
ইতিহাসে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়ে দুটো দেশ হয়েছিলো। যিনি এনীতির প্রবক্তা তার যুক্তি ছিলো মুসলমানদের ধর্ম নষ্ট হচ্ছে।হিন্দুদের সাথে থেকে থেকে মুসলমানরা তাদের কালচার গ্রহন করছে। বুঝে না বুঝে হিন্দু- মুসলিমরা মেনে নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিলো ফলাফল আমরা সবাই জানি। পরবর্তীতে এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো এ নিয়েও আফসোসের শেষ ছিলো না।
ফাটল এক জায়গায় ধরলে ভাঙ্গতেই থাকে। যে মুসলমানের ধর্ম নষ্টের দোহাই দিয়ে দুটো দেশ ভাগ হলো। সেই মুসলমানরাই আবার ভাগ হলো! কেন হলো? তাহলে ধর্ম কতোটুকু দেশ ও ব্যক্তি জীবনের জন্য?
এবার যিনি ধর্মের এই দোহাই দিয়েছিলেন, সেই জিন্নাহ ব্যক্তি জীবনে কতটুকু পালন করেছেন? তিনি নাস্তিকও ছিলেন না আবার মুসলমানদের ধর্মীয় সকল রীতিনীতিও পালন করেননি। নিজে বিয়ে করেছিলেন অমুসলিমকে এবং তারসন্তান ও পরবর্তী জেনারেশানও তাই করেছিলেন। এবং শেষ সময় পর্যন্ত তাদের বসবাসও ছিলো ভারতেই!
উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মকে ব্যবহার করে আমরা সমাজপতিরা কতোকিছুই না করি। আর বোকা জনগন তা মেনে নিয়েই চলি।
আফগানরা তরতরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো। মার্কীনিরা দেখলো এভাবে তাদের এগুতে দেয়া যায় না। তাই নিজের শিল- নোরা দিয়ে তাদের নিজের দাঁত ভাঙ্গার ব্যবস্থা করে বিনা বাক্যব্যয়ে তারা আফগান থেকে সরে দাঁড়ালো। এবার শাসক হলো যাচ্ছে তাই একটা জঙ্গি সংগঠন। যাদের শিষ্টাচার শুধু অস্ত্র আর নারী নিপীডন।
কথায় আছে- পরিবারও দেশ ভাঙ্গতে চাও; সে পরিবার ও দেশে নারীকে পঙ্গু করো?
আফগান নারীদের বেলায়ও তাই চলছে। ইতিমধ্যে খেলা-ধুলা, শিক্ষা, চাকুরীসহ সকল অঙ্গনে তারা অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিলো। তালেবান সরকার আসার পর দেয়াল থেকে নারী মডেলের ছবি মিশিয়ে ফেলা হলো। বোরকা বাধ্যতামূলেক করা হয়েছে। যেসব মেয়ে চাকুরী করতো তারা হয়তো আর করতে পারবে না এমন ভয়ও কাজ করছে। পূর্নবয়স্ক ও স্বামীহীন নারীদের একটি তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে, তালেবানরাই নাকি তাদের বিয়ে করবে। এখন বিয়েতে তাদের ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক তাতে কিছু যায় আসেনা। মেয়েরা শুধুমাত্র ষষ্ঠশ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পারবে। ছেলেমেয়ে একই বিদ্যালয়ে পড়তে পারবে না। এরকম আরও অনেক কিছুই তারা পরিবর্তন আনছে এবং সেগুলো অধিকাংশই নারী বিষয়ক আইনকানুনের পরিবর্তন।
অন্য কোন বিষয় এতোটা গুরত্ব কেন পাচ্ছে না কারন আগে গোড়ায় পচন ধরানো জরুরী। একসময় সকল লীলা সাঙ্গ হবার পর মার্কিনীরাই হয়তো হাহাকার করবে, সাহায্যের হাতও হয়তো বাডাবে।
তালেবানদের একমাত্র উদ্দেশ্য ধর্মীয় অনুশাসনে দেশ পরিচালনা করা। তাদের ধর্মীয় অনুশাসনের নমুনা এমন- আফগান এক নারীর বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিয়ের দুবছর পরে তাদের সন্তান জন্ম নেয়। তবুও তাদের বিয়ের আগের প্রেম থাকায় এ সম্পর্ক অনৈতিক দাবিতে তাদের বিচারের আওতায় আনা হলো। এখন এই নারীকে অন্যত্র বিয়ে করতে হবে এটাই হলো এর সমাধান। ইসলামে এমন বিচার বা আইন আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে এই নারী এমন বিচার ব্যবস্থা মেনে না নেওয়ায় তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
