নেড়া বেল তলায় একবার যায়, আমি বার বার যাই

অভি ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার, ০৫:৫৪:৩১পূর্বাহ্ন রম্য, সাহিত্য ১৪ মন্তব্য

বুয়েটে বসে একটা মোবাইল ভালবাসা হইছিল, ওরে কথা, দিন রাত, গেটের পাশের ল্যান্ড ফোন, নিজের মোবাইল, আলমের মোবাইল। এত কথা বললে কথা শেষে গিয়া দাড়াইতো, “কি কও তোমার বিলাইয়ের সর্দি হইছে, আহারে টিসু লাগবে।” দেখাও হত নিয়মিত, কিন্তু এই বিশেষ দিনে তারে টাইনা নামানো যাইত না। আমার সাথে দেখা করতে বের হইলে নাকি ধরা। আমারও আর ভেলেন্টাইনস ডে ডেটের অভিজ্ঞতা হইলো না। তাইলে এই গপ্প কেন পারতেছি? আছে আছে, ওই যে আমি বেলতলা বার বার যাই!

অস্ট্রেলিয়া আসছিলাম অ্যানিমেশন, গ্রাফিক আর্ট পড়তে। আর্কিটেকচার পড়ে গ্রাফিক্স এর বেসিক খারাপ ছিল না, তার উপরে ৩ ডি ম্যাক্স, আফটার এফেক্টস, এডোবি প্রিমিয়াম, ফ্ল্যাশ এ ছাত্র অবস্থায় ধুমাইয়া টাকা কামাইয়া হাত পাকা। অন্যরা যখন বল নিয়া নারাচারা করে, আমি ক্লাসে বসে ইন্টারেক্টিভ ৩ডি এনভারমেন্ট বানাই। কেউ প্রজেক্টের কাজ দেখতে আসলে, টিচার সোজা আমার কাছে নিয়া আসত। খুব ভাব নিয়া বলত, “আমরা আজকাল এইসব করি আরকি!” অসি পোলাপান আমাকে দেখতেই পারত না প্রথম দিকে। পরে যখনই কারো হেল্প লাগত আমি নিজেই গিয়া দেখায় দিতাম। লাভ যেটা হলো বিশাল জনপ্রিয় হয়ে গেলাম। একটা মেয়ের যেন হেল্প একটু বেশিই লাগে, আমারও ওরে হেল্প করতে যেন আগ্রহের কমতি নাই। কিছুদিন পরে পাশে বসি, খাইতে যাই, হাটতে যাই, ঘুড়তে যাই লাবউ বলে টলে শেষ!

দেখতে দেখতে ভেলেন্টাইনস ডে চলে আসলো। আমিও যথাযথ ভাবগম্ভির্জের সাথে আমার ভাঙ্গা গাড়ি নিয়া তারে পিক করতে আসলাম। ফেব্রুয়ারী মাসে অস্ট্রেলিয়ান সামার, গাড়ির জানালা খুলে হওয়া খেতে খেতে সমুদ্রের পরের এক এক্সপেন্সিভ রেস্টুরেন্টের পাশে গাড়ি পার্ক করে, রাজার মত হেটে ঢুকলাম, আমার প্রেমিকা মহা খুসি। রেস্টুরেন্টের দারোয়ান বলে খাড়াও, বুকিং আছে?
আমার প্রেমিকা মহা ভাবের সাথে আমার হাত ধরে সমুদ্র দেখছে। আমি বলি, কিসের বুকিং?
দারোয়ান কয়, “তাইলে মানে মানে কাইটা পর, আমরা টোটালি বুকড।
প্রেমিকা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো, “ভেলেন্টাইনস ডে তে তোমার বুকিং নাই!”
আমি উদাস হয়ে, “নাহ, আমি ভালো পোয়া, আমি কি এইসব জানি নাকি?”

তারপর আরো ১০-১২টা রেস্টুরেন্টে গেলাম, কেউ আমাকে এই বিপদ হতে উদ্ধার করলো না, সবাই বুকড! ঘোরাঘুরির ঠেলায় আমার গাড়ির তৈল কখন যে প্রায় শুন্যের ঘরের নিচে নেমে গেছে টেরও পেলাম না। প্রেমিকা ঘেঁন ঘেঁন শুরু করলো, “আমি বাড়ি যামু, খেতাপুরি তোমার ভেলেন্টাইনস ডে ডিনারের!” আমি শেষ চেষ্টা করতে সমুদ্রের হওয়া আর খাওয়ার আশা ত্যাগ করে সিটির দিকে রহনা দিলাম। ন্যাড়ার কপাল এমনই খারাপ, সিটির সবচেয়ে বিজি জায়গার পেডেস্ট্রিয়ান ক্রসিং এর ঠিক মাঝখানে গাড়ি বিকট ক্যাত ক্যাত আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে গেল তৈলের অভাবে! প্রেমিকা তখন পারলে আমারে ভস্স করে ফেলে। কিন্তু কেমনে করবে? সামনে পিছনে দুই গাড়ি পুলিশ আইসা হাজির হইছে। আমার জানালার কাছে আইসা বলে, এইখানে গাড়ি পার্ক কৈরচুন কি মৈরচুন!
আমি বলি, “মরার আর বাকি নাই, মাইরা ফালান, এই গেবন রাইখা আর কি করুম!”
২ মিনিট পর পর একজন পুলিশ আইসা বয়ান দিয়া যাইতেছে, গাড়ি সরাও।
পারলে তুই সরা, আমি কি সাধে সার্কাস করতেছি রাস্তার মধ্যখানে, গাড়ি ভাইঙ্গা গেছে দেখস না? ঝারি খাইয়া সরে, আবার আর একজন আসে!
এই করতে করতে রোড সাইড এসিসটেন্ট আইসা হাজির হলো। আইসা বলে কি হইছে?
আমি ফিস ফিস করে বলি, “তৈল নাই!” (পুলিশ যাতে না শুনে!) সে ৫ লিটার তৈল দিয়া আমারে উদ্ধার করলো সে যাত্রা। প্রেমিকারে নিয়া মেকডোনাল্ডসে গেলাম। বুকিং চাহিয়া এরা লজ্জা দিল না। আমি ভাবতেছি আজকেই শেষ এই প্রেমের!

কিন্তু শেষ হইলো না! প্রেমিকা বউ হয়ে গেছে!
বিটলা বুদ্ধি দিলাম, ভেলেন্টাইনস ডে টা আমরা সরাই দেই না কেন? ধরো ১৮ তারিখ (ওইদিন আমরা প্রথম দেখা করি)। সেই থেকে আমাদের ভেলেন্টাইনস ডে ১৮ তারিখ। বুকিং চাহিয়া কেউ আর লজ্জা দেয় না!

ডিসক্লেইমার: ২০০৯ সালে ভেলেন্টাইনস ডেতে সন্ধা ৭টার দিকে ফ্লিন্ডার স্ট্রিট স্টেশনের সামনে ভাঙ্গা গাড়ি নিয়া যে গেনজামটা হইছিল, ওইটা আমি ছিলাম! 😀

৭৭৪জন ৭৭৪জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