনলাম । হাইকোর্র্টের  রায়ের  সময়  এই  গভীরতাকে  বিবেচনায়  নেয়া  হয়নি । আইন  বড়  না এই  গভীরতা , সেটা  নিয়ে  বিতর্ক  থাকবে । কারন  মানূষে  মানূষে  চিন্তায়, চেতনায়, মননে ফারাক রয়েছে । এবার রায় ঘোষনার  পালা  এবং  আমি  তা  ঘোষনা  করছি ।
(১) জনাব  আজিজ  চাকুরী  করবেন  কি-না , সেটা  তার  উপর  ছেড়ে  দেয়া  হল । আজকের  বক্তব্যের  সাথে যতদিন তার কর্মের  মিল  থাকবে , ততদিন  অন্যকোন  বিষয়ে  তিনি  অপরাধী  না  হলে তাঁর চাকুরী কেউ  বাতিল  করতে  পারবেনা । তবে  আমার  মতে  তিনি  চাকুরী  না  করুক । দেশের  জন্য  সেটাই  ভালো  হবে ।
(২) সরকার  তার  চাকুরী  বাতিল  করার  সময়  থেকে এ-পর্যন্ত  সম্পূর্ন  বেতন তাকে প্রদান করতে হবে । তিনি যদি চাকুরী না করেন , তবে  যথানিয়মে  পেনশন  পাবেন । এ-ব্যাপারে  সংস্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষকে  নির্দেশ  দেয়া  হল ।
(৩) দু-এক  লাখ  টাকার  বেশী  তার  কোন  সম্পদ  আছে  কি-না , তা  সকল  সংশ্লিষ্ট  কর্তৃপক্ষকে তদন্ত  করে  দেখতে  নির্দেশ দেয়া  হল । যদিও জানি এবং বিশ্বাস করি , আজ  আদালতে  দাঁড়িয়ে  তিনি  কোন  মিথ্যা  কথা  বলেননি ।
রায়  পড়া  হলে  নিস্ত—ব্ধতা  ভেঙ্গে  গিয়ে  আদালতকক্ষে  বিরাট একটা আলোড়ন সৃষ্টি হল । কপালের  কাছে ডান  হাতটা উঠিয়ে বিজ্ঞ  আদালতকে  সালাম  দিয়ে  বের  হওয়ার  জন্য  ঘুরতেই  আজিজ দেখলেন  বিচারপতি তাকে বলছেন , আসেন  হাতটা কমপক্ষে  মিলিয়ে  যান । কাছে যেতেই মাননীয় বিচারপতি তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন , এবার আসেন । জনাকীর্ন আদালতকক্ষ  অবাক  চোখে তা  প্রত্যক্ষ  করল এবং  হাততালির  ঝড়  উঠল । আদালতকক্ষ  থেকে  প্রস্থান  করলেন  তিনি । ভেতরে  তখনও  আলোড়ন ও হাততালির  ঝড়  চলছে ।

৫৬৪জন ৫৬৩জন
0 Shares

১৮টি মন্তব্য

    • আজিজুল ইসলাম

      ছাইরাছ হেলাল ভাই, আপনার সাথে ঝগড়া হবে।
      কুঁড়েঘরের কান্না, ‘দারিদ্রের কষাঘাতে পড়ে যে জননী আমার, একটি-ই মাত্র কাপড় , গোসল করে যা না শুকানো পর্য্যন্ত কাপড়হীন অবস্থায় থাকেন ’, এসমস্ত বিবরন আপনি কেমন করে ফিকশন ধর্মী লেখা বলতে পারলেন?
      আমার আগের লেখাগুলো আপনাকে পড়াতে ব্যর্থ হয়েছি আমি, এটা আমারই ব্যর্থতা্।
      এটা ব্যর্থতা না হলে কেন আমি এভাবে উপহাসিত হবো এই লেখাকে ফিকশন ধর্মী লেখা হিসেবে মূল্যায়িত হওয়ার মাধ্যমে?
      তবুও ধন্যবাদ দেই, কমপক্ষে কিছুটা হলেও পড়ার জন্য।

