চোর চোর বলে একটি লোককে তাড়া করছিলো একদল লোক।সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিল সূর্য অভিরা।দৌড়ের উপর হতে এক জনকে থাবা দিয়ে ধরে জিজ্ঞাসা করলেন সূর্য,,,,
-কি ভাই কি হয়েছে?
-আরে ভাই আমি ঠিক জানি না,,,,
লোকটি হাফাতে হাফাতে বললেন আর তার শরিরের অস্থিরতা থেকে বুঝা গেল তাকে যত যেতে দেয়া হোক কিন্তু সূর্য মুল কারন না জেনে তাকে ছাড়ছেন না।রুগ্ন শার্টের এক কোনায় ধরে আছেন।
-তবে দৌড়াচ্ছেন কেনো?
-ওরা দৌড়াচ্ছে তাই আমিও….
বলে সেও ওদের পিছু দিল দৌড়।সূর্য আরেক জনকে আটকালেন।
-ভাই কি হয়েছে?
-মনে হয় কোন বড় ধরনের অপরাধী তাই দৌড়াচ্ছি ওর পিছু।
সেও নিশ্চিত নয়!সূর্য তাকে ছেড়ে আরেকজনকে আটকালেন।
-ভাইজান ঘটনা কি?
-আর কইয়েন না ভাই দেশের যা অবস্থা কোন নিরাপত্তাই নাই।
-তা বুঝলাম আপনারা এ ভাবে দৌড়াচ্ছেন কেনো?
-ঐ লোকটা নিরীহ এক বৃদ্ধার সাথে বেঈমানী করছে….যাই ভাই সালারে ধরতে হবে।
সেও দৌড় দিল।সূর্যরা কিছু দুর হাটার পর পাশেই একটি চা স্টলে চা পান করতে দাড়ালেন।চা দোকানীকে চায়ের অর্ডার দিয়ে সিগারেট নিয়ে দেয়াশলাইয়ের কাঠিতে সিগারেট ধরালেন।অভি সমর ধুমপান করেন না তাই তারা চায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।ওরা একটি টেবিল হতে লোক উঠে যাওয়াতে ওরা সেই টেবিলে বসল।সূর্য এবার চায়ের দোকানে বসে থাকা এক জন মধ্য বয়স্ক লোককে ঐ লোকের মেরাথন দৌড়ের ঘটনা জানতে চাইলে সে যা বললেন তাতে সূর্য কিছুটা বুঝতে পারলেও তার মনে একটা কথাই স্পষ্ট হলো এ দেশে ধর্মান্ধতা কতটা পাকা।
-আচ্ছা ভাই কিছু ক্ষণ আগে,অনেক লোক এ রাস্তা দিয়া দৌড়ে কোথায় গেলো?
-কোন সময়?
-এইতো কিছুক্ষণ হল,
-কয়টার সময়?
-বললামতো!
-আরে ভাই এটা ঢাকা শহর!এখানে সেকেন্ডের হিসাব রাখতে হয়।
লোকটির পাশে বসা আরেকজন সম্ভবত তার সাথী সে তার এমন ভনিতাকে থামিয়ে দিলেন।
-রাখোতো তোমার প্যাচানো স্বভাব।কিছু ক্ষণ আগে ঐ তো ঐখানে (লোকটি আঙ্গুল উচিয়ে)বেশ কয়েকজন বসে ছিলেন আড্ডায় না মিটিংয়ে,জানি না তবে হঠাৎ সেখানে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো।তাদের মধ্য হতে একজন দৌড় দিলেন।জানতে পারলাম সে নাকি জাফর স্যারকে গালি দিয়েছিলেন,,,নাস্তিক বলে!
-কি বলে?
-নাস্তিক! মানে আল্লাহ রাসুল যারা মানেন না।
-ও তাই!তা স্যার কি ওখানে ছিলেন?
-না,,,(লোকটি আশ্চর্য হলেন) ওমা আপনি দেখছি কিছুই খবর রাখেন না।
-আর কইয়েন না মাত্র ক’দিন হলো শহরে আইছিতো তাই,,,,
-ও তাই বলেন,তাইলে শুনেন,,,সে দিন স্যারের উপর আক্রমণ হইছে,,স্যারের মাথাটা দুই ভাগ কইরা লাইছে এক জিহাদী পোলায়।
-স্যার কি বাইচ্চা আছে?
-বাচতো না যদি না তাড়াতাড়ি হাসপাতালে না নিতো।
এরই মধ্যে চা দিল দোকানদার।সূর্য লোকটিকেও এক কাপ দিলেন।
-তারপর!কেনো ছেলেটি তাকে জানে মারতে চাইলো?
-আর কইয়েন না ভাই,,,স্যারেরও কিছু দোষ আছে।
(আশ্চর্য হলেন সূর্যরা)
-যেমন?
