দিনের শুরুটা ছিল রোদ্রজ্বল। এখন বেলা হয়েছে, কিন্তু সূর্যের আলোর উজ্জলতা কমে গেছে। আকাশে খন্ড খন্ড মেঘ জমেছে। মেঘগুলো বাতাশে ভেসে বেড়াচ্ছে। একখন্ড মেঘ সূর্যটাকে অনেকক্ষন আড়াল করে রেখেছে। সূর্যটাও মেঘের আড়াল থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে বার বার।
এটা হচ্ছে বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার আধা বেলা ক্লাস হয়। সপ্তাহের অন্যদিনেত ক্লাসগুলো হয় ফুল টাইম। সকাল ৮ টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪ টায় শেষ হয়। মাঝে আধা ঘন্টার টিফিন বিরোতি থাকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ১২ টার মধ্যেই স্কুল ছুটি হয়ে যায়। মাঝে কোন টিফিন বিরতি থাকেনা।
ঘরের তালা খুলে ভীতরে ঢুকল সবুজ। বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে! পেটের ভীতর চোঁ চোঁ করছে।
হাড়ি পাতিলগুলো তাকে সাজানো রয়েছে, ঠিক আগের মত। সকালে খাওয়ার পরে যেমন রাখা ছিল ঠিক তেমন আছে। কোন পরিবর্তন ঘটেনি। এই সময়ের ভীতরে পরিবর্তন ঘটানোর মত কেউ নেই।
আছে একমাত্র দুষ্ট একটা বিড়াল। ও মাঝে মধ্যে এসে হাড়ি পাতিলগুলো নেড়ে চেড়ে দেখে। মাছ মাংস থাকলে তা চুরি করে খেয়ে চলে যায়। হাড়ি পাতিলগুলো ছিন্নভিন্ন করে রেখে যায়। কিন্তু ও কিছুদিন ধরে আসছে না। হয়ত অন্যকোথাও পোশ মেনেছে। সেখানে হয়ত ভাল খাবার পাচ্ছে।
সকালেও যে তরকারী, দুপুরেও সেই একই তরকারী।
সব্জি আর ডিম একই সাথে রান্না করা। সকালে রান্না করা হয়েছিল। সকালে গরম গরম খেতে ভালই লেগেছিল, কিন্তু এখন একেবারে ঠান্ডা। তাই খেতেও ভাল লাগছেনা। তারউপরে তরকারীতে ঝাল কম হয়েছে, আরেকটু ঝাল থাকলে হয়ত একটু স্বাধ লাগত।
সন্ধ্যার একটু আগেই সবুজের বাবা ফিরে এল। কাজ শেষে প্রতিদিন এরকম সময় বাড়ি চলে আসে সে।
-স্কুলে গিয়েছিলে?
-হ্যা।
এই প্রশ্নটা প্রায় প্রতিদিনই করে সবুজের বাবা। সে জানে সবুজ ঠিক মত স্কুলে যায়। তারপরেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবুজের কাছে প্রশ্ন করে জেনে নেয়।
প্রতিদিন একই প্রশ্ন করার আরো একটা কারন হতে পারে। কথা বলার মত আর কোন বিষয় থাকেনা বলে এই প্রশ্নটা করে শুধু মাত্র। হয়ত কথা বলার মত আর কোন কিছু খুজে পায়না সে।
-আজকেতো আধাবেলা ক্লাস হয়েছে?