      • ছাইরাছ হেলাল

        আমার সাথে অবশ্যই আলোচনা হবে তবে ঝগড়া নয় , আমি খুবই অপটু ।
        আপনার কোনই ব্যর্থতা নেই , এক অর্থে আমার ই ব্যর্থতা। আপনি সহ সবার লেখাই আমি পড়ি,পড়া আমার পছন্দের বিষয়। হ্যাঁ,সবার লেখায় মন্তব্য করতে পারিনা নিজের সীমাবদ্ধতার কারণে।তবে আমার সরাসরি বলা কথাকে উপহাস হিসাবে নেয়া ঠিক হবে না,যেহেতু আমি তা করিনি,করিনা ।

        আমি আশাবাদী মানুষ অনেক অনেক বেশি , কীভাবে কী হবে তা না জেনেও । আপনি দারিদ্র্যের যে
        ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন তা সবই আমার জানা আছে।কিন্তু বাস্তবতাহীন আশা আমি করতে পারি না।

        আমাদের বাস্তবতায় চাকুরী পেতে হলে ঘুস দিতে হয়,এবং এর অংক চাকরির মানানুযায়ী। অলিখিত নিয়মটি চলছে চলবে। হঠাৎ একজন ফেরেশতা তুল্য কর্মকর্তা এলেন। দেড় কুড়ি চাকুরী দিলেন বিনা পয়সায়। আনন্দে কাঁদতে দেখেছি দরিদ্র মানুষদের ,যারা কখনও এই চাকুরীটি পেত না,যেমন আগে পাননি। এটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড নয় কর্মকর্তাদের। আবার অন্য কেউ আসবেন ,আবার যাহা বাহান্ন তাহাই তেপ্পান্ন হবে,যেমন সব সময় হয়ে থাকে। আমি কঠিন বাস্তবতায় বিশ্বাস করি। অস্বাভাবিক আশাবাদ নিরাশাই ডেকে আনে।
        ঝগড়ার ভয় দেখালে কিন্তু আলোচনা হবে না , আমি খুব ভীতুর ডিম ।

      • আজিজুল ইসলাম

        কর্মকর্তারা চাকরী দিতে ঘুষ নেয়, এটা বর্তমানে স্বাভাবিক; কিন্তু ১০/১২ বছর আগে তো এরকম ছিলনা । তবে এটাকে তাদের স্বাভাবিক কর্মকান্ড কীভাবে বলেন আপনি? এই স্বাভাবিক কর্মকান্ড কী যুগ যুগ ধরে চলতেই থাকবে নাকি? চলতে আমরা দেব নাকি?
        আর ঘুষ নেয়ার বিষয়ে কী তারাই শুধুমাত্র দায়ী? রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন থেকে শুরু হয়েছে এটা। প্রচন্ড একটা গণবিস্ফোরনের পর এটা ঠিক হবে। কর্মকর্তার বদলে কিছুই হবেনা। কর্মকর্তা সততা নিয়ে থাকলে তাকে অন্যত্র বদলী করে দেয়া হবে। বাজে পোষ্টিং দেয়া হবে টাঁকে।
        আপনি বলেছেন অস্বাভাবিক আশাবাদ, বাস্তবতাহীন আশাবাদ। আমি গল্পটায় বলতে চেয়েছি, দেশের তরুন সমাজ, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্নগ্বয়ে কংক্রিটের মত জমাটবাধা একটা শক্তি তৈরী করা, যেশক্তির কাছে অজেয় থাকবেনা কিছুই, যেশক্তির কথামত চলবে দেশ, চলবে সরকার।
        আপনাদের কাছে হতে পারে এটা অবাস্তব, কিন্তু আসলে এটা অবাস্তব নয়। সাতচল্লিশের অব্যবহিত পরে কে ভেবেছিল, পুর্ব বংগ, আজকের এদেশ একদিন স্বাধীন হবে? কিন্তু হয়েছে তো। প্রেশার গ্রুপের ভাবনা আজ অবাস্তব মনে হলেও একদিন এই প্রেশার গ্রুপই হবে সকল ভালোর পথে এগিয়ে যাওয়ার পথের পাথেয়।
        আপনি যে লেখাটা পড়ে দেখতে বলেছেন আপনার নীচের মন্তব্যে, সেটা আমি পড়েছি এবং আমি ক্ষুদ্রজ্ঞানে যা বুঝি, সেহিসেবে কিছু বলেওছি ওখানে গতকাল।
        ঝগড়ার ভয়, ওটা আন্তরিকতার মনোভাব থেকে বলেছি। অন্য মনোভাব নিয়ে বললে কথাটা বলতামইনা।

