
(এক)
বইয়ের নাম “প্রেমরসের কাব্য” দেখে বইমেলা থেকে বইটি কিনেছিলাম। পড়ার পরে মনে হচ্ছে লেখক হয়তো মর্গের ডাক্তার ছিলেন যিনি নারীদেহের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে কবিতা লিখেছেন।
(দুই)
বইমেলায় বন্ধুপত্নীকে নিজের বই উপহার দেয়ায় বন্ধুটি গত তিনবছর আমার সাথে কথা বলেনি যা পরে জেনেছি। অথচ দু’জনেই আমার ক্লাসমেট ছিলো।
এবারের বইমেলায় সেই বন্ধুর প্রকাশিত ‘অরণ্যের তিনটি কাঠগোলাপ’ বইটির নাম দেখে আর কিনতে ইচ্ছে হলোনা। আমি জানি আমার প্রাক্তনকে নিয়ে লেখা বিগত একহাজার পঁচানব্বই দিনের গল্প ছিলো সেটি।
(তিন)
বইমেলার পাশে মরচেধরা ডাকবাক্সটার দিকে তাকাতেই বুকটা হাহাকার করে উঠলো। বই পোষ্ট করতে এসে বইটি বুকে জড়িয়ে ধরে একজন নিজেই ওপারের ঠিকানায় পাড়ি জমিয়ে ডাকবাক্সটার পাশে নীথর শুয়ে আছে!
(চার)
‘ঞ’ নম্বর বগীটা কোনদিকে বলতে পারেন? সেই পরিচিত কন্ঠ! কিছুক্ষণ আগে স্টেশনের বুকস্টল থেকে কেনা ‘তালপাতার সেপাই’ বইটির পাতা থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকালাম।
পনেরো বছর আগে ভার্সিটির প্রথমদিনও সে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো- সমাজবিজ্ঞান অনুষদ কোনদিকে বলতে পারেন? বইমেলায় বই প্রকাশের উদ্দেশ্যে আমাকে প্রুফ দেখে দেয়ার অনুরোধ করতে আসা সেদিন তার হাতে ছিলো এই বইটিরই পাণ্ডুলিপি!
(পাঁচ)
“ভালো বই হোক নিত্যসঙ্গী” এটি সবসময়ই মেনে চলি। কিন্তু পৃথিবীতে এটাই একমাত্র সঙ্গী যাকে অর্থের বিনিময়ে আপন করে পেতে হয়। বই উপহার পাওয়া এখন অমাবস্যার চাঁদের মতন।
(ছয়)
আগে বইমেলায় বই কিনতে গেলে অটোগ্রাফ এবং সেলফী তোলার লোভে আমি প্রথিতযশা লেখকের বই কিনতাম। এখন আর তা করিনা। ইদানিং বইমেলা থেকে আমি নতুন লেখকদের বই বেশী কিনি।
বিখ্যাতরা তাদের অটোগ্রাফ গ্রহণকারীকে ভুলে যায় কিন্তু নতুনেরা আমাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে যেমনটা আমি করি।
(সাত)
তাকে কেন নিজের সাথে বইমেলায় নিয়ে যাইনা এই অভিযোগে প্রতিবছর বইমেলা শুরু হলেই আমাকে প্রেমিকার অভিমানী মুখটি দেখতে হয়।
অথচ নিজের টাকায় বই প্রকাশ করতে হবে বইমেলা এলেই এই বিদগ্ধ অনুভূতি আমাকে আ্যমাজনের এনাকোন্ডা হয়ে গিলতে থাকে।
———
[ছবি- সংগৃহীত]
২১টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
বই প্রকাশ হয়েছে নাকি আপনার?
দুই আর সাত এর খবর বাসায় জানে? 🙂
ভাল্লাগছে পোষ্ট,
শুভ কামনা।
তৌহিদ
না ভাই, এবারেও হলোনা। দেখি সামনের বার। আমরা আমাদের সোনেলা প্রকাশন থেকেই প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ।
লেখকের কথা পাঠকের কান পর্যন্ত গেলেই আমি খুশি। এসব লেখকীয় কথা সিরিয়াসলি নিতে নেই।
ভালো থাকুন ভাই। শুভকামনা জানবেন।
হালিমা আক্তার
খুব ভালো লাগলো নতুন লেখকদের বই কিনে উৎসাহ দেয়ার জন্য |
তৌহিদ
ধন্যবাদ আপু, শুভকামনা জানবেন।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
খুব ভালো লাগলো কথাগুলো, প্রতিটি ঘটনার ক্ষুদ্র পরিসরে বর্ণনায় আমাদের কিছু হীনমন্যতার পরিচয় উঠে আসলো। যেমন ক্লাসমেট হলেও বন্ধুপত্নীকে কিছু উপহার দেয়া যাবেনা, খ্যাতিমানরা সহজেই অটোগ্রাফের কথা ভুলে যায়। নতুনদের জন্য এই পোস্ট অবশ্যই অনুপ্রেরণা জোগাবে।
আগামী বইমেলায় আপনার নিজের বইয়ের প্রকাশের অপেক্ষায় রইলাম।
ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন। শুভ রাত্রি
তৌহিদ
বই নিয়ে এসব অভিব্যক্তি আমার এবং পরিচিত অনেকের একান্ত অনুভব থেকে লিখেছি আপু। এসব প্রায় প্রত্যেকেরই মনের সুপ্ত কথন।