-হুম। মাথা নেড়ে জবাব দিল সবুজ।
সবুজ আর কোন কথা বলছেনা দেখে ওর বাবাও চুপ করে গেল। আধা ময়লা আধা পরিস্কার হাড়িতে করে ভাত চাপিয়ে দিল চুলোয়। চুলোর ভিতর কাঠ পোড়ার কট কট শব্দ হতে লাগল। আগুন মাঝে মাঝে তীব্রভাবে জ্বলে উঠছে, আবার হঠাৎ করে নিভে যাচ্ছে। তখন চোঙায় ফুঁ দিয়ে আবার আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে সবুজের বাবা।
বাবাকে এভাবে প্রতিদিন রান্না করতে দেখে মনে মনে কষ্ট লাগে সবুজের। সেই সকালবেলা উঠে রান্না করতে হয় তাকে। তারপর সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরে। বাড়ি এসেও বিশ্রাম নেই তার। রাতের খাবার রান্না করতে লেগে যায় সে।
সবুজ রান্না ঘরে গিয়ে বাবার পাশে দাড়ায়।
-আমি রান্না করি বাবা।
-না থাক, তুই পারবি না।
-পারব বাবা, তুমি যাও।
সবুজের বাবা ছেলের দিকে একনজর তাকিয়ে বলে,
আচ্ছা, আমি তাহলে গোছল করে আসি, তুই রান্না কর।
-ঠিক আছে। মাথা নেড়ে জবাব দেয় সবুজ।
সবুজের বাবা গোছল করে আসে। কাজ করলে দিনে দুইবার গোসল করতে হয় তাকে। দুপুরে একবার আর সন্ধ্যার পরে একবার। কাজ শেষে গায়ে প্রচুর ধুলো জমে যায় তার। তাই দুইবার গোসল করতে হয় তাকে।
সবুজ একটা বেসরকারি স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। ৮ বছর বয়সে ওর মা হঠাৎ একটা দুর্ঘটনায় মারা যায়। সবুজের বাবাকে অনেকে বলেছিল আরো একটি বিয়ে করার জন্য। কিন্তু সবুজের বাবা তা করেনি। সৎ মা তার ছেলেকে হয়ত ভাল বাসবে না। তখন হয়ত কষ্ট পাবে ছেলেটা। ছেলের কথা চিন্তা করে দ্বিতীয় বিয়ে করেনি সবুজের বাবা। আর একারনে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রতিদিন ছেলের জন্য রান্না করা, ঘর বাড়ি পরিস্কার রাখা ইত্যাদি। অর্থাৎ মহিলার সব সাংসারিক কাজ তার একারই করতে হয়েছে। ছেলেকে এসব কাজে হাত দিতে দেয়নি সে। সে শুধু চায় ছেলেকে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষ করতে, এতেই তার শান্তি।
তবে সবুজের বাবার কষ্ট আগের চেয়ে একটু কম হয়। কারন সবুজ মাঝে মাঝে তাকে কাজে সাহায্য করে। মাঝে মধ্যে রান্নাবান্না করে, ঘর বাড়ি পরিস্কার করে। আগে ছোট ছিল, তাই এসব কাজ করতে পারত না সজীব। এখন একটু বড় হয়েছে, অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে। বাবার কষ্টগুলো সে অনুভব করতে পারে। তাই বাবার কাজে সাহায্য করতে চায় সে।
কিন্তু তার বাবা চাইত না তার ছেলে কোন কাজ করুক। বরং চাইত ছেলে শুধু লেখাপড়াই করবে। কোন কাজ করতে গেলে লেখাপড়ায় ক্ষতি হবে তার।
কিন্তু সবুজ তা শুনতো না। বরং বাবার কষ্ট হবে ভেবে বাবার সব কাজে সাহায্য করতে চায় সে।
সবুজের বাবা একজন দিনমজুর মানুষ। দিন আনে দিন খায় আর ছেলেকে পড়াশুনা করায়। তাতেই তার মোটামুটি চলে যায়। মোটামুটি চলতে পারলেও খারাপ কিশে? ছেলেটাতো লেখা পড়া শিখছে, মানুষ হচ্ছে। অনেকলেখাপড়া করবে। ভাল চাকরি করবে, টাকা আয় করবে, তখন সময় অনেক ভাল কাটবে। জীবনে এটুকু আশা সবুজের বাবার।