      • ছাইরাছ হেলাল

        দশ বারো বছর আগে কী ছিল না ? পঁয়ত্রিশ বছর আমি ঘুস নিয়ে চাকুরী দিতে দেখেছি । এটি চলমান ,এই অর্থে স্বাভাবিক। এ প্রথা চলবে কী চলবে না,না চলতে দিলে সেটি কিভাবে , তা অন্য প্রশ্ন ।
        কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে অতি প্রয়োজনীয় কথাবার্তার সাথে আকামের কথাও বলা
        আছে ।
        ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন’ । রাজনীতি ও দুর্বৃত্তায়ন কিন্তু বিশাল বিরাট আলোচনা ।
        আগে আমাদের জানার চেষ্টা করতে হবে রাজনীতি কী এবং কীভাবে । এরপর
        আসবে দুর্বৃত্তায়ন । ( আমি কিন্তু ভাল জানিনে)

        গণবিস্ফোরণ বলেই তা হয়ে যায় না । আর সে অবস্থা তৈরি হয়েছে এমন মনে করারও কারণ নেই । যদি ধরে নেই গণবিস্ফোরণ হবে , তবে তার নেতা কই ?
        যে সামনে নিয়ে যাবে।এজন্য আমি বলি অহেতুক আশাবাদ কিছুই বহন করে না।

        না , ঐ লেখাটি আপনাকে পড়ার জন্য বলিনি ,ওটা মশাইকে দেখতে বলেছি ।
        যদিও ওখানে আমি রাজনীতি নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেছি ।

    • আজিজুল ইসলাম

      জনাব মশাই, যেকোন একটা কারনে আমি সোনেলা-য় ব্লগিং না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। কিন্তু পারলামনা, এখানে রাজনৈতিক কিছু পোষ্ট আসতে শুরু করায়। ব্লগ সঞ্চালককে ব্লগিং না করার মেসেজ দিয়েছিলাম। বিচার, আমার এই গল্পটা আমি লিখেছিলাম গত বছরের রমজান মাসে তারাবীর নামাজের পর শুরু করে সেহরীর সময় শেষ হয় লেখাটা। অবশ্য পরে সামান্য কিছু টুকটাক এডিট করি।
      যা হোক, ব্লগিং বন্দ রাখার ঔ সময়টাতে আমি মনে করতাম আপনার ইমেইল নাম্বার যদি জানতাম, তবে ওটাতে পাঠাতাম লেখাটা আপনাকে। এজন্য যে, লেখাটা নিজে পড়ে আমি নিজেই আপ্লুত হই। মন্তব্যের জন্য নয়, আপনাকে যেকোন কারনেই হোক, ভাল লাগে আমার, তাই আপনাকেও আপ্লুত করার লোভ সামলাতে পারছিলামনা আমি।
      আমি জানি এবং নিশ্চিত যে, ভাল করে পড়ে থাকলে আপনিও আপ্লুত হয়েছেন।
      না, মন থেকে বলছি, আল্লাহ স্বাক্ষী, কিছু বলতে হবেনা আপনাকে। আপনি মন্তব্য এখানে না করলে আমি-ই মন্তব্যে বলতাম ‘জনাব মশাই কিছু বলছেননা যে!’।
      সবাই ভাল থাকবেন।

