ফসিল রিপুর আর্তনাদ

তৌহিদুল ইসলাম ১৮ এপ্রিল ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:২১:৪৩পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৫ মন্তব্য

লক্ষ কোটি বছর আগে
যেদিন পাথরে পাথর ঘষে প্রথম আগুন জ্বালাতে শিখেছিলাম;
সেদিন যদি জানতাম এর লেলিহান শিখাকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার দ্বারা সম্ভবপর নয়,
সত্যিই বলছি সে আগুন আমি সেদিন কিছুতেই জ্বালাতামনা।

এরপর আরো হাজার বছর পেরিয়ে গিয়েছে,
জ্বলন্ত ভিসুভিয়াস আর পুজিয়ামাও শীতল হতে হতে
হিমালয়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
অথচ আমার হাতে যে আগুনের হাতেখড়ি হয়েছিলো,
তাকে আইসিসের হাতপাখার পরশ বুলিয়েও
সামান্যতম শীতল করতে পারিনি আমি।

গঙ্গা নেমে এলো,
পদ্মার স্রোতধারা বারংবার আগুনের উপর ঝাপিয়ে পড়লো।
নায়েগ্রার জলপ্রপাত তার শেষ ফোঁটাটুকু ঢেলেও
সেই আগুনকে আর বশে নিতে পারেনি সেদিন।

ইদানীং উলঙ্গ থেকে বসন পরা শিখেছি।
চুলের জটা ছাড়াতে আমি নরসুন্দরের ক্ষুরের ধারকে বিশ্বাস করে
নিজেকে সঁপে দিতে পেরেছি।
শুধু এখনো পারিনি সেই প্রথম স্ফুলিঙ্গকে নিম্নগামী করা শিখতে।

স্বার্থের জন্য আমি পৃথ্বীদেবকে বশীকরণ মন্ত্রে করেছি জর্জরিত।
নীলনদের অবগাহনে গাত্র শুদ্ধ করে
আমি বর চাইতে গিয়েও বিফল মনোরথে ফিরে এসেছি।
আমার আত্মা যে শুদ্ধ নয়!
তবে জেনেছি হাপী’র নোনা জল আগুন নেভাতে জানে।

অবশেষে ভরা পূর্ণিমায় একদিন
যমুনার কালো পানিতে স্নানরত আমি চন্দ্রের পুজারী হয়ে।
দেবী হাপি’র অন্তঃজঠরের নিষিদ্ধ একফোঁটা জল পান করবো বলে
সেদিন ঝিনুকমালাটিকে তার নিম্নদেশে প্রতিস্থাপন করতে সফলও হয়েছিলাম।
কিন্তু হায়!
উরুবেয়ে নেমে আসা সে জলের ফোঁটায়
আমার জিহ্বা যে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলো।
আগুন নেভাবো কিভাবে ইশ্বর?

বুঝলাম এ আগুন নেভানো আমার কম্ম নয়।
বরং খুব বেশী হলে পঞ্চপাণ্ডবের শুকনো তীরগুলোকে
অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত রাখতে পারি।
শকুন্তলা এসে নাহয় একটু ভালোবাসা যোগ করবে!
তাতেও হয়তো রিপুর প্রজ্জ্বলিত শিখা মৃয়মান হবেনা।
তবে কোটি বছর ধরে আগুনে পুড়ে ফসিল হয়ে যাওয়ার হাত থেকে
এ হৃদয়তো সুরক্ষিত হবে!

১২৩২জন ১০৩৩জন

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