অনেক মুসলমান দেশই এমন শাষকদের সমর্থন দিয়েছে। বাংলাদেশ এখনো দেয়নি তবে বাঙ্গালীর কিছু অংশ বেজায় খুশি। তাদের ভাষ্য- আল্লাহ আল্লাহ করেন খালি তালেবান প্রতিষ্ঠিত হলেই আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়বো। কোথায় ঝাঁপিয়ে পড়বে জানেন? নারীর ঘাড়ে। ধর্মীয় উগ্রবাদী শক্তির প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তুই থাকেন নারীরা। সব ক্ষেত্রেই এসব গোষ্ঠীর কাজ হলো ধর্মকে ব্যবহার করে নারীদের নিগ্রহ করা।
ঘটনা কদিন আগের- স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্বামী স্ত্রীকে তিনতালাক বলে ফেলেছে। এবার ঘটনার জানাজানিতে স্থানীয় ফতোয়া শ্রেণীর গায়ে- গতরে ইসলামের দোহাই নামক আগুন লেগে গেলো। তারা ঝাঁপিয়ে পরে বিচারের ব্যবস্থা করলো। বিচারে সিদ্ধান্ত হলো তাদের একঘরে করে রাখা হোক। ওই পরিবার এখন ঘরের বাইরে বের হতে পারে না। তাদের কেউ কাজে নেবেনা, তাদের সাথে কথা বলবে না। বাজারে কিংবা পাশের দোকানেও তাদের যাওয়া মানা।
এখন এই পরিবার কাজ না পেলে খাবে কি? কিংবা বাজার সদাই করতে না পারলে কিভাবে চলবে? স্হানীয় ফতোয়াদের অভিমত যতোক্ষন এই পাপের সুরাহা না হয় ততোক্ষন তাকে সমাজে মেনে নেয়া হবে না। এখন হিল্লে বিয়েই হলো এর সমাধান। যা ঐ দম্পতি করতে নারাজ।
সুধী সমাজ অবশ্যই এমন বিচারে বাহবা পাবার যোগ্য কারণ ইসলামী বিধান মেনে চলা আমাদের মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। কারন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হারাম।
ইসলামী আইনে কতোকিছুই তো অনৈতিক বা নিষেধ। যৌতুক নেয়া অনৈতিক, যৌতুক নিয়ে বিয়ে কোন বিয়েই নয়। তাতে করে সন্তান জন্মদান জারজের সামিল। আজকাল তালেবান সমাজ তাদের ছেলেদের কি যৌতুক ছাড়া বিয়ে করান? এটা এখন প্রচলিত রীতিতে পরিনত হয়েছে। কাজী বা আলেমরাও দিব্যি বিয়ে পড়াচ্ছেন। কোথাও কোন সমস্যাই নেই। হালাল না হারাম সে প্রশ্ন তো আসেই না! বিয়ে পড়িয়ে খোরমা- খেঁজুর খেয়ে ফিস নিয়ে দিব্যি চলে যায়।
এরপর বিয়ের সময় স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ যোগ্য। তা না দেয়া ব্যতিত শারিরীক সম্পর্ক অনৈতিক। আজ পর্যন্ত আমরা দুএকটি ছাড়া সকল বিয়েতেই দেখি লোক দেখানো বিরাট অংকের দেনমোহর ধার্য করা হয় কিন্তু তা কখনোই পরিশোধ করা হয় না। দেনমোহর পরিশোধ ব্যতিত স্ত্রী হারাম, সন্তান জারজ এটা জেনেও আমরা চুপ। কারন এ সমাজের সবই পুরুষদের সুবিধায় চলে। আর নারীদের উপর চলে অত্যাচার।
ভাই, পানি ঢাললে গোড়ায় ঢালুন, নিজের মাথায় ঢালুন।
সুবিধামতো জায়গায় জায়গায় ঢালেন কেন বুঝি না!!
যুগে যুগে এই ধর্মকে আর কতো ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নারীদের উপর অত্যাচার হবে? আর এর শেষই বা কোথায়? আমাদের জানা নেই। তবে নারীদের শক্ত হতে হবে, প্রতিবাদ করা শিখতে হবে। সর্বোপরী নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে!!!!!
