ও নিজেও কবিতা লিখতে শুরু করলো – “ভালোবাসাবাসি”
এসো ভালোবাসি দুজনে,
স্বপ্নে হাঁটি গগনে।
চলো স্বপ্ন বুনি,
হাজার হাজার গোলাপ গুনি।
এসো গান গাই,
দক্ষিণা হাওয়ায় বেড়ায়।
চলো হাঁটি প্রেম বাগানে,
যেখানে তুমি আমি দু’জনে ”
এসো কবিতা লিখি,
প্রেমের শত শত কায়দা শিখি।
চলো চিরকুট পড়ি,
অজানা উদ্দেশ্যে দেয় পাড়ি।
এসো ঘর বাঁধি,
দুজনে মিলে সম্পর্ক রাধি।
চলো মিষ্টি হাসি,
দুজনে দুজনে ভালোবাসাবাসি।
কবিতাটি পড়েই বুঝতে আর দেরি হলো না। ও প্রেমে পড়েছে। সত্যি! আমি শুধু ওকে ভেবে ভেবে মিষ্টি হেঁসেছি। ওর দিকে চেয়ে থাকতেও বেশ মজা লাগতো। ওর আনমনে বসে কবিতা লেখা , মাঝেমধ্যে ছবি আঁকা, বাহারি রঙের কথা বলা সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি ওর আকাশী-নীল চোখের মাঝে তাকালেই প্রেমে পড়ার সারমর্মটা বুঝে যেতাম। ওর চাহনিতে প্রিয়তমার ছবি ভেসে উঠতো। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রিয় মানুষটির ছদ্মনাম ব্যবহার করে কথা বলার দৃশ্যটা মন ছুঁয়ে যেতো। ওর চোখের কোণের সাথে যখন চোখাচোখি আঁকিবুঁকি হতো, সত্যি! ও খুবই লজ্জা – শরমে মুচকি মুচকি হাসতো।
ও আরেকটি কবিতা লিখে ফেললো।
—(প্রেমী)—
প্রিয়তমা,
তোমাতে মগ্ন আমি, তোমাতে পাগলপারা।
তোমাতে অন্ধ আমি, তুমি হীন ছন্নছাড়া।
প্রিয়তমা,
তোমাতে ডুবি আমি, তোমাতে ডুবে ভাসি।
তোমাতে হাসি আমি, তোমাতে জাগি নিশি।
প্রিয়তমা,
তোমাতে আবদ্ধ আমি, তোমাতে ফ্রেমে বন্দী।
তোমাতে বাধ্য আমি, তোমাতে নিত্য সন্ধি।
প্রিয়তমা,
তোমাতে রিক্ত আমি, তোমাতে গৃহ ত্যাগী।
তোমাতে অকপট আমি, তোমাতে ভীষণ রাগী।
প্রিয়তমা,
তোমাতে ভক্ত আমি, তোমাতে নিথর ভন্ডামী।
তোমাতে দূরবাসী আমি, তোমাতে পাগল প্রেমি।
সত্যি! ভাবতেই শরীরের ভেতর অশরীরী আত্মা এসে ভর করে। এতো সুন্দর শব্দগুলো ও কোত্থেকে ধার করে নিয়ে আসে। নাকি প্রেমে পড়ার সারমর্মের কিছু নতুন সংযোজন। হয়তো তাই হবে। নইলে কি করে শব্দগুলো এতো জব্দ হয়ে কবিতায় বন্দী হয়ে থাকতে পারে? কি করে গুপ্ত থাকা সুপ্ত ভাবনা ঠোঁটের ডগায় এসে কবিতার পৃষ্ঠায় ভিড় করে? সত্যি! দিন যতই যাচ্ছে ওর প্রতি আমার আগ্রহটা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব সেই আম কুড়ানো থেকে। নদী বিলে পুকুরে হৈ-হুল্লোড় করে মাছ ধরা থেকে। বরশীর ছিপে ভাত দিয়ে পুঁটি টেংরা মাছ ধরা কিংবা দূর আকাশে প্রাথমিকের বইয়ের পাতা ছিড়ে ঘুড়ি উড়ানো, ডাংগুলি, গোল্লাছুট আর মোড়াক যুদ্ধ থেকে। সেকি সোনালী দিন! সোনালী রোদ্দুর! প্রানবন্ত শৈশব, উড়ন্ত কৈশোর।
শৈশব কৈশোর নিয়েও ও একটি কবিতা লিখেছে-
-(শৈশব কৈশোর)-
সবে তো মাত্র শৈশবে কৈশোর আছে হাতে।
রাত্রি জেগে চাঁদ-তারা দেখা উঠান আঙিনাতে।
খাঁ খাঁ রোদ্দুরে হাটাহাটি আপনা-আপনি ঘোরাফেরা।
মাঠে মাঠে ঘুরেফিরে ঘাস ফড়িং আর ঝিঁঝিঁ পোকা ধরা।
সকাল দুপুর বিকেলে উড়াই নাটাই ঘুড়ি।
মাঝ নদীতে অকারণেই দলবেঁধে ঢেল ছুড়ি।
নারিকেলের ডাগর দিয়ে ঠেলা গাড়ি বানাই।
পাখির বাসা খুঁজে খুঁজে অকারণেই হারায়।
পিছুপিছু দৌড়াদৌড়ি গরুর বাছুর কিংবা ছাগল ছানা।
