“আমি একজন গবেষক হবো” কি এক অদ্ভুত কারনে এ বিষয়টি এদেশে সবসময়েই অবহেলিত। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের মেধা কি অন্যান্য দেশের ছেলেমেয়ের চেয়ে কম? গবেষক হবার নেতিবাচক মনোভাব দেখলে মনে হয় এটি হলেও হতে পারে। যদি তাই হয় তাহলে এর পিছনে একটা ব্যাখ্যা অবশ্যই আছে।

চীনের সাথে টেক্কা দিয়ে অনেক দেশই গবেষণা করে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেললো যদিও সব ট্রায়ালের মধ্যে আছে। সর্বশেষ গতকাল ভারত দাবী করছে তারাও করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছে এবং তা জুলাই থেকে ট্রায়ালে যাবে। তাহলে আমরা পারছিনা কেন? আসলে সমস্যা কোথায়?

সমস্যা হচ্ছে আমাদের মননে। অল্প খাটুনিতে বিস্তর লাভে বিশ্বাসী আমরা। আমরা নীলক্ষেত থেকে থিসিস পেপার সংগ্রহ করে সাবমিট করি। চাঁদে সাইদীকে কিভাবে দেখা যায় এটাকে গবেষণা দিয়ে প্রমাণ করি, লঞ্চের ভিতরে এয়ার পকেট গবেষণায় আমরা পিএইচডি হোল্ডার। আমরা উপাত্ত বিশ্লেষণ না করে অজায়গায় মেধা খাটিয়ে শুধুমাত্র তত্ত্বকেই মননে লালন করি। এর জন্যই আমাদের মেধা বেশি থাকা সত্ত্বেও দেখে কম মনে হয়।

ফেসবুক গবেষণা থেকেই জানলাম লঞ্চ দূর্ঘটনা কত কতভাবে ঘটতে পারে! বিস্তর গবেষণা জ্ঞান আহরণের জন্য মানুষজন করোনাতঙ্ক পরেও লঞ্চঘাটে ভীড় করছে। না পড়েই গবেষণায় সাফল্য লাভ করার সৌভাগ্য পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা! এসব গবেষণার শেষতক ফলাফলের উপসংহার পেলাম – ময়ূরী ২ নামটিই আল্লাহর গজব, পাপের ফল, কেউ বলছে উদ্ধার নাটক, রাখে আল্লাহ মারে কে, ইউনুস নবীর কথা, পানিতে ডুবে থাকা চামড়ার বর্ণনা এবং একে অন্যকে দোষারোপ।

মেধাবী গবেষকদের এই মেধার ফসল হচ্ছে-  ক্রেনবাহী উদ্ধারকারী লঞ্চটি দূর্ঘটনাস্থলে আসার সময় কোটি টাকার ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ব্রীজটি বানানোর সময় ইঞ্জিনিয়ার ভাবেনি নদীতে কোন দূর্ঘটনা হলে কিভাবে এর নীচ দিয়ে অন্য একটি লঞ্চ যাবে! সেই ক্রেন ইঞ্জিনিয়ারের কি এতটুকু জ্ঞান নেই উদ্ধার তৎপরতা চালানোর আগে সবকিছু বিশ্লেষণ করা?

ফেসবুক থেকে আরো জানলাম অচিরেই বিআইডাব্লিউটিএ-তে নাকি তারা লঞ্চ দূর্ঘটনা প্রতিরোধ বিষারদ নিয়োগ দিতে যাচ্ছে! আমার সুযোগ হলে গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ফেসবুক থেকে যত গবেষণালব্ধ জ্ঞান পেলাম সব ইন্টার্ভিউ বোর্ডে কপচিয়ে আসতাম। ফেসবুকে গবেষণা জ্ঞান এটি যা তা বিষয় নয় কিন্তু!

অথচ ফেসবুকে গবেষণা না করে একজনও যদি আমাদের এই ক্ষুরধার মস্তিষ্ক জায়গামত গবেষণায় ব্যবহার করতাম নিশ্চিত করোনা ভ্যাকসিন আমাদের আগে কেউই ট্রায়ালে নিতে পারতোনা। অবশ্য গবেষকের আসনটিতে বসার পরে কিছু নিয়ে গবেষণা করি আর না করি মাস শেষে বেতন পাবই মনোভাবকে কতজন সামাল দিতে পারতো সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

গবেষণা করতে গিয়ে ছাত্রজীবন থেকেই কত কি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সে কথায় আর গেলাম না। আমি উদ্যোক্তা হবো, দশজনকে চাকরি দেব সবাই বলি। কিন্তু আমি একজন গবেষক হবো, নিজের জ্ঞান দশজনকে বিলিয়ে তাদেরকেও অর্থ উপার্জনে সহায়তা করবো এ কথা কেউই বলিনা। এখানেই অন্যদেশের ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদের মননের পার্থক্য।

তাহলে আমরা কি মননশীল নই? হ্যা, আমরাও তাই তবে তা নেতীবাচক দিকে ধাবমান। আঠারো বছর হলে নিজের হাত খরচ নিজেকেই যোগাড় করতে হয় বলেই উন্নতদেশের ছেলেমেয়েরা অর্থ উপার্জনে নিজের মেধাকে ব্যয় করে। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কবে চাকরি হবে তা ভেবে নিজের মেধাকে পা দুলিয়ে ফেসবুক গবেষনায় কাজে থাকি ব্যস্ত। এই নেতিবাচক মননশীলতা থেকে সবার বেড়িয়ে আসতে হবে।

দিবাস্বপ্নে দিন যাপনকারী অলস মস্তিষ্ক নিয়ে বসে থেকেও আমাদের চোখে ভাসে অবাস্তব কোটি টাকার স্বপ্ন। চুরাশি হাজার কোটিপতির এই দেশে “স্বল্প মেধায়, অল্প খাটুনি, বেশী লাভ” এই তত্ত্ব যে অনেকেরই মননে শেকড় গেড়েছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আর এ কারনেই গবেষকদের গবেষণা এখন থিসিস বইয়ের পাতায় নয় গনহারে ফেসবুকের পাতায় দেখা যায়।

৯২৬জন ৬৯৯জন

৪৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