সবুজ এস এস সি পাশ করল। মোটামুটি ভাল রেজাল্ট হয়েছে তার। সবুজের বাবা তাতেই খুশি। মা মরা ছেলে পাশ করতে পেরেছে, সেটা কম কিশে। তাছাড়া রেজাল্টতো আর খারাপ না, মোটামুটি ভাল রেজাল্ট। এবার মোটামুটি করলেও সামনের পরিক্ষায় আরো ভাল রেজাল্ট করতে পারবে সবুজ। সবুজের বাবার সে বিশ্বাস আছে।
সবুজ কলেজে ভর্তি হবে, তার অনেক উৎসাহ। তার বাবাও খুব আনন্দিত। অপেক্ষা করতে লাগল ভর্তির তারিখের জন্য। ভর্তির তারিখ পড়লেই একটা ভাল কলেজে ভর্তি হবে সবুজ।
একদিন সবুজের বাবা কাজ করার সময় একটা বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পড়ে যায়। মাথায় আর চোখে মারাত্বক আঘাত লাগে । চোঁখদুটো নষ্ট হয়ে যায়। ডাক্তার দেখানোর পর ডাক্তাররা বলে দিয়েছে চোঁখের চিকিৎসা করতে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা যোগাড় করা সবুজের বাবার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না।
কলেজে ভর্তির তারিখ পড়ল। সবুজ বলল,
-বাবা আমি আর পড়াশুনা করব না, চাকরী করব।
-কি বললি! সবুজের বাবা অবাক হয়ে বলল।
সবুজ বলল, এখন পড়াশুনার খরচ কোথা থেকে চালাবে তুমি?
সবুজের বাবা শান্ত গলায় বলল, ও একভাবে চলে যাবে, তুই পড়াশুনা বন্ধ করিশ না। কলেজে ভর্তি হয়ে যা।
সবুজ বুঝতে পারল না কিভাবে চলবে সব কিছু। খাবার খরচ লেখা পড়ার খরচ কিভাবে চলবে?
সবুজের বাবা বলল, দরকার পরলে লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোট খাট কোন চাকরী করবি অথবা টিউশনী করাবী তাতেই আমাদের চলে যাবে।
সবুজ বাবার শেষ সম্বল দিয়ে কলেজে ভর্তি হয়ে গেল। কয়েকটা টিউশনী গুছিয়ে পড়াতে শুরু করল। লেখাপড়া আর সংসার মোটামুটি চলে যেতে লাগল।
সবুজ সকালে উঠে রান্না করে। তারপর কলেজে যায়। বিকেলবেলা টিউশনী করে গ্রামে গ্রামে। টিউশনীর বেতন কম হলেও মোটামুটি চলে যায়।
টিউশনী করিয়ে রাতে বাসায় আসে। রান্না বান্না করে। ঘর বাড়ি পরিস্কার করে।
রান্না ঘরের টুংটাং শব্দে ঘুম ভেংগে গেল সবুজের। সবুজ দেখল তার অন্ধ বাবা রান্না ঘরে হাতরে হাতরে রান্না করছে। সবুজ অবাক হল।
-একি করছ বাবা?
-রান্না করছি। ভাত রান্না হয়ে গেছে, এখন তরকারী রান্না করব।
-বাবা, তুমি রান্না করতে গেলে কেন, তুমি অসুস্থ মানুষ। চোঁখে দেখতে পাওনা।
-তাতে কি হয়েছে, আমি আন্দাজেও অনেক কাজ করতে পারি।
-তুমি কোন কাজ করতে পারবে না বাবা, সব কাজ আমি করব।
-তোরযে কষ্ট হবে?
-আমার কোন কষ্ট হবেনা বাবা। আমি একাই সব কাজ করতে পারব।
মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় সবুজের। সবুজের বাবা অনেক ভোরে ওঠে ঘুম থেকে। হাতরে হাতরে রান্না ঘরে চলে যায় সে। তারপর হাতরে হাতরে ভাত তরকারী রান্না করে ফেলে।
সবুজ যখন ঘুম থেকে উঠে দেখে তার বাবা রান্না করে রেখেছে, তখন রেগে যায় সবুজ।
-বাবা কতবার বলেছি, তোমার রান্না করতে হবেনা। রান্না আমি করিব।
-তোরযে কষ্ট হয়। কত কষ্ট করে লেখা পড়া করিশ, টিউশনী করিশ। আমি যদি তোকে একটু সাহায্য করি খারাপ কিশে?
