সূর্য অস্তাচলগামী, আমরাও তাজমহলের দরজায় হাজির। অনেকক্ষণ থাকব, রাত দশটা পর্যন্ত দরজা খোলা থাকে, তারপর দারোয়ান সাহেবরা এসে ঘন্টা দিয়ে জানিয়ে দিবে সময় হয়ে গেছে। তাজকে ত্যাগ করতে হবে, রাতের জন্য। আমরা বসে পড়লাম, একটা জায়গা বেছে নিয়ে কয়েকজন নামাজ পড়তে গেলেন। আজানের ধ্বনি কানে এসেছে। পাকিস্তান হওয়ার পরও আজান হয় কি না জানি না। এই দিনে অনেক লোক দেশ-বিদেশ থেকে এসেছে। বাঙালি, মারাঠি, পাঞ্জাবী-মনে হল ভারতবর্ষের সকল জায়গার লোকই এসেছে। আমাদের পথপ্রদর্শককে জিজ্ঞাসা করলাম, এত ভিড় কি সকল সময়ই থাকে? বললেন, না, পূর্ণ চন্দ্রের সময়ই অনেক লোক বিশেষ করে আসে। সূর্য যখন অস্ত গেল, সোনালি রঙ আকাশ থেকে ছুটে আসছে। মনে হল, তাজের যেন আর একটা নতুন রুপ। সন্ধ্যার একটু পরেই চাঁদ দেখা দিল। চাঁদ অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে আর সাথে সাথে তাজ যেন গোমটা ফেলে দিয়ে নতুন রুপ ধারণ করেছে। কি অপূর্ব দেখতে! আজও একুশ বৎসর পরে লিখতে বসে তাজের রুপকে আমি ভুলি নাই, আর ভুলতেও পারব না। দারোয়ান দরজা বন্ধ করার পূর্ব পর্যন্ত আমরা তাজ মহলেই ছিলাম।
পরের দিন সকালবেলা আমাদের যেতে হবে ফতেহপুর সিক্রিতে। চৌধুরী সাহেব একটা মোটর বাস ঠিক করেছিলেন। ফতেহপুর সিক্রি ও সেকেন্দ্রা দেখে বিকালে ফিরে আসব এবং রাতেই আমাদের রওয়ানা করতে হবে তুন্দলার পথে। তুন্দলা একটা জংশন। দিল্লি থেকে তুন্দলা হয়ে ট্রেন হাওড়া যায়। হাওড়াগামী ট্রেন ধরা হবে। সকালবেলায় মোটর বাস এসে হাজির। আমরা তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে গাড়িতে চেপে বসলাম। চৌধুরী সাহেব এলেই গাড়ি ছেড়ে দিল। মাত্র আটাশ মাইল পথ; কত সময়ই বা লাগবে! মোগলদের স্থাপত্য শিল্পের গল্প করতে করতেই আমরা এসে পড়লাম ফতেহপুর সিক্রিতে। আকবর বাদশা নিজেই ফতেহপুর সিক্রি নির্মাণ করেছিলেন। এখানে সম্রাট আকবর তাঁর রাজধানী করেছিলেন। আগ্রার দুর্গের সাথে এর বিশেষ পার্থক্য ছিল না। তবে ফতেহপুর সিক্রি অনেক বড়। এই ফতেহপুর সিক্রির সামনেই যে বিরাট ময়দান দেখা যায় এর নামই খানওয়া। এখানেই সম্রাট বাবর সংগ্রাম সিংহকে পরাজিত করে ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। কেন যে আকবর বাদশা এখানে দুর্গ তৈরি করেন তা বলা কষ্টকর। এ বিষয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকের বিভিন্ন মত। আমরা আগ্রা গেট পার হয়ে ভিতরে এলাম, সামনে বুলন্দ দরোজা। এটাই হল দুর্গের প্রধান গেট। একশত চৌত্রিশ ফিট উঁচু বুলন্দ দরোজা পার হয়েই আমরা প্রথম দেখতে পেলাম সেলিম চিশতীর দরগাহ। তাঁর মাজার জিয়ারত করে আমরা দুর্গের ভিতর প্রবেশ করব। দরগাহ জিয়ারত করলাম।
অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবুর রহমান। (পৃষ্ঠা নং-৫৯)
১০টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ইতিহাস অধ্যায় ভাল লাগ্ল আপু।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধন্যবাদ ভাইয়া।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনাকেউ ধন্যবাদ।
ইঞ্জা
তাজমহলের রুপ দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, বেশ অপরুপ দেখতে চাঁদের আলোয়।
অসাধারণ লিখে চলেছেন আপু, শুভকামনা।
মারজানা ফেরদৌস রুবা
ধৈর্য নিয়ে লিখছি ঠিক, চিন্তা করেছি পর্ব ৫০ এর পরে কিছুদিন গ্যাপ দেবো।
পাঠক প্রিয়তা কেমন তাও তো বুঝা যায় না। বড় বই পড়বে না বলেই অল্প অল্প করে দেয়ার উদ্যোগটা নিয়েছিলাম।
ইঞ্জা
লিখে যান আপু, আমার মনে হয় সবাই পড়ে কারণ আমরা অনেকেই আছি যা আপনার লেখা থেকে অনেক কিছুই জানছি, শুভকামনা রইল। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
তাজের তুলনা তাজই।
কিন্তু মমতাজকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছিলেন শাহজাহান। পড়েছিলাম শাহজাহান খুব বেশী আভিজাত্য দেখাতে ভালোবাসতেন। ভালোবাসার কথা এলেই তাজমহলের নাম আসে। আসলে কি ভালোবেসে তাজমহল তৈরী হয়েছিলো?
চলুক আপু। এতো দেরী করে করে কেন পোষ্ট দিচ্ছো তুমি রুবা’পু?
মারজানা ফেরদৌস রুবা
এটা তো ধারাবাহিক প্রতি শনিবারের পোস্ট রে দিদি।
হ্যাঁ, আমিও মমতাজ সম্বন্ধে এমনটা শুনেছি।
নীলাঞ্জনা নীলা
যাক শনিবার যখন, তখন বেশ হবে। ডাক্তারের কোনো এপয়েন্টমেন্ট থাকেনা। \|/ 😀
জিসান শা ইকরাম
নিয়মিত লিখে যাচ্ছেন বলে কৃতজ্ঞতা,
সমস্ত পর্ব লেখা সম্পন্ন হলে এটি পিডিএফ আকারে সংরক্ষণ করার জন্য অনুরোধ করছি ব্লগ কর্তৃপক্ষকে।
ধন্যবাদ আপনাকে।