গাছে গাছে ঢিল ছোড়া সারাদিন একটানা।
বকুনি পিটুনি আদুরে গালিতে দূর দূরে থাকি।
ভয়ে ভয়ে প্রিয় মাকে আমতাআমতা ডাকি।
যেনতেন বিষয়ে নিয়ে মারামারি কাড়াকাড়ি।
ঝগড়া ঝামেলায় একটু হলেই সহপাঠীর বই ছিঁড়ি।
কিছুক্ষণ পর মিল ইই আবার চকলেটের লোভে।
ঝগড়াঝাটি মানঅভিমান ভুলে ভাগাভাগি সমানভাবে।
ডাংগুলি গোল্লাছুটে হৈ-হুল্লোড় হইহট্টগোলে মাতি।
কলা গাছের ঘর বানিয়ে বিলাই চড়ুইভাতি।
নৌকা নিয়ে বাইচ খেলা নদীতে দেই ঝাপ।
পুঁটি মাছে বক শিকার ওরে বাপরে বাপ।
চাঁদের বুড়ীর সুতো তোলার শুনতাম সেই গল্প।
দাদা-দাদি নাতির কাছে বলতো কি আর অল্প।
সন্ধ্যে রাতে ভাসতাম গল্পে দাদা-দাদির কাছে।
জ্বীন-পরী ভূত রাক্ষস খোক্কশ আরও যত আছে।
ভয়ে ভয়ে ঘুমিয়ে যেতাম সকাল হলেই ঠুস।
অতশত গল্প ভুলে ফিরে পেতাম হুঁশ।
বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলা ছিলো ছদ্মবেশ।
স্মৃতি গুলো মনে পরলেই দেখি বয়স শেষ।
(১ম অংশ)
চলবে..
১৯টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
ভালোবাসাবাসির গল্প-কাব্য পড়ে ভালো লাগলো,
চলুক আরো। 🙂
শুভ কামনা 🌹🌹
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, পরের অংশটুকু শীঘ্রই আসছে…
ইঞ্জা
বেশ রোমান্টিক এক গল্প নিয়ে এলেন ভাই, বাকিটা পড়ার অপেক্ষা করছি। 😊
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়। শীঘ্রই পরের অংশটুকু আসছে।
ইঞ্জা
অপেক্ষায় রইলাম। 😊
নীরা সাদীয়া
ওর গল্পটা চলছে ভালোই। তবে ওর নামটা দিলে আরও ভালো লাগতো।
নৃ মাসুদ রানা
নামটা দেব নিশ্চয়ই। আশাকরি পরের অংশটুকুর মাঝেই পেয়ে যাবেন।
শবনম মোস্তারী
ছন্দে ছন্দে গল্প। দারুন।
ভাষার বুনন অনেক শৈল্পিক।
খুব ভালো লাগলো।
নৃ মাসুদ রানা
অনুপ্রাণিত….। আশাকরি পরের অংশটুকু আরও ভালো লাগবে।
সুরাইয়া পারভিন
চমৎকার শব্দে ছন্দে ভালোবাসা প্রকাশ
পাঠে মুগ্ধতা অশেষ
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, ভালো লাগলো। আশাকরি অভিব্যক্তিগুলো এভাবেই প্রকাশ করবেন।
ব্লগ সঞ্চালক
আপনি সোনেলার
পড়ুন একবার। নীতিমালা অনুযায়ী একপোষ্ট হতে অন্য পোষ্টের মধ্যবর্তী সময় হচ্ছে কমপক্ষে চব্বিশ ঘন্টা।
একারনে আপনার কিছুক্ষন আগে দেয়া পোষ্ট খসড়ায় রাখা হলো, আপনি এই পোষ্ট প্রকাশের চব্বিস ঘন্টা পরে খসড়া থেকে প্রকাশ করে দিবেন।
নিজেই যদি নিজকে মডারেট করেন, তাহলে আমাদের কষ্ট অনেক কমে যায়।
শুভ ব্লগিং
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ, ভালো লাগলো।
জিসান শা ইকরাম
গল্প+ কাব্য ভালোই লাগলো,
লেখুন নিয়মিত,
অন্যের লেখাও পড়ুন।
শুভ কামনা
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ প্রিয়, জ্বি, অবশ্যই কেন নয়।
নিতাই বাবু
ভালো লাগা এক পোস্ট পড়লাম। পড়লাম কবিতা, সাথে কাহিনী ও প্রেমের কিছু রোমান্টিক সংলাপ। সত্যি ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি। শুভ ব্লগিং সহ শুভকামনা সবসময়।
নৃ মাসুদ রানা
ধন্যবাদ কবিবর, ভালো লাগলো। অনুপ্রেরণা…….
আরজু মুক্তা
শুধু ভালোবাসাবাসি।
নৃ মাসুদ রানা
হুমম, শুধু ভালোবাসাবাসি..