-দরকার নেই বাবা, আমি সব পারব।
তারপরেও কে শোনে কার কথা। সুযোগ পেলেই সবুজের বাবা রান্না করে, মাঝে মাঝে হাতরে হাতরে ঘর বাড়ি পরিস্কার করে। হাজার নিষেধ করলেও শোনেনা সবুজের বাবা।
-আচ্ছা বাবা, তুমি চোঁখে দেখতে পাওনা এতে তোমার কেমন লাগে?
-অন্ধ হলে যেমন লাগার কথা তেমন লাগে।
-খারাপ লাগেনা?
-লাগে।
-কেমন খারাপ লাগে?
-এই সুন্দর পৃথিবীটা দেখতে পাচ্ছিনা, শুধু অন্ধকার দেখাচ্ছে।
-আর?
-আর তোকে দেখতে পাচ্ছিনা।
-আর?
আর তোর কলেজের বই পত্রগুলো উল্টে পাল্টে দেখতে পারছিনা, তোর হাতের লেখা দেখতে পাচ্ছিনা।
-তোমার কি আবার আগের মত দেখতে ইচ্ছা করেনা?
-দেখতেতো ইচ্ছা করে, কিন্তু লাভ কি? চিকিৎসা করাতে অনেক টাকা লাগবে। অত টাকা আমরা কোথায় পাব?
সবুজের ভাবতে অবাক লাগে, টাকা না থাকার কারনে তার বাবা এখন অন্ধ। টাকার অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারছে না সে। শুধু টাকা না থাকার কারনেই তার বাবা পৃথিবীর আলো থেকে বঞ্চিত। হায়রে টাকা! তুই এত নিষ্ঠুর! তুই না থাকার কারনে আমার বাবা আজ অন্ধ। তোকে কামাই করতে গিয়েই আমার বাবা অন্ধ হয়েছে। হায়রে টাকা! তোর এত ক্ষমতা!
এইচ এস সি পরিক্ষায় পাশ করে সবুজ। রেজাল্ট এস এস সি পরিক্ষার চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। সবুজের বাবা আনন্দে আত্মহারা। ছেলে পরিক্ষায় পাশ করেছে, তাও আবার রেজাল্ট ভাল করেছে, এর চেয়ে খুশির খবর আর কি হতে পারে?
এইচ এস সি পাশ করার পর সবুজ শহরে আসল। যদিও তার অন্ধ বাবাকে একা ফেলে আসতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু সে এটাকে ঠিক কাজ মনে করেছে।
শহরে এসে চাকরী খুজতে লাগল সবুজ। কিন্তু চাকরি পাওয়া কি এত সহজ। কোথাও কেউ চাকরী দিতে চায় না। যেখানেই যায়, বলে পোস্ট খালি নাই, অথবা টাকা লাগবে চাকরি পেতে হলে। অনেক খুজেও কোন চাকরি জুটল না। বাধ্য হয়ে দিন মজুরি শুরু করে দিল সবুজ। দিন মজুরিতে হাড় ভাংগা পরিশ্রম। হাড় ভাংগা পরিশ্রম করে টাকা আয় করতে লাগল সবুজ। বাবাকে মাসে মাসে টাকা পাঠাতে লাগল।
মাঝে মাঝে বাড়ি আসে সবুজ।
-বাবা তোমার খাওয়া দাওয়া করতে কষ্ট হয়নাতো?
-না।
-রান্না করতে তোমার অনেক কষ্ট হয়?
-আরে বোকা না। চোখ নষ্ট হলে কি হবে, হাতপাতো ভাল আছে, নাকি?
-ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করত?
-হ্যা। সবুজের বাবা ছোট ছেলেদের মত মাথা নাড়ে।
যদিও সবুজ জানে, তার বাবা ঠিক মত রান্নাও করেনা আর খাওয়া দাওয়াও করেনা। হয়ত দু বেলা খায় এক বেলা না খেয়ে থাকে। কখনও রান্না করে কখনও করেনা। অন্ধ মানুষ, রান্না করে খাচ্ছে এটাই বেশি। রান্না করতে কতই না কষ্ট হচ্ছে সবুজের বাবার। কিন্তু কিছুই করার নেই সবুজের।
-তোর লেখা পড়া কেমন চলছে?