বই বের করার ইচ্ছে আছে। দেখা যাক। শুভকামনা আপনার জন্যেও।
সাবিনা ইয়াসমিন
এক নম্বরটা দিয়েই শুরু করি। এইরকম নামের পাল্লায় আমিও অনেকবার পড়েছি, তারপর কান ধরেছি, আর না, নাম দেখে বই না কিনে অন্তত কয়েক পৃষ্ঠা আগে পড়ে নিই। সময় লাগলে লাগুক, কিন্তু বই কিনে পরে পস্তানো চলবে না।
তিন নাম্বার মনে মনে কল্পনা করলাম, এবং স্পষ্ট দেখতে পেলাম হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি।
পাঁচ- এ-ব্যাপারে অনেক তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই। কেবলমাত্র লেখকের গোয়ার্তমির মুল্য দিয়েছি। আমি বুঝি না নিজের লেখা কেন মানুষ জোর করে আরেকজনকে পড়াতে চায়! তাও মুল্যের বিনিময়েই! বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না, কিন্তু বই উপহার দিলেও কেউ অলেখক হয়ে যায় না।
আপনার বই প্রকাশের অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন সব সময়, শুভ কামনা 🌹🌹
তৌহিদ
পাঠক হিসেবে আপনি অনন্য। প্রায় প্রত্যেক প্যারা বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা সবার থাকেনা।
আপনার মতন আমারও এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। সবমিলিয়ে এই লেখাটি। বই বের করার ইচ্ছে নানাবিধ কারনে মরে যাচ্ছে।
ভালো থাকুন আপু।
রেজওয়ানা কবির
প্রতিটি ঘটনা নিজের মাঝে কল্পনা করলাম,প্রথম ঘটনা আমার সাথে প্রতিনিয়ত ঘটে,তিন নং এ কষ্ট লাগল, চার নম্বরটায় কেন জানি অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করল, ৫ নম্বর আমিও অনেকদিন বই উপহার পাই না, সাত নং আমায় বই মেলায় না নিলে সত্যি অনেক অভিমান হত। ছোট ছোট অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ের পরিনত রুপ ভালো লাগল ভাইয়া, শুভকামনা।
রোকসানা খন্দকার রুকু
কাল থেকে বই উপহার দিতে শুরু করুন,পাবেন।
তৌহিদ
বই উপহার আমিও পাইতে চাই ☺☺
তৌহিদ
আসলে সব ঘটনাই কারো না কারো সাথে মিলে যাবে আপু। জীবন থেকে নেয়া গল্প এমনই হয়।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা জানবেন।
রোকসানা খন্দকার রুকু
বইমেলা মিস করছি। প্রতিবছরই যাই এবার হবে না। নতুনদের বই কেনা রিস্ক। তারপরও কিছুটা জেনেই কিনতে হবে।
তারাতারী আপনার বই আসুক এই কামনাই করি।
তৌহিদ
এবারে মেলায় যাওয়া হবেনা। করোনা পরিস্থিতি খুব খারাপ হচ্ছে। বই এলে অবশ্যই জানাবো আপু।
শুভকামনা।
মনির হোসেন মমি
স্বার্থ ছাড়া দুনিয়া অচল।বই উপহার নয় কিনে পড়ুন তাতে পড়ার আগ্রহটা থাকে।আজকাল বই প্রকাশ টাকা ছাড়া হয়না এটা সত্য।
তৌহিদ
একদম সত্য কথা ভাই। দেয়ানেয়া ছাড়া বই পাওয়া যায়না। দিনকাল কেমন যাচ্ছে?
শুভকামনা রইলো।
মনির হোসেন মমি
মোটামোটি ।দোয়া করবেন।
পপি তালুকদার
সাতকাহন পড়লাম।তবে এটা সত্যি কথা এখন কেউ বই উপহার দেয়না।তবে আমার বই পেতে খবুইইই ভালো লাগে!
নতুনদের বই কেনা উচিত তাতে তারা উৎসাহিত হয় বা চর্চা আরো জোরদার করে।
ভালো লাগলো সাতকাহন পড়ে।
তৌহিদ
একদম মনের কথা বলেছেন। মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা আপু।
শুভকামনা সবসময়।
আরজু মুক্তা
৩ নং জীবনের প্রতিচ্ছবি।
নতুনদের বই কেনাই ভালো। এতে তাদের উৎসাহ বাড়বে। একজন লেখক কতোগুলো উপহার দিতে পারে? ওর থেকে কিছু কিনে পড়াই ভালো। নাম দেখে নয়। বই এর কিছু পাতা পড়ে কেনাই ভালো।
আপনার বই প্রকাশের অপেক্ষায়।
তৌহিদ
আমিও তাই বলি। তবে বই কিনতে গেলে কিছু পাতা উল্টিয়ে দেখি আমি। এরপর ইচ্ছে হলে কিনি। বই উপহার পেতে ভালো লাগে তবে কিনে পড়াই উচিত।
বই যে কবে বেরোবে আল্লাহই ভালো জানেন। শুভকামনা রইলো আপু।