  • আজিজুল ইসলাম

    জনাব ছাইরাছ হেলালকে-
    আপনি বলেছেন ৩৫ বছর আগেও ঘুষ নিয়ে চাকরী দিতে দেখেছেন। এটা কী একটা একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আজকের এরকম পরিস্থিতির সাথে সেটা মোটেই তূলনীয় নয়।
    রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বলতে বলা হয়েছে, গত ১০/১২ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে যে, রাজনীতিবিদরাই ঘুষ নিয়ে চাকরী দিতে কর্মকর্তাদেরকে ওপেনলী পেশারাইজ করে। যেখানে কোন কর্মকর্তা এধরনের অপকর্ম করলে তাঁদের সেই অপকর্মের জন্য শাস্তি প্রদান করার কথা, সেখানে করছেন এর সম্পূর্ন বিপরীত।
    গণবিস্ফোরণের অবস্থা দেশে তৈরী হয়েছে, অথচ আপনি বলছেন, হয়নি। আপনার সাথে আমি ডিফার করি এটা। দেশের পরিস্থিতি আর কতো খারাপ হলে বলা যাবে, গণবিস্ফোরণের মতো পরিস্থিতি হয়নি!
    আর নেতা! গণজাগরণ মঞ্চ শুরু হতে সময় লাগেনি কিন্তু হেলাল ভাই।গণজাগরণ মঞ্চ সুশাসনের মঞ্চ হবে, সেদিন খুব দুরে নয় ভাই।
    আপনি অহেতুক আশাবাদ বললেন, এজন্য কথাগুলো বললাম। আপনার সাথে আমি আর তর্ক করবনা, আপনি যা-ই বলেন না কেন। এ-ই শেষ।
    আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

    • ছাইরাছ হেলাল

      আলোচনা এবং তর্ক এক করে ফেললে কেমন করে কী হবে ?
      তবে আমিও বলি এখানেই শেষ ।

      ‘ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বলতে বলা হয়েছে, গত ১০/১২ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে ‘

      আপনার এ কথার সাথে কঠিন দ্বিমত পোষণ করি। এর আগে আমাদের এখানে বা অন্যত্র ন্যায় রাষ্ট্র অধিষ্ঠিত ছিল ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয় না।(আমার জানার ত্রুটি থাকতেই পারে ।)

      হরপ্পায় (সিন্ধু সভ্যতা)পাওয়া নিদর্শনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদেরও প্রভূত্বপরায়ণতার প্রমাণ পাওয়া যায় । সাথে দাস প্রথার ও ছিল।এটি চার হাজার বছরের পুরোন প্রায় । কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন প্রমাণ স্পষ্ট । এটি দু’হাজার বছরের পুরোন প্রায় ।

      মুক্তিকামী সাধারণ মানুষের অসাধারণত্ব কে পুঁজি করে প্রতারণা করা হয়েছে তাঁদের সাথে মঞ্চ বানিয়ে। নেতাদের মচমচে রমরমা কাহিনী বের হয়ে গিয়েছে , আমি এটিকেও দুর্বৃত্তায়ন বলি ।

      অতএব সুশাসনের মঞ্চ বলেন বা অন্য কিছু বলেন , আশার আলো দেখান বেশ কঠিন ।

      গুড গভর্নেসের প্রত্যাশা আমিও করি অনেক বেশি ।
      ধন্যবাদ ।

      • মশাই

        আপনার এই আশার মাঝে কিভাবে নিরাশারর প্রবেশ করাবে তার ট্রেনিং ও সরকারের জানা আছে। আমজনতা আশা বুকে বাধবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার যে কোন প্রতিফলন দেখা যাবে না সেটাও সত্যি।

