প্রথম যেদিন জুটিটিকে দেখি, চোখ যেন আর সরছিলো না! দারুণ হ্যান্ডসাম এক সুদর্শন যুবক, থ্রী কোয়াটার ট্রাউজার আর সুন্দর একটি টিশার্ট পরিহিত রিসিপসনের সামনে দাঁড়িয়ে। সঙ্গে বড় বড় কয়েকটি সুন্দর বক্স। চেহারায় শান্ত, সৌম্য, ভদ্রভাব। আর তাঁর সাথে আসা চটপটে একটি মেয়ে ৪০/৫০ টা ওয়ানটাইনইউজ লাঞ্চবক্স বুঝিয়ে দিচ্ছে রিসিপসনে।
যুগলের আচরণ, অভিব্যক্তি, প্রকাশভঙ্গী, কথাবার্তার সঙে যুগের পর যুগ ধরে দেখে আসা এদেশের গড়ে উঠা নাগরিক জীবনের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে কিছুই যেনো মিলছিলো না! স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছিলো তারা শিক্ষা এবং দীক্ষায় অনেক উঁচুতে অবস্থান করছেন। কিন্তু অই যে বললাম, যুগের পর যুগ ধরে দেখে আসা দৃষ্টিতে কোথায় যেনো চোখ আটকে যাচ্ছে। অথচ তাঁরা কিনা এখন থেকে আমাদের অফিসে নিয়মিত দুপুরের খাবার সরবরাহ করবেন।
প্রায় প্রতিটা বড় অফিসেই দুপুরের লাঞ্চ সাপ্লাই দেয় কিছু প্রতিষ্ঠান। শহরে যত্রতত্র গড়ে উঠা এসব লাঞ্চ সাপ্লাইকারীদের সাথে এদের কোনরকম হিসাবেই মেলাতে পারছিলাম না। না তাদের আচরণে, না তাদের খাবার পরিবেশনের ধরণে, না খাবারের মানে। আমার প্রতিষ্ঠানে লাঞ্চের (এমপ্লয়ী এবং কোম্পানীর যৌথ কন্ট্রিবিউশনে) ব্যবস্থা থাকলেও আমিসহ বেশ কয়েকজন বাড়ির খাবার খেতাম। এই ব্যবস্থাটা চালু হয়েছে গত প্রায় ৬/৭ বছর। প্রথমদিকে আমরা ২/৩ জন ছাড়া বাকী সকলেই (১০০/১১০ হবে) অফিস থেকে সরবরাহ করা খাবার খেতো। আমার বরাবরই বাইরের খাবারে আপত্তি থাকায় নিজেকে কখনোই তালিকাভুক্ত করিনি। পরবর্তীতে দেখা গেলো আস্তে আস্তে সে সংখ্যাটা কমে আসছিলো। কেবল উপায়ন্তর নেই যাদের, তারাই শেষ অবধি টিকে ছিলো। এরকম পরিস্থিতিতে বর্তমানের স্বামী-স্ত্রী যুগলের পরিবেশনায় একেবারে ঘরোয়া মেজাজে, উপাদেয় ব্যালেন্সফুড এবং রুচিশীল ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশনায় খাবারের মান দেখে সবাই আবার ঘর থেকে বহন করে আনার ঝামেলা এড়াতে অফিসের খাবারেই ফিরে আসতে শুরু করেছে। আমিও নিজেও এখন তাদের রান্নার স্বাদ নিতে প্রায় বৃহশপতিবারে আলাদা অর্ডার (তালিকাভুক্ত নই বলে) করে খাই। নিঃসন্দেহে খাবারটা রুচিসম্মত এবং মানসম্মত বলেই।
অই অর্ডার করতে গিয়ে ফোনে কথোপকথন থেকে জানলাম, তাঁরা (বিশেষ করে মেয়েটিই) চ্যালেঞ্জিং জেনেই এই স্বাধীন পেশায় নেমেছেন। আরও কয়েকটি অফিসে দিচ্ছেন, তবে বড় পরিসরে আমাদের অফিসেই। ইচ্ছা আরও স্প্রেড করার। কথা বলতে বলতে তাদের একাডেমিক কোয়ালিফিকেশন এবং পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড শুনে যারপর নাই বিস্মিত হয়েছি এবং পাশাপাশি পুলকিতও হয়েছি।
আর ভাবছি, পুরোনো ধারা ভেঙে এগিয়ে আসছে তরুণ-তরুণীরা। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ। আমার বাংলাদেশ!
ধারা ভাঙার এই যুগলের জন্য শুভকামনা রইলো। তাদেরকে নিয়ে আরও কিছু বলার আছে আমার। আজ এটুকুই।
৭টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
চাকরীর চাকরের থেকে সেলফ ব্যাবসা অনেওক ভাল। এখানে শিক্ষা বড় সুবিধা যে তাঁরা জেকন অফিসে প্রবেশ সহজ হবে।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ঠিক বলেছেন মজিবর ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ আপু।
নীলাঞ্জনা নীলা
এমন ব্যাবসা সিনেমায় দেখেছি। বাস্তবে এই প্রথম শুনলাম আপনার মুখে।
আমি চাই আরোও মানুষ এগিয়ে আসুক।
রুবা’পু বহুদিন পর তোমার লেখা। ভালো লাগলো।
ভালো থেকো।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
হ্যাঁ নীলাঞ্জনা, বহুদিন পর। কেমন আছো তুমি?
এখন মানুষের মনমানসিকতায় বিপরীতমুখী পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কেউ সামনের দিকে এগুচ্ছে, কেউ পিছনের দিকে হাঁটছে। অগ্রপথিকদের দেখলে ভাল লাগে। আশায় দুলে উঠি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো আছি রুবা’পু।
তোমার ধারাবাহিকটা কি আর দেবেনা?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
আজকাল এগুলো মানুষের উপর কোন প্রভাব ফেলে না গো নীলাদি। আর পড়েও না। ষোলআনা নষ্টদের দখলে চলে গেছে দেশটা।
কষ্ট করে টাইপ করে আর কি-ইবা হবে!