ছবি- নেটের
১৬টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ধর্ম পড়ে আছে ধর্মের বাসনে
মানুষ সাজছে নিজ আসনে
ধর্মে খেলায় নিজ স্বার্থ চরিত্রার্থে
থাকে ধামাধরা তেলবাজ চাটুক চরিত্রে
অবুজ আদমসন্তান অসহায় তারিসাথে।
খোশামোদ খোশামোদেই ব্যস্ত
মাঝে যায় অনেক জীবন রসাতলে সমস্ত,
সুধার্মিক রই বসে চুপি চুপি বেসামালে
নাই রক্ষা নাই পথ সদা জাগ্রত কুমানুষ
দলবলের খপ্পরে আছে হাজার হাজার
সুপথের যাত্রী অসহায় স্বার্থ নাহি বলে
কাছে আসেনা কোন ভালো মানুষে।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ভাই জবাব নেই,, এতো চমৎকার মন্তব্যে আপ্লুত হলাম। আসলেই তাই সবকিছু নিজ নিজ জায়গায় হওয়ার কথা কিন্তু আমরা আসলে নিজ স্বার্থেই গুলিয়ে ফেলি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
লেখালেখি সহ সবকিছুতে স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করছি। কঠিন কোমার মধ্য দিয়ে গেলাম। এতো ভালোবাসতাম এই মানুষটাকে কখোনো বুঝতেই পারিনি। আমরা সবাই ভালো থাকি এই কামনা।।।
মোঃ মজিবর রহমান
ধর্মের কোন দোষ নাই, দোষ আমাদের আমরা স্বররথে যখন যেভাবে ব্যবহার করি।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ধর্ম শুধু যেন নারীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, পুরুষরা শুধু ফায়দা নিতে ব্যস্ত। নারীদের কে অবদমিত রাখাই যেন একমাত্র ধর্ম। হায়রে ধর্মের লেবাসে কতকিছুই না সহ্য করতে হয়!! দেশ, সমাজ পর্যন্ত বিভাজিত হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ খেলার পুতুল হয়ে জীবন কাটায়। ভালো পোস্ট আপু। অফুরন্ত শুভকামনা রইলো
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার সুন্দর মন্তব্যে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা দি ভাই। আপনিও ভালো থাকুন।।।
নার্গিস রশিদ
অসম্ভব সুন্দর প্রতিবাদী একটা লেখা। এরকম লেখা দিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নারীর স্থান ঘরের মধ্যে, নারীর হাতে টাকা পয়সা থাকবেনা। পুরুষের অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য কর।উত্তর দেয়া ? সেটা গুনাহ। । আরও কত কি! যাই হক খুব ভালো লাগলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনাদের ভাললাগাই লেখার অনুপ্রেরণা। অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভসকাল জানবেন শ্রদ্ধেয়।।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মকে ব্যবহার করে আমরা সমাজপতিরা কতোকিছুই না করি। আর বোকা জনগন তা মেনে নিয়েই চলি।— এটাই হল ধর্মের অপব্যবহার করে নিজেদেরকে মহান করার অপচেষ্টা। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো ভাইয়া। ভালো থাকুন।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুস্থ আর ভালো থাকবেন আপু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধর্মের দোহাই দিয়ে এ সমাজ আজও অনেককে বন্দীদশায় রাখতে চায়।
আসলে তারা ধর্মের মূল তত্ত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি অবগাহন না করে এমন বলছে।
ধর্মকে এরা পুজিঁ করে চলছে।
.
দ্বিজাতিতত্ত্ব বলছে ভাগ কর, শাসন কর।
আর সবকিছুতে ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীদের পিছিয়ে রাখা হয়।
.
যথার্থ লিখেছেন, দিদি।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য দাদা। ভালো থাকুন।
আলমগীর সরকার লিটন
খুব সুন্দর লেখেছেন
রোকসানা খন্দকার রুকু
ধন্যবাদ ভাই।
হালিমা আক্তার
ধর্মকে যারা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে তারা কখনোই ধার্মিক হতে পারেনা। এইসব বকধার্মিকদে্র জন্য ধর্মের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। ধর্মের অপব্যবহার মানুষকে ধর্ম বিচ্যুতি করাচ্ছে। এই শ্রেণির মানুষ ধর্মকে নিজস্বার্থে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। চমৎকার পোস্ট। শুভ কামনা রইলো।
নার্গিস রশিদ
ধর্ম কে নিজেদের মতো করে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হেদায়েত করা হয়। যা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ঠিক নয়। মহিলাদের এই করতে হবে সেই করতে হবে এটাই যেন তাদের হেদায়েতের মুল বিষয় বস্তু ! আমরাকে প্রতিবাদ করা শিখতে হবে। খুব ভালো লিখেছেন। অনেক শুভ কামনা।