-স্যার একজন ভাল লেখক তা মানি কিন্তু তার একটা বইয়ের নাম রাখছেন “ভুতের বাচ্চা সোলায়মান”!আচ্ছা কন দেহি,দুনিয়ায় এতো নাম থাকতে মুসলমানদের এক পয়গয়ম্বরের নাম সোলায়মান রাখলেন কেনো তাও আবার তাকে ভুতের বাচ্চার সাথে তুলনা করেছেন!তাই মুসলমানদের চোখে সে ইসলামের শত্রু।তাকে হত্যা করতে পারলে অনেক ছোয়াব হবে।
-আপনি কি বিশ্বাস করেন?
-বিশ্বাস না করলে যে ঈমান থাকবে না।সেতো বইটি লিখেছেন তাই না?
-হ্যা,
-তয়!
-আপনি কি বইটি পড়েছেন?
-আমিতো তেমন লেখা পড়া শিখি নাই তাই বইও পড়তে পারি না।
-বইটি সম্পর্কে কিছু না জেনে শ্রদ্ধেয় স্যার সম্পর্কে এমন নেতিবাচক কথা বলা বা ভাবা কি ঠিক?আর একটি কথা,ইসলামে এ পৃথিবীতে বহু পয়গয়ম্বর এসেছেন যারা ইসলাম প্রচার করতেন।তাদের মধ্যে এমন অসংখ্য নামের লোকও এ দেশে কিংবা বিশ্বে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে কম নেই,আগের দিনে মা বাবারা তাদের সন্তান জন্মের পর পর ইসলামী নাম রাখতে মসজিদের হুজুর অথবা নিজেদের মুরুব্বিদের নিকট হতে পরামর্শ নিতেন সন্তানের নাম কি রাখবেন।ধরেন মীরজাফর,আব্দুল্লাহ,কাসিম,ইয়াহিয়া ইত্এযাদি গুলোতো ইসলামিক নাম,কেউ যখন কোন অপরাধী হন তখন এদের নাম ধরে যখন গালি দেই আমরা,কৈ কেউতো তখন রাগ হয় না,কেউতো বলে না তুই নাস্তিক! সত্যি বলতে কি মানুষকে যাচায় করবেন তার কর্মে,নামে নয়।তাছাড়া যে বইটি আপনি পড়েননি!জেনে রাখুন সেই বইটিতে এমন কোন লেখা হয় নাই যা ইসলামের সম্মানহানি হয় কেননা স্যার নিজেও একজন মুসলমান।সেও নামাজ রোজা সব ইসলামিক পন্থায় জীবনকে ভাবেন।
আপনি কি জানেন,অধ্যাপক জাফর স্যার এ দেশ সৃষ্টি বা মুক্তিযুদ্ধে তার বা তার পরিবারের অবদান কি ছিলো?জানে না দেশ মাতৃকার জন্য তার পরিবারের বাবা সহ অনেকেই শহীদ হয়েছেন।আর স্বাধীনতা পরবর্তী এ দেশে তিনিই প্রথম তার ভাই হুমায়ূন আহমেদ এর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় টেলিভিশনে প্রথম বারের মত জাতিকে শুনিয়েছিলেন, “তুই রাজাকার” (একটি তোতাপাখির কন্ঠে) একটি সাহসী ডায়লগ।আর তিনি তাঁর নিজের কন্ঠে ২০১৩ সালে শাহবাগে স্লোগান ধরেছিলেনঃ
‘ক’ তে কাদেরমোল্লা – তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
‘ন’ তে নিজামি – তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
‘গ’ তে গোলাম আযম – তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
‘স’ তে সাকা – তুই রাজাকার, তুই রাজাকার।
হ্যা আপনার কথাই ঠিক তার কিছু দোষ ছিলো হয়তো তার এহেন পরিস্থিতির জন্য।তাঁকে কে বলেছিলো এত ভালো অধ্যাপক হতে? এত ভালো গবেষক হতে? তাঁকে কে বলেছিলো দেশে প্রথম মুঠো ফোনের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে? কে বলেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রথম ফাইবার অফটিক নেটওয়ার্ক, প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন বা ড্রোন তৈরী করতে? কে বলেছিলো এক ঝাঁক মেধাবী তরুণ সৃষ্টি করতে যারা মাইক্রোসফট, গুগল, আমাজন, নাসায় কাজ করবে? দেশের হয়ে পৃথিবী বিখ্যাত সব আইটি কম্পিটিশানে চ্যাম্পিয়ন, রানার আপ হবে? সর্বোপরী তাঁকে কে বলেছিলো শাবিপ্রবি’র ব্যান্ডনেম হতে? শাবিপ্রবি মানেই জাফর ইকবাল- এটি কেন হবে? কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র ছাত্রী তাঁকে এত শ্রদ্ধা করে?কেউ বলেননি তবে তার বিবেক বলেছেন,,, এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মৃত্যুর কিছু কারন রেখে যাও আর এ সবের জন্য অনেকের নিকট তিনি ছিলেন চক্ষুসূল।
খুব মমতার সাথে দোষনীয় আরেকটি কাজ করতেন তিনি।আমাদের মহান মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস শিশু কিশোরদের শোনাতেন,মুক্তি যোদ্ধাদের বীরত্বের কথা শোনাতেন।সেই, একমাত্র,সেই-ই ছাত্রদের শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছিলেন,,,