      • আজিজুল ইসলাম

        “আপনার এই আশার মাঝে কিভাবে নিরাশারর প্রবেশ করাবে তার ট্রেনিং ও সরকারের জানা আছে। আমজনতা আশা বুকে বাধবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু তার যে কোন প্রতিফলন দেখা যাবে না সেটাও সত্যি।”
        প্রিয় মশাই, নিরাশার প্রবেশ ঘটানোর সরকারী ট্রেনিং-ই সবশেষ কথা নয়। পৃথিবীর দেশে দেশে তাহলে আন্দোলন সফল হয় কেন? ব্যর্থ -ও হয়। সফল-ও কী হয়না? তবে কেন ধরে নিচ্ছেন যে, আমজনতার আশার কোন প্রতিফলন দেখা যাবেনা?
        আপনাকে তো আমি এরকমভাবে জানতামনা। যাক্, অল্পদিনে আর কতটুকুই চেনা যায় আর মানুষকে, বিশেষত: ব্লগিংয়ে!
        আপনারা সবাই ভাল থাকবেন। আসলে ভারতে নক্সালবাড়ী আন্দোলনের ২য় ব্যক্তি ছিলেন আজিজুল হক নামের হাড্ডিসার এক ব্যক্তি। এ আন্দোলনের নেতা ছিলেন চারু মজুমদার। নাকে সংযূক্ত এক নল দিয়ে তিনি স্বাস নিতেন। জেলে তার নাকের নলটা খুলে নিয়ে মেরে ফেলা হয় তাঁকে।
        যাহোক্, তাঁর সেকেন্ড ম্যান আজিজুল হককেও বার বার জেলে নেয়া হয় এবং মারতে মারতে একেবারে কাহিল করে ফেলা হয় তাঁকে। একবার তাঁর এক সাক্ষাৎকার নেয়া হয় এক পত্রিকা কর্তৃক। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশটি হোল এরকম- ‘আমি ভারতবর্ষের শোষিত-নিপীড়িত কোটি কোটি মানুষের পক্ষে কথা বলে যাব চিরদিন, যতই আমার উপর অত্যাচার হোক-না-কেন, তারা আমার কন্ঠ কোনদিন স্তব্ধ করে দিতে পারবেনা। আমি ওদের মধ্যরাতের পাহারাদারের মতো ভূমিকা পালন করে যাব প্রতিনিয়ত, আসলেই আমি যে ওদের পাহারাদার।’
        নক্সালবাড়ীর আন্দোলন আমি সমর্থ ন করিনা, কারন ওটা শ্রেণিশত্রু অর্থাৎ সামন্ত প্রভুদের খতমের রাজনীতি। আমি সবরকম খতমের রাজনীতির প্রচন্ড বিরোধী। তবে আজিজুলের কথাগুলো আমার মনে দাগ কেটে রেখেছে। হয়ত এজন্যই রাজনীতি আমার মনে বিরাটভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে।
        এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে রাজনীতি প্রভাব বিস্তার করে থাকে মানুষের এবং কিছু কিছু ব্যক্তি তার নিজের ক্ষয়-ক্ষতির দিকটা মোটেই আমলে না নিয়েই এগিয়ে চলে বুকে প্রচন্ড সাহসকে ধারন করে দৃঢ়চিত্তে।

  • মশাই

    লেখাটি আমি অফলাইনে পড়েছি, কিন্তু কি বলব তা বুঝতে পারছিলাম না বলে চুপ করেই ছিলাম, সময় এমনি হয় যখন কিছুই বলার থাকে না তখন নীরবতাই হয় একমাত্র অবলম্বন। লেখক আশা মোতাবেক তার স্বপ্নের সময় ফিরে আসুক আমরাও তা চাই, সকল মানুষ ঐ দিনটির অপেক্ষায় রয়েছে।

    শুধু আমি নই বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষই “আশা” নামক শব্দটিকে ভুলতে বসেছে হয়তো নির্ভরতা হারিয়ে গেছে বলে। যাইহোক আমি শ্রদ্ধেয় হেলাল ভাইয়া আর আপনার দুজনের বক্তব্য পড়ে সাহস করেই আসলাম। লেখুন, হয়তো লেখা পড়ে একজন হলেও নূতন দিনের স্বপ্ন দেখবে শ্রদ্ধেয় আজিজ সাহেব।

    সালাম জানবেন, ভাল থাকুন, লিখুন নিয়মিত।

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