-ভাল।
-আমি চাই তুই একদিন লেখাপড়া করে অনেক বড় মাপের মানুষ হবি। আর কয়দিন- এখন বিএ পড়ছিস, কদিন পরে মাস্টার্স পড়বি…লেখা পড়ারতো আর শেষ নেই। তখন আমার কত ভাল লাগবে! আমি বলব আমার ছেলে অমুক পাশ, তমুক পাশ..
সবুজ কোন কথা বলেনা। উচ্ছাস নিয়ে কথা বলার অধিকার আর নেই সবুজের। ও শুধু ভাবে বাবার কথা। অন্ধ মানুষ, কি রান্না করে আর কি খায়, তার কোন ঠিক নেই। খাবারের ভীতর কোন পোকা মাকড় এসে পড়লেওতো দেখতে পাবেনা। সোজা পেটের ভীতর চলে যাবে।
সবুজ কয়েকবছর দিন রাত হাড় ভাংগা পরিশ্রমের পর বেশ কিছু টাকা গোছাতে সক্ষম হয়। এবার তার স্বপ্ন পূরন হওয়ার পথে। এবার সে তার বাবাকে চিকিৎসা করাবে। চিকিৎসা করিয়ে বাবার চোখ ভাল করে তুলবে, চোখের আলো ফিরিয়ে দেবে। এটাই সবচেয়ে আনন্দের।
সবুজ শহর থেকে বাড়ি আসল।
-বাবা খুশির খবর?
-কি?
-তোমার চোখের চিকিৎসা করাব। তোমার চোখ ভাল হয়ে যাবে।
-টাকা কোথায় পাবি?
-টাকা জোগাড় করে ফেলেছি।
-এত টাকা কই পেলি?
-টিউশনী করে জোগাড় করেছি।
-তাই বলে এত টাকা টিউশনীতে।
-শহরে টিউশনী করলে বেশি টাকা পাওয়া যায়।
-টিউশনী করতে গিয়ে তোর লেখা পড়ার ক্ষতি হয়নিতো?
-না বাবা। কোন ক্ষতি হয়নি।
সবুজের বাবার চোখের চিকিৎসা হল। চোখ ভাল হয়ে গেল তার। এখন সে পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছে। পৃথিবীটা তার কাছে সুন্দর লাগছে।
বাবার আনন্দ দেখে সবুজও আনন্দ পায়। আনন্দে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। চোখের এই পানি সাফল্যের পানি। হাড় ভাংগা পরিশ্রমের সাফল্য। যা শুধু সবুজই জানে।
বাবার চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়ে কিছুদিন পরে সবুজ আবার শহরে চলে গেল।
তার সহজ সরল বাবা জানে ছেলে শহরে লেখা পড়া করছে। লেখা পড়া শিখে অনেক বড় মাপের মানুষ হবে তার ছেলে।
আর সবুজ জানে, তার বাবা একদিন সত্য ঘটনাটা জেনে যাবে। আর সেই দিনটিই হবে সবুজের জন্য সবচেয়ে খারাপ দিন।(সমাপ্ত)
৬টি মন্তব্য
শিশির কনা
বাবাকে নিয়ে লেখা গল্পটি ভাল লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
ভালো হয়েছে।
আরো লিখুন এমন লেখা
লীলাবতী
ভাল লেগেছে ভাইয়া।
ব্লগার সজীব
বাবা না জানুক সত্যি ঘটনা।কিছু ঘটনা না জানাই ভাল।ভাল লিখেছেন ভাই।
শুন্য শুন্যালয়
খুব ভালো লেগেছে। বাবার জন্য সন্তানের আবেগ ফুটে উঠেছে লেখাতে। বাবা-মায়ের স্যাক্রিফাইসের মূল্য দেয়া উচিত সকল সন্তানকে।
স্বপ্ন
সত্য ঘটনাটি না জানুক বাবা কোনদিন।ভাল লেগেছে ভাইয়া।