তোমরা বড় হয়ে কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার হবে, কেউ পাইলট হবে, কেউ রাজনীতিবীদ হবে, কেউ মন্ত্রী হবে, কেউবা প্রেডিডেন্টও হয়ে যেতে পারো। কিন্তু ইচ্ছে করলেও তোমারা কেউ মুক্তিযোদ্ধা হতে পারবে না। সুতারাং যে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের প্রয়োজনে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তাঁদের যথাযথ সম্মান দেখাবে। সম্মান দিয়ে কথা বলবে। আর মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ও দেশপ্রেমের চেতনা নিজেতে ধারণ করবে।
আরো শুনবেন!সে এ দেশে প্রথম ড্রোন আবিষ্কার করেন।তাছাও বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য তম।এটি অবস্থিত সিলেট,বাংলাদেশ এ অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ব বিদ্যালয়।বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যম ইংরেজী।ইহা এশিয়া মহাদেশের অন্য তম বড় একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।যার পুরো কৃতিত্তই এই জাফর স্যার।অথচ জানেন!জাফর স্যার যখন আক্রান্ত হলেন তখন তার ভাষা কি ছিলো?জেনে নিন,,,ঘটনাস্থলের
প্রতিযোগিতার বিচারক এবং হামলা প্রচেষ্টার প্রত্যক্ষ দর্শী নওশাদ সজীব জানিয়েছেন,ছুরিকা ঘাতের পর পরই লেখক উঠে দাঁড়িয়ে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছিলেন,
-আই অ্যাম অলরাইট, তোমরা উত্তেজিত হয়ো না।
তিনি আরো বলেন যে, সে সময় শিক্ষকের মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ে তাঁর মুখ ও শার্ট ভিজে যায়।ঐ কথা বলার পর পরই তিনি ক্ষত স্থানে এক হাত রেখে আরেক হাতে চেয়ার খুঁজে বসার চেষ্টা করেন।এর পর পরই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁকে ধরেন এবং হাসপাতালে হস্তান্তর করেন।তখন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন এবং খোজঁ নিলেন ভিক্টিমের –
-ছেলেটা কই, ওকে তোমরা মারধর করো না।
অপারেশনে থিয়েটারের দায়িত্বে থাকা এক জন চিকিৎসক লিখেছেন ফেবুকে, অধ্যাপক জাফর ইকবাল আমার দেখা একজন সাহসী মানুষ।অপারেশনের বিছানায় যখন তাকে এনস্থেশিয়া দেওয়া হচ্ছে তখনও তিনি বলেছেন-
-আমি ঠিক আছি। কিছু রক্তের প্রয়োজন।….. এমন লোকটকে হত্যা করা কি ইসলাম সায় দেবে? তা ছাড়া শান্তির ধর্ম ইসলামে জীব হত্যাইতো মহা পাপ সেখানে মানুষ হত্যা ইসলাম কখোনিই সমর্থন করে না করবে না।
সেই চা দোকানে যারাই ছিলেন সবাই হা করে শুনছিলেন সূর্যের কথা।সেখানে যাদের মাঝে জাফর স্যার ইগু ছিলো সব যেন জলের মত গলে গেল।সবাই এখন আফসোস করতে লাগলেন।সূর্য চা দোকাদারকে বিলের টাকা দিয়ে বিদায় হচ্ছিলেন এর মধ্যে যে লোকটিকে উদ্দ্যেশ্য করে সূর্য কথাগুলো বলছিলেন সে সূর্যের হাত ধরে ক্ষমা চাইলেন।আর নিজেই নিজেকে তিরস্কার করলেন,,,ছি!ছি! আমি নিজে একজন মূর্খ হয়ে বুঝবো কি জ্ঞানিদের কথা!!?।
চলবে,,,,
ছবি:অনলাইন
৩টি মন্তব্য
মৌনতা রিতু
জাফর ইকবাল স্যারের মতো মহান মানুষদের আমরা মূল্যায়ন করতে পারিনি। এটা আমাদের চরম লজ্জা। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে করতে আজ আমরা শেষ পর্যায় এসে গেছি। হুজুগে বাঙালী নামটা আসলেই যথার্থ। আশ্চার্য! ঐ নাম নিয়ে লিখছে বলে ধর্মের লেবাস পরা মানুষের সব জাত শেষ হয়ে গেছে।
দারুন হয়েছে লেখাটা। কয়েকদিন শরীরটা খুব খারাপ। ফেসবুক, ব্লগ কিছুই দেখতে পচ্ছি না। ভাল থাকবেন মনির ভাই।
মোঃ মজিবর রহমান
কুচিন্তার মানুষ আছে তারা কুচিন্তা দ্বারা সহজ সরল ভাল মানুষকে ভালো থাকতে দেয় না। তারা ধর্মকে কুচিন্তায় ব্যাবহার করে সাধারন মানুষকে তাদের পক্ষে রাখতে সর্বদা কুপথ বেছে নেয়।
লেখাটা ভাল লেগেছে মনির ভাই।